কাটমানি
ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ এখন
উত্তাল।সন্দেহ নেই আমজনতার
আস্থা ফেরাতে ,
দলের
দুর্নীতি গ্রস্থদের শিক্ষা
দিতে ,
ভাবমূর্তি
উদ্ধার করে দল বাঁচাতেই
তৃণমূলনেত্রী কাটমানি ইস্যু
বাজারে
ছেড়েছেন।
সারদা নারদা
কেলেঙ্করী 
সামনে আসার
পর যদি তৃণমূল নেত্রী দলের
দুর্নীতি গ্রস্থদের বাঁচাতে
পথে না নামতেন তাহলে আজকে হয়তো
এই দিন দেখতে হতো না। অবশ্য
সে সময়  ক্ষমতার দম্ভ নেত্রীকে
বুঝতেই দেয়নি যে পায়ের তলার
মাটি এত
দ্রুত  আলগা
হচ্ছে ।এই দম্ভই নেত্রীকে
বুঝিয়েছে,
 তিনি
যা বলবেন রাজ্যের মানুষ সেটাকেই
বেদ বাক্য মনে করে  বিশ্বাস
করবে।মানুষ
বলছে ,লোকসভা
 নির্বাচনের
বিজেপি ১৮টি আসনে জিতে চমকপ্রদ
ফল করার পর স্তাবক পরিবৃত হয়ে থাকা তৃণমূল নেত্রীর পা
 মাটিতে পড়ল। বুঝলেন এবার
সতর্ক না হলে ভরাডুবি
অবশ্যম্ভাবী।সিপিএমও
শেষ সময়ে নিয়োগে অবৈধ লেনদেন
আটকাতে স্কুল সার্ভিস কমিশন
গঠনের 
মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে
ছিল।কিন্তু ভরাডুবি আটকাতে
পারে নি। কারণ ততদিনে মানুষের
আস্থা চলে গিয়ে ছিল।কাটমানি
ইস্যুতে এখন যে সমস্ত বিক্ষোভ
দেখা য়াচ্ছে সেগুলি সবই ছোটখাট।
কারণ তৃণমূল কংগ্রেস এখনো
ক্ষমতাসীন থাকার জন্য রাঘব
বোয়ালরা সব প্রশাসনের ঘেরাটোপে
থাকেন। এই
 ঘেরাটোপ
চলে গেলে
রাঘব বোয়ালদের ঘিরে শুরু বড়সড়
 হবে বিক্ষোভ।
দল বদল করেও যে কাটমানি বিক্ষোভের
হাত থেকে নেতারা রেহাই পাচ্ছন
না এমন দৃষ্টান্তও ইতিমধ্যেই
তৈরী হয়েছে।
বিজেপি
সভাপতি দিলীপ
ঘোষও ইতি মধ্যেই দলবদলুদের
উদ্দেশ্যে বলেছেন,
    কাটমানি
 বুঝিয়ে
দিয়ে  দলে আসুন।অর্থাৎ দলবদলুরা
কাটমানি ইস্যুতে বিক্ষোভের
মুখে পড়লে বিজেপি পাশে দাড়াবে
না। তবে
কাটমানি ইস্যুতে এখনো যতটা
আন্দোলন হয়েছে তা হিমশৈলের
চুড়া মাত্র।কারণ এমন মানুষের
সংখ্যাই বেশি যারা ভাবে,
যা
গেছে তো
গেছে টাকা
উদ্ধারের জন্য ঝুট
ঝামেলায় যাওয়ার দরকার কি।
কাটমানির মতো
 ক্রনিক
পুরাতন দুরারোগ্য ব্যাধি
সারাতে
হলে এই ধরণের মানুষ গুলিকে 
সামনে এনে এক
দীর্ঘ মেয়াদী সামাজিক
আন্দোলন
সংগঠিত করা প্রয়োজন। এই কাজ
একমাত্র  সামাজিক সংগঠন গুলির
পক্ষেই করা সম্ভব। ভোটমুখী
রাজনীতির
ক্ষণস্থায়ী
আন্দেলনের
পরিসর থেকে
বের করে কাটমানি
ইস্যু সামাজিক
আন্দোলনের রুপ দিতে পারলে 
এই রোগের প্রতিকার সম্ভব।
পরিস্থিতি
বিশ্লেষন করলেই বোঝা যাবে 
সিপিএমের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের
এই বিলম্বিত বোধোদয় ধস
রুখতে সহায়তা করবে এমন বিশ্বাস
বোধহয় দলের কট্টর সমর্থকরাও
করে না।
লোকসভা
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের
পর উত্তরবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের
অনেক নেতা-কর্মী
এমন কি  মন্ত্রী,
এমএলরাও
 জনরোষের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে
পারছেন না।কোন তৃণমূল কংগ্রেস
কর্মী আক্রান্ত হলে থানায়
অভিযোগ জানানোর মতো কর্মী
পাওয়া যাচ্ছে না। সাহসে ভর 
করে যারা বের হচ্ছেন তাদের
সিংহভাগই  জনরোষের মূখে পড়ছেন।
দল বদল করে  বিজেপিতে যোগদানের
ফলে বিভিন্ন পুরসভা,
গ্রামপঞ্চায়েতে
 ক্ষমতা হারিয়ে  তৃণমূল ক্রমশই
কোনঠাসা হচ্ছে।জনসমর্থন
এতটাই তলানিতে যে প্রশাসন
সক্রিয় হয়েও তৃণমূলের ভাঙ্গন
রোধ করতে পারছে না। সেজন্য
তৃণমূল নেতাদের ঘিরে  এই ধরণের
ভিড়,
বিক্ষোভ
যতটা না রাজনৈতিক ,
তার
চেয়ে অনেক বেশি স্বাভাবিক ও
স্বতস্ফুর্ত ।বাম জামানার
শেষের দিকে বামফ্রন্টের 
নেতা-নেত্রীদের
  বিরুদ্ধে যে ধরণের জনরোষ
দেখা যাচ্ছিল বর্তমানে তৃণমূল
নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধেও
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে
দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে
এত কম সময় ক্ষমতায় থেকে তৃণমূল
কেন এতটা জনরোষের মুখে পড়ছে?
এই
জনরোষের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ
করলেই বোঝা যাবে তৃণমূল নেতাদের
ঘিরে মানুষের এই ক্ষোভের মধ্যে
লুকিয়ে আছে বিশ্বাস ভঙ্গের
যন্ত্রনা।সিপিএমের  দীর্ঘ 
অপশাসনের অন্ধকার,স্বজন
পোষণ,দলতন্ত্র,
লাল
ফেট্টি বাধা জল্লাদদের হাড়হিম
করা সন্ত্রাস থেকে মুক্তি
পাওয়ার জন্য  যখন রাজ্যের
মানুষ ছটফট করছিলেন,
সে
সময় ডুবন্ত মানুষ  যেমন খড়কুটো
আঁকড়ে ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টা
চালায়,ঠিক
তেমনি মমতা ব্যানার্জি তথা
তৃণমূল কংগ্রেস নামক অবলম্বন
কে আঁকড়ে  ধরে রাজ্যবাসি
পশ্চিমবঙ্গে  বসবাস যোগ্য এক
সভ্য সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন
দেখতে শুরু করেছিলেন।২০১১
সালে সিপিএমের কুশাসন থেকে
মুক্তি পাওয়ার এই ভাবাবেগ 
এক নি:শব্দ
ইভিএম বিপ্লবের মাধ্যমে
বামেদের     সরিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে
ক্ষমতায় বসিয়েছিল।
     মানুষ
ধরে নিয়ে ছিল  মমতা ব্যানার্জি
মানুষের ভাবাবেগকে সম্মান
জানিয়ে  নতুন নতুন  মুখ এনে 
নতুন করে দল গড়ে নতুন করে
রবীন্দ্রনাথ,
বিবেকানন্দের
বাংলা কে গড়ে তুলতে  শুরু করবেন।
 গ্রামপঞ্চায়েত,
পঞ্চায়েত
সমিতি,জেলাপরিষদ,
পৌরসভাগুলির
ঘুঘুরবাসা ভাঙতে গনতান্ত্রিক
উপায়ে নতুন করে  নির্বাচন
করিয়ে জনসেবার প্রতি দায়বদ্ধ
মানুষদের বসিয়ে সোনার বাংলা
গড়ে তুলবেন।এই গড়ার প্রক্রিয়ায়
হয়তোবা  ভুল
ত্রুটি হতো,
সময়
লাগতো,
তাতে
 মানুষের ধৈয্য চ্যুতি ঘটতো
বলে মনে হয় না।কারণ পথ সঠিক
থাকলে কোন কিছু গড়তে যে সময়
লাগে তা মানুষ বোঝে। কিন্তু
মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব
বেশি দিন সময় লাগলো না।মানুষ
দেখলো জনরোষের মুখে পড়ে সিপিএম
ফরোয়ার্ডব্লকের যে সমস্ত  
নেতানেত্রীর   ভষ্মীভুত হয়ে
 যাওয়ার কথা  অর্থাৎ রাজনৈতিক
মৃত্যু ঘটার কথা  'বদলা
নয় বদল চাই স্লোগান'
তুলে
মমতা ব্যানার্জী সেই সমস্ত
নেতানেত্রীর অধিকাংশকে 
সঞ্জীবনী প্রদান করে নিজের
দলে টেনে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে
বিরোধীশূন্য করার পথে হাটলেন।
সেই সংকল্পকে বাস্তব রুপ দিতে
সিপিএম কংগ্রেস ,আরএসপি
,ফরওয়ার্ডব্লক
প্রভৃতি বিরোধী দল থেকে একের
এক জনপ্রতিনিধি ভাঙাতে শুরু
করলেন।সেই সাথে গ্রাম পঞ্চায়েত,
পঞ্চায়েত
সমিতি,
জেলাপরিষদ,
পৌরসভা
নামক 'সোনার
খনি'
গুলি
    তৃণমূলের নিয়ন্ত্রনে এনে
দলীয় কর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে
তোলাবাজী ও  উন্নয়নের জন্য
বরাদ্দ সরকারী অর্থ লুটের
খোলা অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা
করলেন।
স্বাভাবিকভাবেই
তিনি  শুরু করলেন ঠিক সেই জায়গা
থেকে যেখানে সিপিএম শেষ
করেছিল।ফলে  দলতন্ত্র,স্বজন
পোষন ,দম্ভ,
অহংকার
সিন্ডিকেট রাজ,তোলাবাজী,
ঘুষখোরি
হয়ে উঠলো মমতা ব্যানার্জির
 শাসন ব্যাবস্থার  ভিত্তি।এক
সময় দলের সেকেন্ড -ইন-কমান্ড
প্রবল প্রতাপশালী মুকুল রায়কেই
তৃণমূলের সংগঠনের প্রাণ এবং
রণকৌশন নির্মাতা  মনে করা 
হতো।যে সারদা মামলায় তৃণমূল
দলটাই ডুবে গিয়েছে সেই মামলায়
অভিযুক্ত হয়ে মুকুল রায় কে
সিবিআই দপ্তরে হাজিরাও দিতে
দেখা য়ায়।চিটফান্ড মামলায়
অভিযুক্ত হয়েও দ্বিতীয় বার
ক্ষমতায় আাসিন হওয়ার পর 
দলনেত্রী মমতার দম্ভ ও অহংকার
এমন উচ্চতায় পৌছুল যে  দল ছাড়তে
বাধ্য হলেন সেই  সেকেন্ড
-ইন-কমান্ড
মুকুল রায়।নানা টানা পোড়েনের
পর মুকুল রায় যোগ দিলেন বিজেপিতে
।শুধু মুকুল নন দ্বিতীয় ও
তৃতীয় সারির অনেক নেতাই দল
ছাড়লেন ,
বহিস্কৃত
হলেন এবং মুকুল রায়ের পথ ধরে
বিজেপিতে যোগ দিলেন।এদের
কয়েক জন লোকসভার বিজেপির
টিকিটে নির্বাচিতও হয়ে গেলেন।এখন
 জনরোষ এতটাই যে  সদ্য অনুষ্ঠিত
 লোকসভা নির্বাচনে সরকারি
মেশিনারী ব্যাবহার করে ছাপ্পা
চালিয়েও তৃনমূল কংগ্রেস ২২টির
বেশি আসন জিততে পারলো না এবং
একধাক্কায়  বিজেপির আসন  ২
থেকে বেড়ে  ১৮ হয়ে গেলো। শুধু
আসন নয়  বিজেপির ভোট শতাংশও
অবিশ্বাস্য ভাবে  ১০ শতাংশ
থেকে বেড়ে  ৪০.২২
শতাংশ হয়ে গেলো। বিধানসভা
ভিত্তিক হিসেব বলছে বিজেপি
১৩০ টি বিধান সভায় জয়ী এবং ৩০
আসনে খুব সামান্য ব্যবধানে
পরাজিত হয়েছে।
মনে
রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ
কিন্তু মুকুল রায়দের মতো
দলবদলুদের দেখে নয়,
বিজেপিকে
ভোট দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর
মতো নেতাদের হাত ধরে এক নতুন
ভোরের আলো দেখতে ।সুতরাং
মানুষের এই আকাঙ্খা
 কে গুরুত্ব দিতেই হবে।কারণ
সিপিএমের দীর্ঘ শাসনে তিতিবিরক্ত
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে তৃণমূলের
সস্তা চমকের  রাজনীতিকে বেশি
সময় দিতে রাজি নয় তা এবার লোকসভা
নির্বাচনেই প্রমানিত।গত
পাঁচবছরে নরেন্দ্র মোদী সস্তা
রাজনীতির ধারে কাছে না গিয়ে
 অনেক গুলি  কঠোর সিদ্ধান্ত
নেওয়ার পরও  মানুষ বিজেপিকে
আরো বেশি ভোটে ক্ষমতায়
ফিরিযেছে।এতে প্রমাণ হয়
জাতপাত,সংখ্যালঘু,
কিংবা
সস্তা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে
ক্লান্ত মানুষ এখন মানুষ
গুনাত্মক রাজনীতিই  পছন্দ
করছেন। মানুষের এই বার্তা
যারা পড়তে পাড়ছে না তারা
অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে।
সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটেও 
এই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার
দৃষ্টান্ত প্রচুর।##
                                       
                          সাধনকুমার
পাল


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন