সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গ্যাড়াকল



    নির্বাচনের সময় এক নেতা ওর নিজের দলের হয়ে ভোট প্রচারের সময় পাড়ায় পাড়ায় কাঠি পুতে 'এখানে কল বসিবে' এ রকম বোর্ড ঝুলিয়ে দিল।আম জনতা ভাবলো যাক এই দল জিতলে পাড়ায় কমপক্ষে একটা কল তো পাওয়া যাবে!ঐ পাড়াতেই এক 'বাদর ছেলে' রাতের অন্ধকারে প্রত্যেকটি বোর্ডে কলের সামনে গ্যাড়া কথা টি বসিয়ে দিল।পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সবাই  দেখল প্রত্যেকটি বোর্ডে লেখা রয়েছে  'এখানে গ্যাড়াকল বসিবে'।কংগ্রেসে ও অন্যন্য দলের  নির্বাচনী ঘোষনা পত্র দেখে আমার এই গল্পটি মনে পড়ল।
        শ্রীলঙ্কার মতো সন্ত্রাসবাদী হানা ভারতেও হতে পারে।2014 সালের আগে ভারতেও এরকম জঙ্গি হানা নিয়মিত ব্যাপার ছিল।অথচ বিজেপি ছাড়া অন্য কোন দলের  নির্বাচনী ঘোষনা পত্রে দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে কোন কথা নেই বরং এমন কিছু প্রতিশ্রুতি আছে যা রুপায়িত হলে  সন্ত্রাসবাদীদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।কংগ্রেসের ঘোষনা পত্রে বলা হয়েছে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক গরিব পরিবারকে মাসে ছয় হাজার অর্থাৎ বছরে বাহাত্তর  হাজার টাকা দেওয়া হবে।আমাদের দেশে এরকম অনেক কাজ আছে যেখানে মাসে মাইনে হিসেবেও এত টাকা দেওয়া হয় না।তা ছাড়া এই ধরণের  জনতোষনের রাজনীতি যে দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে দুর্বল করে দেশকে দেউলিয়া করে দেয় এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। আগামী 23 মে  নির্বাচনের ফলাফল    ঘোষণা হবে।সেই দিন নিশ্চিত করে বলা যাবে মানুষ কংগ্রেস ও অন্যান্য দলের  এই কল বসিবে ঘোষনার আগে গ্যাড়া কথাটি বসিয়ে নিল কি না।

       নির্বাচনের বেশ কয়েকটি ধাপ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন।তাতে কংগ্রেস সহ অন্যন্য দলের  এই গালভরা প্রতিশ্রুতি যে জনমনে খুব একটা ছাপ ফেলেছে এমন প্রমান পাওয়া যায় নি।কারণ দেশ হিসেবে ভারত যে মোটেই দুর্বল নয় তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। প্রশ্ন হচ্ছে এরকম একটি শক্তিশালী দেশ কেন সন্ত্রাসবাদীদের সহজ নিশানায় পরিণত হয়েছিল?স্বাধীনতার সাতদশক পরেও ভারত কেন উন্নত দেশের সারিতে স্থান করে নিতে পারল না? এই দুটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য খুব বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।বিগত ছয় দশক ধরে যে দলটি দেশ শাসন করেছে সেই কংগ্রেস দলের ঘোষনা পত্রের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হবে সস্তা রাজনীতির মাধ্যমে পারিবারিক শাসন কায়েম রাখার জন্য দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা কে কখনই মজবুত করার প্রয়াস হয় নি।বিগত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার নোট বাতিল , জিএসটির মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ কে সুরক্ষিত রাখার জন্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের মতো দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ফলে সন্ত্রাসবাদী হানার ভয়ে এখন আর ভারতবাসীকে দুঃস্বপ্নের রাত কাটাতে হয় না । বিগত পাঁচ বছরে কালোটাকার কারবারীরা দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেতে পারবে না এই ভরষার জায়গা  টুকু তৈরী হয়েছে। এক সময় কংগ্রেসের কোন বিকল্প ছিল না।এবার সমস্ত দেশে বিজেপি কংগ্রেসের চেযে বেশী আসনে প্রার্থী দিয়েছে।শুধু আসন সংখ্যায় নয় বিজেপি সমস্ত দিক থেকেই এখন কংগ্রেসের চেয়ে অনেক বড়  বড় দল। তুলনামুলক বিশ্লেষনের জন্য বিজেপির সংকল্প পত্র ও কংগ্রেসের ঘোষনা পত্র দুটোই পাশাপাশি দেওয়া হল।


   বিজেপির সংকল্প পত্র 2019-2024 :

1.আমরা আগামী 5 বছরে , সকল সীমাকে পুরোপুরিভাবে সীল করব,বিগত 5 বছরে এর অনেক কাজ করা হয়েছে।
2. আমরা আগামী 5 বছরে উপকূলীয় সুরক্ষাকে মজবুত করব।
3.আগামী 5 বছরে নক্সালবাদকে পুরোপুরিভাবে শেষ করব।
4. আমরা জম্মু - কাশ্মীর থেকে ধারা  370 কে তুলে দিতে প্রতিবদ্ধ।
5.আমরা অনুচ্ছেদ  35A কে হটিয়ে দেব।
6. আমরা আগামী 5 বছরে ইউনিয়ন সিভিল কোড চালু করব।
7. আমরা নাগরিকতা সংশোধন বিল লাগু করব।
8. আমরা সকল ছোট ব্যবসায়ীকে 60 বছর বয়সে পেনশন দেব।
9.আমরা সকল গরিব কৃষককে 60 বছর বয়সে পেনশন দেব।
10. সংবিধানের সীমাতে,অযোধ্যাতে শ্রী রাম মন্দির নির্মাণ এর সকল সম্ভাবনাকে খুঁজে বের করার জন্য আবশ্যক চেষ্টা করা হবে।
11. আমরা পুরো চেষ্টা করব,সুপ্রিম কোর্ট এ সবরিমালার আস্থা,পরম্পরা এবং পুজা পদ্ধতির বিষয় রাখা হবে।আমাদের চেষ্টা হবে,আস্থা আর বিশ্বাসের বিষয়ে সাংবিধানিক সংরক্ষণ পাওয়ার।

কংগ্রেসের ঘোষণা পত্র 2019-2024 :

1. আমরা পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এন্টি টর্চার আইন আনব।
2. আমরা  AFSPA এর অধ্যায়ন করে সংশোধন করব।
3.আমরা দেশদ্রোহ আইন শেষ করব।
4. আমরা ধারা  370 কে বদল করব না।
5. আমরা অনুচ্ছেদ 35 A কে হাত লাগাব না।
6. ইউনিয়ন সিভিল কোডের কোনো  উল্লেখ নেই।
7. আমরা নাগরিকতা সংশোধন বিধেয়ককে শেষ করে দেব।
8. জিএসটি তুলে দেব,জিএসটি 2.0 লাগু করব,যেখানে এক ট্যাক্স স্লেব থাকবে।
9. আমরা 5 কোটি গরিব পরিবারকে,যাদের আয় মাসে 12 হাজারের কম,তাদেরকে বার্ষিক 72000 টাকা দেব।
10. আমরা জম্মু-কাশ্মীর থেকে সেনার সংখ্যা কমাব।
11.আমরা আধার আইন বদল করব,আর সরকারি সাবসিডিয়ারি আর ডিবিটি এর জন্য আধার অনিবার্য করব না।

                                        সাধন কুমার পাল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...