সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিজয়া দশমীর বার্তা:অস্ত্র ধরা প্রয়োজন, অহিংসার আদর্শ বাঁচিয়ে রাখতে


সাধনকুমার পালশ্রীমদ্ভগবত গীতার সর্বশেষ শ্লোকটি হল  'यत्र योगेश्वरः कृष्णो यत्र पार्थो धनुर्धरः। तत्र श्रीर्विजयो भूतिर्ध्रुवा नीतिर्मतिर्मम 'অর্থাৎ যেখানে যোগেশ্বর  কৃষ্ণ, যেখানে ধনুর্ধর অর্জুন থাকবেন সেখানেই সমৃদ্ধি, বিজয়, সুখ এবং দৃঢ় নীতি আছে; এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এই শ্লোক থেকে এটা স্পষ্ট যে  সুখ সমৃদ্ধিপূর্ণ পরিপূর্ণ ব্যবস্থার  জন্য জ্ঞান প্রজ্ঞা বুদ্ধিমত্তা উদ্যমের যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি দুষ্টের দমনের জন্য প্রয়োজন অস্ত্রের। অর্থাৎ শস্ত্র এবং শাস্ত্রের সহাবস্থান প্রয়োজন।  শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য নয় শান্তি স্থাপনের জন্য শস্র হবে শাস্ত্র নিয়ন্ত্রিত

সাম্প্রতিক ঘটনা বলির পরিপ্রেক্ষিতে ইজরায়েলের দিকে তাকালে আমারা শস্ত্র ও শাস্ত্রের সার্বিক ভারসাম্যের বিষয়টি বুঝতে পারবো। ইসরায়েল রাষ্ট্রের যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন সেখানে জল এবং উর্বর ভূমির সংকট ছিল।কৃষি-ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে একটি হাই-টেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে ইসরায়েল। অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মরুভূমিতে নানা ধরণের শস্য ফলানোর যে সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি তা নজীর বিহীন । উন্নয়নের সমস্ত দিকেই ইসরায়েলের চমক জাগানো সাফল্য বিশ্ব জুড়ে আলোচ্য বিষয়।গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ গাজা ভিত্তিক ইসলমিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হামাস রাতের অন্ধকারে উৎসবমূখর ইজায়েলে হামলা চালায়। সেই হামলার নৃশংসতা দেখে বিশ্ববাসী চমকে উঠে ছিল। আত্মরক্ষার অধিকারের নীতিতে ইজরায়েলের প্রত্যাঘাত দেখে একটিই কথা বলতে হবে জ্ঞানে বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ ইজরায়েল সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী না হলে আজ দেশটির অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। ইজরায়েল শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমানভাবে দক্ষতার দিকে এগিয়েছে।

একটি সংস্কৃত শ্লোকে ইজরায়েলের শৌর্য বীর্যের ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে
अग्रत: चतुरो वेदा: पृष्‍ठत: सशरं धनु:। इदं ब्राह्मं इदं क्षात्रं शापादपि शरादपि' ।।
মানে:সামনে  চারটি বেদ , অর্থাৎ সম্পূর্ণ জ্ঞান। পিছনে ধনুক এবং তীর আছে, যার অর্থ সাহস। ব্রহ্মতেজ এবং ক্ষাত্রেজ উভয়ই আছে। যে তাদের বিরোধিতা করবে, তাকে সরাসরি অস্ত্র প্রয়োগ করে পরাজিত করতে হবে।
দীর্ঘ পরাধীনতা, মেকলে , মার্কস ও আব্রাহামিক উপাসনা পদ্ধতি গুলোর হিন্দু বিরোধী ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের  ফলে স্বাধীনত্তোর  ভারতকে তার শাস্ত্র ও অস্ত্রের সহাবস্থানের স্বধর্ম ভুলিয়ে দেওয়া গেলেও, ইসরাইল দেশটি জন্মলগ্ন থেকেই  শাস্ত্র ও শস্ত্রের  সক্রিয় সহাবস্থানের চিরাচরিত ভারতীয় আদর্শ নিজেদের চালিকাশক্তির গভীরে স্থান দিয়েছে। সেজন্যই আজ ইসরাইল নামটি শত্রুর বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।


অহিংসা পরমো ধর্ম্ম, ধর্ম্ম হিংসা তথৈব চ।

অহিংসাই হল পরম ধর্ম, ধর্মরক্ষার্থে হিংসাও সেই ধর্মেরই অন্তর্গত। এর অর্থকে ব্যাখ্যা করে বলা যায়ঃ- হিংসা না করা মানুষের প্রকৃত ধর্ম কিন্তু নিজ ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে হিংসার আশ্রয় নেওয়া তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আরো স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করলেঃ- অনর্থক হিংসা করা নিষ্প্রয়োজন কিন্তু ধর্ম রক্ষার্থে হিংসা করাটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই ধর্মের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে অহিংসা নয়, হিংসাই কর্তর্ব্য এবং একান্ত পালনীয়।

আমাদের প্রায় সব দেব-দেবীরাই অস্ত্রে সজ্জিত অথচ আজ আমাদের হাতে এক গাছা লাঠিও থাকে না।ভিন দেশ থেকে ভারতে আগত শক, হুন, পাঠান, মোগোলরা আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিতে পারে নি কিন্তু ১৮৭৮ সালে ইংরেজরা আমাদের ( পড়ুন ভারতীয়দের) নিরস্ত্র করতে নিয়ে এল Indian Arms Act. উদ্দেশ্য একটাই যাতে ১৮৫৭ সালের মত আর কোন মহাবিদ্রোহ সংগঠিত না হতে পারে। 
উক্ত শ্লোকে বলা হয়েছে অনর্থক হিংসা করা নিষ্প্রয়োজন কিন্তু ধর্ম রক্ষার্থে হিংসা করাটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই ধর্মের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে অহিংস ভাব রাখলে চলে না।
কিছু মানুষ এই শ্লোকের  অর্ধেক অংশ সমাজের সামনে তুলে ধরে হিন্দু সনাতনি ধর্মীয় জন জাতির অস্তিত্বকে ক্রমশ বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে আধ খ্যাচড়া উদ্ধৃতি দিয়ে এরাই সমগ্র হিন্দু সনাতনি ধর্মীয় সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন।যেমন আমরা বিভিন্ন মঠ, মন্দিরের প্রাচীরে বড বড করে লেখা দেখতে পাই–” অহিংসা পরম ধর্ম”। ছোট বেলা থেকেই এই বাক্যটা আওড়িয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় । আর সেটা সরল বিশ্বাসে হজম করে নিজেকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করার জন্যে ” অহিংসার পুজারি” হয়ে ওঠার প্রয়াসি হই আমরা।

 ধর্মশাস্ত্রে আততায়ী নামক ঘৃণ্য বধের কথা বলা হয়েছে।

অগ্নিদো গরদশ্চৈব শস্ত্রপাণির্ধনাপহঃ । 

ক্ষেত্রদারাপহারী চ ষড়েতে হ্যাততায়িনঃ।।(বশিষ্ঠ স্মৃতি:৩/১৬)

 ১. যে ঘরে আগুন দেয় 

২. খাবারে বিষ দেয় 

৩. ধারালো অস্ত্র দ্বারা হত্যা করতে উদ্যত 

  ৪.ধনসম্পদ অপহরণকারী

৫.ক্ষেতখামার অপহরণকারী 

৬.ঘরের স্ত্রী অপহরণকারী – এই ছয় প্রকার দুষ্কৃতিকারীকে আততায়ী বলা হয়।

এই আততায়ীদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে সে প্রসঙ্গে মনুসংহিতা বলছে-

গুরুং বা বালবৃদ্ধৌ বা ব্রাহ্মণং বা বহুশ্রুতম্।

আততায়িনমায়াস্তং হন্যাদেবাবিচারয়ন্।।(৮/৩৫০)

সেই আততায়ী যদি গুরু, বালক, বৃদ্ধ, অতিশয় বিদ্বান্ ব্যক্তিও হয় ,তবুও অগ্রসরমান্ সেই আততায়ীকে তখনই বধ করবে।

তাছাড়া যারা সনাতন ধর্ম পালন করতে দেয় না, তাদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে তাও বলা আছে।
শস্ত্রং দ্বিজাতিভির্গ্রাহ্যং ধর্ম্মো যত্রোপরুধ্যতে।

দ্বিজাতীনাঞ্চ বর্ণানাং বিপ্লবে কালকারিতে।।(৮/৩৪৮)

আত্মনাশ্চ পরিত্রাণে দক্ষিণানাঞ্চ সঙ্গরে।

স্ত্রীবিপ্রাভ্যুপপত্তৌ চ ধর্ম্মেণ ঘ্নন্ ন দুষ্যতি।।(৮/৩৪৯)
ধর্মাচরণে বাধার সৃষ্টি হলে  ব্রাহ্মণাদি ও তিন বর্ণ দুষ্টদমনের জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবে এবং আত্মরক্ষার্থে ও যজ্ঞীয় দক্ষিণাদি উপদ্রব নিবারণার্থে কিংবা যুদ্ধ উপস্থিত হলে দুর্বলেকে রক্ষার জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবেন।
[[আরো পড়তে ক্লিক করুন ::বিজয়া দশমীতে শস্ত্রপূজন তাৎপর্যপূর্ণ]]

 সেমেটিক ঐতিহ্যের বিপরীতে, হিন্দুধর্মে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে দেবত্ব এবং ঈশ্বরকে সর্বব্যাপী এবং ইন্দ্রিয়াতিত হিসাবে দেখা হয়। এই ধরনের জীবন দর্শন সমস্ত কর্মকাণ্ডে ঐশ্বরিক অনুভুতি আনে । কর্মই উপাসনা এবং কর্ম যোগের এই দর্শনটি অস্ত্রের পূজা করার আরেকটি কারণ । যদিও "অস্ত্র", 'আয়ুধা' শব্দগুলি শ্রেণীগত শব্দ যার অর্থ "যন্ত্র বা প্রয়োগ"।         
             নবরাত্রির নবম দিনে, প্রত্যেক হিন্দুই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম সরঞ্জামগুলিকে পরিষ্কার করে, সাজায় এবং পূজা করে এবং এতে ঐশ্বরিক ভাবনার প্রকাশ দেখা যায়। যেমন সঙ্গীতজ্ঞ এবং বাদ্যযন্ত্র, কৃষক এবং লাঙ্গল, ছাত্র এবং তাদের বই, সেইসাথে কারখানা এবং যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে এই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপক ঐশ্বরিক সম্পর্ক দেখা যায় । এই ভাবনা অবশ্যই, সৈন্য এবং তাদের অস্ত্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
            এটি অত্যন্ত বিশ্ময়ের যে একটি সংস্কৃতি যেখানে অস্ত্র পূজা করার ঐতিহ্য রয়েছে সেখানে কীভাবে অহিংসার সাথে যুদ্ধ এবং সহিংসতার তত্ত্বের কার্যকর সহাবস্থান দেখা যায় ?
      ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ হল হিন্দু ধর্মের চারটি মহান "পুরুষার্থ" (জীবনের লক্ষ্য)। ধার্মিক আচার-আচরণ হল সেই ভিত্তি যার উপর ভিত্তি করে জীবনের অন্যান্য সকল লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। আত্মরক্ষার জন্য , প্রয়োজনে যুদ্ধ করা একজন সৈনিকের ধর্ম। সামাজিক স্তরে, শাসককে অবশ্যই ধর্ম রক্ষা করতে হবে এবং সমাজকে সুরক্ষিত করতে হবে। ধর্ম রক্ষার জন্য অস্ত্রের ব্যবহারকে একটি পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয়। 
       অস্ত্রের ব্যবহারে দেবত্ব ও ধর্মের এই ভাব থেকেই আমরা ভারতে কঠোর আচরণবিধি দ্বারা সীমাবদ্ধ যুদ্ধের ব্যাখ্যা পাই । এই যুদ্ধনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল যে যুদ্ধ শুধুমাত্র সৈন্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং সমাজের অন্যান্য অংশ এতে জড়িয়ে পরবে না। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভার গ্রীক রাষ্ট্রদূত মেগাস্থিনিস মৌর্য সেনাবাহিনীকে একটি স্থায়ী এবং পেশাদার সংস্থা হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যা রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োগ, প্রশিক্ষিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হযতো। এবং কৃষিজীবি জনসাধারণের উপর এর প্রভাব খুবই ছিল কম । সেজন্য একই সময়ে, এবং দেশের একই অংশে, যুদ্ধের কাজে নিয়োজিত মানুষকে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই যেমন করতে দেখা যেতো তেমনি পাশাপাশি কৃষি কাজে নিযুক্ত মানুষকে পুর্ণ নিরাপত্তার সাথে লাঙ্গল চালাতে দেখা যেতো। 
    সুলেমান, একজন আরব বণিক যিনি নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতে বেশ কয়েক বার ভ্রমণ করেছিলেন, বলেছেন: “ভারতীয়রা কখনও কখনও বিজয়ের জন্য যুদ্ধে যায়, তবে ঘটনাগুলি বিরল। আমি কখনই এক দেশের জনগণকে অন্য দেশের উপর কর্তৃত্ব করতে দেখিনি... যখন একজন রাজা একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে পরাজিত করেন, তখন তিনি সেই রাজসিংহাসনে পরাজিত রাজার পরিবারের একজন ব্যক্তিকে বসিয়ে দেন, তিনিই বিজয়ী রাজার নামে ঐ রাজ্যের শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। পরাজিত রাজ্যের বাসিন্দারা কখনই এই ধরণের পরিবর্তনের জন্য দুর্ভোগের সন্মুখীন হতো না। এই ঘটনা আবারও মেগাস্থেনিসের সেই একদিকে সেনাবাহিনী মাঠে যুদ্ধ করছে অন্যদিকে কৃষিজীবিদের নিখুঁত নিরাপত্তায় জমিতে চাষ করা' বর্ণনার কথা মনে করিয়ে দেয়। যদিও লাঙ্গল চালানো মানুষ গুলির যুদ্ধের ফলাফলে পরোক্ষ প্রভাব থাকতে পারে বা যুদ্ধের নায়কদের নায়ক হয়ে উঠার ক্ষেত্রে অবদান থাকতে পারে, তবে তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িত পড়বেন এটা আশা করা হতো না। যোদ্ধারা যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করতো এবং লাঙল চালানো ছিল চাষীর ধর্ম ।” 1000 বছরেরও বেশি ব্যবধানে বাইরে থেকে আসা দুই পৃথক ভ্রমণকারীর বিবরণের অসাধারণ মিল থেকে এটা স্পষ্ট যে যুদ্ধনীতি সংক্রান্ত এই ধারণার মধ্যে অবশ্যই কিছু সত্য আছে যা আধুনিক দৃষ্টি তে দেখলেও এই আদর্শবাদের মধ্যে অত্যাশ্চর্যজনক দৃষ্টিকোণ ধরা পরে। 
     20 শতকের জেনেভা কনভেনশনের যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনী বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য বানাবে না এই উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত ভারতীয় যুদ্ধনীতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। এই যুদ্ধনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত ভারতে বর্বর ইসলামিক আক্রমণ কারীরা "সম্পূর্ণ যুদ্ধের " নামে লুণ্ঠন এবং বিভিন্ন শহর, লোকালয় গুলির ধ্বংস এবং ব্যাপক আকারে ধর্ষণ, হত্যা এবং সাধারণ জনগণকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার জঘন্য অপরাধ সংগঠিত করেছে। 
     যে ঐতিহ্য অস্ত্রের মধ্যেও ঈশ্বরের রুপ দেখার পাশাপাশি অহিংসাকেও আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে সেই অহিংসার হিন্দু আদর্শই বিশ্ব ইতিহাসের ইতিহাসে অনন্য একটি আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু গান্ধীজী হিন্দুধর্মের যে ধরণের অহিংসার ধারনা দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন তা সমস্ত পরিস্থিতিতে সহিংসতার প্রসঙ্গে হিন্দুধর্মের তীব্র প্রতিরোধের দৃষ্টিকোন কে ব্যাখ্যা ব্যাখ্যা করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে, পরম অহিংসা শুধুমাত্র সন্ন্যাসীদের জন্য একটি আদর্শ, এবং প্রতিভাবান রাজনীতিক গান্ধীজী সন্ন্যাসী-সদৃশ অহিংসাকে রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে জুরে দিয়েছেন। সামরিক রীতিতে হোক কিংবা শ্রীমদ্ভাগবদ গীতার নীতি অনুসারে এটা স্পষ্ট যে , হিন্দু ঐতিহ্য অহিংসার তত্ত্বের ভিত্তিতে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করা অর্থ কেবল অধর্মকে ক্ষমতায়ন করাছাড়া আর কিছু নয়। ঋগ্বেদেও উল্লেখ রয়েছে যে মহান যোদ্ধার কর্তব্য ধর্মকে রক্ষা করা। রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার আদর্শ গ্রন্থ অর্থশাস্ত্রে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি নীয়ে অনেক গুরুত্ব পুর্ণ বক্তব্যের উল্লেখ রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের সাথে মোকাবিলা করার উপায় হিসাবে সাম, দাম, ভেদ, দণ্ড (সমঝোতা, উপহার, বিভাজন এবং বলপ্রয়োগ ) নীতির কথা বলা হয়েছে ,যেখানে যুদ্ধ শেষ বিকল্প।তবে অন্যান্য বিকল্প ব্যর্থ হলে যুদ্ধ অপরিহার্য। 

    চাণক্য একটি পরাধীন রাজ্যের সাথে রাজার কীভাবে আচরণ করা উচিত তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন : 'নতুন অঞ্চল অধিগ্রহণ করার পরে বিজয়ী তার গুণ গুলিকে শত্রুর কুফলগুলির জন্য প্রতিস্থাপিত করবে এবং যেখানে শত্রু ভাল , সে আরো দ্বিগুণ ভাল করার প্রয়াস করবে । তিনি তার ধর্ম অনুসারে কাজ করে অনুগ্রহ ও ছাড় প্রদান, উপহার প্রদান এবং সম্মান প্রদানের মাধ্যমে আনন্দদায়ক এবং উপকারী নীতিগুলি অনুসরণ করবেন। ##
ব্লগারকে উৎসাহিত করার জন্য মন্তব্য অংশে আপনার মূল্যবান বক্তব্য, মতামত জানানোর ,সেই সাথে লেখাটি শেয়ার করে আরো বেশি লোককে পড়তে সুযোগ করে দেওয়ার আবেদন থাকলো।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...