সাধনকুমার
পাল :-
সদ্য
সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে
শোচনীয় পরাজয়ের পরও রনংদেহি
মমতা।নৈহাটি-ভাটপাড়ায়
গোলমালের জেরে ভয়ানক খাপ্পা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বলেন ,'নির্বাচন
কমিশন চলে গিয়েছে। এখন আমার
হাতেই সবকিছু।কাউকে ছাড়ব
না।জানবেন রেগে গেলে আমি
ভয়ঙ্কর'।
ভাটপাড়ার ধরণামঞ্চে যাওয়ার
সময় রাস্তার ধারে কিছু লোক
'জয়
শ্রীরাম ধ্বন্নি দেন'।এতে
মমতা ক্ষিপ্ত হয়ে  রাস্তায়
নেমে পড়ে হনহনকরে এগিয়ে যেতে
যেতে চিৎকার করে বলতে থাকেন,'
আমার
খাবে ,পরবে
আর গোলমাল পাকাবে?সবকটাকে
তাড়িয়ে ছাড়ব।সব ডাকাত,
ক্রিমিনাল
।জয় শ্রীরাম ধ্বনির
মোকাবিলায় তৃণমূল এখন থেকে
জয়হিন্দ ধ্বনিকে
হাতিয়ার করবে।কেউ ফোন করলে
জয়হিন্দ বলুন ।দেখা হলে  জয়হিন্দ
বলুন'।পরে
নৈহাটির ধরণামঞ্চ থেকে বলেন,
'গাড়ির
সামনে এসে গালাগালি করছে!
সঙ্গে
সঙ্গে অ্যারেষ্ট করতে পারতাম।লোক
গুলিকে চিনে রেখেছি।'
মুখ্যমন্ত্রীর
মতো রাজ্যে প্রশাসনের  সর্বোচ্চ
পদে থাকা একজন ব্যাক্তি এরকম
ভাষায কথা বলতে পারেন কিনা
,কিংবা
সভ্য সমাজের সদস্য হয়ে একজন
সাধারণ ব্যাক্তিও এই রকম ভাষায়
কথা বলতে পারেন কিনা তা বিচারের
ভার না হয় পাঠকের দরবারেই ছেড়ে
দিলাম।কিন্তু রাজ্যে প্রশাসনের
 সর্বোচ্চ পদে আছেন বলে মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরাট 
ক্ষমতা।সেই ক্ষমতার প্রয়োগও
আমরা দেখতে পাচ্ছি।শুধু মাত্র
 মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গালি
মনে  হওয়ার জন্য  'জয়
শ্রীরাম ধ্বন্নি'
 দেওয়া
অপরাধ।এই অপরাধের জন্য পুলিশ
ধরে নিয়ে যাচ্ছে,
কেস
দিচ্ছে।  মজা করে মানুষ বলছেন
পশ্চিমবঙ্গে কাজীর শাসন
চলছে।কারণ কাজীর শাসনে চৈতন্য
মহাপ্রভুকে হরেকৃষ্ণ মহানাম
করতে বারণ
করা হয়েছিল।পরে অবশ্য মহাপ্রভুর
অহিংস অভ্যুথ্থানের চাপে
প্রাণভিক্ষে চেয়ে কাজী নিষ্কৃতি
পান। 
জানিনা
'জয়
শ্রীরাম ধ্বনি
নিয়ে চৈতন্য মহাপ্রভুর
ষ্টাইলে পশ্চিমবঙ্গে অহিংস
অভ্যুথ্থান
হবে কিনা। তবে  টেলিভিশনের
পর্দায় মুখ্যমন্ত্রীর  জয়
শ্রীরাম ধ্বনি শুনে  ক্ষিপ্ত
হয়ে  রাস্তায় নেমে তেড়ে যাওয়ার
দৃশ্য  দেখে আমার বেশ কিছু
ঘটনা মনে পড়ছে।
হয়তোবা এই সমস্ত ঘটনা থেকেও
মুখ্যমন্ত্রীর  'জয়
শ্রীরাম ধ্বনি'
সমস্যার
সমাধান খুঁজে
পাওয়া যেতে পারে। আমি তখন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া।ছাত্রাবাসে
কেউ একজন বুঝতে পারল কম্পিউটার
সাইন্সের এক নবাগত  পড়ুয়া বাঘা
বললে ভীষন ক্ষেপে যায়। কখনো
কখনো তেড়ে আসে ।জানাজানি হওয়ার
পর অনেকেই একটু মজা নেওয়ার
জন্য বাঘা বলেই ছুটে পালাতো।আড়াল
থেকে যারা  বাঘা চিৎকার করতো
বাঘা তাদের অশ্রাব্য ভাষায়
গালাগালি করত। একসময় এমন হল
যে ছাত্রাবাসের শুধুমাত্র 
'বেয়াদপ'
ছাত্ররা
নয় নিপাট ভদ্রলোক আবাসিকরাও
একটু মজা নেওয়ার জন্য বাঘা
বাঘা বলে চিৎকার করে উঠতো।শেষে
যাতনা সহ্য করতে না পেরে
বাঘা  ছাত্রাবাস ছেড়ে দিল।
তাতেও কিন্তু নিষ্কৃতি মিলল
না।কারণ বাঘা এতটাই বিখ্যাত
হয়ে গিয়ে ছিল যে ডিপার্টমেন্টে,ক্যাম্পাসে
ওকে দেখলেই সবাই বাঘা বাঘা
বলে চিৎকার করে উঠতো।এমনকি
অধ্যাপকরাও নিচুস্বরে নিজেদের
মধ্যে বাঘা বলে হাসি মজা করতো।
কিছুদিন পর দেখা গোল বাঘা আর
ক্যম্পাসেই ঢুকছে না।এই
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঘার আর পড়া
সম্ভব হলো না।
এবার
 কলেজের  একটি ঘটনা বলি।বাণিজ্য
বিভাগের এক
নতুন তরুণি অধ্যাপিকা
ক্লাসে ঢুকে
দেখলেন ব্ল্যাকবোর্ডে চক
দিয়ে একটি উলঙ্গ মেয়ের
ছবি আঁকা রয়েছে।ছাত্ররা
মুখ টিপে
টিপে
হাসছে।সবাই ম্যাডামের
প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য উৎসুক
হয়ে আছে।অধ্যাপিকা ক্লাসে
ঢুকে শান্তভাবে  ব্ল্যাকবোর্ডের
দিকে  কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে
চক হাতে নিয়ে উলঙ্গ ছবিটিতে
শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলেন
'এবার
বলোতো কেমন লাগছে?'।
সমস্ত ক্লাশ নির্বাক।অধ্যাপিকা
বলতে লাগলেন ছবিটি য়ে এঁকেছে
সে ভালো শিল্পী হলেও ওর ভাবনায়
কিন্তু একটু ভুল হয়েছে। কারণ
কোন বাথরুমের দৃশ্যে আগের
ছবিটি উপযোগী ছিল কিন্তু এটা
শ্রেণি কক্ষ এখানে পোশাক-আশাকের
প্রয়োজন আছে।ক্লাশে সবাই
মাথা নিচু করেই কথা গুলি শুনছিল।
সেদিনের পর থেকে আর কোন দিন
ঐ অধ্যপিকাকে কোন রকম অস্বস্তিকর
পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হয়
নি।
এবারের
লোকসভা নির্বাচন চলার সময়
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কে অনেক
জায়গাতেই মোদী মোদী ধ্বন্নি
শুনতে হয়েছে। মোদী মোদী ধ্বন্নি
শুনে প্রিয়াঙ্কা তেড়ে গিয়েছেন
এমন কথা শোনা যায় নি ।বরং
উল্টোটাই হয়েছে।মধ্যপ্রদেশের
ইন্দোরে এক জনসভায় যাওয়ার
সময় রাস্তার পাশের জনতা মোদী
মোদী বলে চিৎকার করতে থাকলে
প্রিয়াঙ্কা গাড়ি থেকে নেমে
মোদী ভক্তদের শুভেচ্ছা দেন,
হাত
মেলান ,হাসি
মুখে ছবিও তোলেন।ঘটনার
আকষ্মিকতায় মোদী ভক্তরাই
ব্যাক ফুটে চলে যান।একই ঘটনা
কলকাতায় মদন মিত্রের রোড শোয়ে
হয়েছে।রোড শো চলাকালিন যারা
মোদী মোদী বলে চিৎকার করছিলো
তাদের ব্যাপারে সংবাদিকদের
প্রশ্নের উত্তরে মদন বলেন
ওরা মুখে মোদী মোদী বললেও ভোট
আমাকেই দেবে।ব্যাপারটি কিন্তু
ওখানেই মিটে গেছে।  জয় শ্রীরাম
ধ্বন্নি শুনে মুখ্যমন্ত্রী
মমতা এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন
কেন তা উনি ছাড়া আর কেউ বলতে
পারবেন বলে মনে হয় না।তবে এই
বিষয়টি নিয়ে কিন্তু আট থেকে
আশি সবাই হাসি মস্করা করছেন।#

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন