সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

JEE-NEET ইস্যুতেও দেশের বিরোধীদল গুলির জনবিচ্ছিন্নতা প্রমাণ হয়ে গেল


          স্বস্তিকা,৭ সেপ্টেম্বর২০২০:সাধনকুমার পাল

পাকিস্থান থেকে বিভিন্ন ভুয়ো সোসাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে, টুইটারে ট্রেন্ড করিয়েও JEE ,NEET রুখে দেওয়া গেল না।১ সেপ্টেম্বর নির্বিগ্নেই দেশ জুরে জয়েনএন্টাস পরীক্ষা শুরু হল। করোনা অতিমারী আবহে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার জন্য পৌঁছাতে সমস্যা হলেও পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থা দেখে এবং শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পেরে পরীক্ষার্থীরা খুশী।দেশ জুড়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্যতম ক্ষোভ বা অসন্তোষও পরিলক্ষিত হয় নি।পরীক্ষা নেওয়ার বিরোধীতা করে যে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের বিক্ষোভের ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করা হয়েছিল তারা যে প্রকৃত পক্ষে পরীক্ষার্থীই নয় তার প্রমান হয়ে গেল।দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত হওয়ায় সন্ত্রাসবাদের আতুরঘর পাকিস্থান সন্ত্রাসবাদীদের দিয়ে দেশের ভেতর রক্ত ঝড়াতে ব্যর্থ হয়ে এখন সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভারতবিরোধী যুদ্ধে শামিল হয়েছে।

৩০ আগষ্ট রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন কী বাত বক্তৃতা, ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয় । ৩১ আগষ্ট সোমবার বিকেল পর্যন্ত লাইক বেশি থাকলেও ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার অর্থাৎ জয়েনএন্টাস পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে দেখা যায় আপলোড করা বক্তৃতার ভিডিয়োতে ‘ডিসলাইক’ ছাপিয়ে গিয়েছে ‘লাইক’কে।বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য অবশ্য টুইট করে দাবি করেন, ‘‘ইউটিউবের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে ওই ডিসলাইকের মাত্র ২ শতাংশ ভারত থেকে করা হয়েছে।’’ বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেসের উদ্যোগেই নিট-জেইই আয়োজনের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অপপ্রচার করা হয়েছে।নো এক্সামিনেশন গ্যাং কে তোল্লাই দেওয়া সংবাদ মাধ্যমের বিশ্লেষন ' এই ‘অপছন্দ’ আসলে সরকারের পরীক্ষা-নীতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা বলেই মনে করছেন অনেকে।'যেমন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান টুইটারে এই সংক্রান্ত খবর শেয়ার করে একে পড়ুয়াদের অনাস্থা হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। আনন্দবাজারকে নুসরত বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের এই অতিমারিতে যে ভাবে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হল, তার বিরোধিতাই এই ডিসলাইক।’’ এটা স্পষ্ট যে পরীক্ষার্থীদের ভালো মন্দ নয় আর দশটা রাজনৈতিক ইস্যুর মতো এই ইস্যুতেও প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ধরাই এই বিতর্ক সৃষ্টির পিছনে মূল উদ্দেশ্য।

পাকিস্থান ও চিনের মতো দেশ থেকে তৈরী করা এই কৃত্তিম সরকার বিরোধী সোসাল মিডিয়ার কৃত্তিম 'জনমত' কে রাহুল গান্ধী মমতা ব্যানার্জিরা নিজের জয় বলে উচ্ছাস প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।এর আগে রাহুল গান্ধী মমতা ব্যানার্জিদের বিভিন্ন বক্তব্য পাকিস্থান বিশ্বের দরবারে ভারত বিরোধী জনমত গঠনের কাজে লাগিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত অনেক আছে। এই ঘটনাবলি থেকে স্পষ্ট যে ভারতের মাটিতে জন বিচ্ছিন্ন এই বিরোধী নেতারা ক্রমশই দেশের শত্রুদের হাতের পুতুল হয়ে উঠছেন।প্রশ্ন হচ্ছে এই নব্য 'জয়চাঁদদের' আবির্ভাব ভারতের ভাগ্যাকাশে আবার কোন অশনি সংকেত বয়ে আনছে না তো?

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিবছর এপ্রিল মাসেই JEE ,NEET অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং জুলাই মাস থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। করোনা অতিমারীর জন্য এবার সময় মতো এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।প্রতি বছরের মতো এ বছরও লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঘরে বসে অধীর আগ্রহে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছে। গত ১৭ আগষ্ট সেপ্টেম্বরে ন্যাশনাল ইলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রাস টেষ্ট্র (এনইইটি) ,জয়েন এন্ট্রাস এক্সামিনেশন (জেইই) আয়োজন করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।এদিকে ১ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর জেইই ও ১৩ সেপ্টেম্বর নিট পরীক্ষার আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছে ন্যাশনাল টেষ্টিং এজেন্সি(এনটিএ)। ন্যাশনাল টেষ্টিং এজেন্সির তরফ থেকে জানানো হয়েছে পরীক্ষার্থীদের থার্মালস্ক্রিনিং করা, সেনিটাইজার ,গ্লাভস,টুপি সরবরাহ করা,শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা, পরীক্ষা কেন্দ্র সেনিটাইজ করার মতো সমস্ত রকম স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রয়োজনে করোনা সংক্রমিত পরীক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এবার সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষা হওয়ার ফলে এই শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বর মাসের আগে শুরু করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ডিসেম্বরে প্রথম সেমিষ্টার অনুষ্ঠীত হতো ।স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম সেমিষ্টারের সাথে আপোস করেই শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে।বলার অপেক্ষা রাখেনা আরো দেরী করে পরীক্ষা নেওয়া হলে এই শিক্ষাবর্ষকে নিবিচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব নয়।এই শিক্ষাবর্ষ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে না পারলে আগামী শিক্ষাবর্ষে চলমান বছরের ছাত্রছাত্রীদের দ্বিগুন সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর সাথে প্রতিযোগীতা করতে হবে । যাতে অনেকেরই ভবিষ্যত অন্ধকার হওয়ার সম্ভবনা সেই সাথে একটি বছর দেশ কোন রকম ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পাবে না।

এই নির্দেশ আসতেই দেশজুরে রাজনৈতিক ঝড় তুলে দিলেন বিরোধী দল গুলি। নিট-জেইই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার দাবিতে শীর্ষ আদালতে হাজির হল ছয়টি রাজ্য। দেশের অ-বিজেপি ছয়টি রাজ্যের মন্ত্রিসভার একজন করে সদস্য এই আবেদন করেছেন। এই ছয়টি রাজ্য হলো বাংলা, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র এবং ছত্তিশগড়। ১৭ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, "কেরিয়ার নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না। করোনা আগামি একবছর চলতে পারে। এই একবছর পরীক্ষা বন্ধ থাকবে? জীবন থেমে থাকতে পারে না। তাই সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।" এই রায় পুনর্বিবেচনার দাবিতে ২১ আগষ্ট ফের সুপ্রিম কোর্টে দরবার করেছে ওই ছয়টি অঙ্গ রাজ্য। এদিকে, চলতি সপ্তাহেই অবিজেপি দলগুলোকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন সনিয়া গান্ধি। জিএসটি খাতে রাজ্যগুলোর বরাদ্দবৃদ্ধি ও নিট-জেইই স্থগিত রাখতে রণকৌশল তৈরির জন্যই ভার্চুয়াল বৈঠক মাধ্যমে এই রাজনৈতিক আয়োজন। এই দুই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল বিরোধী জোটের এই বৈঠকে। তারপর এদিন সুপ্রিম কোর্টে এই দরবার।

বিরোধী দল গুলির হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে JEE ,NEET ওরা যেন পড়ে পাওয়া ষোল আনার মতো রাজনৈতিক ইস্যু হাতে পেয়ে গিয়েছেন।খুব সস্তায় জনদরদী হয়ে উঠার মতো এত বড় সুযোগ হাত ছাড়া করা যায়?এক দিকে যখন আনলকের সময় যানবাহন চলতে শুরু করেছে,রাস্তায় ঘাটে প্রচুর ভিড় হচ্ছে,কলকারখানা খুলছে, পরিযাযী শ্রমিকরা নিজের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাচ্ছে, সেই সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে ছাত্রছাত্রীরা অভিভাবক অভিভাকিকারা সংক্রমিত হয়ে যেতে পারেন এই আশঙ্কা ছড়িয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির ছবি তুলে একটি কৃত্তিম আতঙ্কের পরিবেশ তৈরীর চেষ্ঠা হচ্ছে। মাস্কহীন মানুষের ভিড় জমিয়ে 'হেল্থ বিফোর এক্সামিনেশন' ব্যানার ঝুলিয়ে মিছিল করা হচ্ছে। শুধু সুপ্রিম কোর্টেই নয় বিরোধী দল গুলির দাবি গুলিকে যথার্থ প্রমাণ করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে সোসাল মিডিয়ায় এমন সব মিথ্যে খবর ট্রেন্ড করাচ্ছে যা দেখলে এটাই মনে হবে যে পরিকল্পনা করে বিশৃঙ্খলা তৈরীর উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে।জি নিউজ এরকম বেশ কয়েটি খবরের সততা যাচাই করতে গিয়ে দেখেছে সোসাল মিডিয়ায় যে একটি বিক্ষোভ প্রদর্শনের ছবি পোষ্ট করে বিরোধীরা এটা প্রমান করার প্রয়াস হয়েছে যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরীক্ষর্থীরা লড়ছে, সেই ছবিটি আসলে ২০১৮ সালের অন্য একটি বিক্ষোভ প্রদর্শনের ছবি। এক পরীক্ষার্থী ওর বাবার করোনা পজিটিভ রিপোর্টের ছবি তুলে ধরে বলছে ,আমি কিভাবে পরীক্ষা দেব? জি নিউজের ময়না তদন্তের রিপোর্টে বেড়িয়ে আসে যে ঐ কোভিড পজিটিভ রিপোর্টটি আসলে লাহোরের। হাতের শিরা কেটে এই পরীক্ষার প্রতিবাদ করছে এরকম একটি পোষ্টের ময়না তদন্তে উঠে আসে যে অনেকটি দিন আগে সোসাল মিডিয়ায় পোষ্ট করা ঐ ছবিটি অন্য কারনে পোষ্ট করা হয়ে ছিল। বিভিন্ন মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার ময়না তদন্তে উঠে এসেছে যে সোসাল মিডিয়ায় নো এক্সামিনেশন মতের পক্ষে যে সমস্ত বিষয় ট্রেন্ড করানো হচ্ছে তাতে পাকিস্থানীদের বড় ভুমিকা রয়েছে। নিট জেইই বন্ধের দাবিতে পাকিস্থানীদের আগ্রহ দেখে এটা স্পট হয়ে উঠেছে যে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই এই প্রতিবাদের উদ্দেশ্য । সরকার যদি এই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিতো তাহলে হয়তো পরীক্ষা নেওয়া জন্য আন্দোলন হতো এবং এই আন্দোলনের জন্য একই ধরণের উপকরণ ব্যবহার করা হতো।কারণ করোনার মধ্যেই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার দাবীতে এই দল গুলি ইতিমধ্যই সোচ্চার হয়েছে।

আজকে যারা জেইই ,নিট নেওয়ার বিরোধীতা করছে এই দল গুলিই কিছুদিন আগে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ পুনরায় লাগু করার দাবীতে আন্দোলনে নামার ঘোষনা করে ছিল ।এই ইস্যুতেও পাকিস্থান এই দল গুলির পাশে দাড়িয়ে ছিল।বিভিন্ন ইস্যুতে বিশেষ করে কেন্দ্র সরকার বিরোধী যে কোন ইস্যুতে এই বিরোধী দল গুলির পাশে যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের আতুর ঘর পাকিস্থান দাড়াচ্ছে তাতে এই প্রশ্নটি উঠে আসছে দেশ বড় না ক্ষমতার রাজনীতি বড়।

এদিকে কেরলে একেবারে নীরবে এই করোনার মধ্যেই ১৩ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেল ।মে মাসে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা আয়োজন করা হলেও পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কোভিডের (Covid 19) সংক্রমণ ধরা পড়ল না। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তমাস আইজ্যাক (Thomas Isaac)। ১৫ জুন ২০২০সোমবার একটি টুইট করে তিনি জানান, “১৪ দিন আগে ১৩ লক্ষ স্কুলপড়ুয়া তাদের স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। একজন পড়ুয়াও কোভিডে আক্রান্ত হয়নি।”

দেশের অন্য রাজ্যগুলি যখন পরীক্ষার সূচি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে, তখন কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই দশম আর দ্বাদশ শ্রেণির থমকে থাকার পরীক্ষা শুরু করার ঘোষণা করে দিয়েছিল কেরল।

গত ২৬ মে এই পরীক্ষা শুরু হয়। অবশ্যই পরীক্ষা আয়োজন করার জন্য কেন্দ্রের অনুমতির প্রয়োজন ছিল আর কেন্দ্র সে অনুমতি দিয়েও দিয়েছিল। পরীক্ষা শেষ হয় ৩১ মে।

রাজ্যে তিন হাজারটি পরীক্ষাকেন্দ্রে এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। প্রত্যেক কেন্দ্রেই দু’ জন করে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়। পরীক্ষার্থী-সহ যাঁরা যাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যের দিকে কড়া নজরদারি চালানো হয়।করোনা সংক্রমন প্রকাশিত হতে প্রায় ১৪ দিন লেগে যায়। সেজন্য পরীক্ষা শেষের ১৪ দিন পর কেরলের অর্থমন্ত্রী থমাস আইজ্যাকের টুইট করে জানান

'14 days ago 13 lakh school students completed school final exams in Kerala. Not a single student affected by Covid. It was meticulously planned: schools sanitised. Masks distributed to all. Thermal readings mandatory. Physical distancing ensured. Operation success.#covidkerala

Thomas Isaac (@drthomasisaac) June 15, 2020' সমস্ত স্বাস্থবিধি মেনে পরীক্ষা চালালে যে সংক্রমন এড়ানো যায় সেটা আইজ্যাকের এই দাবিতেই স্পষ্ট । আনলক সেপ্টেম্বরের তুলনায় সম্পূর্ন লকডাইনের মে মাসে করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ ছিল ।সে সময় কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল কোন প্রতিবাদ করে নি , কোন মিছিল হয় নি,কেউ সুপ্রিম কোর্টে যায় নি কিংবা সোসাল মিডিয়াতেও কোন ফেক নিউজ চালায় নিঅতি বিপ্লবী বামপন্থী সংগঠন গুলিও শীত ঘুমে চলে গিয়েছিলএর থেকে স্পষ্ট বোঝায় যায় নিস্পাপ পরীক্ষার্থিদের বলির পাঠা বানিয়ে বিজেপি বিরোধীতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদেকে ভারত ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেড় শতাধিক শিক্ষাবিদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Modi) এই পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষেই সায় দিয়ে চিঠি লিখেছেন। তাঁদের মতে, জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন) (JEE Mains) এবং নিট নিয়ে আরো দেরি করা মানে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে আপোষ করা হয়ে যাবে। তাঁরা আরো লেখেন, "কিছু মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে।" প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে একথাও বলা হয়েছে, "যুবসমাজ ও ছাত্রছাত্রীরা জাতির ভবিষ্যৎ, কিন্তু কোভিড -১৯ মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনেও অনিশ্চিয়তার মেঘ জমে উঠেছে। ভর্তি এবং পঠনপাঠন সম্পর্কে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে প্রাথমিকভাবে তার সমাধান করা দরকার।"

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে "সরকার জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেন) এবং নিট পরীক্ষার দিন ঘোষণা করে দিয়েছে... এখন পরীক্ষা নিতে আরও দেরি করা মানে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যবান একটি বছর নষ্ট হবে। আমাদের যুবসম্প্রদায় ও ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে কোনও মূল্যেই আপোষ করা যাবে না। তবে কেউ কেউ তাঁদের নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে এবং সরকারের বিরোধিতা করার জন্য আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে খেলার চেষ্টা করছে",

ওই বিশেষ চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়,ইগনু, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউ, বিএইচইউ, আইআইটি দিল্লি এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকী ইসরায়েলের মতো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কর্মরত ভারতীয় শিক্ষাবিদরা।

"আমরা দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করি যে সরকার ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের সম্পর্কে যত্নশীল হবে এবং ২০২০-২১ সালের একাডেমিক ক্যালেন্ডারটি বজায় রাখা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করেই জয়েন্টের মেন এবং নিট পরীক্ষা সফলভাবে পরিচালনা করবে।" গত ২৬ সেপ্টেম্বরই জাতীয় পরীক্ষক সংস্থার প্রকাশিত অ্যাডমিট কার্ড ইতিমধ্যেই ডাউনলোড করেছে ১৪ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষার্থী।

উড়িষ্যা সরকার যে সমস্ত শহরে পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে সে রকম ৭ টি শহরে পরীক্ষা চলা পর্যন্ত লকডাউন বাতিল বল ঘোষনা করেছে। পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক অভিভাবিকাদের জন্য রাজ্যজুরে যাতায়তের অনুমোদন দিয়েছে।পরীক্ষার অ্যডমিট কার্ড হতে নিয়ে ওরা ব্যক্তিগত গাড়ি ,ভাড়া করা গাড়ি কিংবা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভ্রমন করতে পারে।উড়িষ্যা রাজ্য সরকার ঘোষনা করেছে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌছানোর জন্য বিনামূল্যে যাতায়তের ব্যবস্থাও করবে।অন্য দিকে এই লেখা পাঠানোর সময় পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে সেপ্টেম্বরের ৭, ১১ এবং ১২ তারিখ রাজ্যজুড়ে কমপ্লিট লকডাউন হচ্ছেই এদিকে ৭ তারিখ লকডাউন হওয়ার জন্য ৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শেষ করে পরীক্ষর্থীরা বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা এবং ১১ ,১২ লকডাইন হওয়ার জন্য ১৩ তারিখ নিট পরীক্ষায় জন্য পড়ুয়ারা পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌছাতে পারবে কিনা এই নিয়ে প্রবল চাপে রয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিভাবিকারা । পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের পরীক্ষা বিরোধী অবস্থানে পরীক্ষার্থীরা আদৌ নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা এই নিয়ে সংশয় তৈরী হয়েছে। এই সংশয় এরাজ্যের পরীক্ষার্থীদের উপর একটি বাড়তি মানসিক চাপ তৈরী করেছে; যা অবশ্যই প্রতিযোগীতায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা।রাজ্য সরকারের এই মানসিকতা সমস্ত দিক থেকে পিছিযে থাকা একটি রাজ্যকে যে আরো পিছিয়ে দেবে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।#

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...