সাধন কুমার পাল:: ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত। সাম্প্রতিককালে ভারত সরকার কয়েকটি জায়গায় ইন্ডিয়া নামের বদলে ভারত নাম ব্যবহার করেছে। যেমন প্রেসিডেন্ট অফ ভারত, প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত ইত্যাদি। সরকার থেকে কখনোই বলা হয়নি যে দেশের নাম বদল হচ্ছে। ইন্ডিয়া এবং ভারত দুটোর মধ্যে যে কোন নাম যে কোনো সময় ব্যবহার করা সংবিধান সম্মত। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই ভারত নাম নিয়ে I.N.D.I.A জোটের সদস্যদের এত আপত্তি কেন?
বিগত 100 বছরে পৃথিবী জুড়ে অনেক দেশের নামই
পরিবর্তন হয়েছে।যার মূলে রয়েছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ। কেউ ভাবমূর্তি পরিবর্তনের জন্য, কেউ আবার সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পরিবর্তন করেছে দেশের নাম। যেমন,দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার সীমান্তে রয়েছে টার্কি, যা প্রাচ্যে ‘তুরস্ক’ নামে পরিচিত। সেই দেশের নামও বদলাতে চলেছে। ২০২২ সালের জুনে জাতিসংঘকে তুরস্ক জানিয়েছে, তাদের যেন এবার থেকে ‘তুরকিয়ে’ নামে ডাকা হয়।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এক বিবৃতিতে নামবদলের কারণ জানান। তিনি বলেন, তার দেশের সংস্কৃতি, সভ্যতা, মূল্যবোধকে সব থেকে ভালোভাবে প্রকাশ করে নতুন নাম ‘তুরকিয়ে’। তাই নতুন এই নামকরণ।
শ্রীলঙ্কা: ব্রিটিশরা ভারতের দক্ষিণে ছোট্ট দেশটির নাম রেখেছিল ‘সিলোন’। ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। পূর্বতন শাসকদের চিহ্ন মুছে ফেলতে ১৯৭২ সালে দেশটির নাম হয় শ্রীলঙ্কা। ২০১১ সালে সরকারি নথিপত্রেও ‘সিলোন’ নামটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়।
কম্বোডিয়া: নাম ছিল কাম্পুচিয়া। তার ইংরেজি ‘অনুকরণ’ হল কম্বোডিয়া। ১৯৭৬ সালে সেই দেশের কমিউনিস্ট শাসকেরা দেশকে কাম্পুচিয়া বলে অভিহিত করতেন। কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হওয়ার পর দেশের নাম বদলে সরকারিভাবে ‘কম্বোডিয়া’ রাখা হয়।
ইরান: এক কালে পারস্য (পার্সিয়া) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৩৫ সালে ক্ষমতায় আসেন সম্রাট রেজা শাহ। তখনই দেশের নাম বদলে ‘ইরান’ রাখা হয়।
সম্রাটের তরফে জানানো হয়েছিল, দেশে নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। তাই নামবদল। যদিও এখনও এ দেশের খাবার, শিল্প, সাহিত্য ‘পারসিক’ হিসাবেই পরিচিত।
শহরের স্থানের নাম পরিবর্তন
এর আগেও ভারতবর্ষের অনেকগুলো নাম পরিবর্তন হয়েছে। যেমন মাদ্রাজ হয়েছে চেন্নাই, বোম্বে হয়েছে মুম্বাই ,ক্যালকাটা হয়েছে কোলকাতা। এই সমস্ত পরিবর্তনের পেছনে একটি কারণ যে উপনিবেশিক শাসকরা তাদের উচ্চারণের সুবিধার্থে এদেশের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতির তোয়াক্কা না করে ভারতীয়দের মনোবল ভেঙে দিতে তাদের মতো করে নাম রেখে দিয়েছিল।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে স্থান কাল পাত্র যাই হোক না কেন যে কোন নামকরনের সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বৈশিষ্ট ও ধর্মের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়।
মুম্বাই নামটি আসলে এই অঞ্চলের প্রাচীনতম বাসিন্দা কোলি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক দেবতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে।শহরের আসল নাম ছিল "মুম্বা দেবী"। "মুম্বা" দেবীর নাম অনুসরণ করে এই শহরের নামকরণ হয় মুম্বাই ।
শহরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত মুম্বা দেবীকে উত্সর্গীকৃত মন্দিরটি এখনও স্থানীয়দের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান।
চেন্নাই নামের প্রথম অফিসিয়াল ব্যবহারটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফ্রান্সিস দিবসে 8 আগস্ট 1639 তারিখে একটি বিক্রয় দলিলের মধ্যে ছিল বলে জানা যায়। আরেকটি মত হল চেন্না কেশব পেরুমাল মন্দিরের নামানুসারে শহরটির নামকরণ করা হয়েছিল; তামিল ভাষায় চেন্নাই শব্দের অর্থ মুখ , মন্দিরটিকে শহরের মুখ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।ইংরেজরা উপনিবেশিক শাসনকে যুক্তিসম্মত দীর্ঘায়িত করতে নামকরণের মাঝে লুকিয়ে থাকা ধর্মীয় সাংস্কৃতিক মাইলফলক গুলো মুছে দিতে চেয়েছিল।
বিভিন্ন ভারতীয় রাজ্যগুলির নামও বিশেষ বৈশিষ্ট্যগত অর্থ বহন করে। যেমন কেরালা।কেরল" নামের উৎপত্তি নিয়ে বহু মত বিদ্যমান । সবচেয়ে প্রচলিত মত অনুযায়ী নামটি "কের'" ( মালয়ালম ভাষায় অর্থ 'নারকেল গাছ' ) এবং "আলম" ( অর্থ 'দেশ' বা 'ভূমি ') শব্দ দুটির সমন্বয়ে সৃষ্ট, যার অর্থ দাঁড়ায় "নারকেল বৃক্ষের দেশ" ।
যেমন পশ্চিমবঙ্গ নামটি আমাদের স্মরণ করায় পূর্ববঙ্গ বলে কোন একটা স্থান ছিল যা কিনা পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অনেক হিন্দুর পূর্বপুরুষের ভিটে। দেশভাগের সেই ভয়ংকর যন্ত্রণার ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জাগিয়ে রাখতে হয় তবে এরকম নাম রাখা হয়েছিল যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর ওই ধরনের দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন না হতে হয়।
নামকরণে বিজ্ঞানসম্মত বৈশিষ্ট্য
ভারতবর্ষে সময় গণনার জন্য যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাতেও বিজ্ঞানসম্মত বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে।
যেমন বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় শ্রাবণের মতো প্রত্যেকটি মাসের নাম গুলির উৎস কোন না কোন মহাজাগতিক বৈশিষ্ট্য যুক্ত রাশি বা নক্ষত্রের নাম থেকে নেওয়া হয়েছে এবং প্রকৃতির পরিবর্তন এই মহাজগতিক বৈশিষ্ট্য গুলি থেকেই আসে। ইংরেজি মাসের নাম জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চ এগুলো একটা শব্দ মাত্র কোনো নির্দিষ্ট অর্থ বা বৈশিষ্ট্য আছে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন বারের নামের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি। যেমন মঙ্গল বুধ বৃহস্পতি শুক্র শনি এগুলো সবই এক একটা গ্রহের নাম।
সেজন্য এমন একটা দেশ যেখানে প্রত্যেকটি নাম বাচক শব্দ কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য, সুনির্দিষ্ট অর্থ বহন করে স্বাভাবিকভাবেই সেই দেশটির নিজের নামকরণও এমন অর্থপূর্ণ শব্দ হবে যা কিনা এই দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি এবং বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটাবে ।
আমাদের দেশের প্রাচীন নাম গুলো বিশেষ অর্থ এবং সেই স্থানের বৈশিষ্ট্য বহন করে। যেমন, অযোধ্যা ।অযোধ্যা মানে হল যার সাথে যুদ্ধ করা অসম্ভব ।
ব্যক্তির নামের ক্ষেত্রেও সেই পরিবারের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ভাবনার প্রতিফলন থাকে। ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত পরিবারগুলোর নাম সেই পরিবারের ইষ্ট দেবতার নামের সাথে অনেকটাই সামঞ্জস্য থাকে। যেমন নারায়ণ ,রাম,কৃষ্ণ, লক্ষ্মী সরস্বতী ইত্যাদি।
বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ফলের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। যেমন আমলকি বা আমলা যার অর্থ হল অমৃত ফল। জীবন দায়ী বিরল ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ বলে একে অমৃত ফল বলা হয় ।সেজন্যই এরকম নামকরণ।
ইংরেজিতে আমলকিকে বলা হয় Indian gooseberry যার অর্থ ভারতীয় বৈঁচিজাতীয় ভক্ষণযোগ্য ফল। এই বৈঁচি জাতীয় ভক্ষণ যজ্ঞ ফল অনেক রকমের হতে পারে এবং এই নাম দিয়ে আর যাই হোক আমলকি কে নির্দিষ্ট করে বোঝানো সম্ভব নয়। যেমন আঙ্কেল বা আন্টি এই সম্বোধন দিয়ে কাকু বা জেঠু কিংবা কাকিমা বা জেঠিমা ইত্যাদি নির্দিষ্ট সম্পর্ক বোঝা যায় না।
গুণানুসারে একাধিক নাম
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ১০৮ টি নাম। প্রত্যেকটি নাম গুণানুসারে। যেমন ,পুতনা রাক্ষসীকে বধ করেছিল পূতনা-নাশন, যশোদার পুত্র বলে নাম হয়েছিল যশোদা নন্দন।
  মহাজাগতিক বিভিন্ন অস্তিত্বের ক্ষেত্রেও এই কথাগুলো সত্য। 
ইংরেজিতে সূর্যের একটিই নাম SUN । কিন্তু ভারতীয় ভাষা গুলিতে গুণ অনুসারে সূর্যের অনেকগুলো নাম আছে ।এক একটা নামের অর্থ দিয়ে সূর্যের এক একটি গুণ এর পরিচয় পাওয়া যায়।
ইংরেজিতে সূর্যের একটিই নাম SUN । কিন্তু ভারতীয় ভাষা গুলিতে গুণ অনুসারে সূর্যের অনেকগুলো নাম আছে ।এক একটা নামের অর্থ দিয়ে সূর্যের এক একটি গুণ এর পরিচয় পাওয়া যায়।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, গ্রহের মধ্যে সূর্য হল নবগ্রহের প্রধান। তাকে মহাবিশ্বের স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সূর্যের বারোটি আলাদা নাম রয়েছে এবং প্রতিটি নামের আলাদা অর্থও রয়েছে। মিত্র, রবি, সূর্য, ভানু, খগা, পূষণ, হিরণ্যগর্ভ, মারিচা, আদিত্য, সাবিত্রা, ভাস্কর এবং অর্ক। মিত্র সূর্যের প্রথম নাম। মিত্র শব্দের অর্থ "সকলের বন্ধু"। এটি গ্রহদের  অন্যতম রক্ষককে বোঝায় এবং এটি ভোরের আলো এবং সকালের সূর্যের সাথে সম্পর্কিত। 
রবি সূর্যের আরেকটি নাম এবং এর অর্থ "সকলের দ্বারা প্রশংসিত"। এটি বোঝায় যে রবির মতোই  জীবনে আকর্ষণীয় রঙ নিয়ে আসে।
 
সূর্যের পরবর্তী প্রতিশব্দ সূর্য। সূর্যের অর্থ হল "সকলের পথপ্রদর্শক"। প্রাচীন সাহিত্যে, সূর্য একটি সংস্কৃত শব্দ যা অন্য কিছু নয় সূর্যকেই নির্দেশ করে। 
সূর্যের পরবর্তী নাম হল ভানু। ভানুর অর্থ হল "সৌন্দর্যের দাতা"।
সূর্যের পরবর্তী নাম হল ভানু। ভানুর অর্থ হল "সৌন্দর্যের দাতা"।
খগ হল সূর্যের আরেকটি প্রতিশব্দ এবং এর অর্থ হল "ইন্দ্রিয়ের উদ্দীপক"।
 
সূর্যের পরবর্তী প্রতিশব্দ হল পুষম। এর অর্থ হল "সকলের পুষ্টিদাতা"। 
হিরণ্যগর্ভ আরেকটি। সূর্যের নাম। এর অর্থ "সৃষ্টিকর্তা"। হিন্দু দর্শনে যেমন বলা হয়েছে, হিরণ্যগর্ভ হল সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টির উৎস এবং এটি বীজ গর্ভ। 
সূর্যের আরেকটি প্রতিশব্দ মারিচা এবং এর অর্থ "রোগ ধ্বংসকারী"। 
 
আদিত্য সূর্যের আরেকটি নাম হিসাবে পরিচিত যার অর্থ "অনুপ্রেরণাকারী"। তিনি অদিতির পুত্র। হিন্দু বিশ্ববিদ্যায়, আদিত্যকে স্বর্গীয় নক্ষত্রপুঞ্জের উপর প্রভুত্ব দেওয়া হয়। নক্ষত্র বা জ্যোতিষ। আদিত্য মহাবিশ্বের সঠিক কার্যকারিতার জন্য দায়ী।
     
 বৈদিক পুরাণ অনুসারে, সবিত্র হল সূর্যের প্রতিনিধি, সূর্যোদয়ের আগে সূর্য। 
সবিত্র শব্দের অর্থ "উদ্দীপক"। তিনি সেই প্রভু যার গতিশীলতা এবং স্থিতি রয়েছে এবং তিনি বিশ্বজগতের সমর্থক এবং সমস্ত প্রাণীর রক্ষক হিসাবে পরিচিত। 
অর্ক হল সূর্যের আরেকটি নাম যার অর্থ "উষ্ণতার উদ্ভাবক।
সূর্যের শেষ এবং দ্বাদশ নাম ভাস্কর যার অর্থ "মুক্তিদাতা ।
ভারতবর্ষেরও অনেকগুলো নাম , জম্বুদ্বীপ, আর্যাবর্ত ,ভারত ,হিন্দুস্থান , ইন্ডিয়া ইত্যাদি। জম্বু দ্বীপ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ধরলে এর মানে হয় জাম গাছে ভরা দ্বীপ। কিন্তু সনাতন সৃষ্টিতত্ব (মানে হিন্দু বৌদ্ধ কিংবা জৈন) অনুযায়ী জম্বুদ্বীপ মানে হল “সাধারণ মানুষের বাসস্থান”।
আর্যাবর্ত শব্দের আক্ষরিক অর্থ "আর্যদের ভূমি"।আর্য নামের অর্থ কি? আর্য নামের অর্থ হলো: পূজ্য; শ্রেষ্ঠ; মান্য; সুসভ্য, একজন শ্রদ্ধেয় বা সম্মানিত বা বিশ্বস্ত মানুষ।
হিন্দুস্থান মানে হলো হিন্দুদের বসবাসের জায়গা। অর্থাৎ হিন্দুদের দেশ হিন্দুস্থান।বুৎপত্তিগতভাবে হিন্দু শব্দটি দ্বারা সিন্ধু নদের অববাহিকায় বসবাসরত সকলকে বোঝানো হয়। ভারতের সংবিধানে হিন্দু শব্দটি ব্যবহার করে যে কোন ভারতীয় ধর্মবিশ্বাসীকে (হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম বা শিখধর্ম) নির্দেশ করা হয়েছে।
ইংরেজিতে ইন্ডিয়া (India,) কথাটি সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে। প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের বলত ইন্দোই , বা 'ইন্দাস' (সিন্ধু) নদী অববাহিকার অধিবাসী। 'ইন্দাস' নাম থেকেই 'ইন্ডিয়া' নামটির উত্পত্তি। অর্থাৎ ইন্ডিয়া শব্দটি বিদেশীদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা একটা উচ্চারণ মাত্র। ইন্ডিয়া শব্দটি সিন্ধু নদীর অববাহিকায় একটি ভূখণ্ডকে নির্দেশ করে ,যা দিয়ে এদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি সভ্যতা বা ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে কোন রকম ধারণা পাওয়া যায় না।
এবার দেখে নেওয়া যাক ভারত শব্দের অর্থ কি। ভারত’ প্রকৃতপক্ষে তিনটি শব্দ দ্বারা উদ্ভুত হয়েছে।
ভা – ভাবনা বা প্রকাশ, ঈশ্বরীয় সত্য (সাময়িকরূপে সাদা জ্যোতিঃ এর প্রকাশ)
র – রজস বা রজঃগুণ (লোহিত বা লাল রঙ)।
ত – তমস বা তমঃগুণ (শ্যাম বা কৃষ্ণ)। ‘রত’ শব্দার্থে লীন হওয়া অর্থাৎ ভারত এমন দিব্যভূমি যেখানে বসবাসকারী লোক সত্যের অনুসন্ধানে ধ্যানে রত বা লীন থাকে। ভারত নামটিতে যেন সেই দিব্য ভূমির ছবি আঁকা রয়েছে।
উত্তরং যৎ সমুদ্রস্য, হিমাশ্বে হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণম্।বর্ষ তদ্ ভারতং নাম ভারতী যত্র সংততিঃ।। (বিষ্ণুপুরাণ)
বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে মহাসাগরের উত্তরে এবং বরফে ঢাকা পাহাড়ের দক্ষিণে অর্থাৎ হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত দেশের নাম ভারতবর্ষ এবং এই দেশের মানুষকে অভিহিত করা হয়েছে ‘ভারতসন্ততি’ রূপে ।
ইতিহাসে 'ভারত' তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিদ্যা ধর্ম বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং পুরাণ বেদান্ত ও সাহিত্যের অধ্যাপক বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ মিশ্র আজ তকের সাথে একটি বিশেষ কথোপকথনে বলেছিলেন যে ইতিহাসে 'ভারত' তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে। একজন হলেন শকুন্তলা-দুষ্যন্তের পুত্র ভরত, দ্বিতীয় হলেন ভরত, রামের ভাই এবং তৃতীয় হলেন সবচেয়ে প্রাচীন ভারত, যিনি ভগবান বিষ্ণুর 24টি অবতারের একজন।তিনি 24টি অবতারের একজন এবং জৈন ধর্মের তীর্থঙ্কর আদিনাথ নামেও পরিচিত। তাঁর নাম 'ঋষভদেব' এবং 'ভারত' ঋষভদেবের 100 পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র।
উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে ইন্ডিয়া নাম দিয়ে শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডকেই বোঝায় কিন্তু ভারত এই শব্দটি দিয়ে একটি উন্নত সাংস্কৃতিক আধ্যাত্মিক পরম্পরা সম্পন্ন ভূখণ্ডকে বোঝায়। সবচেয়ে বড় কথা ভারত নামটি কোন ব্যক্তি বিশেষের দেওয়া এমনটি বোধহয় নয় এদেশের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারত শব্দটি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মুখে উচ্চারিত হয়েছে।
ইন্ডিয়া নামটি ইংরেজদের মুখ থেকে প্রথম উচ্চারিত না হলেও এই নামের মধ্যে পরাধীনতার গ্লানি রয়েছে । যেমন, ব্রিটিশরা বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা সম্পর্কে বলতো' ইন্ডিয়ানস এন্ড ডগ আর নট এলাউড হিয়ার'। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে যার থেকে প্রমাণ করা যাবে যে ভারতবাসীদের উপর ঘৃণা ছড়ানোর জন্য এই ইন্ডিয়ান শব্দটি ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া যারা এখনো বিদেশে থাকেন তাদের অনেকের মুখেই শুনেছি ইন্ডিয়ান বলে পরিচয় দিলে তাদের মনে এক ধরনের হীনমন্যতার জন্ম নেয়। সেজন্য দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য পরাধীনতার গ্লানি মুছে দেওয়া প্রয়োজন।
বর্তমান ভারত নতুনভাবে নিজের পরিচয় তৈরি করছে। গোটা বিশ্ব এখন ভারতের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করতে উদগ্রীব। আগামী দিনে ভারত অর্থনীতিতেও বিশ্বে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান লাভ করতে চলেছে, মহাকাশ গবেষণায় ভারত এখন একটি অগ্রণী দেশ হিসাবে গণ্য হয়েছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে নিজেদের আত্মপরিচয়ের দ্যোতক ভারত নামটি বিশেষ প্রয়োজন।##
অর্ক হল সূর্যের আরেকটি নাম যার অর্থ "উষ্ণতার উদ্ভাবক।
সূর্যের শেষ এবং দ্বাদশ নাম ভাস্কর যার অর্থ "মুক্তিদাতা ।
ভারতবর্ষেরও অনেকগুলো নাম , জম্বুদ্বীপ, আর্যাবর্ত ,ভারত ,হিন্দুস্থান , ইন্ডিয়া ইত্যাদি। জম্বু দ্বীপ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ধরলে এর মানে হয় জাম গাছে ভরা দ্বীপ। কিন্তু সনাতন সৃষ্টিতত্ব (মানে হিন্দু বৌদ্ধ কিংবা জৈন) অনুযায়ী জম্বুদ্বীপ মানে হল “সাধারণ মানুষের বাসস্থান”।
আর্যাবর্ত শব্দের আক্ষরিক অর্থ "আর্যদের ভূমি"।আর্য নামের অর্থ কি? আর্য নামের অর্থ হলো: পূজ্য; শ্রেষ্ঠ; মান্য; সুসভ্য, একজন শ্রদ্ধেয় বা সম্মানিত বা বিশ্বস্ত মানুষ।
হিন্দুস্থান মানে হলো হিন্দুদের বসবাসের জায়গা। অর্থাৎ হিন্দুদের দেশ হিন্দুস্থান।বুৎপত্তিগতভাবে হিন্দু শব্দটি দ্বারা সিন্ধু নদের অববাহিকায় বসবাসরত সকলকে বোঝানো হয়। ভারতের সংবিধানে হিন্দু শব্দটি ব্যবহার করে যে কোন ভারতীয় ধর্মবিশ্বাসীকে (হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম বা শিখধর্ম) নির্দেশ করা হয়েছে।
ইংরেজিতে ইন্ডিয়া (India,) কথাটি সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে। প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের বলত ইন্দোই , বা 'ইন্দাস' (সিন্ধু) নদী অববাহিকার অধিবাসী। 'ইন্দাস' নাম থেকেই 'ইন্ডিয়া' নামটির উত্পত্তি। অর্থাৎ ইন্ডিয়া শব্দটি বিদেশীদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা একটা উচ্চারণ মাত্র। ইন্ডিয়া শব্দটি সিন্ধু নদীর অববাহিকায় একটি ভূখণ্ডকে নির্দেশ করে ,যা দিয়ে এদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি সভ্যতা বা ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে কোন রকম ধারণা পাওয়া যায় না।
এবার দেখে নেওয়া যাক ভারত শব্দের অর্থ কি। ভারত’ প্রকৃতপক্ষে তিনটি শব্দ দ্বারা উদ্ভুত হয়েছে।
ভা – ভাবনা বা প্রকাশ, ঈশ্বরীয় সত্য (সাময়িকরূপে সাদা জ্যোতিঃ এর প্রকাশ)
র – রজস বা রজঃগুণ (লোহিত বা লাল রঙ)।
ত – তমস বা তমঃগুণ (শ্যাম বা কৃষ্ণ)। ‘রত’ শব্দার্থে লীন হওয়া অর্থাৎ ভারত এমন দিব্যভূমি যেখানে বসবাসকারী লোক সত্যের অনুসন্ধানে ধ্যানে রত বা লীন থাকে। ভারত নামটিতে যেন সেই দিব্য ভূমির ছবি আঁকা রয়েছে।
উত্তরং যৎ সমুদ্রস্য, হিমাশ্বে হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণম্।বর্ষ তদ্ ভারতং নাম ভারতী যত্র সংততিঃ।। (বিষ্ণুপুরাণ)
বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে মহাসাগরের উত্তরে এবং বরফে ঢাকা পাহাড়ের দক্ষিণে অর্থাৎ হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত দেশের নাম ভারতবর্ষ এবং এই দেশের মানুষকে অভিহিত করা হয়েছে ‘ভারতসন্ততি’ রূপে ।
ইতিহাসে 'ভারত' তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিদ্যা ধর্ম বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং পুরাণ বেদান্ত ও সাহিত্যের অধ্যাপক বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ মিশ্র আজ তকের সাথে একটি বিশেষ কথোপকথনে বলেছিলেন যে ইতিহাসে 'ভারত' তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে। একজন হলেন শকুন্তলা-দুষ্যন্তের পুত্র ভরত, দ্বিতীয় হলেন ভরত, রামের ভাই এবং তৃতীয় হলেন সবচেয়ে প্রাচীন ভারত, যিনি ভগবান বিষ্ণুর 24টি অবতারের একজন।তিনি 24টি অবতারের একজন এবং জৈন ধর্মের তীর্থঙ্কর আদিনাথ নামেও পরিচিত। তাঁর নাম 'ঋষভদেব' এবং 'ভারত' ঋষভদেবের 100 পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র।
উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে ইন্ডিয়া নাম দিয়ে শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডকেই বোঝায় কিন্তু ভারত এই শব্দটি দিয়ে একটি উন্নত সাংস্কৃতিক আধ্যাত্মিক পরম্পরা সম্পন্ন ভূখণ্ডকে বোঝায়। সবচেয়ে বড় কথা ভারত নামটি কোন ব্যক্তি বিশেষের দেওয়া এমনটি বোধহয় নয় এদেশের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারত শব্দটি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মুখে উচ্চারিত হয়েছে।
ইন্ডিয়া নামটি ইংরেজদের মুখ থেকে প্রথম উচ্চারিত না হলেও এই নামের মধ্যে পরাধীনতার গ্লানি রয়েছে । যেমন, ব্রিটিশরা বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা সম্পর্কে বলতো' ইন্ডিয়ানস এন্ড ডগ আর নট এলাউড হিয়ার'। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে যার থেকে প্রমাণ করা যাবে যে ভারতবাসীদের উপর ঘৃণা ছড়ানোর জন্য এই ইন্ডিয়ান শব্দটি ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া যারা এখনো বিদেশে থাকেন তাদের অনেকের মুখেই শুনেছি ইন্ডিয়ান বলে পরিচয় দিলে তাদের মনে এক ধরনের হীনমন্যতার জন্ম নেয়। সেজন্য দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য পরাধীনতার গ্লানি মুছে দেওয়া প্রয়োজন।
বর্তমান ভারত নতুনভাবে নিজের পরিচয় তৈরি করছে। গোটা বিশ্ব এখন ভারতের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করতে উদগ্রীব। আগামী দিনে ভারত অর্থনীতিতেও বিশ্বে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান লাভ করতে চলেছে, মহাকাশ গবেষণায় ভারত এখন একটি অগ্রণী দেশ হিসাবে গণ্য হয়েছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে নিজেদের আত্মপরিচয়ের দ্যোতক ভারত নামটি বিশেষ প্রয়োজন।##



মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন