![]() |
| তিব্বতের মুক্তির দাবি |
২ ও ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ দুই দিন ব্যাপি একটি সর্বভারতীয় বৈঠকে যোগ দিতে ১ সেপ্টেম্বর বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি অমৃতসর পৌঁছাই। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির , জালিয়ানওয়ালাবাগ ও ওয়াঘা বর্ডার দর্শনের অনুভব পৃথক কোন লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার ইচ্ছে থাকলো।
অমৃতসর থেকে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালার দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারেরও একটু বেশি। ব্যক্তিগত গাড়িতে যেতে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা কখনো কখনো ছ ঘন্টা ও সময় লেগে যায়।
হিমাচল প্রদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে কুলু, মানালি, সিমলা এই সমস্ত জায়গার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ওখানে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জীবনই অতিষ্ঠ সুতরাং পর্যটকদের যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এরকম পরিস্থিতিতে অমৃতসর থেকে যখন আমরা ধর্মশালা যাওয়ার পরিকল্পনা করছি তখন প্রায় সবাই বললেন ওখানটায় যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। রাস্তাঘাট ঠিক নেই যখন তখন ল্যান্ড স্লাইড হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক বৈঠক স্থলে যিনি যোগাযোগ প্রমুখ ছিলেন তিনি অভয় দেওয়াতে আমরা ৪ সেপ্টেম্বর বিকালবেলা বেড়িয়ে রাত্রি বারোটার সময় ধর্মশালা সার্কিট হাউসে পৌঁছাই।
![]() |
ধর্মশালার সার্কিট হাউস
আগে থেকেই স্থানীয় কার্যকর্তারা আমাদের জন্য সার্কিট হাউসে একটা ঘর বুক করে রেখেছিলেন । পরের দিন সকালবেলা স্নান স্বল্পাহার করে আমরা বেরিয়ে পরি ধর্মশালার ম্যাকলিওডগঞ্জে অবস্থিত তিব্বতিদের নির্বাসিত সরকার দেখার উদ্দেশ্যে। ম্যাকলিওডগঞ্জে পৌঁছানোর আগেই আমরা ধর্মশালার ভাগসু নাগ জলপ্রপাত দেখে নিই।
![]() |
![]() |
| জলপ্রপাতের পাশে দাঁড়িয়ে |
জলপ্রপাত বলতে একটা ছোটখাটো ঝরনা মাত্র। আমরা যারা দার্জিলিং কালিমপং-এ গেছি, গিয়েছি তাদের কাছে এটা একটা সরু ঝোরা মাত্র । দেখে মন ভরবে না।
প্রথমেই আমরা দলাই লামার মূল মন্দিরে পৌঁছাই। 5 সেপ্টেম্বর ওখানে প্রচুর ভিড় ছিল। কারণ ঐ সময়টা ছিল বড় উৎসবের সময়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তিব্বতি মানুষেরা ওখানটায় সমবেত হয়েছিলেন। ওখানেই আমাদের সাথে কথা হলো নির্বাসিত তিব্বত সরকারের ডেপুটি
![]() |
| মূল মন্দিরে সামনে |
![]() |
| মন্দিরের বাইরে |
স্পিকার Gyari Dolmaএর ব্যক্তিগত সচিব Kunsang Lahamo র সাথে সাক্ষাৎ হয়। শ্রীমতি Lahamo আমাদের মন্দিরের খুঁটিনাটি দেখালেন।
মন্দিরের পাশেই দলাই লামার আবাসস্থল। করা নিরাপত্তার মোড়কে ঘেরা সেই আবাসস্থল।দলাই লামার সাথে আমাদের সাক্ষাৎকারের আবেদন আগে থেকেই করা ছিল। কিন্তু সেদিন আমাদের পৌঁছানোর একটু আগেই উনি মন্দির থেকে উনার আবাসস্থলে ঢুকে গিয়েছিলেন এবং
![]() |
| দলাই লামার আবাসস্থল |
![]() |
| দলাই লামার আবাসস্থল |
বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যস্ততা থাকার জন্য আমাদের দেখা না করেই ফিরতে হয়।
মন্দির থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার নিচে নির্বাসিত তিব্বত সরকারের প্রশাসনিক ভবন গুলি অবস্থিত। প্রথমে আমরা স্পিকারের অফিসে গেলাম সেখানে সাদা চাদর দিয়ে
![]() |
| স্পিকারের কার্যালয়ে |
![]() |
| স্পিকারের কার্যালয়ে |
![]() |
| স্পিকারের কার্যালয়ে |
![]() |
| স্পিকারের কার্যালয়ে |
| স্পিকারের কার্যালয়ে |
![]() |
| নির্বাসিত সরকারের সংসদ ভবনের সামনে |
![]() |
| সংসদ ভবনের ভেতরে দর্শক আসনে |
![]() |
| সংসদ ভবনের ভেতরে |
![]() |
| সংসদ ভবনের ভেতরের দৃশ্য |
গাইড হিসেবে আমাদের সাথে যারা ছিল তাদের মুখে
![]() |
| মিউজিয়ামের ভিতরে |
![]() |
| আত্মাহুতি দেওয়া তিব্বতির ছবি পরিচয় সহ কার্ড |
![]() |
| মিউজিয়ামের ভেতরের একটি দৃশ্য |
![]() |
| পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পতাকার সাথে এখানে স্বাধীন তিব্বতের পতাকাও আছে |
![]() |
| নির্বাসিত তিব্বত সরকারের প্রথম টাইপ রাইটার |
তিব্বতিদের নির্বাসিত হওয়ার করুন কাহিনী শুনছিলাম। ওদের অনেকেই ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে নিয়েছে। ওরা অন্যান্য ভারতীযদের মতো সমস্ত নাগরিক অধিকার ভোগ করছে ।তবে ভালো সংখ্যক তিব্বতি যারা এখনো ভারতে নাগরিকত্ব নেয়নি ওরা
![]() |
| যারা আত্মাহুতি দিয়েছে তাদের ছবিসহ প্লাকার্ড |
শরণার্থী হিসেবেই রয়ে গেছে। এমন অনেকের কথা শুনলাম যারা ১৯৫০ সালে চীনা আক্রমণের সময় প্রাণ বাঁচাতে শিশু বয়সে অচেনা অজানা লোকের সাথে তিব্বত ছেড়ে এই হিমাচল প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছে। চীন সরকারের বর্বর নীতির জন্য ওরা আর কোনদিনই নিজের পরিবারের সাথে মিলিত হতে পারেনি। কত পরিবার দিয়ে এরকম ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। ভারত বিভাজনের সময় শরণার্থীরা এসে আশ্রয় নিলেও পরবর্তীকালে পাকিস্তানে বা
![]() |
| লাইব্রেরি ও আর্কাইভ |
বাংলাদেশে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছে । এখনো সেই সুযোগ রয়েছে। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত ।কঠোর চীনা বিধি নিষেধ অগ্রাহ্য করে বাইরের কেউ কখনো তিব্বতে গিয়ে নিজেদের আত্মীয় পরিজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।
মিউজিয়াম দেখতে দেখতে একটি জায়গায় গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম সেখানটা কতগুলো কার্ড রাখা আছে এক একটা কার্ড একেকজন আত্মোৎসর্গকারী তিব্বতিদের পরিচয় উল্লেখ রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১৫২ জন তিব্বতি চীনা ড্রাগনের কবল থেকে তিব্বতের মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে নিজেদের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আত্মাহুতি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ওদের দুর্দশার করুন কাহিনী শুনতে শুনতে চোখে জল এসে যাচ্ছিল।
তবে ওদের চোখের স্বপ্ন দেখে ,ওদের ঐতিহ্য ধরে রাখার আকুতি দেখে মনে হচ্ছিল যে একদিন ওরা ওদের তিব্বত ফিরে পাবে। কারণ নতুন প্রজন্মের কাছে সেই দুর্দশার কাহিনী এখনো যেভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে তা সেই ইজরাইয়েলীদের কথা মনে করিয়ে দেয় ,যারা হাজার বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে অবশেষে তাদের দেশ ফিরে পেয়েছিল। পাশাপাশি
![]() |
| তিব্বতিদের সুপ্রিম জাস্টিস কমিশন |
মনে পড়ছিল উদ্বাস্তু বাঙ্গালীদের কথা যারা তাদের দুর্দশার কাহিনী মনে রাখতেই চায় না। যারা অত্যাচারিত হয়ে পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে তাদের তারা নিজেরা যেমন সেই অত্যাচারিত হওয়ার কাহিনী স্মরণ করতে চায় না তেমনি পরবর্তী প্রজন্ম কে সেই অত্যাচারের কাহিনী জানাতে তাদের মধ্যে প্রবল অনিহা দেখা যায় । পাঞ্জাবের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই রকম । দেশভাগের সময় পাঞ্জাবের অর্ধেক যখন পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়ে যায় তখন সেখানেও যে অত্যাচার হয়েছিল তা এক কথায় ভয়ঙ্কর। পাঞ্জাবের মানুষও এখন আর সেসব মনে করতে চায় না। পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাবের অত্যাচারিত হাজার হাজার পরিবার যদি সেই অত্যাচার স্মরণে রাখতো তাহলে হয়তো এই প্রদেশগুলোতে কখনোই কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারতো না।কারন দেশ স্বাধীন করার কৃতিত্বের দাবিদার কংগ্রেস হলে দেশ ভাগের ফলে ঘটে যাওয়া নরহত্যা ভয়ংকর অত্যাচারের দায়ও কংগ্রেসকেই নিতে হবে । কিন্তু দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাব এই দুটি রাজ্যেই কংগ্রেস ক্ষমতায় থেকেছে দীর্ঘদিন।
সেজন্য মনে হচ্ছিল তিব্বতিরা বেঁচে থাকবে, ওরা হয়তো দেশও ফিরে পাবে কিন্তু হিন্দু বাঙালি নামক জনগোষ্ঠী হয়তো একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে কারণ হিন্দু বাঙালিরা ইতিহাস থেকে সামান্যতম শিক্ষা নেয়নি।
ভারত তিব্বতের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে, এমনকি একটি স্বাধীন সরকার চালানোর অনুমতি দিয়েছে।
দেশ হিসাবে ভারতবর্ষ যে কত মহান ,সহিষ্ণু, সহানুভূতিশীল তার প্রত্যক্ষ অনুভব নিতে গেলে যেতে হবে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় নির্বাচিত তিব্বত সরকারের কর্মভূমিতে।
আমাদের দেশের কমিউনিস্টদের গায়ে "লেফট লিবারেল" নামে একটা ট্যাগ ঝোলানো হয়। কিন্তু কমিউনিস্টরা যে লিবারেল নয় বরং উন্মাদ জেহাদিদের চেয়েও অসহিষ্ণু তার বড় প্রমাণ চিনের তিব্বত নীতি। তিব্বত দখলের পর তিব্বতিদের মন থেকে তিব্বতের পৃথক অস্তিত্ব ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য চিন তিনটে কাজ করেছে। চিনা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তিব্বতের জনচরিত্র পাল্টে দেওয়া হয়েছে, তিব্বতি চিন্তাশীল মানুষদের হয় খুন করা হয়েছে অথবা ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়েছে, তিব্বতের স্কুল কলেজ লাইব্রেরী সংস্কৃতি কেন্দ্র গুলি ধ্বংস করে তিব্বতিদের চিনের স্কুল কলেজে চিনের ভাষায় পড়তে সেই সাথে চিনের সংস্কৃতি চর্চায় বাধ্য করেছে।ফলে তিব্বতের নতুন প্রজন্ম এখন নিজেদের চীনা বলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
তিব্বতের মাটিতে বসবাসকারী বর্তমান প্রজন্মের তিব্বতীদের এই মানসিক পরিবর্তন যে তিব্বতকে চীনের কবল থেকে মুক্ত করার পথে বড় বাধা তা দলাই লামা সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে স্পষ্ট। অতি সম্প্রতি দলাই লামার বলেছেন , “আমরা স্বাধীনতা চাইছি না। বহু বছর ধরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা চিনের অংশ। এখন চিনের বদল হচ্ছে। ঘরোয়া ভাবে হোক বা আনুষ্ঠানিক ভাবে— চিন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে। কারও উপর আমার রাগ নেই। তিব্বতের প্রতি চিনের যে নেতারা এতটা খারাপ ব্যবহার করেছেন, তাঁদের প্রতিও আমাদের রাগ নেই। চিন ঐতিহাসিক ভাবেই বৌদ্ধদের দেশ। আমি সেই দেশে গিয়ে এটা বুঝতে পেরেছিলাম।” সেই সঙ্গেই দলাই লামা বলেছেন, “তিব্বতিদের যে সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবধারা রয়েছে, তাতে গোটা বিশ্বের উপকার হবে। আমি সমস্ত ধর্মকেই সম্মান করি। কারণ, তারা তাদের অনুগামীদের ভালোবাসা ও ক্ষমা করতে শেখায়। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে ১০০ বছরের বেশি বাঁচতে চাই। আমার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার দীর্ঘ জীবনের জন্য আপনারা প্রার্থনা করুন।”
নির্বাসিত তিব্বত সরকারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
1949 সালে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তিব্বতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ খাম এবং আমদোতে অগ্রসর হয়, পরের বছরে পূর্ব তিব্বতীয় সদর দফতর চামদোর দখল করে। তারপরে 1951 সালে, তথাকথিত "তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির জন্য 17-দফা চুক্তি" তিব্বত সরকার এবং জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলিতে, চীনা সেনাবাহিনী আরও পশ্চিমে অগ্রসর হয় এবং অবশেষে 1959 সালে লাসার তিব্বতি জাতীয় বিদ্রোহকে চূর্ণ করে। এর ফলে মহামহিম দালাই লামা এবং প্রায় 80,000 তিব্বতি যারা ভারত, নেপাল এবং ভুটানে আশ্রয় চেয়েছিলেন। উদ্বাস্তুদের আগমন আজও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে, তিব্বতের নির্বাসিত জনসংখ্যা 140,000 এর বেশি, যার মধ্যে প্রায় 100,000 ভারতে অবস্থিত।
29 এপ্রিল 1959-এ, মহামান্য দালাই লামা উত্তর ভারতীয় হিল স্টেশন মুসৌরিতে তিব্বতি নির্বাসিত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মহামহিম দালাই লামার কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসন (CTA) নামকরণ করা হয়েছে, এটি স্বাধীন তিব্বতের সরকারের ধারাবাহিকতা। 1960 সালের মে মাসে, CTA ধর্মশালায় স্থানান্তরিত হয়। তিব্বতে এবং তিব্বতের বাইরের তিব্বতি জনগণ তাদের একমাত্র এবং বৈধ প্রতিনিধি হিসাবে CTA-কে দেখে। এটি এবং প্রশাসনের সত্য, অহিংসা এবং প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার এর অলঙ্ঘনীয় নীতির অর্থ হল এটি এখন তিব্বতের জনগণের বৈধ এবং প্রকৃত প্রতিনিধি হিসাবে সারা বিশ্বের পার্লামেন্ট এবং সাধারণ জনগণ ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকৃত হচ্ছে।
প্রবাসী অনেক তিব্বতীয় এই অঞ্চলকে গণচীনের একটি অংশ হিসেবে মানতে সম্মত নন। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিদের স্বাধীকারের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়। তখন দলাই লামার নেতৃত্বে অসংখ্য তিব্বতি ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসবাস আরম্ভ করেন। সেখানেই ভূতপূর্ব স্বাধীন তিব্বতের নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিব্বতের রাজধানীর নাম লাসা।
তার সূচনা থেকেই, CTA নিজেকে তিব্বতের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এবং তাদের স্বাধীনতা ও সুখী জীবন যাত্রা বহাল রাখার দ্বিবিধ কর্মসূচী নির্ধারণ করেছে। পুনর্বাসন এজেন্ডায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে: ক) নির্বাসিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার; খ) গণতন্ত্রের একটি দৃঢ় সংস্কৃতি গড়ে তোলা; এবং গ) আত্মনির্ভরশীলতার পথ প্রশস্ত করা যাতে তিব্বতের জনগণ আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে বেঁচে থাকতে পারে যা বহিরাগত সহায়তার উপর নির্ভর না করে পরিচালিত হতে পারে।
আধুনিক গণতন্ত্র নিয়ে CTA-এর পরীক্ষা নিরিক্ষা, আসলে যখন সেখানে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা হবে সে সময়ের তিব্বতের পুনর্গঠনের প্রস্তুতি ।এই অনুশীলনের অংশ হিসাবে, 2 সেপ্টেম্বর 1960-এ একটি সংসদ, যার নাম ছিলCommission of Tibetan People’s Deputies, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পার্লামেন্টটি ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছিল, এইভাবে এটি Assembly of Tibetan People’s Deputies ( ATPD) নামে পরিচিত হয়। তারপর 2006 সালে, এর নাম পরিবর্তন করে তিব্বত সংসদ-ইন-এক্সাইল (TPiE) করা হয়।
1990 সালে মহামহিম দালাই লামা আরও গণতন্ত্রীকরণের ঘোষণা করেন , যার মাধ্যমে নির্বাসিত তিব্বতীয় সংসদের গঠন 46 সদস্যে উন্নীত হয়। সংসদকে কাশাগ বা মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে, তিব্বতি বিচার বিভাগ, তিব্বত সুপ্রিম জাস্টিস কমিশন নামে পরিচিত, ভারত সরকারের সালিশ আইনের বিধানের অধীনে 1992 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ক্ষমতা প্রাপ্ত নির্বাসিত তিব্বতীয় সংসদ The Charter of the Tibetans in Exile শিরোনামে পরিচিত হয়েছে।
আজ, CTA-তে একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক প্রশাসনের সমস্ত বিভাগ এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটা অবশ্যই উল্লেখ্য যে, CTA তিব্বতে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য গঠন করা হয়নি। ভবিষ্যত তিব্বতের জন্য তার ইশতেহারে, ভবিষ্যত তিব্বতের রাজনীতি এবং এর সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য নির্দেশিকা শিরোনামে, মহামান্য দালাই লামা বলেছিলেন যে তিব্বতে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হওয়ার সাথে সাথে বর্তমান নির্বাসিত প্রশাসন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে তিব্বতে বসবাসকারী তিব্বতিরা মুক্ত তিব্বতের সরকার পরিচালনা করবে, নির্বাসিত প্রশাসনের সদস্যদের দ্বারা নয়। তিনি বলেছিলেন যে তিব্বতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে যার নেতৃত্বে একজন অন্তর্বর্তী-রাষ্ট্রপতি হবেন, তিনি নির্বাচিত বা নিযুক্ত হবেন। এই অন্তর্বর্তী-রাষ্ট্রপতির কাছে পরম পবিত্রতা তার সমস্ত সাময়িক ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। অন্তর্বর্তী-রাষ্ট্রপতি, তার পালাক্রমে, দুই বছরের মধ্যে একটি সাধারণ নির্বাচন করতে হবে এবং তারপরে জনপ্রিয়ভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।##
নির্বাসিত তিব্বত সরকারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
1949 সালে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তিব্বতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ খাম এবং আমদোতে অগ্রসর হয়, পরের বছরে পূর্ব তিব্বতীয় সদর দফতর চামদোর দখল করে। তারপরে 1951 সালে, তথাকথিত "তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির জন্য 17-দফা চুক্তি" তিব্বত সরকার এবং জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলিতে, চীনা সেনাবাহিনী আরও পশ্চিমে অগ্রসর হয় এবং অবশেষে 1959 সালে লাসার তিব্বতি জাতীয় বিদ্রোহকে চূর্ণ করে। এর ফলে মহামহিম দালাই লামা এবং প্রায় 80,000 তিব্বতি যারা ভারত, নেপাল এবং ভুটানে আশ্রয় চেয়েছিলেন। উদ্বাস্তুদের আগমন আজও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে, তিব্বতের নির্বাসিত জনসংখ্যা 140,000 এর বেশি, যার মধ্যে প্রায় 100,000 ভারতে অবস্থিত।
29 এপ্রিল 1959-এ, মহামান্য দালাই লামা উত্তর ভারতীয় হিল স্টেশন মুসৌরিতে তিব্বতি নির্বাসিত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মহামহিম দালাই লামার কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসন (CTA) নামকরণ করা হয়েছে, এটি স্বাধীন তিব্বতের সরকারের ধারাবাহিকতা। 1960 সালের মে মাসে, CTA ধর্মশালায় স্থানান্তরিত হয়। তিব্বতে এবং তিব্বতের বাইরের তিব্বতি জনগণ তাদের একমাত্র এবং বৈধ প্রতিনিধি হিসাবে CTA-কে দেখে। এটি এবং প্রশাসনের সত্য, অহিংসা এবং প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার এর অলঙ্ঘনীয় নীতির অর্থ হল এটি এখন তিব্বতের জনগণের বৈধ এবং প্রকৃত প্রতিনিধি হিসাবে সারা বিশ্বের পার্লামেন্ট এবং সাধারণ জনগণ ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকৃত হচ্ছে।
প্রবাসী অনেক তিব্বতীয় এই অঞ্চলকে গণচীনের একটি অংশ হিসেবে মানতে সম্মত নন। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিদের স্বাধীকারের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়। তখন দলাই লামার নেতৃত্বে অসংখ্য তিব্বতি ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসবাস আরম্ভ করেন। সেখানেই ভূতপূর্ব স্বাধীন তিব্বতের নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিব্বতের রাজধানীর নাম লাসা।
তার সূচনা থেকেই, CTA নিজেকে তিব্বতের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এবং তাদের স্বাধীনতা ও সুখী জীবন যাত্রা বহাল রাখার দ্বিবিধ কর্মসূচী নির্ধারণ করেছে। পুনর্বাসন এজেন্ডায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে: ক) নির্বাসিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার; খ) গণতন্ত্রের একটি দৃঢ় সংস্কৃতি গড়ে তোলা; এবং গ) আত্মনির্ভরশীলতার পথ প্রশস্ত করা যাতে তিব্বতের জনগণ আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে বেঁচে থাকতে পারে যা বহিরাগত সহায়তার উপর নির্ভর না করে পরিচালিত হতে পারে।
আধুনিক গণতন্ত্র নিয়ে CTA-এর পরীক্ষা নিরিক্ষা, আসলে যখন সেখানে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা হবে সে সময়ের তিব্বতের পুনর্গঠনের প্রস্তুতি ।এই অনুশীলনের অংশ হিসাবে, 2 সেপ্টেম্বর 1960-এ একটি সংসদ, যার নাম ছিলCommission of Tibetan People’s Deputies, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পার্লামেন্টটি ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছিল, এইভাবে এটি Assembly of Tibetan People’s Deputies ( ATPD) নামে পরিচিত হয়। তারপর 2006 সালে, এর নাম পরিবর্তন করে তিব্বত সংসদ-ইন-এক্সাইল (TPiE) করা হয়।
1990 সালে মহামহিম দালাই লামা আরও গণতন্ত্রীকরণের ঘোষণা করেন , যার মাধ্যমে নির্বাসিত তিব্বতীয় সংসদের গঠন 46 সদস্যে উন্নীত হয়। সংসদকে কাশাগ বা মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে, তিব্বতি বিচার বিভাগ, তিব্বত সুপ্রিম জাস্টিস কমিশন নামে পরিচিত, ভারত সরকারের সালিশ আইনের বিধানের অধীনে 1992 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ক্ষমতা প্রাপ্ত নির্বাসিত তিব্বতীয় সংসদ The Charter of the Tibetans in Exile শিরোনামে পরিচিত হয়েছে।
আজ, CTA-তে একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক প্রশাসনের সমস্ত বিভাগ এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটা অবশ্যই উল্লেখ্য যে, CTA তিব্বতে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য গঠন করা হয়নি। ভবিষ্যত তিব্বতের জন্য তার ইশতেহারে, ভবিষ্যত তিব্বতের রাজনীতি এবং এর সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য নির্দেশিকা শিরোনামে, মহামান্য দালাই লামা বলেছিলেন যে তিব্বতে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হওয়ার সাথে সাথে বর্তমান নির্বাসিত প্রশাসন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে তিব্বতে বসবাসকারী তিব্বতিরা মুক্ত তিব্বতের সরকার পরিচালনা করবে, নির্বাসিত প্রশাসনের সদস্যদের দ্বারা নয়। তিনি বলেছিলেন যে তিব্বতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে যার নেতৃত্বে একজন অন্তর্বর্তী-রাষ্ট্রপতি হবেন, তিনি নির্বাচিত বা নিযুক্ত হবেন। এই অন্তর্বর্তী-রাষ্ট্রপতির কাছে পরম পবিত্রতা তার সমস্ত সাময়িক ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। অন্তর্বর্তী-রাষ্ট্রপতি, তার পালাক্রমে, দুই বছরের মধ্যে একটি সাধারণ নির্বাচন করতে হবে এবং তারপরে জনপ্রিয়ভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।##









































মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন