সাধন
কুমার পাল          :অবশেষে
রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করেই
ফেললেন।২০১৩ সালে কংগ্রেসের
সহ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার
পর থেকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে
কংগ্রেস ৪৩ টি নির্বাচনে লড়াই
করে ৩৫টিতে পরাজিত হয়েছে।গান্ধী
পরিবারের কেউ  কোন দিন যা করে
নি,
হাল
আমলের নির্বাচন গুলিতে নতুন
ভারতের সাথে মানিয়ে নেওয়ার
জন্য রাহুল ,প্রিয়াঙ্কা
,সোনিয়া
গান্ধীরা সেই সমস্ত কাজও
করেছেন । মন্দিরে গিয়ে পূজো
দিয়েছেন ,গঙ্গায়
স্নান করেছেন,
যজ্ঞ
করেছেন ,ঘোমটা
দিয়েছেন ,কৈলাশ
মানস সরোবর যাত্রা করে কট্টর
শিব ভক্ত সাজার চেষ্ঠা পর্যন্ত
করেছেন। তবুও শেষ রক্ষে হয়
নি।  এই সমস্ত পরাজয়ের কোনটাই
যে  রাহুল গান্ধীরা যে মেনে
নিতে পারছেন না তা রাহুল গান্ধীর
পদত্যাগ পত্রের বয়ানেই
পরিস্কার।রাহুল লিখেছেন,
বিজেপির
বিরুদ্ধে তাঁর  কোন ব্যাক্তিগত
ক্ষোভ নেই ।কিন্তু  আরএসএস
বিজেপি যে ভারত নির্মাণ করতে
চাইছে তার জন্য প্রতিটি রক্ত
বিন্দু দিয়ে তিনি লড়বেন।ভারতের
লোকতন্ত্র মূলগত ভাবে দুর্বল
হয়ে পড়েছে।এখানে মিডিয়া,
নির্বাচন
কমিশন,
বিচার
বিভাগ কেউ নিরপেক্ষ ছিল না।ফলে
নির্বাচনও নিরপেক্ষ ছিল না,
ভবিষ্যতেও
হবে না।বলার অপেক্ষা রাখেনা
জনগণের রায় ,
দেশের
গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থা ও তার
মাধ্যমে আসা পরিবর্তনের প্রতি
রাহুল গান্ধীর মনে তীব্র ঘৃণা
সৃস্টি  নিয়েছে। যার ফল শ্রুতিতে
জন্ম নেওয়া হতাশা থেকেই  এই
পদত্যাগ। মনস্তত্ব বলছে মাইন্ড
সেটই ঘৃণা,
বিদ্বেষ,
হতাশার
জন্মদাত্রী। সে জন্য বর্তমান
পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধীদের
মাইন্ডসেট  বিশ্লেষন খুব
জরুরী।     
  
২১
জুন বিশ্ব যোগদিবস উপলক্ষে
যখন সমগ্র বিশ্ব যোগাভ্যাসরত
সে সময়   রাহুল গান্ধী ভারতীয়
সেনার ডগ স্কোয়াডের ছবি টুইট
করেছেন ।ছবির শিরোনামে  লিখেছেন
'নিউ
ইন্ডিয়া'।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রশিক্ষকরা
যোগাভ্যাস করার সময় যে সমস্ত
পোজ নিচ্ছেন ঠিক একই রকম পোজ
নিচ্ছে প্রশিক্ষিত সারমেয়রা।এই
টুইট ঘিরে বিস্তর বিতর্ক
হচ্ছে। কেউ বলছেন রাহুল গান্ধী
যোগ অভ্যাসকারীকে কুকুরের
সাথে তুলনা করে ভারতকে অপমান
করেছেন,কেউ
বলছেন এটা ভারতীয় সেনার অপমান,
আবার
কেউ এই টুইট কে প্রশিক্ষিত
সারমেয়দের অপমান হিসেবে
দেখছেন। কার  অপমান এই নিয়ে
বিতর্ক থাকলেও এই টুইটের
প্রভাব যে নাকারাত্মক  সে
বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ
নেই।তবে মাইন্ড সেট  কি ধরণের
হলে পরে  ভারতের জন্য গৌরবসূচক
একটি দিনে কোন ভারতীয় এই ধরণের
নাকারাত্মক টুইট করতে পারে
সেটি বিশ্লেষন করা খুবই
জরুরি।যখন রাহুল গান্ধী এই
টুইট করেছে তখন তিনি কোন সাধারণ
ব্যাক্তি ছিলেন না।তিনি ছিলেন
 ভারতের সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক
দলের সর্বভারতীয় সভাপতি।সেজন্য
 এই টুইট থেকে  কেবলমাত্র
ব্যাক্তি রাহুল নয় ভারতীয়
জনসমাজের একটি বড় অংশের মাইন্ড
সেট অধ্যয়ন করা যেতে পারে। 
ভারতীয়
সমাজের গতিপ্রকৃতি ছাড়াও
সাম্প্রতিক নির্বাচন গুলিতে
কংগ্রেসের মতো  ভারতের তথা
কথিত ধর্মনিরপেক্ষ দল গুলির
শোচনীয় ফলাফল  এবং  বিজেপি সহ
 হিন্দুত্ববাদী শক্তির গুলির
উত্থানের সূত্রও পাওয়া যেতে
পারে এই অধ্যয়ন থেকে।
ভারতের
 ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদী
বৈশিষ্ট রক্ষা করতে হলে  যে
কোন মূল্যে বিজেপিকে রুখতে
হবে,এটাই
ছিল বিজেপি বিরোধী দল গুলির
একমাত্র রাজনৈতিক এজেন্ডা।২০১৪
সালে না হয় এতটা আন্দাজ করা
যায় নি।কিন্তু উনিশে তো 
'বিজেপির
 বিপদ'
সম্পর্কে
সম্পূর্ন ওয়াকিবহাল হয়ে
ধর্মনিরপেক্ষ দল গুলি পূর্ণ
প্রস্তুতি নিয়েই  নির্বাচনী
ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল।সাথে
ছিল   ধর্মনিরপেক্ষ মিডিয়া।
কিন্তু ঠেকানো তো দুরের কথা
বিজেপি  আগের চেয়ে আরো শক্তপোক্ত
হয়ে দিল্লির মসনদে আসিন
হলো।উত্তরপ্রদেশে সপা বসপা
জোটের চরম বিপর্য়য়ের পর কোন
বিশ্লেষকই আর এটা দাবি করছেন
না যে বিরোধীদের সর্বিক জোট
হলে বিজেপিকে ঠেকানো যেত।নির্বাচনের
ফলাফল প্রকাশের পর অনেকটা 
সময় অতিক্রাত্ত হয়ে গেলেও
ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের  এই
শোচনীয় পরাজয়ের কোন উল্লেখযোগ্য
বিশ্লেষন পাওয়া যাচ্ছে
না।ধর্মনিরপেক্ষ শিবির থেকে
যে সমস্ত কথা শোনা যাচ্ছে সে
গুলি শুনতে শুনতে মানুষ
ক্লান্ত।যেমন বলা হচ্ছে ইভিএম
কারচুপি করেই মোদী জয়ী হয়েছেন
। আবার কেউ বলছেন হিন্দু
মুসলিমের মধ্যে ঘৃণার পরিবেশ
সৃষ্টি করে মোদী জয় পেয়েছেন।আবার
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী বলেছেন এই নির্বাচনে
পাটিগণিতের চেযে রসায়ন বেশি
কাজ করেছে।প্রশ্ন হচ্ছে কি
সেই রসায়ন?
এই
রসায়নের খোঁজ পেতে হলে প্রথমেই
নির্বাচলর ফল ঘোষনার পর কয়েকটি
গুরুত্ব পূর্ণ প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই
নির্বাচনে এনডিএর অভুতপূর্ব
বিজয়ের পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক
সংঙ্ঘের সরকার্য়বাহ ভাইয়াজী
যোশী  প্রতিক্রিয়া জানাতে
গিয়ে বলেন,
দেশ
আবার একবার স্থির সরকার পেলো।এটা
কোটি কোটি ভারতবাসীর ভাগ্য।এটা
রাষ্ট্রীয় শক্তির বিজয়।লোকতন্ত্রের
এই বিজয় যাত্রায় যাদের অবদান
আছে তাদের সকলকে অভিন্দন।বিশ্বের
সামনে আরো একবার ভারতীয়
লোকতন্ত্রের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত
হলো।
আরএসএসের
সহ সরকার্যবাহ শ্রী মনমোহন
বৈদ্য প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে
জানিয়েছেন 'আসলে
এই নির্বাচন ছিল  ভারতের  দুটো
বিচার ধারার লড়াই। একদিকে
ভারতের প্রাচীন আধ্যাত্মিকতা
ভিত্তিক  একাত্ম,
সর্বাঙ্গীন
সর্বসমাবেশক জীবন দৃষ্টি বা
চিন্তন সমস্ত  বিশ্ব যাকে
হিন্দু জীবনদৃষ্টি বা হিন্দু
 চিন্তন নামে চেনে । অন্যদিকে
অভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি যা ভারত
কে ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্বার
সমষ্টি বলে মনে করে ।নিজ নিজ
স্বার্থের জন্য যারা সমাজকে
জাতি,
ভাষা,
প্রদেশ
ও ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে
এসেছে। এই বিভাজনের রাজনীতিতে
অভ্যস্ত শিবির  নিরন্তর সেই
শক্তির বিরোধিতা করে এসেছে
যারা  চিরকাল ভারতীয় সমাজকে
এক ও অখন্ড ভেবে  ঐক্যবদ্ধ
রাখতে চায়।এই অখন্ড ভাবনার
 বিরোধীতা করতে গিয়ে এই শিবির
বিভিন্ন সময় ভিত্তিহীন মিথ্যে
অভিযোগ এনে নিরন্তর ভুল ধারণা
নির্মানের প্রয়াস করেছে।
স্বাধীনতা পূর্ব সময় থেকে
চলতে থাকা এই বিচার ধারার 
লড়াই এখন নির্নায়ক স্তরে পৌঁছে
গেছে। এই লড়াইয়ের একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এই
 নির্বাচন।সমাজ এক ও অখন্ড
বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে 
ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ,ফলে
বিভাজনের রাজনীতির   প্রভাব
ক্রমশই সঙ্কুচিত হচ্ছে।সে
জন্য বিভাজনের নীতিতে বিশ্বাসীরা
নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার
প্রয়োজনে জোটবদ্ধ হয়ে  এক ও
অখন্ডতার আদর্শে বিশ্বাসীদের
মোকাবিলা করার প্রয়াস করেছে।
ভারতের প্রাজ্ঞ ও বুদ্ধিমান
মানুষ  ঐক্যের পক্ষে ক্রিয়াশীল
 সর্বসমাবেশক ভারতকে সমর্থন
করে সবার সাথে সবার  বিকাশের
সূত্র কে জয়ী করেছে। ভারতের
উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য এই জয়
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।ভারতের
জনগণ এই জয়ের জন্য ধন্যবাদের
পাত্র। এই বৈচারিক লড়াইয়ে
ভারতের পক্ষে থাকা মজবুত
নেতৃত্ব এবং সমস্ত কার্যকর্তাদের
 হার্দিক অভিনন্দন।'
সঙ্ঘের
সর্বভারতীয় নেতৃত্বের বক্তব্য
থেকে এটা স্পষ্ট যে এই নির্বাচন
কোন সাধারণ নির্বাচন নয় ভারতের
পরিচয় প্রতিষ্ঠার লড়াই ,দেশ
হিসেবে ভারত নিয়ে  দুটো নেরেটিভের
লড়াই। একটি বিশেষ মাইন্ড সেট
সম্পন্ন ভারতীয় সমাজ  তৈরীর
উদ্দেশ্য নিয়েই মেকলে সাহেব
 এদেশে ইংরেজি শিক্ষা ব্যাবস্থা
প্রবর্তন করে ছিলেন।ভারত
সম্পর্কে এই মাইন্ড সেটের
মূল বক্তব্য ,ভারতের
নিজস্ব কোন ইতিহাস নেই,ভারতের
ইতিহাস মানেই আক্রমনকারীর
ইতিহাস।ভারতের আধ্যাত্মিকতা,যোগ
প্রাণায়াম এই গুলি সবই অন্ধ
বিশ্বাস,
বুজরুকি,
কুসংস্কার।
হিন্দু মানেই নদী ,গাছ,পাথর,পশু
পাখির পুজারী,গঙ্গায়
সন্তান বিসর্জন কিংবা সতীদাহের
অনুসারী।একমাত্র পাশ্চাত্যের
সংস্কৃতি ,
জ্ঞান
বিজ্ঞানই ভারত কে আলোর দিশা
দেখাতে পারে ,
আধুনিক
প্রগতিশীল করে তুলতে পারে।বছরের
পর বছর ধরে এই শিক্ষা ব্যাবস্থা
 ভারত সম্পর্কে ভারতবাসীর
মনে এক হীনমন্যতা তৈরী হতে
থাকে।
দেশ
স্বাধীন হলেও মেকলে প্রবর্তিত
শিক্ষা ব্যাবস্থার মূলগত কোন
পরিবর্তন হয়নি।স্বাভাবিক
ভাবেই  স্বাধীনতার সাত দশক
পরেও ভারতে স্বাভিমানী ছাত্রসমাজ
গড়ে উঠে নি।ফলে ক্যাম্পাসে
ক্যাম্পাসে এখনো টুকরে টুকরে
গ্যাং 'ভারত
তেরে টুকরে হোঙ্গে ইনসাল্লা
ইনসাল্লা'
স্লোগান
তুলতে সাহস পায়। মানব সভ্যতার
বিকাশে জ্ঞান,
বিজ্ঞান
,দর্শন
,জীবন
পদ্ধতির ক্ষেত্রে ভারতের
অবদান কে তুলে ধরার এবং ভারতীয়
ভাবনায়   ভারত কে গড়ে তোলার
সার্বিক কোন প্রয়াস হয় নি।
যারাই ভারতকে ,
ভারতীয়ত্ব
কে তুলে ধরার প্রয়াস করেছে
বা তাদের কপালে জুটেছে
প্রাচীনপন্থী,
পশ্চাদপদ
তকমা।এতদিন তো ব্রিটিশ প্রভুদের
 তৈরী করা মাইন্ড সেট অনুসারে
 ভারতীয়  জীবন পদ্ধতির অবিচ্ছেদ্য
অঙ্গ  যোগ,
ধ্যান,
আসন,
 প্রাণায়াম
কে  অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কার
বলে মনে করাটাই ছিল আধুনিকতা
প্রগতিশীলতা।দেশের বামপন্থী,
ধর্মনিপেক্ষতার
ঢ্যাড়া পিটাতে অভ্যস্ত প্রায়
সিংহভাগ নেতানেত্রী যোগ
সম্পর্কে এই ধরণের বিকৃত
মানসিকতার শিকার।নাগাল্যান্ড
মণিপুরে চার্চের মদতপুষ্ট
সন্ত্রাসবাদীরা এখনো ভারতীয়দের
'ইন্ডিয়ান
ডগ'
বলে
সম্বোধন করে থাকে।   সন্দেহ
নেই যে রাহুল গান্ধী ঠিক এই
ধরণের  মাইন্ডসেট থেকেই বিশ্ব
যোগ দিবসে ডগস্কোয়াডের ছবি
টুইট করে যোগদিবস উদযাপনকারীদের
কটাক্ষ করেছেন।
কিন্তু
এখন আর সে দিন নেই। রিপোর্ট
বলছে শুধু মাত্র ভারতের গ্রাম
শহর পাড়া মহল্লা নয়  ২১ জুন
যোগদিবস উপলক্ষে বিশ্বের
প্রায় ২০০ টি দেশ যোগচর্চায়
মেতে উঠেছিল।অনেক দেশ তারমধ্যে
সৌদি আরবের মতো ইসলামিক দেশও
আছে যারা  নিজের শিক্ষা ব্যাবস্থার
মধ্যে যোগশিক্ষা কে অন্তর্ভুক্ত
করেছে বা  করার পরিকল্পনা
করছে।বিশ্বের উন্নতদেশ গুলিতে
ভারতীয় জীবন চর্চা জনপ্রিয়
হচ্ছে।বিশ্বযোগ দিবস  অর্থাৎ
ভারতীয় জীবন চর্চার গ্রহন
যোগ্যতা বিশ্বের দরবারে ভারতকে
নতুন করে সমীহ  আদায় করতে সহায়তা
করছে। বিদেশ সফরে গেলে ভারতের
প্রতিদিনের দলীয় রাজনীতি
থেকে অনেক দুরে অনাবাসী ভারতীয়রা
প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ধরে
উচ্চৈ:স্বরে
ভারতমাতা কি জয় ,বন্দেমাতরম,জয়শ্রীরাম
স্লোগান তুলছে।মিডিয়ার দৌলতে
সাম্পতিক জাপান সফরের সময়েও
  ভারতমাতা কি জয় ,
বন্দেমাতরম,
জয়শ্রীরাম
স্লোগান  নিয়ে অনাবাসী ভারতীয়দের
উচ্ছাস আমরা দেখেছি।ভারতকে
নিয়ে এ যেন এক নতুন উচ্ছাস
,নতুন
উদ্দীপনা।অনাবাসীদের মুখে
এই  ধরণের স্লোগান গুলিতে
নিশ্চই ভারতের অন্তরাত্মার
ছোঁয়া আছে  না হলে অনাবাসীরা
কোন স্বার্থে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে
দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে এই ধরণের
ধ্বনি দেবেন।
প্রশ্ন
উঠতে পারে এতদিন এই দৃশ্য দেখা
যায় নি কেন?
এই
প্রশ্নের উত্তরও সহজ ।এতদিন
ভারত কে তুলে ধরার প্রয়াস হয়
নি ।এতদিন যারা দেশকে নেতৃত্ব
দিয়েছেন তাদের মনে এই ভাবনা
কখনোই আসে নি যে ভারতের নিজস্ব
ভাবনাতেই ভারত ঘুরে দাড়াতে
পারে ,
ভারত
বিশ্বকে অনেক কিছুই দিতে পারে
,বিশ্বের
 গুরুর আসনে বসতে পারে।শুধু
এই মাইন্ডসেট নিয়ে দেশ পরিচালনা
করা হয়েছে যে ভারত পিছিয়ে পড়া
উন্নয়শীল দেশ,
সবার
সাহায্য নিয়ে ভারত কে  উন্নত
করতে হবে। ২০১৫ সালে বিশ্বযোগ
দিবসের স্বীকৃতির মাধ্যমেই
নব ভারতের এই উত্থানের আনুষ্ঠানিক
সূচনা বলা যেতে পারে।ফলে
অনুকুল পরিবেশ পেয়ে অনাবাসীরাও
এখন যে সমস্ত  স্লোগান তুলছেন
সে গুলিকে ভারতের জাতীয়তাবাদের
বহি:প্রকাশ
অর্থাৎ অন্তরাত্মার আওয়াজ
বলা যেতে পারে।রাহুল গান্ধীর
মতো তথাকথিত প্রগতিশীলরা
নতুন ভারত কে মেনে না নিয়ে যদি
সেই পুরানো মাইন্ডসেট নিয়ে
পরে থাকেন তাহলে যে  ক্রমশই
পিছিযে পড়বেন অপ্রসঙ্গিক হয়ে
যাবেন সাম্প্রতিক নির্বাচন
গুলির  ফলাফলেই তা স্পষ্ট। 
স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ইংরেজের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই জওহারলাল নেহেরুর ভারতের যাত্রা শুরু হয়েছিল। স্বামীজীর ভাষায় বললে বলতে হবে নেহেরুর ভারতে পরানুবাদ ,পরানুকরণ,পরামুখাপেক্ষা,এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা … এই মাত্র সম্বলে' ভারত উচ্চাধিকার লাভের স্বপ্ন দেখতো।নেহেরুর ভারতে রাষ্ট্রপ্রধান হতে গেলেইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত, বিদেশি ডিগ্রি ,উচ্চবংশ, ধনাঢ্য হওয়া অলিখিত অনিবার্য নিয়ম ছিল। ফলে এক সময় এমন ছিল যে গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ প্রধানমন্ত্রীত্ব সামলাতে পারে এটা নিরক্ষরতা ও দারিদ্রতার ফাঁসে ফেঁসে থাকা ভারতের মানুষ ভাবতেই পারতো না। সাত ও আটের দশক পর্যন্ত এটাই ছিল ভারতের রাজনৈতিক ধারা।নয়ের দশক থেকে শুরু হয় জাতপাতের রাজনীতির উত্থান।বিশেষ করে বিহার উত্তরপ্রদেশের মানুষ জাতপাতের রাজনীতির মাধ্যেই নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজে পায়।MYফ্যাক্টর (মুসলিম যাদব ভোটব্যঙ্ক)লালু যাদব কে এতটাই শক্তিশালী করে তুলল যে সে সময় স্লোগান উঠলো 'যবতক সমোসামে আলু ,জঙ্গলমে ভালু হোগা তবতক বিহার মে লালু রহেগা'। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন প্রায় নিরক্ষর বাবড়ি দেবিকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েও অক্লেশে বিহারকে শাসন করতে সে সময়ের সুপারষ্টার লালু যাদবের কোন সমস্যাই হয় নি।জাতপাতের রাজনীতি বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতা কে এতটাই শক্তিশালীর করে তোলে যে মুলায়েম সিং য়াদব , মায়াবতীর মতো নেতানেত্রীরাও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।এদিকে সময়ের সাথে ভারতের নিরক্ষরতা ও দারিদ্রের হার কমে আসার সাথে সাথে পরিবারতান্ত্রিক ও জাতপাতের রাজনীতির উপর থেকে মোহ মুক্তি ঘটতে শুরু করে ভারতীয় ভোটারদের। যার প্রতিফলন দেখা যায় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে।
      ২০১৯
এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল
বলছে  ভারতীয় ভোটাররা
পরিবারতান্ত্রিক ও জাতপাতের
রাজনীতির ফাঁদে আর পা দিতে
নারাজ। একদা MYফ্যাক্টরে
বলিয়ান  লালু যাদব এবার বিহারে
খাতা খুলতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায়
ভুগছেন। জোটবেধে নির্বাচনে
লড়েও অখিলেশ মায়াবতী প্রাসঙ্গিক
হয়ে উঠতে পারলেন না।ক্ষমতাসীন
থেকেও রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের
মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের
পুত্রদের জেতাতে ব্যর্থ হয়েছেন
।রাহুল গান্ধী ও জ্যোতিরাদিত্য
সিন্ধিয়া নিজেদের পারিবারিক
লোকসভা কেন্দ্র বলে পরিচিত
 যথাক্রমে আমেথি ও গুণা থেকে
জয়ী হতে পারলেন না।পরিবারতন্ত্র
, জাতপাত
, দলিত,
সংখ্যালঘু
নামক এক সময়ের দুর্দান্ত  টনিক
এখন ভারতীয় রাজনীতিতে মেয়াদ
উত্তীর্ণ রসায়ন মাত্র।এই
রসায়ন না বদলালে নতুন ভারতের
তালে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে
বিরোধীদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব
যে আরো সঙ্কটাপন্ন হবে এই
বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।#




New India
উত্তরমুছুন