সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিজেপিতে বেনোজল, সমাধান কোন পথে?


                                                 

লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ১৮ টি আসনে জয়ী হতেই দল বদলের হিড়িক পড়ে গেছে।এই দুদিন আগেও যারা বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ দল বলে গাল পেড়েছে তারা লোকসভার ফলাফল প্রকাশিত হতেই গেরুয়া পাঞ্জাবি পরে বিজেপিতে শামিল হচ্ছে।বাদ যচ্ছে না সংখ্যা লঘুরাও।আদর্শগত কারণে এই দল বদলের ঘটনা ঘটছে এমন কথা অন্ধ সমর্থকরাও বলবেন না।এই দল বদলের কারণ হিসেবে দুটো বিষয় কে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এক, বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেসের জামানা মিলে প্রায় চার দশকে এই বাংলায যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা হল ক্ষমতাসীন দলের ছত্র ছায়ায় থাকলে সাত খুন মাফ অর্থাৎ তোলাবাজি , দাদাগিরি, জুলুমবাজি থেকে শুরু করে যা খুশি তাই করার অধিকার জন্মায় ।এই ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতা বদলের সম্ভাবনা তৈরী হতেই রাজনীতির ফড়ে,তোলাবাজ, জুলুমবাজরা দল বদল করে নিজেদের অবস্থান পাকা পোক্ত করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক।দুই, গ্রাম পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি ,পৌরসভা গুলি যেন সোনার খনি।বাম জমানা থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেখা গেছে যারাই এই সোনার খনির নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব পেয়েছেন তারাই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।চলতি কথায় একবার পঞ্চায়েত প্রধান হতে পারলে পাঁচ পুরুষ , মন্ত্রী হতে পারলে সাত পুরুষ বসে খেলেও শেষ করা হবে না।তৃণমূল ক্ষমতায় এসেই মার ও মামলার ভয় দেখিয়ে রাজ্যের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি ,পৌরসভা গুলি দখল করে নেয়।জোর করে গ্রাম পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি ,পৌরসভা গুলি দখলের ফলে দায়হীন ক্ষমতা ভোগ করার সুযোগ আসে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের।জনমত এটাই যে এই দায়হীন ক্ষমতা ও দল ভাঙিয়ে দ্রুত দল গড়ার নীতিই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বনাশের কারণ। এই দায়হীন ক্ষমতা ভোগ ও অবাধ দুর্নীতির অধিকার তৃণমূল কংগ্রেস কে এতটাই দুর্বিনীত ও অহংকারী করে তোলে যে দলবদলুদের নিয়ে গড়া ফাঁপা সাংগঠনিক ভিতের উপর দাড়িয়ে সর্বস্তরে রাজ্য কে বিরোধী মুক্ত করার পরিকল্পনা এটে ফেলে। সেই পরিকল্পনা রুপায়ন করতে নির্লজ্জ ভাবে প্রশাসন কে কাজে লাগিয়ে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত বা পৌরসভা গুলি দখল করে নেয়।রাজ্যের সর্বস্তরে এই ধরণের অনাচার দেখে মানুষের মধ্যে জমতে থাকে ক্ষোভ।লোকসভা নির্বাচনে সুযোগ পেতেই মানুষ ইভিএমে সেই ক্ষোভ উগরে দেয়।উত্তরবঙ্গে তো এখন এমন পরিস্থিতি যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা বাইরে এলেই মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন।
                                               

প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট ও নিজস্ব রসায়নে ভোটে লড়াই করে , সংগঠন গড়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি লোকসভায় ১৮টি আসন দখল করেছে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে হলে বিজেপির আরো অনেক ভোট দরকার।সেজন্য অন্য দল থেকে আসাদের দলে নেওয়াও অত্যন্ত জরুরী।যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি ,পৌরসভার সদস্যরা বিজেপিতে যুক্ত হতে চাইছে তাদের কে বিজেপি ফিরিয়ে দিচ্ছে না। কারণ এই 'সোনার খনি' গুলি হাতছাড়া হলে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস আরো শক্তি হারাবে এবং বিজেপির নবান্ন দখল অনেক সহজ হবে। তবে মনে রাখতে হবে এই সমস্ত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা কতটা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে সে বিষয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। কারণ পঞ্চায়েত ভোটের নামে সংগঠিত এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে এরা ক্ষমতা দখল করেছে।তবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দুর্নীতি মুক্ত সুশাসন কামি বাংলার মানুষ এই সহজ পথে বিজেপি কলেবর বৃদ্ধির মধ্যে কিন্তু অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে গ্রাম পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি , পৌরসভা নামক 'সোনার খনি' গুলির প্রভাবে বিজেপির লোকেরা তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দুর্নীতি গ্রস্থ হয়ে উঠবে না তো? তৃণমূল কংগ্রেসের যে সমস্ত নেতাকর্মীর দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দিয়েছে তাদের দলে স্থান দিলে আহত হবে মানুষের প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভাবাবেগ। কোন পথে করবে বিজেপি এই আহত ভাবাবেগের মোকাবিলা? দলবদলের ফলে দখলে আসা পঞ্চায়েত পৌরসভা গুলির মাধ্যমে ক্ষুদ্র আকারে হলেও কী বিজেপি দুর্নীতি মুক্ত সুশাসনের নজীর তুলে ধরতে পারবে?এমন হাজারো প্রশ্ন এখন রাজ্যবাসীকে আলোড়িত করছে। রাজ্য বিজেপিকে আত্মচিন্তন, আত্মমন্থন করে অতিদ্রুত এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে । বেনোজল প্রবেশ করলেও তা শুদ্ধিকরণ করে বিজেপি যে বিজেপিতেই থাকবে, তৃণমূল হয়ে যাবে না মানুষের মনে এই বিশ্বাস উৎপন্ন করতে হবে। বিজেপির নবান্ন দখল এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বিগত চারদশক ধরে বাংলার মানুষ সুশাসন দেখে নি। ফলে বিজেপিকে ঘিরে ক্রমশই উঁচু হচ্ছে মানুষের প্রত্যাশার পাহাড়।দলের জন্মভুমি শ্যামাপ্রসাদের বাংলার হারোনো গৌরব ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন সাকার হওয়ার উজ্জল সম্ভবনা দেখে আশায় বুক বাধছেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির সমস্ত স্তরের নেতা কর্মীরাও।তবে এখানে সুশাসন ফিরিয়ে আনার পথে সবচেয়ে বড় বাধা বাংলার চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি।এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগী হতে হবে বাংলার নাগরিক সমাজকেও। #
                                        সাধনকুমার পাল



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...