সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারদজয়ন্তী :সাংবাদিকতায় মানব কল্যানের বার্তাবাহক

সাধনকুমার পাল:::আদিসাংবাদিক দেবর্ষি নারদের জন্মজয়ন্তীতে সেই সমস্ত সাংবাদিক স্মরনীয় হয়ে উঠেন যারা নিজের জীবন দিয়ে সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার রক্ষা করে গেছেন।একটি রিপোর্ট বলছে ১৯৯২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বিশ্বজুরে ১৯০০ জন সাংবাদিক কে হত্যা করা হয়েছে।এর মধ্যে ভারতের ৭৮ জন সাংবাদিক রয়েছেন। এই ৭৮ জনের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু ভয়ানক,৩৪ জনকে মেরে ফেলা হয়েছে,বাকি ৩০ জনের মৃত্যু কেমন করে হয়েছে তা এখনো অজানা।২০১৮ সালে সিপিজে(Committee to protect Journalist)সাংবাদিক হত্যায় দোষীদের শাস্তি না হওয়ার নিরিখে সবচেয়ে নিচের সারিতে থাকা বিশ্বের ১৫টি দেশের যে তালিকা করেছে তাতে ভারতের স্থান ১৪।গত ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ছত্রিশগড়ের দান্তেওয়ারায় মাওবাদীদের গুলিতে দু জন সিআরপিএফ জওয়ানের সাথে মৃত্যু হয় দুরদর্শনের ক্যামেরাম্যান অচ্যুতানন্দ সাহুর।অচ্যুতানন্দ সাহুর জীবনের অন্তিম রিপোর্টিং সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।তাতে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর অন্তিম মূহূর্তে একটু জলের জন্য কাতর আবেদন করেও মাওবাদীদের তরফে কোন সাড়া মেলেনি। মাওবাদীরা স্থানীয় ভাষায় সাংবাদিকদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুর পর যারা পথে নেমে ছিলেন,আরবান নকশালদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে যারা প্রতিবাদের ঝড় তুলে আকাশ বাতাশ মুখরিত করে সুপ্রিম কোর্টে ছুটে গিয়েছিলেন, মাওবাদী বা কাশ্মীরী সন্ত্রাসবাদী নিহত হলে যারা মানবাধিকারে প্রশ্ন তুলে ভারতের সমস্ত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাটিকে যারা প্রশ্নের মুখে দাড় করিয়ে দেন করেন সেই কবি সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিকরা অচ্যুতানন্দ সাহুর হত্যাকান্ড নিয়ে কিন্তু সামান্য দু:খ প্রকাশের সৌজন্যও দেখালেন না।অচ্যুতানন্দ সাহুর ভয়ানক হত্যাকান্ড নিয়ে সাংবাদিকদের সবচেযে বড় প্রতিষ্ঠান এডিটার গিল্ড অফ ইন্ডিয়া এতটাই সাধারণ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে যে তাতে মৃত সাংবাদিকের নাম পর্যন্ত নেই অথচ গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুর পর এই একই প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়ার প্রতিটি বর্ণ থেকেই দু;খ-ক্ষোভ-ঘৃণা যেন ঝড়ে পড়ছিল।প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই দ্বিচারিতা। নিজেদের স্বরুপ প্রকাশিত হওয়ার ভয়ে যেমন মাওবাদীরা যেমন এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সেই একই কারণে কি এই কবি সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিকরা কিংবা এডিটার গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান অচ্যুতানন্দ সাহুর মতো সত্যের পূজারীদের বর্বর হত্যাকান্ড সর্বসমক্ষে আসতে দেন না? সাংবাদিক হিসেবে নিজের জীবন দিয়ে নারদীয় পরম্পরা রক্ষাকারী অচ্যুতানন্দ সাহুদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাশাপাশি সাংবাদিকবেশি রাজনীতির এজেন্টদের দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারলেই স্বার্থক হবে দেবর্ষী নারদ জন্মজয়ন্তী উদযাপন। ভারতীয় মিডিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম বলে ছিলেন। Why is the media here so negative?Why are we in India so embarrassed to recognize our own strengths, our achievements?We are such a great nation. We have so many amazing success stories but we refuse to acknowledge them. Why?..... There are millions of such achievements but our media is only obsessed in the bad news and failures and disasters. দৃষ্টান্ত স্বরূপ তিনি ইসরায়েলি মিডিয়ার উদাহারণ টেনে এনে ছিলেন ।একবার ইসরায়েল সফরের সময় সন্ত্রাবাদী গোষ্ঠী হামাসের প্রবল আক্রমনে বোমাবাজী, গোলাগুলি, ফল স্বরুপ হতাহত ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরের দিন তেল আভিবে বসে সংবাদ পত্র চোখ রেখে তিনি অবাক হয়ে যান ।দেখলেন ইসরায়েলি সংবাদ পত্র গুলির প্রথম পাতায় এত বড় ঘটনা স্থান পেলো না। প্রথম পাতায় সচিত্র প্রতিবেদন হিসেবে স্থান পেলো এক ইহুদি ভদ্রলোক কিভাবে পাঁচ বছরের পরিশ্রমে মরুভূমিতে ফসল ফলিয়েছেন সেই খবর।হামাসের আক্রমনের খবর অন্যান্য খবরের সাথে ভিতরের পাতায় স্থান পেলো। শক্তিশালী দেশ গড়তে মিডিয়া কিভাবে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা নিতে পারে ড:কালামের উদাহারণ থেকে তা স্পষ্ট। গভীর ভাবে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে বিশ্ব বহ্মান্ডের প্রথম সংবাদদাতা দেবর্ষি নারদ রচিত নারদ ভক্তি সূত্রের বিভিন্ন শ্লোকেও যে সমস্ত বিধিনিষেধ ও দায়িত্ব বোধের উল্লেখ রয়েছে আধুনিক মিডিয়া সম্পর্কে ড:কালাম উত্থাপিত প্রশ্ন গুলি তারই প্রতিফলন। প্রশ্ন উঠতে পারে হঠাৎ করে 'বিদুষক', 'কলহ প্রিয়' হিসেবে চিন্হিত দেবর্ষি নারদের মতো একটি পৌরানিক চরিত্রকে তুলে ধরার প্রয়াস কেন? কিছু সিনেমা সিরিয়ালে নারদ চরিত্রকে বিকৃত করে হাস্যরসের উপাদান হিসেবে তুলে ধরার ফলে জন মানসে দেবর্ষি সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরী হয়েছে।অথচ পুরাণ বলছে নারদের মতো আদর্শ চরিত্র কমই দেখা যায়।স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ আছে অর্জুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে প্রশ্ন করে ছিলেন, আপনি কেন প্রতিদিন নারদের নাম জপ করেণ। উত্তরে শ্রী কৃষ্ণ বলেছিলেন এই ত্রিলোকে দেবর্ষি নারদের থেকে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই।নিজের জন্য নয় নারদ সর্বদাই ত্রিলোকের মঙ্গলের কাজই কাজ করেণ।সে জন্যই তিনি প্রতিদিন নারদের নাম জপ করেণ। গভীর ভাবে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে লোক কল্যানের জন্য কলহ যেখানে অনিবার্য ঠিক সেই সমস্ত জায়গাতেই তিনি নিজেকে কলহ প্রিয় হিসেবে উপস্থাপিত করতেন।যেমন, ত্রিলোক বিজয়ী অহংকারী দানব জলন্ধরের দাপটে যখন সর্বত্র ত্রাহী ত্রাহী রব উঠছে তখন 'কলহ প্রিয় চরিত্র' নিয়ে ত্রাতার ভুমিকায় অবতির্ন হলেন দেবর্ষি নারদ। জলন্ধর তখন ত্রিলোকের সবচেয়ে সুন্দরী রমনীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দেবর্ষি নারদ জানতেন অজেয় এই দানব একমাত্র শিবের হাতেই বধ্য। তিনি এই দানবের কামনা পুর্তির সহায়ক হয়ে উঠলেন। জলন্ধর কে জানালেন এই ত্রিলোকে মাতা পার্বতির চেয়ে সুন্দরী ও কৈলাসের চেয়ে সুন্দর জায়গা আর নেই। মাতা পার্বতিকে লাভ করার জন্য জলন্ধর কৈলাস আক্রমন করলে বাঁধলো যুদ্ধ।সেই যুদ্ধেই শিবের হাতে নিহত হলেন প্রবল পরাক্রমশালী এই দানব।তিন লোকেই সুখ ও শান্তি পুনস্থাপিত হলো। স্বামী বিবেকানন্দ বলছিলেন আপাত দৃষ্টিতে অলৌকিকতা ও অবিশ্বাস্য ঘটনা বলির মোড়কে আবৃত্ত থাকলেও পুরাণের চরিত্র গুলি সত্য , ন্যায়, নীতি,দানব থেকে দেবতা হয়ে উঠার মতো শ্রেষ্ঠত্বের সাধনা ও মূল্যবোধের মতো আদর্শের মনিমুক্তো খচিত।শাশ্বত সনাতন এই সমস্ত আদর্শ যুগে যুগে মানব সভ্যতাকে পথ প্রদর্শন করে এসেছে। দেবর্ষি নারদ বাস্তবে ছিলেন কি ছিলেন না, এই চরিত্রের সাথে বর্ণিত অলৌকিক ঘটনাবলি সত্য কি মিথ্যা, তা প্রতিপন্ন করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের প্রথম সংবাদদাতা হিসেবে দেবর্ষি নারদের জীবন দর্শন এক কলোত্তীর্ন আদর্শ।শুধু আধুনিক সংবাদ জগৎ নয় দেবর্ষি নারদের জীবনাদর্শ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছেও এক অনুসরণ যোগ্য আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। দেবর্ষি নারদের চরিত্রের সাথে জড়িয়ে থাকা কলোত্তীর্ন এই আদর্শের উপর আলোকপাত করাই এই লেখার উদ্দেশ্য। প্রত্যেক মানুষই নিজ নিজ সামর্থ ও রুচি অনুসারে কোন না কোন কাজের সাথে যুক্ত থাকেন।বিবেকানন্দ বলেছিলেন 'spirituality is the soul of India'.পরম্পরা অনুযায়ী ভারতবর্ষে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই উচ্চ আদর্শের প্রতীক একজন দেবতাকে পূজো দিয়ে সেই কাজের শুভারম্ভ করা হয়। যেমন বিদ্যার্থীরা সরস্বতী পূজো করেণ, ব্যাবসায়ীরা গনেশ পূজো করেণ,নির্মান কাজের সাথে যুক্তরা বিশ্ব কর্মা পূজো করেন।সমগ্র জীবন দিয়ে মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্রের ঐ উচ্চ আদর্শকে আয়ত্ব করার প্রয়াস করেন।এই প্রয়াসের নামই সাধনা। সাধনা শব্দটির সাথে জুরে রয়েছে এমন একটি ভাব যার সাহায্যে মানুষ অনুভব করে ব্যক্তি হিসেবে সে এই সৃষ্টির অবিচ্ছদ্দ অঙ্গ এবং নিজের প্রাত্যহিক কাজের মাধ্যমে এই সৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করাই ওঁর জীবনের অন্তিম লক্ষ।ভারতের একান্ত নিজস্ব এই আধ্যাত্বিক ভাবকেই স্বামীজী ভারতের আত্মা হিসেবে চিন্হিত করেছেন।এই ভাব থেকে বিচ্যুতিই সমস্ত ধরণের স্খলন পতন, দুর্নীতি ,ক্ষুদ্রতার উৎস।সন্দেহ নেই ভারতীয় মিডিয়াও এই স্খলন পতনের সমস্যায় জর্জরিত।এই স্খলন পতন এতটাই য়ে মিডিয়ার একাংশ এখন ক্ষুদ্র ব্যাক্তি স্বার্থ, কায়েমি স্বার্থের ক্রিড়নক হয়ে উঠছে।এই বিচ্যুতিই মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে মিডিয়া সম্পর্কে ড: কালাম উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর। ভারতীয় ভাবধারায় যাকে কর্ম সাধনা বলা হয় পাশ্চাত্ব্য ভাবধারায় সেইটিকে পেশা বা পেশাদারিত্ব হিসেবে চিন্হিত করা হয়। ব্যাক্তির সমৃদ্ধিই পেশা বা পেশাদারিত্বের চরম ও অন্তিম লক্ষ হলেও সেই দেশের ভাব ও সংস্কৃতি অনুযায়ী কিছু উচ্চ ভাবনাও নিহিত থাকে। যা থেকে বিচ্যুতির অর্থ অধ:পতন। ইতিহাস বলছে এই ভারতীয় পরম্পরা কে সামনে রেখে ১৮২৬ সালের ৩০ মে নারদ জয়ন্তীর দিন বিশ্ব বহ্মান্ডের প্রথম সাংবাদিক দেবর্ষি নারদকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে কলকাতায় ভারতের প্রথম হিন্দি সাপ্তাহিক 'উদন্ত মার্তন্ড' আত্ম প্রকাশ করে। দেবর্ষি নারদের সময় আজকের দিনের মতো প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক বা সোস্যাল মিডিয়া ছিল না।সে সময় সংবাদ আদান প্রদান হতো মৌখিক ভাবে। এক সাথে অনেক মানুষের কাছে সংবাদ পৌছানোর জন্য মেলা,তীর্থস্থান ,হাট বাজার,ধর্মীয় জমায়েত গুলি কাজে লাগানো হতো।একজন আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে দেবর্ষি নারদের দেব,মানব ও দানব এই তিন লোকেই অবাধ বিচরণ ও সমান বিশ্বাস যোগ্যতা ছিল।যুদ্ধের মতো সঙ্কটময় মূহূর্তেও দেবর্ষি নারদ অবাধে যাতায়ত করতেন এবং নিরপেক্ষ ভাবে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করতেন।নারদের দেওয়া তথ্য কোন পক্ষই হালকা ভাবে নিতেন না। সাংবাদিকতা কাজের জন্য যে সমস্ত গুণের বিকাশ হওয়া আবশ্যক দেবর্ষি নারদের চরিত্রে সেই সমস্ত গুণ পূর্নরুপে বিকশিত হয়েছিল। ব্রহ্মজ্ঞানী এই ঋষির জীবন দর্শনের মূল কথা ছিল 'লোক কল্যান'।পুরান অনুসারে তিনি ছিলেন ৬৪ টি বিদ্যায় পারদর্শি এক চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। কোন ধারনা ও পরিস্থিতিকে কে তিনি যথাযথ ভাবে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন করতে পারতেন । এই বিশ্লেষনের মাধ্যমেই উঠে আসতো ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে তার অনুমান। এক মাত্র দেবর্ষি নারদ কেই 'দেবতাদের মন' বলা হতো ।কারণ কিছুক্ষন কথা বলেই তিনি শুধু দানব ও মানব নয় দেবতাদেরও পড়ে ফেলতে পারতেন। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নৈপুন্য অর্জনের জন্য দেবর্ষি নারদ যে ভাবে প্রয়াসি হয়েছেন মানব সমাজের কাছে চিরকালই তা প্রেরণার উৎস হিসেবে গন্য হতে পারে। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নিজের অসম্পুর্নতা নজরে আসতেই তিনি কঠোর তপস্যার মাধ্যমে নিজেকে উচ্চমানের সংঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।তপস্যা করে ভগবান বিষ্ণুর কাছে বর লাভ করেণ। নারদ সংহিতা নামক সংগীত শাস্ত্র প্রণয়ন করেণ।বীণা নামক বাদ্য যন্ত্রটি দেবর্ষি নারদেরই সৃষ্টি। তিনি নারদ ভক্তি সুত্র নামক গ্রন্থের রচয়িতা।নারদ ভক্তি সুত্রে আত্মা পরমাত্মা সম্পর্কিত ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট তিনি উচ্চ মানের দার্শনিক ছিলেন।অন্যান্য ঋষিদের মতো দেবর্ষি নারদের কোন আশ্রম ছিল না।লোক কল্যানের জন্য তিনি সর্বদাই বার্তাবাহক হিসেবে ভ্রমণ করতেন। দেবর্ষি নারদের প্রত্যেকটি বার্তা, বাক্য ও উপস্থাপিত বিষয় সমুহ বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে নিজের হিতের জন্য নয় তিনি যা করেছেন সবই লোক হিতের জন্য। শুধু মাত্র আত্মতত্ত্ব নয় নারদ ভক্তিসূত্রের ব্যাপক ব্যাবহারিক তাৎপর্য়ও আছে।যেমন, ভক্তি সূত্রের ৪৩ নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন অবাঞ্চনীয় কে পরিত্যাগ করতে হবে। যা কিছু অবাঞ্চনীয় তার প্রচার প্রসার প্রতিপালন হওয়া বাঞ্চনীয় নয়।অর্থাৎ নেতিবাচক সাংবাদিকতা এই সমাজের জন্য বিষতুল্য। ৬৩ নম্বর শ্লোকের তাৎপর্য বিশ্লেষন করলে দেখা য়াবে দেবর্ষি নারদ সংবাদ হিসেবে পরিবেশনের ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন।যেমন এক,স্ত্রী বা পুরুষের শরীর বা তার মোহের বর্ননা করা যাবে না।দুই,নাস্তিকতার বর্ননা করা যাবে না,তিন শত্রুর চর্চা করা যাবে না। ৭৮ নং শ্লোকে বলা হয়েছে যে কোন মানুষের মধ্যেই অহিংসা , সত্য ,শুদ্ধতা, সংবেদনশিলতা এই সমস্ত গুণাবলির সমাবেশ আবশ্যক। সংবাদদাতাদের মধ্যেও এই সমস্ত গুণের সমাবেশ ঘটবে এটাই প্রত্যাশিত। বাল্মীকি দস্যুবৃত্তি করে পরিবার চালাতেন। একদিন দেবর্ষি নারদকে অর্থ লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে আক্রমন করলে দেবর্ষি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তাঁর পরিবার তাঁর পাপের ভাগী হতে চায় কি-না! নারদের মন্ত্রণায় তিনি তাঁর পরিবারের প্রত্যেককে এ প্রশ্ন করলে সকলেই জানায় যে তাঁর পাপের ভাগী তাঁরা হতে চায় না।ঐ দস্যু জীবনের সত্যতা উপলব্ধি করে নারদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চায়। নারদ তাঁকে রাম নাম জপ করতে শেখান। ঐ দস্যু বহু বছর সাধনা করে ব্রহ্মা’র নিকট বরলাভ করে কবিত্বশক্তি প্রাপ্ত হন। তপস্যারত অবস্থায় তাঁর দেহ বল্মীকের স্তুপে ঢেকে গিয়েছিল বলে তাঁর নামকরণ হয় বাল্মীকি।দেবর্ষি নারদের জন্যই রামায়ন রচিত হয়েছিল।ঋষি বাল্মীকি ১৬টি গুন সম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষের খোঁজে ছিলেন। দেবর্ষি নারদ ৫৭টি গুণ সম্পন্ন পরুষোত্তম রামের খোঁজ দেন। সুবক্তা ও অসাধারণ বিশ্লেষক দেবর্ষি নারদের মুখে শ্রীরাম চন্দ্রের কাহিনী শুনে ঋষি বাল্মীকির মনে রামায়ণ রচনার ভাবনা আসে। তিনি ধ্রব কে তপস্যা ও ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখিয়েছেন। প্রহ্লাদকে আধ্যাত্বিক উপদেশ দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশের পথ প্রশস্থ করে ছিলেন। কৃষ্ণ পৌত্র অনিরুদ্ধ বাণরাজপুরে অবরুদ্ধ হলে তিনি দ্বারকায় ঐ সংবাদ প্রদান করে দৈত্যবিনাশে সহায়তা করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় অনেক অসুরের জীবনাশ হয়। পাণ্ডবরা ইন্দ্রপ্রস্থে রাজধানী স্থাপন করলে দেবর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হয়ে দ্রৌপদির জন্য পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে যাতে বিরোধ না হয়, তার নিয়ম নির্ধারণ করতে উপদেশ দেন। ফলত লোক কল্যানের জন্য সকল স্থানেই দেবর্ষি নারদকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও স্বেচ্ছায় উপস্থিতি দেখা যায়। আদি সাংবাদিক নারদ সাংবাদিক হিসেবে যে আদর্শ তুলে ধরেছেন সেগুলি নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষনার প্রয়োজন আছে। মানব সভ্যতার সামনে বড় বড় বিপদ দেবর্ষি নারদের প্রচেষ্ঠায় কেটে গেছে। অর্জুন একবার দিব্যাস্ত্র ( হয়তো আজকের দিনের পরমানু অস্ত্রের সমতুল)পরীক্ষা করতে চাইলে দেবর্ষি নারদ তাকে নিরস্ত করে বলেন দিব্যাস্ত্রের ব্যাবহার শুধুমাত্র চরম পরিস্থতিতে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্যই করা প্রয়োজন। শুধু মাত্র সংবাদ আদান প্রদান নয় দিক ভ্রান্ত মানুষ ও সমাজকে সঠিক দিশা দেওয়াও যে এক জন সাংবাদিকের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে আদি সাংবাদিক দেবর্ষি নারদ সে আদর্শও প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।#

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...