বাংলাদেশের একটি ওয়েবপোর্টালে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। এই লেখা এখনো প্রাসঙ্গিক ।কারণ ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে   মমতা ব্যানার্জি সরকার যে ভাবে  ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ কে প্রশ্রয় দিচ্ছে তাতে শুধু ভারতের চিন্তাশীল মহল নয় আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশেও। গুগুলে খুজলে যে কেউ লেখাটি পেয়ে যাবে তবে পাঠকের সুবিধে করে দেওয়ার জন্য লিঙ্ক সহ লেখাটি ব্লগে ওয়া হল।
 জামায়াতের সন্ত্রাসে অর্থ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস 
নয়াদিল্লি প্রতিনিধি
  প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ১৪ । ০১:৪৫
 পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস ও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর যোগসাজশ নিয়ে তদন্ত করছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি রাজ্যসভা সদস্য আহমেদ হোসেন ইমরানের বিরুদ্ধে সারদা চিটফান্ডের প্রচুর অর্থ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কাছে পাঠানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে তদন্ত চলছে। 
এদিকে সারদার টাকায় জামায়াতের সন্ত্রাস প্রসঙ্গে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীকে আন্দোলনের জন্য সারদা গ্রুপের টাকা দেওয়ার বিষয়ে ভারতের কাছে সরকারিভাবে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রসৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার এমন কোনো চিঠি ভারত সরকারের কাছে পাঠায়নি।
ভারতের রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার সিবিআই তদন্তে ঢিলেমি করবে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তদন্ত যেমন চলছে তেমন চলবে। এও প্রশ্ন ওঠে, সিবিআইকে রাজনৈতিক দল প্রভাবিত করতে পারে কি-না। জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে কোনো রাজনৈতিক দল তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে প্রভাবিত করতে পারবে না। এসব আগের সরকারের (ইউপিএ) আমলে হয়ে থাকবে।
 ভারতের সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ইমরান এক সময় নিষিদ্ধ মুসলিম সংগঠন সিমির সদস্য ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সিমির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। তবে ইমরান জামায়াতকে সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত
জাতীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থ নাথ সিং বলেছেন, এটি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। এর সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। তিনি গতকাল দিলি্তে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট দাখিল করেন বলেও জানান। এ বিষয়ে তিনি কেন্দ্রীয় স্তরে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
'জামায়াতের সন্ত্রাসেও সারদার টাকা' শিরোনামে আনন্দবাজার পত্রিকায় গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে কাজে লাগানো হয়েছে সারদার কোটি কোটি টাকা। আর তার সঙ্গে জড়িত তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হোসেন ইমরান। এ ব্যাপারে ভারতের কাছে সরকারিভাবে অভিযোগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তদন্তকারীদের দাবি, ২০১২-১৩ সালে ইমরানের মাধ্যমে ভারত থেকে দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নানা শাখা সংগঠনের হাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করার পরে বাংলাদেশে দাঙ্গা, নাশকতা ও সন্ত্রাস শুরু করেছিল মৌলবাদীরা। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলে 'হেফাজতে ইসলাম' নামে আরও একটি মৌলবাদী সংগঠন গজিয়ে ওঠে। তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্র করেছিল। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সে কাজে ইন্ধন জোগাতেই এ বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। যার একটা বড় অংশ সারদা অর্থলগি্ন সংস্থার।
ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্টও এ বক্তব্যকে অনেকটাই সমর্থন করছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে অবশ্য এই দাবিও করা হয়েছে, ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি চালান ভারত থেকে পৌঁছে গিয়েছিল জামায়াতের হাতে।
ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্সে রুপির বান্ডিল ভরে নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে। পরে তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোয় পরিবর্তন করে জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমেও গেছে সারদার টাকা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে লগি্নও করেছে সারদা। সেই অর্থও কার্যত জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে খরচ হয়েছে। 
 রাজশাহীর সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিজেদের নেতাদর বিচার বানচাল করতে বাংলাদেশজুড়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস শুরু করেছিল জামায়াতে ইসলামী। রেললাইন উপড়ে, বাস-ট্রেন জ্বালানিয়ে অজস্র মানুষকে হত্যা করা হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে তাদের প্রতিরোধ করেন। বাদশা বলেন, বিশেষ করে রাজশাহী ও সাতক্ষীরার মতো সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে এ সন্ত্রাস মাত্রাছাড়া হওয়ায় ভারত থেকে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও অর্থ আসার বিষয়ে আমরা সন্দিহান হই। পরে পুলিশ ও আধা সেনারা এসব জায়গায় অভিযান চালিয়ে বহু মৌলবাদীকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকেই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
সাতক্ষীরার সাংসদ মুস্তাফা লুৎফুল্লা বলেন, জামায়াতের দুষ্কৃতকারীরা পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে। সেখানে শাসক দলের নেতারা তাদের আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করেছে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। সন্ত্রাসের সময়ও সীমান্তের ওপার থেকে নিয়মিত অর্থের জোগান পেয়েছে মৌলবাদীরা। 
 ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উর্দুভাষী নেতার দহরম-মহরম শুরু হয়। ২০১১-এর ভোটে সীমান্ত এলাকায় জামায়াত কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করে। সে সময়ে তৃণমূলকে অর্থেরও জোগান দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেই সুসম্পর্ক থেকেই পরবর্তীকালে জামায়াতকে তৃণমূল শুধু পাল্টা সাহায্যই করেনি, তিস্তা চুক্তি ও স্থলসীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতির বিষয়ে মমতা বরাবর জামায়াতের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখা উর্দুভাষী নেতাদের মতামতই মেনে চলেছেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক যতটা মধুর হয়েছে, ততটাই তেতো হয়েছে কলকাতার সঙ্গে। এর জন্য তিনি দায়ী করেছেন তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার কট্টর বিরোধিতাকে। ওই পদস্থ কূটনীতিকের দাবি, তৃণমূলের জামায়াত-ঘনিষ্ঠ নেতারাই মমতাকে এ কাজে প্রভাবিত করতে সফল হয়েছেন। ওই নেতারাই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা জামায়াতের দুষ্কৃতকারীদের কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় মাসের পর মাস আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টিও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। ওই কূটনীতিকের অভিযোগ, তার পরও সেসব আশ্রয়শিবির বহাল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে এসব অনুপ্রবেশকারী জামায়াত কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক সিমি নেতা বর্তমান তৃণমূল সাংসদ ইমরানকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং বলেন, সিমিকে নিষিদ্ধ করার সময়ে মমতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। তিনি সবই জানতেন। তার পরও কেন তিনি ইমরানকে রাজ্যসভায় পাঠালেন? তার দাবি, জামায়াতের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই তৃণমূল নেত্রী এই প্রার্থী বাছাই করেছেন। মমতার এ কাজকে 'দেশদ্রোহ' বলে মন্তব্য করে ওই বিজেপি নেতা অভিযোগ করেন, একজন মুখ্যমন্ত্রীর এমন কাজের জন্য রাজ্যে জঙ্গি ও দুষ্কৃতকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে। এতে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে। 
 আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন গতকাল নয়াদিলি্লতে সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও তৃণমূল কংগ্রেসের যোগসাজশ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এখনও ভারত সরকারের কাছে কোনো রিপোর্ট দেয়নি। এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র বলেন, এই সংবাদ জানার পরে তিনি নিজে মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়েছেন। এমন কোনো চিঠি বাংলাদেশ সরকার পাঠায়নি। এর বেশি তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তৃণমূলের এমপি ইমরানের অভিযোগ অস্বীকার :তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ও সাংবাদিক আহমদ হোসেন ইমরান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কলকাতার দৈনিক কলম পত্রিকাকে ইমরান বলেন, যে কোনোভাবে তাকে সন্ত্রাসবাদী বা জঙ্গি প্রমাণ করতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। ওদের সুবিধা হলো তিনি সংখ্যালঘু। তাই সহজেই জঙ্গি আখ্যা দিয়ে দেওয়া সম্ভব।##

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন