মার্কিন
প্রেসিডেন্ট দেশে-বিদেশে
ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনার
জন্য প্রায় প্রতিবছরই ওয়াশিংটনে
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের
আমন্ত্রণ জানান। চলতি বছরও
এই আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত
হয়েছে। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
স্বয়ং। গত ১৭জুলাই ২০১৯  হোয়াইট
হাউসে ১৭টি দেশের ধর্মীয়
নিপীড়ণের শিকার ২৭জন মানুষের
সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
এক বৈঠক করেন । এই আলোচনায়
বাংলাদেশ থেকে  প্রিয়া সাহা
অংশগ্রহন করেছিলেন।প্রিয়া
সাহা ‘দলিত কণ্ঠ’ নামক একটি
পত্রিকার সম্পাদক।  মূলত দলিত
ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ করে
ওঁর এনজিও ‘শাড়ী’। একদা ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্রী
প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ
হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান
ঐক্য পরিষদের সংগঠন সম্পাদক
 এবং এর আগে তিনি মহিলা ঐক্য
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক
ছিলেন।মার্কিন প্রেসিডেন্টের
সাথে প্রিয়া সাহার কথপোকথন
মাত্র ৪৩ সেকেণ্ডের। 
মার্কিন
প্রেসিডেন্টকে প্রিয়া সাহা
বলেন,
‘‘স্যার,
আমি
বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে
৩৭ মিলিয়ন হিন্দু,
বৌদ্ধ
ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী
মানুষ হারিয়ে গেছেন। দয়া করে
আমাদের সাহায্য করুন। আমরা
আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনও
সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু
মানুষ আছে। আমার অনুরোধ,
দয়া
করে আমাদের সাহায্য করুন।
আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই
না। শুধু আমাদের বাংলাদেশে
থাকার জন্য সাহায্য করুন।’
তিনি আরও বলেন,
‘আমি
আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা
আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে,
আমার
জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো
বিচার হয়নি। এসময় ট্রাম্প
জিজ্ঞাসা করেন,
‘কারা
জমি দখল করেছে?
কারা
বাড়ি দখল করেছে?
জবাবে
প্রিয়া সাহা বলেন,
‘মুসলিম
মৌলবাদীরা এগুলো করছে। তারা
সব সময় রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়
পায়। ”
প্রিয়া
সাহা যে বাংলাদেশের সংখ্যা
লঘুদের শোচনীয় পরিস্থিতি
নিয়ে এক বর্ণ মিথ্যে কথা বলেনি
তা প্রমাণ করার জন্য বাংলাদেশের
প্রচুর নথীপত্র ও গবেষনা লব্ধ
ফলাফলের উল্লেখ করা যেতে পারে।
  বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক 
অধ্যাপক আবুল বারাকাত পরিষ্কার
বলেছেন,এখনো
প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৬৩০জন
হিন্দু চলে যাচ্ছে এবং  ২০৩০
সালের পর বাংলাদেশে হিন্দু
থাকবে না। পরিসংখ্যান বলছে
 ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়
বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩০শতাংশে’র
বেশি হিন্দু ছিলেন ,
২০১৯-এ
তা হয়  ৮শতাংশ। জাতিসংঘের
হিসাব বলছে  বাংলাদেশের জনসংখ্যা
১৭০মিলিয়ন। ৩০%
হিসাবে
বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা
থাকার কথা ছিল ৫কোটি ১০লক্ষ
। কিন্তু ৮%
হিসাবে
বাস্তবে এখন হিন্দু আছেন ১
কোটি ৩৬লক্ষ।  ৩কোটি ৭৪লক্ষ
মিসিং।প্রফেসর ডঃ সব্যসাচী
ঘোষ দস্তিদার  ২০০৮ সালে
প্রকাশিত ওঁর‘এম্পিয়ার্স
লাষ্ট কজুয়াল্টি:
ইন্ডিয়ান
সাবকন্টিনেন্ট ভ্যানিশিং
হিন্দু এন্ড আদার মাইনোরিটিজ’
বইয়ে ১৯৪১ থেকে উপমহাদেশের
জনসংখ্যা পরিসংখ্যান উল্লেখ
করে  হিসেব কষে দেখিয়েছেন যে,
 পূর্ব-পাকিস্তান
বা বর্তমান বাংলাদেশ থেকে ৪৯
মিলিয়ন হিন্দু হারিয়ে গেছে।
তার এই বইয়ের তত্ব উল্লেখ করে
 ইলিনয়েসের তৎকালীন কংগ্রেসম্যান
রবার্ট ডোল্ড ২৯জুলাই ২০১১
সালে ওয়াসিংটন ডিসিতে এক
বক্তব্যে উল্লেখ করেণ  যে,
১৯৪৭
সাল থেকে  এ পর্যন্ত বাংলাদেশ
থেকে ৪৯ মিলিয়ন হিন্দু হারিয়ে
গেছে। 
প্রিয়া
সাহা মিথ্যে বলেছেন ,বাড়িয়ে
বলেছেন এমন কথা কেউ বলছেন
না।বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক
তকমা প্রাপ্ত চিন্তাশীল সমাজের
লোকেরা নিজেদের পরিচয়ের
বিড়ম্বনার জন্যই হয়তো সরাসরি
প্রিয়ার বিরোধীতা করতে পারছেন
না।তবে এই চিন্তাশীল সমাজ এ
ব্যাপারে যা প্রতিক্রিয়া
দিচ্ছেন তাতে ঐ দেশের মৌলবাদীরা
উৎসাহিত হবে,প্রিয়ার
বিপদ বাড়বে,
বিশ্ববাসী
প্রকৃত সত্য থেকে বঞ্চিত
থাকবে।।যেমন  শেখ হাসিনার
অত্যন্ত ঘনিষ্ট একজন  প্রবাসী
বাংলাদেশি লিখেছেন  নির্বাচনের
সময় নাকি প্রিয়া ক্ষমতাসীন
আওয়ামলীগের  টিকিট চেয়ে
ছিলেন।কিন্তু  টিকিট পেতে
ব্যর্থ হয়ে তিনি জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক স্তরের প্রচারের
আলোয়  নিজেকে তুলে ধরতে ইচ্ছে
করেই এই বিতর্ক সৃষ্টি
করেছেন।বাংলাদেশের হিন্দু
নির্যাতনের ভয়ঙ্কর দৃশ্যে সাধারণ রাজনীতির রঙ মেখে
বিশ্ববাসীর চোখে ধুলো দেওয়ার
এরচেয়ে ভালো প্রয়াস আর কি হতে
পারে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট এই
লেখক বাংদেশের হিন্দু নির্যাতনের
ঘটনা কে ইসলামের বিশ্বব্যাপি
কাফের নিধন কর্মসূচীর ফলিত
রুপ হিসেবে না দেখে   সাধারণ
আইন শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা
হিসেবেই তুলে ধরতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান
ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক
রানা দাশগুপ্ত বলেছেন,
প্রিয়া
সাহার বক্তব্যের সঙ্গে
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান
ঐক্য পরিষদের কোনো সম্পর্ক
নেই। এটা তার নিজস্ব বক্তব্য।
আমাদের সংগঠন এ রকম কোনো
বক্তব্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করে কাউকে বলতে বলেনি,
অতএব
প্রিয়া সাহার মত প্রিয়া সাহার
নিজস্ব।শোনা যাচ্ছে গা বাঁচাতে
হিন্দুরা এখন প্রিয়া সাহার
বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।
গুজব উঠেছে,
হিন্দুরা
কেউ কেউ গ্রেফতারের আতঙ্কে
আছেন।
বাংলাদেশের
অসাম্প্রদায়িক চিন্তাশীল
তকমা প্রাপ্ত প্রভাবশালী
ব্যাক্তি থেকে শুরু করে 
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান
ঐক্য পরিষদের মতো সংগঠনও
প্রিয়ার বক্তব্যের সমর্থনে
দাড়ানোর সাহস দেখাতে পারছে
না।এতে প্রমাণ হয়ে ইসলামিক
মৌলবাদীরাই এখন  বাংলাদেশের
ভাগ্য বিধাতা। 
বাংলাদেশের
অসাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতীক
 বিদ্বজ্জন ও সংখ্যালঘু সংগঠনের
 সত্যের মুখোমুখি হতে সৎ সাহসের
অভাব  ও কাপুরুষতা দেখে  একশ্রেণীর
মিডিয়া  তথ্যনির্ভর রিপোর্টিং’র
বদলে প্রিয়া সাহা’র বিরুদ্ধে
প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এতে
মৌলবাদী শক্তি উৎসাহিত হচ্ছে।
প্রিয়া সাহার স্বামীর নাম
মলয় সাহা। তিনি বাংলাদেশের
দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন
কর্মকর্তা।ওঁর  দুই মেয়ে
আমেরিকায় স্কলারশিপ নিয়ে
পড়াশোনা করছেন। মিডিয়ার একাংশ
মলয় সাহার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে
লেগেছে। ওরা সাহা পরিবারের
ছবি ও বাড়ীর ঠিকানা প্রকাশ
করে  দিয়েছে । এর ফলে মলয় সাহার
বাড়ির সামনে বিক্ষোভ হয় এবং
বিক্ষোভকারীরা গেট ভেঙে বাড়িতে
ঢোকার চেষ্টা করে। ঢুকতে না
পেরে তাঁরা বাড়ি বন্ধকরে 
দেয়ার হুমকি দিয়ে যায়। প্রাক্তন
 প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র
কুমার সিনহাকে যেভাবে দেশত্যাগে
বাধ্য করা হয়েছিলো,
শোনা
যাচ্ছে তাঁর ভাগ্যেও নাকি
তাই ঘটতে যাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন
দলের নেতারা দায়িত্বহীন
কথাবার্তা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রথমে বলেছেন,
প্রিয়া
সাহার নালিশ উদ্দেশ্যপ্রনোদিত
। তিনি  বলেছেন,
প্রিয়ার
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া
হবে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
 প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার কথা
বলেছে।বিদেশ মন্ত্রী  বলেছেন,
প্রিয়া
সাহার বক্তব্য মিথ্যা এবং
বিশেষ উদ্দেশ্যে করা। হেভিওয়েট
মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল
কাদের প্রথমে বলেছেন,
প্রিয়া
সাহার বক্তব্য সাম্প্রদায়িক
শক্তিকে উৎসাহিত করবে। পরে
বলেছেন,
প্রিয়া
সাহা দেশদ্রোহী। 
প্রিয়া
সাহার  বক্তব্য পেশের সময় দুই
একটি শব্দ চয়ন নিয়ে বিতর্ক
থাকলেও তিনি  বাংলাদেশে
সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে
কদর্যরুপ তুলে ধরেছেন ,
হিন্দু
হিসেবে বাংলাদেশে টিকে থাকার
 যে অসহায় আর্তি তুলে ধরেছেন
তা কেউ অস্বীকার করতে পারে
নি।এর আগে তসলিমা নাসরিন
বাংলাদেশে এই সংখ্যা লঘু
পীড়নের কদর্য রুপ তুলে ধরে
নির্বাসিত হয়ে ছিলেন। প্রশ্ন
হচ্ছে প্রিয়া সাহাও কি তাহলে
তসলিমা নাসরিন হতে চলেছেন?
##
                                      
                       সাধন
কুমার পাল


পশ্চিমবঙ্গের বিদ্বজ্জনেরা কোথায় ।বোবা কালা হয়ে গেলেন নাকি।
উত্তরমুছুন