জাপান: জাপানে এই দেবীকে বেনজাইতেন বলা হয়। দেবীর হাতে ম্যান্ডোলিন জাতীয় একটি বাদ্যযন্ত্র। তিনি সুর ও সঙ্গীতের অধিষ্ঠাত্রী। দুটি স্ট্রিং ইন্সট্রুমেন্ট দুই ভিন্ন দেশের দেবীর হাতে দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় দেবী সরস্বতীর মতো বেনজাইতেনও জ্ঞানের পাশাপাশি সঙ্গীত ও অন্যান্য ললিত কলার পৃষ্ঠপোষক। সম্ভবত ভারত থেকে চিন হয়ে জাপানে প্রচলিত হয় সরস্বতীর আরাধনা। সম্ভবত ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে জাপানে এই দেবীর পুজো শুরু হয়। জাপানের হাসেদারা মন্দিরে আছে বেনজাইতেন গুহা। যেখানে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য জাপানি সরস্বতীর মূর্তি। দেবী জাগ্রত, তাই এখানে অনেকেই গোপনে নিজের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করার প্রার্থনা দেবীকে জানিয়ে আসেন।
কমবোডিয়া: কম্বোডিয়ায় আংকর ভাট মন্দিরে গেলে বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর আদলে কিছু প্রাচীন মূর্তি আপনার নজরে আসবে। দীর্ঘকাল ধরে এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজারা রাজত্ব করতেন। দশম ও একাদশ শতাব্দীর একটি পুঁথি থেকে জানা যায় সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রহ্মা ও সরস্বতীর পুজো করা হত। এই অঞ্চলে খেমার বংশের কবিরা দেবী সরস্বতীর গুনগান করতেন। কামবোডিয়ায় দেবী সরস্বতীকে বিবাহিত গণ্য করা হয়। বলা হয় প্রজাপিতা ব্রহ্মা হচ্ছেন দেবীর স্বামী। কামবোডিয়াতে এই দেবীকে বাগেশ্বরী ও ভারতী বলে ডাকা হয়। বিশেষ করে খেমার সাহিত্যে রাজা যশবর্মণের রাজত্ত্ব কালে এই নাম দুটোরই উল্লেখ আছে। থাইল্যান্ড: থাইল্যান্ডে দেবী সরস্বতীর বর্ণ সবুজ আভা যুক্ত। এখানেও জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী হিসাবে আরাধনা করা হয় সরস্বতীকে। তবে হংসের বদলে ময়ূর এখানে দেবীর বাহন।
ইন্দোনেশিয়া: পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া অথচ আমেরিকায় সেই অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের সামনে দেবী সরস্বতীর মূর্তি দেখা যায়। জ্ঞানের স্মারক হিসাবে দেবী সরস্বতীর মূর্তি দেখা যায় দূতাবাসের সামনে। বালি দ্বীপে বসবাসকারী হিন্দুরা দেবী সরস্বতীর আরাধনা করেন। ইন্দোনেশিয়ায় একটি বিশেষ দিন দেবী সরস্বতীর নামে রাখা হয়েছে। এই দিনটিকে বলা হয় ডে অফ সরস্বতী। ইন্দোনেশিয়ার মানুষ এই দিনে পুঁথি, পত্রকে ফুল, ফল, ধুপ-ধুনো সহযোগে আরাধনা করা হয়।২০১৩ সালে পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া আমেরিকাকে সরস্বতীর মূর্তি উপহার দিয়েছে।সাদা রঙের অসাধারণ সুন্দর ১৬ ফিট উঁচু মুর্তিটি হোয়াইট হাউস থেকে আড়াই কিমি দুরে ঐই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। জাকার্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজের অফিসে বসার আগে সরস্বতীর আসল প্রতিকৃতিতে পূস্পার্ঘ দিয়ে থাকেন ।
 তিব্বত:
টিবেট বা তিব্বতে এই দেবীকে বলা হয় ইয়াং চেন মা বা সঙ্গীতের দেবী। তিব্বতীয় তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে দেবীকে এখানে ২১ জন তারার একজন বা দেবী মঞ্জুশ্রীর সঙ্গী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। 
#বিহার, গুজরাত, পঞ্জাব ইত্যাদি জায়গায় সরস্বতী পুজোর দিনে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা আছে। 
#হিন্দু ধর্ম ছাড়াও বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে দেবী সরস্বতীর কথা আছে। 
#তন্ত্র সাধনাতেও সরস্বতীর কথা আছে। 
#দক্ষিণ ভারতে দেবী সরস্বতীকে নবরাত্রি উৎসবে পুজো করা হয়। 
##বিদ্যার দেবী সরস্বতী। প্রশ্ন: বিদ্যা বলতে কি বোঝায়?
 বিদ্যার  সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, "সা বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে" অর্থাত শিক্ষা তাকেই বলব যা জীবনে মুক্তি এনে দেয়। 'মুক্তি' কথাটা তখনই অর্থবহ হয় যখন মানুষ বন্ধনে পীড়িত হয়। কী সেই বন্ধন? ফ্রান্সের বিখ্যাত দার্শনিক রুশো বলেছিলেন যে মানুষ জন্মগ্রহণ করে মুক্ত অবস্থায়। কিন্তু সমাজের রীতি-নীতিই তার জীবনে বন্ধন এনে দেয়। কিন্তু প্রাচ্য দর্শনের আলোয় যদি এই দর্শনকে দেখি তাহলে দেখব কথাটা পুরোপুরিস সত্য নয়। কারণ মানুষ একেবারে মুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সে নিয়ে আসে কিছু সুপ্ত মানসিক প্রবণতা থাকে বলা হয় বৃত্তি। এই বৃত্তিগুলো তার মনোজগতকে তার প্রভাবিত করে। আর সেই অনুযায়ী তার আচার ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই অন্ন, বস্তু প্রভৃতি জাগতিক বন্ধন থেকে যেমন মুক্তির কথা ভাবতে হবে তেমনি কাম, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি বৃত্তিজাত   বন্ধন থেকেও তাকে মুক্ত হতে হবে।
 এ সব বন্ধন থেকে স্থায়ী মুক্তির পথ অনন্ত সুখ অর্থাৎ আনন্দের সম্প্রাপ্তিতে। এই প্রাপ্তিকে বলা হয় মোক্ষসম্প্রাপ্তি। তাই বিদ্যা  আমরা তাকেই বলি যা আমাদের জাগতিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক মুক্তি এনে দেয়। বিদ্যা অর্জনের মাধ্যম শিক্ষা ব্যাখ্যাত হয় জীবনদর্শন অনুযায়ী। সেজন্য  জীবনদর্শন হচ্ছে 'আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ — "আত্মার মোক্ষ ও জগতের কল্যাণের নিমিত্ত" । অর্থাৎ জগতের হিত বা কল্যাণের মধ্য দিয়ে আত্মার মোক্ষত্ব অর্জন। এই মোক্ষত্ব বা ব্রহ্মসম্প্রাপ্তি করতে হবে জগতের কল্যাণকর্মের মধ্য দিয়ে। নিছক পেশাগত জীবনের জন্যে প্রস্তুতি নেওয়ার অর্থ উপার্জনের দিকে দৃষ্টি রেখে নানাবিধ জ্ঞান অর্জন করে সমাজে একটা কেউকেটা হওয়া শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়। প্রকৃত শিক্ষা মানুষের জাগতিক ও মানসিক অপূর্ণতাকে দূর করে প্রজ্ঞার আলোকে জীবনকে আলোকিত করে। আর এই ভাবেই তা জীবনে মুক্তির পথ দেখায়। 
##সরস্বতী শব্দের অর্থ কী? 
 বেদের মন্ত্রগুলো পর্যালোচনা করলে এটাই মনে হবে যে , সরস্বতী মূলত সূর্যাগ্নি। রামায়ণ রচয়িতা ঋষি বাল্মীকি  যখন ক্রৌঞ্চ হননের শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন, সে সময় জ্যোতির্ময়ী ব্রহ্মাপ্রিয়া সরস্বতী তাঁর ললাটে বিদ্যুৎ রেখার মত প্রকাশিত হয়েছিলেন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী; সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী।বুৎপত্তিগতভাবে সরস্বতী শব্দের দুই অর্থ- একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যামি, অন্যটি নদী। সরস্+বর্তী = সরস্বতী, অর্থ জ্যোতির্ময়ী। আবার স্ ধাতু নিস্পা করে সর শব্দের অর্থ জল। অর্থাৎ যাতে জল আছে তাই সরস্বতী। 'সতত রসে সমৃদ্ধ। তিনি শুরুকর্ণা, শুষ হংসবাহনা, 'বীণা-রঞ্জিত পুস্তক হস্তে' অর্থাৎ এক হতে বীণা ও অন্য হতে পুস্তক।সরস্বতী হলেন গতি এবং শক্তির দেবী। নদীরূপে তিনি পর্বত বিদীর্ণ করে সজোরে এগিয়ে চলেন দেবীরূপে তিনি যাবতীয় অশুভ শক্তির প্রতিরোধ সবলে চূর্ণ করে এগিয়ে যান। 
ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত প্রতিমাকল্পটিতে দেবী সরস্বতী দেবীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভূষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 
ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে।
নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ।। 
অর্থাৎ, “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেতপদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভিত বাগ্দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।”
ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী দেবী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং হংসবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা রূপে পূজিত হন। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী প্রতিমার পূজা করা হয়। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা। 
## দেবী হংসবাহনা কেন? 
জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর বাহন রাজহংস। কারণ হাঁস অসারকে ফেলে সার গ্রহণ করে। দুধ ও জলের মিশ্রণ থেকে জল ফেলে শুধু দুধটুকু গ্রহণ করে কিংবা কাদায় মিশ্রিত স্থান থেকে তার খাদ্য খুঁজে নিতে পারে। মায়ের সঙ্গে পূজিত হয়ে শিক্ষা দিচ্ছে, সবাই যেন অসার/ ভেজাল/ অকল্যাণকরকে পরিহার করে নিত্য পরমাত্মাকে গ্রহণ করে এবং পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। 
##দেবী বীণাপানি কেন?
 বীণার জীবন ছন্দময়। বীণার ঝংকারে উঠে আসে ধ্বনি বা নাদ। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর ভক্তরা সাধনার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করলে বীণার ধ্বনি শুনতে পায়। বীণার সুর অত্যন্ত মধুর। তাই বিদ্যার্থীদেরও মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর ও সঙ্গীতময় হয়। সেই কারণেই মায়ের হাতে বীণা। তাই দেবী সরস্বতীর আরেক নাম ‘বীণাপাণি’। 
##দেবী সরস্বতীর হাতে পুস্তক কেন? 
বিদ্যার্থীদের লক্ষ্য জ্ঞান অন্বেষণ। আর জ্ঞান ও বিদ্যার অন্বেষণের জন্য জ্ঞানের ভান্ডার ‘বেদ’ তার হাতে রয়েছে। সেই বেদই বিদ্যা। তিনি আমাদের আশীর্বাদ করছেন আমাদের জীবনকে শুভ্র ও পবিত্র করতে।
মাঘ মাসে শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী মায়ের পূজা করা হয়। দেবী সরস্বতীর পূজা প্রাচীন যুগ থেকেই বাঙালীর হৃদয় ও অন্তরে সমাদৃত হয়ে আসছে। তিনি শুক্ল বর্ণ, শুভ্র হংসবাহনা, বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে অর্থাৎ একহাতে বীণা ও অন্য হাতে পুস্তক। 
##এখন দেখে নেওয়া যাক, দেবী শুক্লবর্ণা কেন? 
শুক্ল বর্ণ মানে সাদা হল ভাল গুণের প্রতীক। পবিত্র গীতার চতুর্দশ অধ্যায়ের শ্লোকে আছে, ‘তত্র সত্ত্বং নির্মলাত্বাৎ’ অর্থাৎ সত্ত্ব, তমো ও রজোগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ অতি পবিত্র গুণ। স্বচ্ছতার প্রতীক, নির্মলতার প্রতীক। আবার ওই অধ্যায়ের ১৭ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে- ‘সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং’ অর্থাৎ সত্ত্বগুণে জ্ঞান লাভ হয়। তাই জ্ঞানময়ী সর্বশুক্লা দেবী শ্রী শ্রী সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিত বলে তার গায়ের রঙ শুক্লবর্ণ অর্থাৎ দোষহীনা। পবিত্রতার মূর্তি আর জ্ঞানদান করেন বলে তিনি জ্ঞানদায়িনী।
সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম প্রচলিত পূজা। সরস্বতী দেবীকে শিক্ষা, সংগীত, শিল্পকলার আশীর্বাদদাত্রী মনে করা হয়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী মায়ের পূজার দিন। শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলায় সফলতার আশায় শিক্ষার্থীরা দেবীর পূজা করে থাকে। 
##বিভিন্ন নামে দেবী সরস্বতী :
বাগদেবী, বিরাজ, সাবদা, ব্রাহ্মী, শতরূপা, মহাশ্বেতা, পৃথুধর, বকেশ্বরী, ভারতী সহ আরো অনেক নামেই দেৱী ভক্তের হৃদয়ে বিরাজ করেন।
দেবীর বেশভূষা ও সাজসজ্জা
শ্বেতবস্ত্র পরিহিত্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন পুষ্পশোভিত রাখা হয়। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগে পর্যন্ত দেবীর মুখমণ্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার আরেকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্থ হল পলাশ ফুল। দেৱীৰ অঞ্চলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান। 
##শিক্ষার্থীরা দেবী সরস্বতীর পূজো করে কেন?
 মানব মন জ্ঞান পিপাসু। শিক্ষার্থীরা সর্বদা জ্ঞানের সন্ধান করে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অনুযায়ী 'শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রীয়' অর্থাৎ শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করে থাকেন। দেবী সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী, বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তাই শিক্ষার্থীরা দেবীর আবধনা করে।স্কুল কলেজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা ।কারন শ্রেণী কক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কেউ  মা সরস্বতীর অর্থাৎ রসের সন্ধান  পায় না । কলেজে রস পায় বলে সেখানে গেলেও   রসহীন শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রীরা  থাকতে উৎসাহিত বোধ করে না । 
## বিভিন্ন গ্রন্থে বর্নিত বাগদেবীর স্বরূপ :
ঋগ্বেদ আছে 'অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী। সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব। ত্রয়ীমূর্তি- ভূ: ডুব: স্ব, জ্ঞানময়ীরূপে সর্বত্রব্যাপিনী। বিশ্বভুবন প্রকাশ তারই জ্যোতিতে। তার হৃদযস্থিত আলোকবর্তিকা প্রজ্জ্বলিত হওয়াই জমাট বাধা অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার যায় দূর হয়। অন্তরে, বাইরে সর্বত্র তখন জ্বলতে থাকে জ্ঞানের পুণ্য জ্যোতি। এই জ্যোতিজ্ঞানই ব্রহ্মজ্ঞান, এই জ্যোতিই সরস্বতী। আলোকময়ী, তাই তিনি সর্বতমা। তিন গুণের মধ্যে তিনি সত্ত্বগুণময়ী, অনন্ত জ্ঞানময় ঈশ্বরের বাকশক্তির প্রতীক । গতিময় জ্ঞানের জন্যই রেদে তাঁকে নদীরূপা কল্পনা করা হয়েছে, যিনি প্রবাহরূপে কর্মের দ্বারা মহার্ণর বা অন্য সমুদ্র মিলিত হয়েছেন। কল্যাণময়ী নদীতটে সাম গায়কেরা বেদমন্ত্র উচ্চারণে ও সাধনে নিমগ্ন হতো। তাদের কণ্ঠে উদ্গীত সাম সঙ্গীতের প্রতীকী বীণা শোভা পায় দেবীর করকমলে। সরস্বতী বিধৌত ব্রহ্মাবর্ত ভূমি বেদ-বেদাঙ্গ-বেদাত্ত আশ্রয় করে সাধনা করতেন আশ্রমবাসী ঋষিমুনিগণ। 'পুস্তক হস্তা' দেবী গ্রন্থ রচনার সহায়ক লেখনীটিও রেখেছেন তাঁর সঙ্গে।দেবী সরস্বতীর কোথাও দুই কোথাও চার হাত। বিভিন্ন মতানুযায়ী, ওই চার হাত মানুষের ‘মন’, ‘সচেতনতা’, ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ ও ‘অহম’-এর প্রতীক। আবার কোথাও সরস্বতীর চার হাত চার বেদ ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব-র প্রতীক।
 ● মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে শ্রীশ্রীচণ্ডী উত্তবলীলায় শুম্ভ নিশুম্ভ নামক অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তির কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল মহাসরস্বতী। এ মূর্তি অষ্টভূজা-বাগ, শঙ্খ, চক্র, হল, মুষল, শূল ও ঘণ্টা ছিল তাঁর অস্ত্র। তাঁর এই সংহাবলীলাতে জ্ঞানের ভাবটিও মলিন হয়নি, কারন তিনি মোহদুষ্ট শুশুকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন।
ছন্দপুরাণে প্রভাসযতে দেবী সরস্বতীর নদীরূপে অবতরণের কাহিনী বর্ণিত আছে।
এ বায়ু পুরাণ অনুযায়ী সমুদয় জগৎ রুদ্র কর্তৃক সংহৃত হবার পর পুনর্বার প্রজাসৃষ্টির জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজ অন্তর থেকেই দেবী সরস্বতীকে সৃষ্টি করেন। সরস্বতীকে আশ্রয় করেই ব্রহ্মার প্রজাসৃষ্টি সূচনা।
গরুড় পুরাণে সরস্বতী শক্তি অষ্টবিধা। শ্রদ্ধা, আদি, কলা, দেখা, তুষ্টি, পুষ্টি, প্রভা ও স্মৃতি। তত্ত্বে এই অষ্টশকি যথাক্রমে যোগ, সত্য, বিমল, জ্ঞান, বুদ্ধি, স্মৃতি, মেধা ও প্রজ্ঞা।##
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন