সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"


                         
                         সাধন কুমার পাল
    ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের।

২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট কার্যত তা-ই বহাল রাখে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। ঠিক এমন এক সময় এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, যখন সামনে বাংলার বিধানসভা ভোট। ইতিহাসের পাতায় যদি ত্রিপুরার ১০,৩২৩ নিয়োগ বাতিল ও তার রাজনৈতিক প্রভাবকে বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে—এই রায় কি তৃণমূল সরকারের জন্য অশনিসংকেত? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে লুকিয়ে রয়েছে। তবে তার আগে কিছু বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা যেতে পারে
   প্রশ্ন জাগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চরম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা দেখেও সমাজের বিবেক জাগ্রত হলো কী? এদের মধ্যে কয়েকজনের আত্মহত্যা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যান্সার আক্রান্ত চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকের হৃদয়বিদারক হাহাকার, সমাজের বিবেক জাগাতে পারলো কী? আরজি করের অভয়ার মৃত্যুর জেরে হওয়া ডাক্তারদের আন্দোলন সমাজকে যতখানি নাড়িয়ে ছিল শিক্ষকদের আন্দোলন তার এক শতাংশও প্রভাব সৃষ্টি করতে পেরেছে কী? শিক্ষকরাও দিনের পর দিন রাতের পর রাত খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে অবস্থান করলেন, অর্ধনগ্ন হয়ে প্রতিবাদী মিছিল সংঘটিত করলেন, অনশন করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলেন, জেলা শহরগুলোতে ডিআই অফিস ঘেরাও করলেন , পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করল তবুও কিন্তু সমাজে কোন প্রভাব পড়লো কী? শুধু কি তাই , যেসব শিক্ষকরা চাকরিতে বহাল রয়েছেন, যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের এই চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা পড়িয়েছেন তারা এবং তাদের অভিভাবক এদের মধ্যেও কি তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই হয়তো মাথা চুলকোবেন। তাহলে কি বলতে হবে যে সমাজটাই অসংবেদনশীল! স্বার্থপর ! ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগরদের নিয়ে নিস্পৃহ? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার। এর উত্তর খুঁজতেই এই প্রবন্ধের অবতারণা।
    যে ভারতীয়  সমাজে শিক্ষক শিক্ষিকারা গুরু বলেই পূজিত  হতেন। সামাজিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে শিক্ষকদের সাথে সমাজের সম্পর্কেরও  অবক্ষয় হয়েছে এটা সত্য । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বাম জামানায় শিক্ষক সমাজের প্রতি মানুষের  বিরুপ মনোভাবের আনুষ্ঠানিক  জন্মের ইতিহাস রয়েছে। 
   বাঘকে রক্তের স্বাদ পাওয়ানোর মতো শিক্ষক সমাজকে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বাদ পাইয়ে দিয়ে নিজেরা  ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করেছিল বামপন্থী দলগুলো।বাম জমানায় মানুষ দেখেছে  একশ্রেণীর শিক্ষক সিপিএম পার্টির নেতা হয়ে  দিনের পর দিন স্কুলে না গিয়ে বেতন তুলেছেন। সমস্ত রকম অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত থেকে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচারের ধারা  নামিয়ে এনেছেন।।এই সমস্ত স্কুল ফাঁকি দেওয়া শিক্ষকের সম্মান ক্ষমতা সবই সাধারণ শিক্ষকের চাইতে অনেক বেশি। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে কুৎসা , অশ্রাব্য ভাষায় বিরোধীদের গালাগালি করা হার্মাদদের সাথে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল করা , এই সমস্ত কাজই মানুষ শিক্ষকদের করতে দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। একশ্রেণীর শিক্ষক এই ধরনের হার্মাদ তন্ত্রের সাথে যুক্ত থাকলেও  শিক্ষক সমাজের সিংহভাগ এসব দেখেও চুপচাপ থেকেছেন, কোন প্রতিবাদ করেন নি ।   সিংহভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই সিপিএমের মিছিলে হেঁটে বা  এবিটিএর  ঝান্ডাবহন করে  ঝুট ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে নিজেদের জীবনকে নিশ্চিন্ত করার জন্য যা যা করার সবই করেছেন। বছরের পর বছর ধরে শিক্ষকদের মধ্যে মানুষ   এই নৈতিক অধঃপতন দেখেছে।    
              
                         
তৃণমূলের পার্টি অফিস ? না স্কুল বোঝা মুশকিল।

শিক্ষকদের এই অধঃপতনের ধারা তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে আরো গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে শিক্ষকতার চাকুরি কিনে নেওয়া, লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে অনৈতিকভাবে বাড়ির কাছে স্কুলের ট্রান্সফার নেওয়া স্কুল ফাঁকি দেওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডা নিয়ে মিছিল মিটিং করা এই প্রবণতা বাম আমলের চাইতেও বেড়েছে। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকুরী গেল এর মধ্যে অনেকেই যোগ্য ছিলেন। এই যোগ্য শিক্ষকদের প্রতি বর্তমান সরকার যে অন্যায় করেছে এর কোন ক্ষমা হয় না। কিন্তু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেও বৃহত্তর শিক্ষক সমাজ গর্জে উঠলো কোথায়। এরপরেও দেখা যাচ্ছে যে শিক্ষকরা চাকরিতে বহাল রয়েছেন তারা ঠিক আগের মতই ঝুট ঝামেলার ভয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তাবেদারি করে যাচ্ছেন। তৃণমূল শিক্ষা সেলের সদস্য হয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। নিজের সহকর্মীর এই দুর্দশা দেখেও তাদের মধ্যে কোন চেতনা আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষকদের এই অবস্থা দেখে সেই  কসাইখানার দৃশ্যই মনে পড়ে যায়। যেখানে একদিকে কসাই একটিকে  ধরে ধরে আড়াই পোজ দিচ্ছে আর অন্যদিকে পাশে বেঁধে রাখা ছাগল গুলো নিশ্চিন্ত মনে ঘাস খাচ্ছে।
কিছুদিন আগে কুচবিহারের মাথাভাঙ্গার একটি স্কুলের এক স্কুল ফাঁকি দেওয়া শিক্ষক তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতার দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে তাকে   সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাহলে ভাবুন নৈতিক অধঃপতন কতটা গভীরতর হলে পরে এই ধরনের আচরণ একটা স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা করতে পারেন।  শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে শিক্ষকদের সাধারণ মানুষ ক্ষমতাসীন দলের পদলেহনকারী সুবিধা ভোগী শ্রেণী হিসাবেই দেখে। সেজন্য এই শ্রেণীর মানুষেরা বিপদে পড়লে সমাজ সংবেদনশীল হয়ে উঠবে এমন আশা করা করা যায়?
           নির্বাচনের সময় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে ভোট করানো হয়। শিক্ষক মহলেও কান পাতলেও শোনা যায় ভোটের নামে যা কিছু হোক আমরা নিরাপদ থাকলেই হল। যা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে হয়তো ভোট কর্মীদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না কিন্তু ভোট কর্মী হিসাবেও শিক্ষক শিক্ষিকার মধ্যে কোনরকম প্রতিবাদী মানসিকতা দেখা যায় না। অর্থাৎ সমাজ ব্যবস্থা জাহান্নামে যাক, আমি নিরাপদ থাকলেই সব ঠিকঠাক আছে এই মানসিকতা পেয়ে বসেছে বর্তমান শিক্ষক সমাজকে । একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতার ভিতর থেকে শিক্ষক সমাজের আচার-আচরণ আমি প্রত্যক্ষ করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ই নি। ভোট নিতে গিয়েও হাজার চাপেও কখনো মাথা নত করিনি। কিন্তু সহকর্মীদের অনেককেই দেখেছি ভোট কেন্দ্রে  অনৈতিকতা দেখেও এক মানসিক প্রশান্তি নিয়ে ভোট করিয়ে বাড়িতে ফিরছে , 'আমি তো নিরাপদ আছি'। মনে হতে পারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি হারানোর সাথে এইসব ঘটনার সম্পর্ক কি। সম্পর্ক আছে, ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষার চাকরি যাওয়ার মতো এত বড় ঘটনা সমাজ উদাসীন! শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সমাজ উদাসীন!


   
    হাইকোর্টের রায়ে যখন ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকার চাকুরী গেল সেই সময়  অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠন অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের (ABRSM) পক্ষ থেকে যোগ্যদের পাশে থেকে একটি স্বতন্ত্র আইনি লড়াইয়ের প্রচেষ্টা হয়েছিল। সামান্য কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা ছাড়া সেদিন কেউ কিন্তু এই অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠনটির ডাকে সাড়া দেয়নি। তৃণমূল  নিয়োজিত একদল দালাল আইনজীবীর খপ্পরে পড়ে বকলমে তৃণমূলের প্লাটফর্মেই ওই চাকরি যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা সুপ্রিমকোর্টে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যাপারে প্রয়াস করেছিলাম কিন্তু সাড়া মেলেনি। সে সময় ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছিল যে ওদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি হয়ে আছে যে মমতা ব্যানার্জি যেভাবেই হোক ওদের চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখবে।


রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট প্রথম ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই রায়কে অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। পরে তারা সেই আদেশের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এসএসসি।
সেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এখন তো এখানকার বিচারালয় বিজেপির বিচারালয় হয়ে গেছে। দিল্লির বিজেপির দপ্তরের নির্দেশে বিচারক নিয়োগ হয়। বিচার হয়। আমরা আজকের রায়কে অবৈধ মনে করি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।’

মমতা আরও বলেন, ‘ওরা জেলে পাঠাবে, আমি তৈরি। আমি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি। আমি চাকরিহারাদের পাশে আছি। আমার যত দূর যেতে হয় যাব। আমি তৈরি।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া দেখে চাকরি হারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা ধরে নিয়েছিলেন যে মুখ্যমন্ত্রী এক নম্বরী বা দু নম্বরি যেকোন উপায়েই হোক চাকরিটা বাঁচিয়ে দেবেন। স্বভাবগত  মিথ্যেবাদী মুখ্যমন্ত্রীর হাব ভাব দেখে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে সেই সময়ে খুব বড় বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মামলা লড়ার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকারাও তৈরি হয়েছিলেন তবে কিছু ছদ্মবেশী আন্দোলনকারীর ফাঁদে পড়ে তৃণমূলের ছাঁচেই ওরা সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সে সময় চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মমতা ব্যানার্জির সুরেই বলতে শোনা গেছে সবটাই বিরোধীদল শুভেন্দু অধিকারী সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্জ এদের চক্রান্তের জন্যই আজ এই পরিস্থিতি। সেজন্যই রাজনীতির স্বার্থেই মমতা ব্যানার্জি উনাদের রক্ষা করবেন এই বিশ্বাস উনাদের মনের দৃঢ়ভাবে গেঁথে গিয়েছিল। এই শিক্ষক শিক্ষিকারা যে সবাই তৃণমূলপন্থী তা কিন্তু নয়। তবে যে পন্থীই হোক কিছু ব্যতিক্রম বাদে সবাই বিশ্বাস করতো মমতা ব্যানার্জি অনৈতিক পথে হলেও উনাদের চাকরিটা বাচিয়ে দেবেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায় বের হওয়ার পরেও তৃণমূল থেকে নেরেটিভ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল সংসদে সদ্য  পাস হওয়া ওয়াকফ বিলের প্রভাব থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে নাকি প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে ২৬ হাজারের চাকরি ছিনিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ এই চাকরি হারানোর পেছনে কলকাটি মেরেছে সেই বিজেপিই।ঠিক এই নেগেটিভকেও সমর্থন করতে দেখা গেছে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এরপরে যত দিন গেছে ওদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে মমতা ব্যানার্জি ওদের বাঁচাবে না। আসল দোষী মমতা ব্যানার্জি নিজে। মমতা ব্যানার্জি রয়েছেন অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে, যোগ্যদের সাথে নয়। সমস্ত কিছু হারিয়ে এখন অনেকেরই জ্ঞানচক্ষু খুলেছে কিন্তু এখন করার কিছুই নেই।
      
সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে সমাজ এমনি এমনি জাগে না, সমাজকে জাগাতে হয়। তাতেও শিক্ষক সমাজের একটা বড় ভূমিকা থাকার কথা। আজ শিক্ষক সমাজ সেই ভূমিকা পালন করছে না বলেই সমাজের বুকে প্রতিনিয়ত শিক্ষক শিক্ষিকারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন নির্যাতিত হচ্ছেন সমাজ মুখ তুলে তাকাচ্ছে না । কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের হাতের পুতুল হয়ে শিক্ষক সমাজ নিজেদের জীবন অতিবাহিত করছে। স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের প্রাপ্য ঘৃণা বিরূপ মনোভাবে অংশীদার শিক্ষকরা হবেন এতে বোধহয় অবাক হওয়ার কিছু নেই।  যে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে সেই তৃণমূল কংগ্রেসের সাথেও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ রয়েছে। ভালোভাবে রয়েছে । প্রকাশ্যে রয়েছে।  এই দলের অপকর্মের দায় শিক্ষক সমাজ কেও নিতে হবে। ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকুরী হারিয়ে তারই মাশুল গুনছে।
তবে আসার কথা শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। এটা একটা বড় পরিবর্তন। এই পরিবর্তনকে হাতিয়ার করে শিক্ষকদের ওপর সমাজের অনাস্থা যে পরিমাণেই থাকুক না কেন বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সহ এই রাজ্যকে বাঁচাতে গেলে এই সর্বনেশে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে রাজ্য ছাড়া করতে হবে। না হলে শিক্ষা স্বাস্থ্য কোন কিছুতেই নতুন করে কিছু গড়ে ওঠার সুযোগ থাকবে না সেই জন্য মানুষ কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।##

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...