সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উত্তরবঙ্গে শূন্য হলেও দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের এত ভাল ফলের রহস্য কী?



                                                             
           
সাধনকুমার পাল:- লোকসভা নির্বাচনে প্রচার চালানোর সময় ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবেন বলে হুমকি দিয়ে রেখে ছিলেন তৃণমূলনেত্রী।এই হুমকি চুনোপুটি তৃণমূল নেতাদের মুখে মুখে ইকো হয়ে ঘুরছিল পশ্চিমবঙ্গের অলিতে গলিতে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। উদ্দেশ্য একটাই আমলা থেকে আমজনতা সবাইকে ভীত সন্ত্রস্ত করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফর্মূলায় নির্বাচন করানো। কিন্তু বিধি বাম। নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদাড়ি এড়িয়ে কিভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফর্মূলা প্রয়োগ করা যায় তা সঠিক ভাবে বুঝে উঠার আগেই উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের নির্বাচন শেষ হয়ে গেল।প্রথম দফায় আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের সময় স্পষ্ট হয়ে যায় স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরীতেই মেশানো হয়েছিল জল।পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সমস্ত বুথে তৃণমূল কংগ্রেস শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং একশো শতাংশ ছাপ্পা হয়েছে সেই গুলিতেই দেওয়া হয়ে ছিল রাজ্য পুলিশ। বিরোধীরা যেখানে শক্তিশালী সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী।ফলে প্রথম দফায ব্যাপক হিংসা ,রিগিং ছাপ্পার অভিযোগ উঠার পর দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।ঠিক এই ভাবে বিভিন্ন দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়তে রাড়তে শেষের দিকে সমস্ত বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হয়।কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্বেও কিন্তু মানুষ রিগিং ছাপ্পার দৃশ্য দেখেছে।ফলাফলে দেখা গেল প্রথম কয়েকটি দফায় অনুষ্ঠিত উত্তরবঙ্গে আটে শূন্য হলেও সর্বশেষ দফায় নয়ে নয়। এর থেকে বলা য়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্বেও ছাপ্পা চালানোর কৌশল তৃণমূল কংগ্রেসের আয়ত্বে এসেছিল সর্বশেষ দফায়।
মনে হতে পারে এই ধরণের বিশ্লেষন এক তরফা ,অতিরঞ্জিত। বুথ ভিত্তিক ফলাফলের আংশিক বিশ্লেষন করে দেখা যাচ্ছে রাজ্য পুলিশের পাহাড়ায় যে সমস্ত বুথে নির্বাচন হয়েছে এবং যে সমস্ত বুথে বিরোধীদের পুলিং এজেন্ট বসতে দেওয়া হয় নি তৃণমূল কংগ্রেস মূলত সেই সমস্ত বুথ থেকেই লিড নিয়েছে।উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিধানসভা কেন্দ্র নাটাবাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেস ১৮৫৫২ ভাটে পরাজিত হয়েছে ।বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের মাথাভাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রে কুড়ি হাজারেরও বেশি ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস পরাজিত হয়েছে।এরকম দৃষ্টান্ত অজস্র।এছাড়া কয়েকটি ওয়ার্ডের ফলাফল উল্লেখ করলেই স্পষ্ট হবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকৃত জনসমর্থন তলানিতে। তৃণমূলনেত্রী স্বয়ং যে ওয়ার্ডের ভোটার সেই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেও ৪৯৬ ভোটে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মালা রায়। ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে এক সময় কাউন্সিলার ছিলেন তৃণমূলনেত্রীর একান্ত আস্থাভাজন মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস।এখন ঐ ওয়ার্ডে কাউন্সিলার অরুপের ভাই স্বরুপ বিশ্বাসের স্ত্রী জুঁই ।এই ওয়ার্ডে ৩৩৪৪ ভোটে হেরে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুই মন্ত্রী শোভনদে'ব চট্টোপাধ্যায় ও শশী পাঁজার বিধানসভা কেন্দ্রে হেরেছে তৃণমূল।পার্থ চট্টপাধ্যায় , সুব্রত মুখপাধ্যায় , জাভেদ খানের বিধান সভা কেন্দ্রেও অনেক ওয়ার্ডে হেরেছে তৃণমূল।তৃণমনূল নেত্রীর সগর্ব দাবি ছিল ' হাসছে পাহাড়, হাসছে  জঙ্গলমহল '। পাহাড় ও জঙ্গলমহল দুটো জায়গাতেই দলকে শোচনীয় ভাবে পারজিত হতে হয়েছে।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হিংসা ,অগ্নি সংযোগ,লুটপাট, চাঁদাবাজির খবর আসছে। বিজেপির জয়ের খবর আসতেই অনেক জায়গাতেই তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী গেরুয়া আবির মেখে ,রাস্তায লাগিয়ে রাখা বিজেপির পতাকা হাতে নিয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বন্নি দিয়ে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর উপর ঝাপিয়ে পড়ছে বলে খবর আসতে শুরু করে।এই ধরণের বিক্ষোভের জেরে লিড দেওয়া সত্বেও সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মাবসুনিয়া এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।দলের অনুমোদন ছাড়া এই ধরণের অরাজগতা থামাতে বিজেপির পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করে , প্রেস কন্ফারেন্স করে এই হিংসার দায় অস্বীকার করে প্রশাসনকে সক্রিয়া হওয়ার আহ্বান জানাতেও দেখা গেছে।তবে এটা বলতেই হবে যে বাম জামানা থেকে শুরু করে তৃণমূল জামানা পর্যন্ত বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি এতটাই বিকৃত করা দেওয়া হয়েছে যে এই সংস্কৃতি থেকে বাংলাকে মুক্ত করা বিজেপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ। #

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...