সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরে মূর্তিমান আতঙ্কের আরেক নাম সাধ্বী প্রজ্ঞা


                                                 
                                                                                                                           
সাধনকুমার পাল-মধ্যপ্রদেশের ভোপাল লোকসভা কেন্দ্রে সাধ্বী প্রজ্ঞা ঐ প্রদেশেরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংকে তিন লাখেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন ।বিহারের বেগুসরাই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদী মুখ গিরিরাজ সিং টুকরে টুকরে গ্যাং এর এক নম্বর নেতা কানাইয়া কুমার কে চার লাখ কুড়ি হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন।পশ্চিমবঙ্গে যাদবপুর কেন্দ্রের প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ছাড়া বাকি সমস্ত বাম প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এবারই বামফ্রন্ট সবচেয়ে কম পাঁচটি আসনে জয়ী হয়ে জাতীয় দলের মর্যদা খুইয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে। প্রগতিশীল,ধর্মনিরপেক্ষ,বিজ্ঞানমনস্ক,এগিয়ে থাকা ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত গ্যাং অফ ইন্ডিয়া সর্ব শক্তি নিয়োগ করেও কানাইয়া, দিগ্বিজয় কিংবা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য দের জেতাতে পারলেন না। ভারতীয় ভোটারদের সামনে গ্যাং অফ ইন্ডিয়ার স্বরুপ উদ্ঘাটিত।
সিপিএম,কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দল গুলি যে শক্তের ভক্ত নরমের যম তা আরো একবার প্রমাণ হলো।ইসলামিক জেহাদিরা বিশ্বজুরে যত ভয়ঙ্কর হত্যালীলা চালাক না কেন সিপিএম বা কংগ্রেসের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ দল কখনই এই নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করে না।কিন্তু 'সর্বে ভবন্তু সুখীন:' আদর্শের অনুসারী হিন্দুদের নিয়ে এদের মুখে নানা ফুলঝুড়ি ছুটতে থাকে।পাকিস্থান জিন্দাবাদ,আল্লা -হু-আকবর ধ্বনি শুনলে এরা নির্লিপ্ত থাকেন,জয় শ্রীরাম ধ্বনি শুনলে এরা অস্বস্তিবোধ করেন, তেড়ে যান ,পুলিশ ডাকেন গত ৩ মে বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এক সভায় সিপিএম মহাসচিব সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘রামায়ণ আর মহাভারত এর মত ধর্মগ্রন্থে হিংসার ঘটনার কোটি কোটি উদাহরণ আছে।” , ইয়েচুরির আরো বক্তব্য ‘ আরএসএস প্রচারকেরা একদিকে এই গ্রন্থ গুলোর উদাহরণ দেয়, অন্যদিকে দিকে আবার তাঁরাই বলে, হিন্দুরা হিংস্র হতে পারেনা। এই কথার মধ্যে কি লজিক আছে যে, এক বিশেষ ধর্মের মানুষেরাই শুধু হিংসা ছড়ায়..... আরএসএস তাঁদের প্রাইভেট আর্মি বানাচ্ছে।”
হিন্দুদের বিরুদ্ধে তরবারি হাতে ধর্ম প্রচার কিংবা নরহত্যার মাধ্যমে সাম্রাজ্য বিস্তারের কোন রকম দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়ে, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি রামায়ণ মহাভারতের মতো মানবতার আদর্শবাহী বিশ্ব ঐতিহ্যের অঙ্গ কালজয়ী গ্রন্থগুলির কথা উল্লেখ করে হিন্দুদের হিংস্রতার সাথে যুক্ত করার চেষ্ঠা করেন।মনে রাখতে হবে এই গ্রন্থ দুটি কোন সম্প্রদায় বিশেষের ধর্মগ্রন্থ নয়। এ গুলি ভারতের সম্পদ, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ভারতবাসীর গর্ব ও অহঙ্কার ।এই গ্রন্থ দুটিকে ছোট করা মানে ভারতাত্মা কে অপমান করা।রামায়নে বর্ণিত রামরাজ্য ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে দেশ কালের সীমা উত্তীর্ণ এক আদর্শ রাজনৈতিক সামাজিক ব্যবস্থা।সে জন্য রামরাজ্যের কথা লেগেই থাকতো গান্ধীজীর মুখে।এই গ্রন্থ দুটিতে বেধে দেওয়া সুর 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন' সীতারাম ইয়েচুরিদের চোখে হিংসা।
সীতারাম ইয়েচুরির এই হিংসা তত্ত্বের মাইন্ডসেট বুঝতে হলে যোশেফ স্তালিনের সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করতে হবে। কমিউনিষ্ট পার্টির কাজের ভিত্তি কি, প্রশ্ন করা হয়েছিল যোশেফ স্তালিন কে।উত্তরে তিনি জানিয়ে ছিলেন 'Intense hatred is the basis of our work'. অর্থৎ তীব্র ঘৃণাই আমাদের কাজের ভিত্তি। ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত 'দ্য ব্ল্যক বুক অফ কমিউনিজম: ক্রাইমস,টেরর,রিপ্রেশন' এ দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে এই বিশ্বে কমিউনিষ্ট আন্দোলনের নামে ৯৪ মিলিয়নেরও বেশি নির্দোষ মানুষ কে খুন করা হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গে বাম জামানায় অধিকাংশ রাজনৈতিক খুন নথী ভুক্ত হয় নি।একটি বিশ্লেষন  ( Mainstream weekly Vol.XLVIII no-34 August 14 ,2010) বলছে ১৯৭৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সময় সীমার মধ্যে বামফ্রন্ট শাসিত পশ্চিমবঙ্গে ৫৫হাজার মানুষ খুন হয়েছে।বিজন সেতুতে প্রকাশ্য দিবালোকে আনন্দমার্গ সন্ন্যাসীদের পুড়িয়ে মারার মতো হিংস্রতার নজির সৃষ্টি হয়ে ছিল বাম জামানায়। স্তালিন যা বলেছেন তা যে কথার কথা নয় তা এই পরিসংখ্যানেই প্রমানিত।এহেন স্তালিনের চেলারা পুরাণের দেবাসুর লড়াই, রামায়ণ মহাভারতের ধর্মরক্ষার লড়াইয়ের মধ্যেও যে হিংসার তত্ত্ব খুঁজে পাবেন এই বিষযে আর অবাক হওয়ার কি আছে। বিশ্বের নানা দেশে দাপিয়ে বেড়ানোর ইতিহাস থাকলেও ইসলামিক দেশ গুলিতে কমিউনিষ্ট পার্টিগুলির দাঁত ফোটানোর দৃষ্টান্ত নেই।চিন রাশিয়ার লেজুর বৃত্তির লক্ষ্য নিয়ে জন্মগ্রহন করে ভারতের মাটিতে প্রায় একশ বছর ধরে কোন রকমে টিকে থাকলেও দেশভাগের সময় পাকিস্থানের পক্ষে ওকালতি করা সত্বেও ঐ দেশে কিংবা বাংলাদেশে কমিউনিষ্ট পার্টির প্রবেশের হিম্মত হয় নি ।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে রামায়ণ মহাভারতের মতো ধর্মগ্রন্থ থেকে হিন্দুরা অহিংসা ও পরমত সহিষ্ণুার শিক্ষা পায় বলেই সীতারাম ইয়েচুরিদের মতো চিন-রাশিয়ার দালালরা এদেশে রাজনীতি করার ,হিংসা ছড়ানোর এবং জেহাদি ভোটের লোভে হিন্দুদের গাল দেওয়ার সুযোগ পান।শুধু কমিউনিষ্টরা নয় , হিংস্রতার বিচারে কংগ্রেস দলও কম যায় না।শুধু মাত্র ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গাতে কংগ্রেস নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহনে সরকারী হিসেবে ২৮০০ জন এবং বেসরকারী হিসেবে ৮০০০-১৭০০০ জন শিখ সম্প্রদায়ের নির্দোষ মানুষ কে নি:শংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। এখন হিন্দুরা জাগছে। ফলে এখন যা প্রবনতা তৈরী হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে এখন যারা জেহাদী ভোটের লোভে হিন্দু সমাজের গায়ে হিংস্র কিংবা সন্ত্রাসবাদী তকমা লাগানোর প্রয়াস করবে কালপ্রবাহে তাদের স্থান হবে ভারতীয় রাজনীতির জাদুঘরে।
                                                       

২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে রাজস্থানের জয়পুরে এক জনসভায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে সর্বপ্রথম হিন্দু সন্ত্রাসের কথা বলে আরএসএস সহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন গুলিকে জড়ানোর চেষ্ঠা করেছিলেন ।অবশ্য বক্তব্যের ঘন্টা খানেক পরে সাংবাদিকরা চেপে ধরলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তিনি আসলে 'হিন্দু সন্ত্রাস' নয় 'গৈরিক সন্ত্রাসের' কথা বলতে চেয়েছেন।অর্থাৎ একটি ভুল সংশোধন করতে গিয়ে আরো একটি ভুল। শুধু আর এস এস, বিজেপি নয় এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিল ইউপিএ-র শরিক দল এন সি পিও। মায়াবতী তো সরাসরি বলেছিলেন ধর্ম হিসেবে সন্ত্রাসের সাথে জড়ানোতে হিন্দুদের মধ্যে তীব্র রোষের সঞ্চার হয়েছে।সে সময় মওকা বুঝে লস্করই-তৈবার প্রতিষ্ঠাতা কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সৈয়দ সিন্ধের বক্তব্য সমর্থন করে পাকিস্থানের যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী ঘটনার দায় ভারতীয় সংগঠন গুলির ঘাড়ে চাপিয়ে ভারত কে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ঘোষনার দাবী জানিয়েছিলেন।পরীক্ষামুলক ভাবে সিন্ধের ছোড়া ঢিলের প্রতিক্রিয়া বুঝে দল হিসেবে কংগ্রেসও এই বক্তব্যের দায় নিতে অস্বীকার করেছিল।কিন্তু এই ড্যামেজ কন্টোল যে কাজে আসে নি ২০১৪এর লোক সভা নির্বাচনে ইউপিএ-এর শোচনীয় পরাজয়ে তা প্রমাণ হয়ে গেছে।
সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবের বক্তব্য অনুসারে হিন্দু সস্ত্রাসের ব্যাপারে নাকি তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে ছিল।কিন্তু তথাকথিত 'হিন্দু সন্ত্রাস' তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিগেশন এজেন্সির (NIA) হয়ে কর্মরত গোয়েন্দারা তখন বলে ছিলেন সমঝতা এক্সপ্রেস (ফেব্রুয়ারি ২০০৭),মক্কা মসজিদ(মে ২০০৭),আজমির শরিফ(অক্টোবর ২০০৭) বিস্ফোরণ কান্ডে অভিযুক্তদের আর এস এস এর সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকলেও আদালতে তা প্রমাণ করা কঠিন। এই তদন্ত আধকারিকদের আরো বক্তব্য এই সমস্ত ঘটনায় যত জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে তার বেশির ভাগটাই ছিল ওদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে।এই সমস্ত প্রমাণ কতটা আদালত গ্রাহ্য হবে তা নিয়েও ঐ সময়ই গোয়েন্দারা সন্দেহ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ সমঝোতা এক্সপ্রেস ও মক্কা মসজিদ হামলায় অভিযুক্ত স্বামী অসীমানন্দ তদন্ত চলাকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতিকে লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন যে ওঁকে এত ভয়ংকর অত্যাচার করা হয়েছে যে বাঁচার তাগিদে তদন্ত অফিসারদের বানানো বয়ানে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছে।
২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণে ৬ জন মারা গিয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন ১০১ জন। জঙ্গি হামলা ঘটানো এবং তার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে প্রজ্ঞা ঠাকুরের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রজ্ঞা ঠাকুর অভিযোগ করেছেন মালেগাঁও বিস্ফোরণের দায় জোর করে তাঁকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা হয়েছিল। সেই সময়ের সরকার হিন্দুত্বকে টার্গেট করেছিল। মালেগাঁও বিস্ফোরণ মুসলিমদের ক্ষতি করার জন্য ঘটানো হয়, এই কথাও কবুল করানোর চেষ্টা হয়েছিল। জেলে তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের কথা বলতে গিয়ে প্রজ্ঞা ঠাকুর বিভিন্ন সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।তাঁর দাবি, জেলে তাঁকে টানা ২৪ দিন মারধর করা হয়। তাঁকে জল ছাড়া আর কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। মারধরের সময় গালিগালাজ করা হত। বেল্ট দিয়ে মারা হত। উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হত। পোশাক খুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হত।
তাঁর দাবি, শুধু মারধর করে ছেড়ে দেওয়া হত না। মারের জেরে তাঁর সারা শরীরে দাগ হয়ে যেতো, রক্ত বেরোত। তখন নুন জল গরম করে এনে তাতে হাত ডুবিয়ে দেওয়া হত। কিছুক্ষণ পর ফের মারধর করা হত।এভাবে মারধরের জেরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন। এমন অবস্থা হয়েছিল যে তিনি হাসপাতালের বেডে এপাশ-ওপাশও করতে পারতেন না বলে দাবি করেছেন সাধ্বী প্রজ্ঞা।মিথ্যে শিকারোক্তি আদায়ের জন্য প্রজ্ঞার উপর যে অত্যাচার হয়েছে তার কোন নজির নেই।আজমল কসাভের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবদীর উপরও এমন অত্যচারের নজির নেই।
সংবাদসংস্থা এএনআই প্রকাশিত একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, প্রজ্ঞা ঠাকুর বলছেন, ”আমি হেমন্ত কারকারেকে(মুম্বই এটিএস প্রধান) বলেছিলাম, আমার বিরুদ্ধে যখন কোনও প্রমাণ নেই, আমায় ছেড়ে দিন। উনি বলেছিলেন, উনি প্রমাণ জোগাড় করে আনবেন কিন্তু আমায় ছাড়বেন না। আমি ওঁকে বলেছিলাম- আপনি শেষ হয়ে যাবেন।”প্রজ্ঞা ঠাকুরের দাবি, কারকারে নাকি প্রজ্ঞাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় তাঁকে শাস্তি দেওয়ানোর জন্য ভগবানের কাছে যেতে হবে কিনা। প্রজ্ঞা তাঁকে বলেছিলেন, ইচ্ছে হলে যেতে পারেন। এর পরই প্রাক্তন এটিএস অফিসার মারা যান বলে দাবি মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্তের।২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার সময়ে দক্ষিণ মুম্বইয়ের কামা হাসপাতালের সামনে আজমল কাসভ ও তার সঙ্গী আবু ইসমাইলের গুলিতে নিহত হন হেমন্ত কারকারে ও অন্য দুই পুলিশ কর্মী অশোক কামটে এবং বিজয় সালাসকর।
                                                  

মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুর এখন জামিনে মুক্ত। এবার ভোপালে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন।সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর বলে ফেলেন 'আমার অভিশাপেই মরেছেন পুলিশ অফিসার হেমন্ত কারকারে'।ব্যাস আর যায় কোথায় হিন্দু সন্ত্রাস তত্ত্বের প্রবক্তারা শহিদের অপমান বলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন । ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে হইচই বাধানোর চেষ্টা হলো। এদিনই বিজেপি জানিয়ে দিল, ওই মত সাধ্বী প্রজ্ঞার ‘ব্যক্তিগত’। জেলে অত্যাচার সহ্য করেছিলেন বলেই সম্ভবত সাধ্বী ওই মন্তব্য করে ফেলেছেন।
মুম্বই পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখার অফিসার হেমন্ত কারকারে সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইলেন বিজেপির নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এবং বললেন আমার মন্তব্য ফিরিয়ে নিচ্ছি।। ২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় সাধ্বীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছিলেন মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখার প্রধান হেমন্ত কারকারে। সাধ্বী প্রজ্ঞা বলেন, 'আমার মন্তব্যে যদি শত্রুরা খুশি হয়ে থাকে, তাহলে ওই কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমি ক্ষমাও চাইছি। দেশের শত্রুরা খুশি হয়, এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। আমি যা অত্যাচার সহ্য করেছি, তার প্রতিকার করা যাবে না। কিন্তু হেমন্ত কারকারে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে মারা গিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তিনি শহিদ'
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য সাধ্বী প্রজ্ঞা ক্ষমা চাইলেন ঠিকই কিন্তু কিছু প্রশ্ন রয়েই গেল।হেমন্ত কারকারে জঙ্গীর গুলিতে মৃত্যু বরণ করে সর্বোচ্চ বলিদান দিয়েছেন।এর জন্য ওঁর শহিদের মর্যদা প্রাপ্য।তাই বলে ওর জীবনের সমস্ত কৃতকর্মই বৈধ হয়ে যাবে এমনটা নয়।মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম কে আমরা গভীর শ্রদ্ধা করলেও হস্তীনাপুর রাজসভায় দ্রৌপদির বস্ত্র হরণের ঘটনা মুখবুজে সহ্য করার জন্য তীব্র সমালোচনা করতে পিছপা হই না।রামায়নের রাজা দশরথকে শ্রদ্ধার চোখে দেখলেও অন্যায় ভাবে রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠানোর মতো কৃতকর্মকে আমরা নিশ্চই সমর্থন করি না। প্রাতস্মরণীয় হলেও গান্ধীজীর অনেক কাজ এখনো তীব্র ভাবে সমালোচিত হয়।যেমন গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়া সত্বেও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে সরিয়ে 'কাছের মানুষ পট্টভি সিতারামাইয়া কে কংগ্রেস সভাপতির পদে বসানো,খিলাফৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ,চৌরিচেরার ঘটনার প্রতিবাদে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের মতো এমন অনেক ঘটনা আছে যার জন্য আমরা সমালোচনা করি।তবে এই ধরণের সমালোচনা করলে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাবে এমন কিন্তু নয়। এরকম অজস্র ঘটনা আছে যা থেকে সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যাবে যে সাধ্বী প্রজ্ঞা এমন কিছু খারাপ কথা বলেন নি যার জন্য ওঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।ভোটের বাজারে কৌশল গত কারণে ক্ষমা চাইলেও সাধ্বী প্রজ্ঞা যে মন থেকে তা করেন নি তা বলাই বাহুল্য। হেমন্ত কারকারে শহীদের মর্যদা পেলেও একটি জলজ্যান্ত মিথাকে সত্য বলে চালানোর কংগ্রেসী ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবেন না। সাধ্বী প্রজ্ঞা কে প্রার্থী করে বিজেপি এক ঢিলে দুই পাখী মারতে চেয়েছে।এক 'হিন্দু সন্ত্রাস' সেন্টিমেন্টকে ভর করে ছত্রিশগড়, রাজস্থান , মধ্যপ্রদেশের মতো হারানো সাম্রাজ্যের মাটি ফেরানো, দুই ভোটের বাজারে সাধ্বী কে দিয়ে মুখ খুলিয়ে ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মুখোশ খুলে দেওয়া।স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দু বিরোধী চক্রান্তের জীবন্ত সাক্ষী সাধ্বী প্রজ্ঞা এখন কংগ্রেস তথা তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষ শিবিরের সামনে মুর্তিমান আতঙ্ক।##

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...