সাধন কুমার পাল-- ইজরায়েলের বর্তমান আয়তন ২২ হাজার বর্গ কিমি। ইজরায়েলের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি। দিল্লি শহরের জনসংখ্যার চাইতেও কম। এর মধ্যে ৭৩.৮%ইহুদি, ১৮% মুসলিম ১.৯% খ্রিস্টান। ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যা ৫০ লাখ । এর মধ্যে ৯৯ % মুসলিম এবং ১% ক্রিস্টিয়ান । ফিলিস্তিন দুটি ভূখণ্ডের বিভক্ত। একটি হচ্ছে ৪১কিমি লম্বা ও ১২ কিমি চওড়া গাজা ভূখণ্ড, অন্যটি ওয়েস্ট বেঙ্ক। এই দুটি ভূখণ্ডে কোন ইহুদির বসবাস নেই। বলা ভালো ইহুদিদের পক্ষে বসবাস করা সম্ভব নয়। ঠিক যে কারণে বাংলাদেশে পাকিস্তানে হিন্দুদের বসবাস করা কঠিন ,ঠিক একই কারণে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসবাস অসম্ভব।
যারা ইজরায়েলকে কট্টর পন্থী এবং প্যালেন্টাইন কে উদার পন্থী বলছে তাদের এই দাবির পক্ষে কোন রকম যুক্তি তত্ত্ব পরিসংখ্যান নেই। তথ্য পরিসংখ্যান যা বলছে তা হলো প্যালেস্টাইন হচ্ছে একটি কঠোর পন্থী ইসলামিক ভূখণ্ড যেখানে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাসের কোন অধিকার নেই। অন্যদিকে ইজরায়েল হচ্ছে ভারতের মতোই একটি সভ্য উদারপন্থী মানুষের ভূখণ্ড যেখানে এই উত্তেজনার পরিস্থিতিতেও মুসলিমরাও নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারে।
ইজরায়েলের বসতিগুলো লক্ষ্য করে আকস্মিক ও অতর্কিত হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সন্ত্রাসবাদি গোষ্ঠী হামাস। শনিবার (৭ অক্টোবর ২০২৩) সকাল থেকে চালানো এই হামলায় নিহত ইজরায়েলিদের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে।
এছাড়া হামাসের ভয়াবহ এই হামলায় আহত হয়েছে আরও প্রায় ১৬০০ ইজরায়েলি। রোববার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইজরায়েল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইজরায়েলে হামাসের বিশাল মাল্টি-ফ্রন্ট হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে বলে চিকিৎসা কর্মকর্তাদের সূত্র দিয়ে হিব্রু ভাষার মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টাইমস অব ইজরায়েল বলছে, শনিবার সকাল থেকে চালানো এই হামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৫৯০ জন ইজরায়েলি আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
এছাড়া কয়েক ডজন অসামরিক নাগরিক এবং ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) সৈন্যদের আটক করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীটি গর্ব করে বলেছে, আটক ইজরায়েলিদের সংখ্যা ইসরায়েল যা জানে তার চেয়েও অনেক বেশি।
গাজা উপত্যকা কী?
গাজা উপত্যকা ইজরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি ৪১ কিমি দীর্ঘ এবং ১২ কিমি-প্রশস্ত অঞ্চল। যেখানে প্রায় ২৩ লাখ লোক বসবাস করে এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।
হামাস কেন ইজরায়েলের উপর হামলা চালিয়েছে?এই প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেকটি ভারতবাসীর জানা প্রয়োজন । স্থানীয় কারণ যাই হোক না কেন , এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হল ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন হামাস ইহুদিদের প্রাচীন মাতৃভূমি ইজরায়েল থেকে ইহুদিদের বিতারণ করে ঐ স্থানে ইসলামিক সার্বভৌমত্ব কায়েম করতে চায়।
এই ধরনের বর্বর হামলা ভারতবর্ষে বহুবার হয়েছে।এক সময় ভারতবর্ষকে হিন্দু শূন্য করার লক্ষ্য নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে তৈমুর লং, চেঙ্গিস খাঁন , বক্তিয়ার খলজী , মহম্মদ ঘোরী , সুলতান মাহমুদ আওরঙ্গজেব ,বাবরের মতো ইসলামিক আক্রমন কারীরা। আফগানিস্তান পাকিস্তানকে হিন্দু শূন্য করার জন্য এই ধরনের বর্বর হত্যা লীলা চালানো হয়েছে। এই ধরনের বর্বর হত্যা লীলা সংগঠিত হয়েছে কাশ্মীরে, বাংলাদেশে ।হামাসের মতো একই কায়দায় পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী কাসাব মুম্বাইয়ে হত্যালীলা চালিয়ে ছিল, কাশ্মীরের পুলওয়ামায় পাকিস্তানি জঙ্গিরা সেনা জওয়াদের নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল । ভারতে যে এরকম কত হামলা হয়েছে সেটা গুনে শেষ করা যাবে না। এই সমস্ত ঘটনা ভুলে গেলে চলবে না । ভুলে গেলে ইজরায়েলের মত ভারতেরও মাশুল গুনতে হবে। মনে রাখতে হবে ইজরাইলে ৫০ বছর পরে এত বড় হত্যা লীলার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। ইতিহাস বলছে ভারতেও এই ধরনের ঘটনা যে কোন সময় ঘটতে পারে।
ইহুদিদের একটি পবিত্র দিনে উৎসবের মাঝে হামাস হামলা চালিয়েছিল কেন ? এর উত্তর জানতে হলেও পন্ডিত হওয়া দরকার নেই। ১৯৪৬ সালের কোজাগরি লক্ষী পূজার দিন নোয়াখালীতে ইসলামিক জল্লাদরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মা লক্ষ্মীর আরাধনায় রত নিরপরাধ হিন্দুদের উপর। সেদিন কেউ রেহাই পায়নি। আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাইকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
প্রতি বছর অক্টোবরে 'সিমচাট তোরাহ' পালন করে ইজরায়েল। ইহুদি ধর্মের পবিত্র উৎসবগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। ৭ অক্টোবর শনিবার ছিল সেই দিন। ফলে গাজা স্ট্রিপ সংলগ্ন এলাকায় মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে জড়ো হয় প্রচুর ইহুদি ও বিদেশি পর্যটক। তখনই 'অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড' শুরু করে হামাস।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, জেনে শুনেই এই দিনটিকে বেছেছিল জঙ্গিরা। উৎসবের আবহে কিছুটা হাল্কা মেজাজে ছিল ইসরায়েলি সেনা। ফলে ইহুদি ভূমিতে জল-স্থল ও আকাশপথে অনুপ্রবেশ ঘটাতে সুবিধা হয় জঙ্গিদের। মিউজিক ফেস্টিভ্যালে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অন্তত ২৫০ জনকে হত্যা করে তারা। সেখান থেকে মহিলাদের শিশুদের পণবন্দি করার খবরও মিলেছে।
ইয়োম কিপপুর' যুদ্ধ
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে 'ইয়োম কিপপুর'-র কথা বলেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। ১৯৭৩-র ৬ অক্টোবর ছিল ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম দিন ইয়োম কিপপুর। কিন্তু ওই দিনই আরব দেশগুলির জোট হামলা চালায় ইজরায়েলের উপর। দু'পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ভয়ংকর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। যাতে প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ২০ হাজার মানুষের।
মাত্র দু'সপ্তাহের ওই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জিতে যায় ইজরায়েল। শুধু তাই নয়, গোলান হাইটস, সিনাই-সহ আরব দেশগুলির একাধিক জায়গা দখল করে নেয় ইহুদি সেনা। যুদ্ধ চলাকালীন ইজরায়েলকে সমর্থন করলে পশ্চিমী দেশগুলিকে তেল সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল পশ্চিম এশিয়ার আরব দুনিয়া। তার পরও ইহুদিদের প্রত্যাঘাত সহ্য করতে পারেনি তাঁরা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, সেই পরাজয়ের ক্ষততে এবার প্রলেপ লাগাতে চাইছে হামাস। সেই কারণেই শনিবার গাজা স্ট্রিপ এলাকা থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে পাঁচ হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস।
একটি কথা আছে একটি প্রচলিত কথা আছে। কথাটি হলো ইজরাইল হওয়া সহজ নয়। ইজরায়েল এক কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৭৪ লাখ ইহুদি। এই ৭৪ লাখ ইহুদী চারদিকে ২২ টি ইসলামিক দেশ অর্থাৎ শত্রু দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই ২২ টি দেশে ৪৫ কোটিরও বেশি মুসলমানের বসবাস। ইজরায়েল ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট দেশ এবং চারদিক থেকে শত্রু দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েলকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করতেই দেশের মধ্যে যারা মানুষ সমালোচনা করছেন ,
তাদের অবগতির জন্য জানাই যে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কারগিল যুদ্ধের সময় ইজরায়েল এমন কিছু অস্ত্র ও প্রযুক্তি দিয়ে ভারতকে সাহায্য করেছিল যা না হলে সে সময় ভারতের পক্ষে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা অসম্ভব হয়ে উঠতো । ভারতের ইসরাইলের সাথে যেমন ভালো সম্পর্ক তেমনি পেলেস্টাইন সহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ গুলির সাথেও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্যালেস্টাইনের উপর আক্রমনকে নয় , সন্ত্রাসবাদি গোষ্টি হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণকে সমর্থন করেছেন। কোন অজুহাতেই সন্ত্রাসবাদ কে সমর্থন নয়। কংগ্রেস প্যালেস্টাইন কে সমর্থন জানিয়ে দলীয়ভাবে
বক্তব্য সম্প্রচার করেছে, কিন্তু সেখানে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলার কোন নিন্দা সূচক বাক্য উচ্চারিত হলো না কেন এই প্রশ্ন কিন্তু ভারতবাসী তুলবে। চীনের সাথে সুরে সুর মিলিয়ে বামপন্থীরা তো হামাসকেও সন্ত্রাসবাদি বলছে না। গণশক্তি হেডিং করেছে 'হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলে ঢুকে পরেছে'। গণশক্তি পড়লে মনে হবে এরা যেন হামাসের মুখপত্র।এখানেই শেষ নয় ভারতের মধ্যেও হামাসের পক্ষে মিছিল-মিটিং হচ্ছে মিছিল মিটিং হতে দেখা যাচ্ছে। এদিকে
ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুসছে ভুক্তভোগী ভারতের আমজনতা। ফলে এই ধরনের সন্ত্রাসবাদের পক্ষে প্রদর্শন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া হামাসকে এমন শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন যাতে পৃথিবীর আর কোন জায়গায় সন্ত্রাসবাদীরা এরকম বর্বর আক্রমণের ঘটনা ঘটাতে না পারে।##









তথ্য সমৃদ্ধ লেখা দাদা,
উত্তরমুছুন