![]()  | 
সাম্প্রতিক ঘটনা বলির পরিপ্রেক্ষিতে ইজরায়েলের দিকে তাকালে আমারা শস্ত্র ও শাস্ত্রের সার্বিক ভারসাম্যের বিষয়টি বুঝতে পারবো। ইসরায়েল রাষ্ট্রের যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন সেখানে জল এবং উর্বর ভূমির সংকট ছিল।কৃষি-ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে একটি হাই-টেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে ইসরায়েল। অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মরুভূমিতে নানা ধরণের শস্য ফলানোর যে সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি তা নজীর বিহীন । উন্নয়নের সমস্ত দিকেই ইসরায়েলের চমক জাগানো সাফল্য বিশ্ব জুড়ে আলোচ্য বিষয়।গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ গাজা ভিত্তিক ইসলমিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হামাস রাতের অন্ধকারে উৎসবমূখর ইজায়েলে হামলা চালায়। সেই হামলার নৃশংসতা দেখে বিশ্ববাসী চমকে উঠে ছিল। আত্মরক্ষার অধিকারের নীতিতে ইজরায়েলের প্রত্যাঘাত দেখে একটিই কথা বলতে হবে জ্ঞানে বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ ইজরায়েল সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী না হলে আজ দেশটির অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। ইজরায়েল শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমানভাবে দক্ষতার দিকে এগিয়েছে।
একটি সংস্কৃত শ্লোকে ইজরায়েলের শৌর্য বীর্যের ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে
अग्रत: चतुरो वेदा: पृष्ठत: सशरं धनु:। इदं ब्राह्मं इदं क्षात्रं शापादपि शरादपि' ।।
মানে:সামনে  চারটি বেদ , অর্থাৎ সম্পূর্ণ জ্ঞান। পিছনে ধনুক এবং তীর আছে, যার অর্থ সাহস। ব্রহ্মতেজ এবং ক্ষাত্রেজ উভয়ই আছে। যে তাদের বিরোধিতা করবে, তাকে সরাসরি অস্ত্র প্রয়োগ করে পরাজিত করতে হবে।
দীর্ঘ পরাধীনতা, মেকলে , মার্কস ও আব্রাহামিক উপাসনা পদ্ধতি গুলোর হিন্দু বিরোধী ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের  ফলে স্বাধীনত্তোর  ভারতকে তার শাস্ত্র ও অস্ত্রের সহাবস্থানের স্বধর্ম ভুলিয়ে দেওয়া গেলেও, ইসরাইল দেশটি জন্মলগ্ন থেকেই  শাস্ত্র ও শস্ত্রের  সক্রিয় সহাবস্থানের চিরাচরিত ভারতীয় আদর্শ নিজেদের চালিকাশক্তির গভীরে স্থান দিয়েছে। সেজন্যই আজ ইসরাইল নামটি শত্রুর বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
অহিংসাই হল পরম ধর্ম, ধর্মরক্ষার্থে হিংসাও সেই ধর্মেরই অন্তর্গত। এর অর্থকে ব্যাখ্যা করে বলা যায়ঃ- হিংসা না করা মানুষের প্রকৃত ধর্ম কিন্তু নিজ ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে হিংসার আশ্রয় নেওয়া তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আরো স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করলেঃ- অনর্থক হিংসা করা নিষ্প্রয়োজন কিন্তু ধর্ম রক্ষার্থে হিংসা করাটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই ধর্মের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে অহিংসা নয়, হিংসাই কর্তর্ব্য এবং একান্ত পালনীয়।
আমাদের প্রায় সব দেব-দেবীরাই অস্ত্রে সজ্জিত অথচ আজ আমাদের হাতে এক গাছা লাঠিও থাকে না।ভিন দেশ থেকে ভারতে আগত শক, হুন, পাঠান, মোগোলরা আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিতে পারে নি কিন্তু ১৮৭৮ সালে ইংরেজরা আমাদের ( পড়ুন ভারতীয়দের) নিরস্ত্র করতে নিয়ে এল Indian Arms Act. উদ্দেশ্য একটাই যাতে ১৮৫৭ সালের মত আর কোন মহাবিদ্রোহ সংগঠিত না হতে পারে।
উক্ত শ্লোকে বলা হয়েছে অনর্থক হিংসা করা নিষ্প্রয়োজন কিন্তু ধর্ম রক্ষার্থে হিংসা করাটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই ধর্মের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে অহিংস ভাব রাখলে চলে না।
কিছু মানুষ এই শ্লোকের অর্ধেক অংশ সমাজের সামনে তুলে ধরে হিন্দু সনাতনি ধর্মীয় জন জাতির অস্তিত্বকে ক্রমশ বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে আধ খ্যাচড়া উদ্ধৃতি দিয়ে এরাই সমগ্র হিন্দু সনাতনি ধর্মীয় সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন।যেমন আমরা বিভিন্ন মঠ, মন্দিরের প্রাচীরে বড বড করে লেখা দেখতে পাই–” অহিংসা পরম ধর্ম”। ছোট বেলা থেকেই এই বাক্যটা আওড়িয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় । আর সেটা সরল বিশ্বাসে হজম করে নিজেকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করার জন্যে ” অহিংসার পুজারি” হয়ে ওঠার প্রয়াসি হই আমরা।
ধর্মশাস্ত্রে আততায়ী নামক ঘৃণ্য বধের কথা বলা হয়েছে।
অগ্নিদো গরদশ্চৈব শস্ত্রপাণির্ধনাপহঃ ।
ক্ষেত্রদারাপহারী চ ষড়েতে হ্যাততায়িনঃ।।(বশিষ্ঠ স্মৃতি:৩/১৬)
১. যে ঘরে আগুন দেয়
২. খাবারে বিষ দেয়
৩. ধারালো অস্ত্র দ্বারা হত্যা করতে উদ্যত
৪.ধনসম্পদ অপহরণকারী
৫.ক্ষেতখামার অপহরণকারী
৬.ঘরের স্ত্রী অপহরণকারী – এই ছয় প্রকার দুষ্কৃতিকারীকে আততায়ী বলা হয়।
এই আততায়ীদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে সে প্রসঙ্গে মনুসংহিতা বলছে-
গুরুং বা বালবৃদ্ধৌ বা ব্রাহ্মণং বা বহুশ্রুতম্।
আততায়িনমায়াস্তং হন্যাদেবাবিচারয়ন্।।(৮/৩৫০)
সেই আততায়ী যদি গুরু, বালক, বৃদ্ধ, অতিশয় বিদ্বান্ ব্যক্তিও হয় ,তবুও অগ্রসরমান্ সেই আততায়ীকে তখনই বধ করবে।
তাছাড়া যারা সনাতন ধর্ম পালন করতে দেয় না, তাদের প্রতি কীরূপ আচরণ করতে হবে তাও বলা আছে।
শস্ত্রং দ্বিজাতিভির্গ্রাহ্যং ধর্ম্মো যত্রোপরুধ্যতে।
দ্বিজাতীনাঞ্চ বর্ণানাং বিপ্লবে কালকারিতে।।(৮/৩৪৮)
আত্মনাশ্চ পরিত্রাণে দক্ষিণানাঞ্চ সঙ্গরে।
স্ত্রীবিপ্রাভ্যুপপত্তৌ চ ধর্ম্মেণ ঘ্নন্ ন দুষ্যতি।।(৮/৩৪৯)
ধর্মাচরণে বাধার সৃষ্টি হলে ব্রাহ্মণাদি ও তিন বর্ণ দুষ্টদমনের জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবে এবং আত্মরক্ষার্থে ও যজ্ঞীয় দক্ষিণাদি উপদ্রব নিবারণার্থে কিংবা যুদ্ধ উপস্থিত হলে দুর্বলেকে রক্ষার জন্য অস্ত্রগ্রহণ করবেন।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন