সাধনকুমার
পাল::
পাকিস্তান,
বাংলাদেশ
এবং আফগানিস্তান থেকে নির্যাতনের
বলি হয়ে  যে সমস্ত হিন্দু,
জৈন,
বৌদ্ধ,
খ্রিষ্টান
পার্সি এবং শিখ ধর্মাবলম্বী
ভারতে চলে এসেছেন তাদের ভারতের
নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে
 নাগরিকত্ব (সংশোধনী)
বিল
২০১৬ সালের ১৯ জুলাই লোকসভায়
 পেশ করা হয়। তৃণমূল কংগ্রেস,
 বামপন্থী
সহ তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দল
গুলির  বিরোধীতার জন্য ১২
অগাস্ট যৌথ সংসদীয় কমিটির
কাছে যায় এই বিল। ২০১৯ সালের
৭ জানুয়ারি যৌথ সংসদীয় কমিটি
এ বিল সম্পর্কে তাদের রিপোর্ট
জমা দেয়। ৮ জানুয়ারি লোকসভায়
বিল পাশও হয়ে যায়। রাজ্য সভায়
বিল পেশের কথা ছিল ১৩
ফেব্রুয়ারি।কিন্তু রাজ্যসভায়
বিজেপির সংখ্যা গরিষ্ঠতা
অভাবে এই বিল পাশ করানো সম্ভব
হয় নি।সেই দিন এই বিল পাশ হয়ে
গেলে এনআরসি-র
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর
যে বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে
তার অনেকটাই এড়ানো যেতো।এই
বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে 
এনআরসি-র
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর
নির্যাতিত হিন্দু,
জৈন,
বৌদ্ধ,
খ্রিষ্টান
পার্সি এবং শিখ ধর্মাবলম্বীদের
  নাগরিকত্ব নিয়ে তৈরী হওয়া
বিভ্রান্তির সম্পুর্ণ দায়
তৃণমূল কংগ্রেস,
 বামপন্থী
সহ তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দল
গুলির ।
প্রসঙ্গত,
৩
কোটি ৩০ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৬১ জন
আবেদনকারীর মধ্যে এনআরসি
তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন ৩ কোটি
১১ লক্ষ ২১ হাজার ৪ জন। জাতীয়
নাগরিকপঞ্জীর তালিকা থেকে
বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭
জনের নাম।এনআরসি তালিকা থেকে
যাদের নাম বাদ পড়েছে,
তাঁরা
ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে
আবেদন করতে পারবেন। সরকারের
তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে,
তালিকা
থেকে নাম বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই
কাউকে বিদেশি হিসেবে গণ্য
করা হবে না। এই ট্রাইব্যুনালে
আবেদন করে যদি কেউ হেরে যান,
তাহলে
তাঁরা হাইকোর্ট বা সুপ্রিম
কোর্টে আবেদন করতে পারবেন।
এনআরসিতে তালিকা ছুটদের
আবেদনের সময়সীমা ধার্য করা
হয়েছিল ১২০ দিন। অর্থাৎ ১২০
দিনের মধ্যে তাঁদের বিশেষ
আদালতে আবেদন করতে হবে। কিন্তু
সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে,
এই
আবেদনের সময়সীমা পুনর্বিবেচনা
করা হতে পারে।
এনআরসি-র
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর
ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারাও
যে খুশি নন তা ইতি মধ্যেই
স্পষ্ট।অসম বিজেপির ঘরোয়া
আলাপচারিতায় স্পষ্ট যে সুপ্রিম
কোর্টের তত্বাবধানে প্রক্রিয়াটি
সম্পন্ন হওয়ার জন্য কোর্টকে
শিখন্ডি করে এনআরসির কর্মকান্ডের
সাথে সরাসরি যুক্ত এক শ্রেণির
অসাধু সরকারী কর্মচারি অর্থ
ও রাজনৈতিক আনুগত্যের জেরে
কৃত্তিম ভাবে তৈরী করা নথির
সাহায্যে  অনুপ্রবেশকারীদের
নাগরিকত্ব প্রদানে এতটাই
ব্যস্ত ছিল যে অনেক প্রকৃত
ভারতীয়র বৈধ কাগজ পত্র খতিয়ে
দেখে তাদের নাম নথিভুক্ত করার
জন্য প্রয়োজনীয় মনযোগ দিতে পারেন নি। সুপ্রিম কোর্টের
তত্বাবধানে প্রক্রিয়াটি
সম্পন্ন হওয়ার জন্য চোখের
সামনে জালিয়াতি হতে দেখেও
অসম সরকার কিছুই করে উঠতে পারে
নি।তবে সরকার আইনি সহায়তা
দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে এই  এনআরসিছুট
দের পাশে দাড়াবে এমন ঘোষণা
ইতি মধ্যেই করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা
এবং বিজেপি নেতারা বারবার
বলেছেন প্রকৃত ভারতীয় ও ধর্মীয়
কারণে নির্যাতিত হয়ে ভারতে
আশ্রয় নেওয়াদের একজনও এনআরসি-র
বাইরে থাকবে না।যা হয়েছে এটা
সাময়িক বিভ্রান্তি মাত্র ।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রের
ওঁদের স্পষ্ট বক্তব্য,
আগে
  নাগরিকত্ব (সংশোধনী)
বিল
২০১৬ লাগু হবে, তার পর এনআরসি।এদিকে
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি
দিলীপ ঘোষ বলেছেন,
'দেশের
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা
ভেবে,
বাংলাদেশি
মুসলিমদের তাড়াতে এ রাজ্যেও
চালু করা হবে এনআরসি। তিনি
বলেন,
নাগরিকত্ত্ব
সংশোধনী বিলের মাধ্যমে হিন্দু
শরণার্থীদের স্বার্থ রক্ষায়
বদ্ধপরিকর বিজেপি'।
অসমে এনআরসির পদ্ধতিগত ত্রুটির
সুযোগ নিয়ে তৃণমূলনেত্রী
মমতা ব্যানার্জী ও বামপন্থীরা
বাঙালি বিপন্ন আওয়াজ তুলে
ঘোলা জলে মাছ ধরতে  যে ভাবে
মাঠে নেমেছেন  তাতে কিছু মানুষ
সাময়িক ভাবে বিভ্রান্ত হলেও
অবশেষে মানুষ বুঝবে যে এদের
এআরসি বিরোধীরতা আসলে বাংলাদেশি
মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের
নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য।
বামপন্থীরা
শুধু  এনআরসির বিরোধীতা নয়,
ওরা এক পা এগিয়ে গিয়ে বৃহত্তর
বাংলাদেশ গঠনের ইসলামিক
ষড়যন্ত্রকারীদের সুরে সুর
মিলিয়ে শ্যামাপ্রসাদের
বাংলাভাগ করে পশ্চিমবঙ্গ তৈরীর সিদ্ধান্তকে
বাঙালি বিরোধী সিদ্ধান্ত
এমনটা বলতে শুরু করেছেন।শ্যামাপ্রসাদের তৈরী পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর ধরে রাজ্যাপাট ভোগ করার পর বাঙালি হিন্দুর একমাত্র আশ্রয়স্থল নিয়ে এই ধরণের প্রশ্ন তোলার চেয়ে বড় বিশ্বাস -ঘাতকতা আর কি হতে পারে। বামপন্থীদের
এই দ্বিচারিতার পর্দা ফাঁস
করার জন্য বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের
প্রতি ওদের নির্মন অত্যাচারের
একটি খন্ডচিত্র তুলে ধরা হল।
  
পূর্ব
পাকিস্থান থেকে পিঁপড়ের সারির
মতো আগত,শুধু
বেঁচে থাকার আর্তি সম্বল করে
উদ্বাস্তরা পশ্চিমবঙ্গে
ঢুকেছিল।এই সব ছিন্নমূল মানুষ
গুলোর বাসস্থান কোথায় হবে
,দন্ডকারণ্যে
না আন্দামানে তা নিয়ে প্রশ্ন
উঠেছিল।পশ্চিমবঙ্গেই এই সব
হিন্দু বাঙালি উদ্বাস্তুদের
পুর্নবাসনে অসংখ্য উদ্বাস্ত
কলোনি গড়ে উঠেছিল। শুধু কলকাতা
বা শহরতলির আশেপাশে নয়,
উত্তরবঙ্গের
অনেক জায়গাতেও স্থান হয়েছিল
তাদের।তার পরেও স্থানাভাব
দেখা দেয়। বহু পরিবারকে সরকার
পাঠিয়ে ছিল দন্ডকারণ্যে।কেন্দ্রীয
সরকার দন্ডকারণ্য উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষের হাতে সঁপে দিয়েছিল
এই সমস্ত বাঙালি উদ্বাস্তুদের।১৯৬৪
সালের পর থেকেই কিছু মানুষ
দন্ডকারণ্য ত্যাগ করে,সম্ভবত
তারাই মরিচঝাঁপিতে আগত প্রথম
উদ্বাস্তু মানুষ।  
১৯৭৯
সালের ৩১ জানুয়ারি মরিচঝাঁপির
অসহায় নিরন্ন অভুক্ত উদ্বাস্তুদের
ওপর রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের
পুলিশ গুলিচালিয়ে গণহত্যা
ঘটায়।প্রত্যক্ষদর্শীরা
মরিচঝাঁপির ঘটনাকে জালিয়ানওয়ালাবাগের
থেকেও বেশি ভয়াবহ বলে মনে
করেণ।জালিয়ানওয়ালাবাগে
জেনারেল ডায়ার পার্কের গেট
বন্ধ করে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে
গণহত্যা ঘটায়,এ
ঘটনা ছিল অতি অল্পসময়ের। 
মরিচঝাঁপিতে
১৯৭৯ সালের ৩১ জানুয়ারি
'সর্বহারার
 স্বার্থ রক্ষাকারী'
জ্যোতিবসুর
সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে ,
সর্বহারা
উদ্বাস্তুদের পানীয় জল ও
খাবারের সরবরাহ বন্ধ করে
দেয়।কয়েকদিন পরেই মরিচঝাঁপির
দিকে দিকে শুরু হয়ে যায় মৃত্যুর
মিছিল।অনাহারে,কুখাদ্য
খেয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয় বহু
মানুষ।১৭ মে হাইকোর্টের আদেশ
অগ্রাহ্য করেই খাদ্য ও পানিয়
জল বন্ধ করা হয়েছিল।  কিছু
উদ্বাস্তু মানুষ কুমীরমারির
দিকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গেলে
সেখানেই তাদের গুলি করে মারা
হয়।গুলিতে স্থানীয় আদিবাসি
মহিলা মেনি মুন্ডার মৃত্যু
হয়।অবশেষে ৩১ জানুয়ারি রামফ্রন্ট
সরকার অসহায় উদ্বাস্তুদের
উপর গুলি চালিয়ে রক্তস্নান
করে।নৌকা ডুবিয়ে আগুনে পুড়িয়ে
মারার ঘটনাও ঘটেছিল।ঠিকানাহীন
উদ্বাস্তুদের মৃতদেহ গুলি
গায়েব করা হয়েছিল।এই ঘটনার
নিহতদের আহত ও বিলাঙ্গ 
আত্মীয়রা  আজও জীবিত।হিন্দু
উদ্বাস্তুর রক্তে হাত রাঙানো
সিপিএম আবার একবার এনআরসির
বিরোধীতা করে পশ্চিমবঙ্গ
নামক হিন্দু বাঙালির এই শেষ
আশ্রয়স্থলটিকেও  অসুরক্ষিত
করে তুলতে চাইছে তার সাথে
যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছে তৃণমূল
কংগ্রেস। ##



ধর্মনিরপেক্ষতা ও বামন্থাকে বরাবরই ভন্ডামীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে সপরিবারে রসেবশে রাজনৈতিক জীবন যাপন করছেন অনেকেই। এদের দেখলে ঘৃনা হয়।
উত্তরমুছুন