সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চান্দামারী, বংশীহারির ধর্ষকদের সাত দিনের মধ্যে ফাঁসি হবে তো মাননীয়া ?

                        


                            সাধন কুমার পাল 

পথে নামার সুযোগই পাননি গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় ও ওই কলেজের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ। আর জি কর মেডিকেল কলেজে  অনডিউটি তরুণী চিকিৎসকে ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় অপরাধীদের ফাঁসি চেয়ে পথে নামেননি এমন মানুষ বোধহয় পশ্চিমবঙ্গে কমই আছে। তবে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। একদিকে ১৫ আগষ্ট রাত্রিবেলা গুন্ডা পাঠিয়ে আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণের প্রমান লোপাটের ব্যবস্থা করছেন অন্যদিকে উনি বলছেন সাত দিনের মধ্যে ধর্ষককে ফাঁসি দিতে হবে এবং ওনার ভাইপো বোধ হয় ধর্ষককে দ্রুত শুট করে দেওয়ার কথা বলেছেন ।

এখানেই শেষ নয় উনি প্রকাশ্য সভায় চিৎকার করে বলছেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে উনি ধর্ষণ বিরোধী করা কঠোর আইন প্রণয়ন করবেন । দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করবেন যাতে কেন্দ্র সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য হয়। সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ করার  জন্য যদি পুরস্কার দিতে হয়, তবে অবশ্যই সেই পুরস্কার পাবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী  আপনি ক্ষমতায় আসার পর সিতাই, ধুপগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর সহ রাজ্যজুরে  ডজন ডজন ধর্ষণের উদাহরণ দিতে পারি, যেগুলোতে বছরের পর বছর চলে গেলেও আপনার পুলিশ ও আইনি ব্যাবস্থায়  এখনো কোনো শাস্তি হয়নি। আপনাকে শুধু আমি সবিনয়ে একটি ঘটনা স্মরণ করে দিতে চাই ,২০১৩ সালের ১৭ই জুন আপনি কামদুনি গ্রামে গিয়ে কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই বিষয়টি।সে দিন আপনি বলেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে আপনি চার্জ সিটের ব্যবস্থা করবেন এবং ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করবেন আদালতে। কিন্তু ২০২৪ এর শুরুতে দেখা গেল সেই অভিযুক্তরা প্রায় সবাই বেকসুর খালাসের পথে। আমি জানি আমার এই প্রশ্নে আপনি খুবই অখুশী হবেন। কিন্তু কিছু করার নেই প্রশ্ন আপনাকে করতেই হবে, কারণ আপনি আমাদের অভিভাবক। সাত দিন তো দূরের কথা দশ বছরেও আপনি ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলেন।
আসুন সেই আর জি কর এর মতই ভয়াবহ  ঘটনাটি একবার সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
২০১৩ সালের ৭ই জুন কলকাতা থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসত থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে কামদুনি গ্রামে কুড়ি বছর বয়সি শিপ্রা ঘোষ নামে এক কলেজ ছাত্রী কে অপহরণ করে  আটজন মিলে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। নির্যাতিতা ডিরোজিও মেমোরিয়াল কলেজের বি এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বিকেলে কামদুনি ভিডিও অফিস রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন যখন তাকে অপহরণ করে একটি কারখানার ভিতরে নিয়ে গিয়ে সেখানে আট জন লোক তাকে গণধর্ষণ করে। ধর্ষণের পরে দুষ্কৃতীরা নাভি পর্যন্ত পা ছিরে গলা কেটে তার লাশ পাশের মাঠে ফেলে দেয়। দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিরাট আন্দোলন হয়। ১৭ই জুন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামদুনি গ্রামে যান প্রতিশ্রুতি দেন , ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে চার্জ সিট দেওয়া হবে এবং তার সরকার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করবে।
কিন্তু মমতা ব্যানার্জির প্রতিশ্রুতি অনুসারে ঘটনার পনেরো দিন পরও কোন অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়নি। অবশেষে 2016 সালের জানুয়ারি মাসে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়া হয়। কাউকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অতিরিক্ত দায়রা জজ সঞ্চিতা সরকার শিপ্রা ঘোষ কে গণধর্ষন ও হত্যার দায়ে আনসার আলী, সাইফুল আলী ও আমিনুল আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ঈমানুল ইসলাম আমিনুল ইসলাম ও ভোলা নস্করকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। ব্যাস এবার শুরু হয়  আপনার দুধেল গরু ধর্ষকদের বাঁচানোর জন্য রাজ্য সরকারের উকিল বাবুদের আইনি মারপ্যাচ। ৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং অজয় কুমার গুপ্তের সমন্বয়ে গঠিত কলকাতা হাইকোর্টের একটি বিভাগীয় বেঞ্চ ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলা নস্কর কে গণধর্ষণের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছিল । হাইকোর্ট আমীন আলীকে বেকসুর খালাস দেন এবং সাইফুল আলী ও আনসার আলীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে স্বাভাবিক জীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্ট আরও তিন জন দোষীর হেফাজত থেকে মুক্তি নির্দেশ দিয়েছেন যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা 7 বছর কমিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ আসামিরা প্রায় সবাই মুক্তি পাওয়ার পথে।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আপনি কি জানেন আপনি  আরজিকর কাণ্ডে সিবিআই এর কাছে তদন্তের বিলম্বের জন্য আপনি যখন জবাব চাইছেন ঠিক তখনই গত ২৭ এ অগাস্ট কুচবিহার-১ ব্লকের চান্দামারী গ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক নাবালিকাকে বাড়ির পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে  বছর পঞ্চাশের ফুলবর মিঞার নামক  এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।  এখানেই শেষ নয় ৯ অগাষ্টের  পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে । বংশীহারীতে  দশ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করার চেষ্টা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ২৩ বছরের তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই যুবক আবার তৃণমূলের কর্মী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। তার বাবা শাসক দলের স্থানীয় নেতা। বংশীহারী থানা এলাকায় এক আদিবাসী মহিলাকে ধর্ষণে অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে এক ব্যক্তি। ২৯ অগাস্ট হবিবপুরে চেম্বারের ভিতর এক নাবালিকা আদিবাসী ছাত্রীকে  ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক হাতুরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।মাননীয়া আপনি সাত দিনের মধ্যে এই নিগ্রহকারীদের শাস্তি দিয়ে দেখান তো, যে আপনি পারেন, আপনার পুলিশ পারে।আপনি গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকার করে  যা বলেন সেটা করে দেখান না। আর যদি সেটা করতে না পারেন তাহলে বলব আপনার উপর প্রতিদিন ঝুরিঝুরি মিথ্যা কথা বলার , মিথ্যা ভাষণ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার যে অভিযোগ উঠছে সেটা 100 ভাগ সত্য।

আরজিকর কাণ্ডের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুধু পথেই নামেননি, উনার দলের লোকেরা ধর্ষকের ফাঁসি চাই পোস্টার দিয়ে রাজ্য ভরিয়ে দিয়েছে ।যাতে পিসি ভাইপো দুজনেরই মুখ রয়েছে। অর্থাৎ পিসি ভাইপো দুজনেই আন্দোলন করছেন ফাঁসির দাবিতে। আচ্ছা বলুন তো ফাঁসিটা দেবে কে। এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। শুধু তাই নয়, তৃণমূল কংগ্রেস দলটাও রাজ্য জুরে মিছিল করছে ফাঁসির দাবিতে? এই দৃশ্য দেখে সেই ভূষণ্ডিপুর ডাকাত গ্রামের কথা মনে পড়ছে।  ভূষণ্ডিপুর এমন একটা গ্রাম যেখানে সব মানুষের পেশাই হচ্ছে ডাকাতি করা। ডাকাত দল ডাকাতি করে ভূষণ্ডিপুরে  ঢুকে গেলে ওই গ্রামবাসীরাই  মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বড় সংখ্যায় বেরিয়ে আসতো ।ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করতো।
এদিকে এদিকে বাম ও তৃণমূলের সমস্ত অপপ্রচারকে ব্যর্থ করে দিয়ে  ' দাবি এক, দফা এক  মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ ' ইস্যু  নিয়ে ২৭ আগষ্ট পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রদল নবান্ন অভিযানএ  আমজনতার  যে ভয়ংকর ক্রোধ ও স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গিয়েছে তা বিগত সমস্ত নবান্ন অভিযানকে ম্লান  করে দিয়েছে।
বাম ও তৃণমূলে মানুষেরা বলতে শুরু করেছে  যে অভয়ার বিচারের দাবি থেকে সরে গিয়ে মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে কেন। এদিকে  স্লোগানও চলছে ' আর কতদিন সময় চাই ,জবাব দাও সিবিআই '।২৮ অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা থেকে আপনি দলীয় কর্মীদের ফোঁষ করার বার্তা দিয়েছেন। তারপর থেকে রাজ্যজুড়ে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিবাদী মিছিল।  আপনার আদরের লোকেদের এই ফোঁষের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না মহিলারাও। অর্থাৎ এখন প্রতিবাদ করা যাবে না মুখ বন্ধ করে থাকতে হবে।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা বলেছে আরজিকর কাণ্ডে তদন্তের নামে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যা করেছে সেটা উনারা উনাদের ৩০ বছরের দীর্ঘ বিচার বিভাগের সাথে যুক্ত থাকার সময়েও দেখেননি। এরকম একটা স্পর্শকাতর মামলায় ময়নাতদন্তের পরে এফআইআর হয়েছে এরকম নজীর ভারতবর্ষে কটা আছে বলুন তো? বিচারপতিদের ইঙ্গিত স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আসলে তদন্তের নামে সমস্ত তথ্য প্রমান নষ্ট করার কাজটাই করেছেন।একটা বিষয় পরিষ্কার যে মমতা ব্যানার্জিরা দলবল নিয়ে রাস্তায় নেমে গগণ ভেদী  চিৎকার করছেন যাতে তথ্য প্রমান লোপাট করার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
১) সারদা নারদা থেকে নিয়োগ কেলেঙ্কারি সবেতেই সিবিআই তদন্ত ঠেকানোর জন্য মমতা সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। আর জি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত তুলে দেওয়ার জন্য উনার এত আগ্রহ কেন?

২)৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আরজিকরের সেমিনার হলের চারতলায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ডাক্তারি ছাত্রীকে। মৃত ডাক্তারি পড়ুয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার পর ১২ আগষ্ট সোমবার দুপুরে সোদপুরে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৮ আগষ্ট  রবিবারের মধ্যে পুলিশ কিনারা করতে না পারলে সিবিআইকে মামলার তদন্তভার তুলে দেব। কিন্তু ১৩ই অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্ট ঘটনা তদন্ত সিবিআই এর হাতে তুলে দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে মমতার পুলিশ তথ্য প্রমান লোপাট করতে পারে এই আশঙ্কাতেই কি আদালত তদন্তবার তড়িঘড়ি সিবিআই এর হাতে তুলে দিয়েছে?
৩)আচ্ছা মমতা অভিষেক  যদি ফাঁসিই চাইবেন তাহলে সুপ্রিমকোর্টে কপিল সিব্বলসহ 21 জন বাঘা বাঘা আইনজীবী নিয়োগ করে করদাতাদের কোটি কোটি টাকা ধ্বংস করার ব্যবস্থা কেন?
৪)সিসিটিভির ফুটেজ নেই কেন?
৫) সেমিনার হলের সামনের দেওয়াল ভেঙ্গে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চালানো হল কেন?
৬)সূর্যাস্তের পরে তড়িঘড়ি এক ঘন্টার মধ্যে নিখুঁত পরিকল্পনায় ময়নাতদন্ত করা হল কেন?
৭)  তড়িঘড়ি মৃতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হল কেন? ৮) সমস্ত অভিযোগের তীর যার দিকে সেই সন্দীপ ঘোষকে  কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আবার একটি মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল বানানো হলো কেন?
৯)   আর জি করের ঘটনার পরে ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও কেন নিশ্চিত ভাবে জানা গেল না যে, ওই সেমিনার রুমেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল, না কি অন্য কোথাও?
১০) মৃতার পরিবারেই প্রশ্ন, ‘‘মেয়ের চুল পরিপাটি করে রাখা ছিল। কপালের উপরে হাতটা এমন ভাবে রাখা ছিল, যা এক ঝলক দেখলে মনে হয়, কেউ ঘুমোচ্ছে! যাকে ধর্ষণ ও খুন করা হবে, সে কি ওই ভাবে হাত কপালে রেখে ঘুমিয়ে থাকবে? তা ছাড়া মেয়ের সে রাতের বিছানার নীচ দিয়ে বিদ্যুতের তার গিয়েছে দেখলাম। কেউ কি বিদ্যুতের তারের উপরে বিছানা পেতে শুয়ে থাকবে?” তাঁরা বলেন, “মেয়ের মাথার কাছে ওর ডায়েরির পাতা পড়ে থাকা, পরিপাটি করে ওর জুতো সাজিয়ে রাখা দেখে তো মনে হচ্ছে, সবটাই সাজানো।” এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানিতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, “ঘটনাস্থলের চরিত্রই বদলে ফেলা হয়েছে। সিবিআইয়ের তদন্ত করতে সমস্যা হচ্ছে।” এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের বক্তব্য, ঘটনাস্থলের চরিত্র বদলানোর এই দাবি নিয়ে আলাদা তদন্ত দরকার।
এই ধর্ষণকাণ্ডে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বজুরে যখন এই বর্বরতার প্রতিবাদ চলছে সে সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধর্ষণ নিয়ে করা আইন আনা ও দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখলেন।
এই চিঠির জবাবে কেন্দ্রীয় নারী এবং শিশু কল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী যে তথ্য তুলে ধরেছেন তাতে মমতা ব্যানার্জির মুখ লুকোনোর কোন জায়গা নেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন ধর্ষণ ও পকসো মামলার বিচার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সেজন্য ২০১৯ সালের অক্টোবরে ফাস্ট ট্র্যাক পোর্ট প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্র। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ত্রিশটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৭৫২ টি ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট কার্যকর হয়েছে। তার মধ্যে ৪০৯ টি কোর্টে শুধুই পকসো মামলার বিচার হয়। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১২৩ টি ফার্স্ট ট্রাক কোর্ট অনুমোদন করা হয়েছিল প্রথমে। যার মধ্যে আবার কুড়িটি শুধুমাত্র পকশো মামলার দ্রুত বিচারের জন্য রাখা হয়েছিল। বাকি কোডগুলিতেও ধর্ষণের পাশাপাশি পকসো মামলার বিচার হওয়ার কথা।
এই চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও দাবি করেছেন ২০২৩ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে একটি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু হয় নি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রকে চিঠি লিখে রাজ্য জানিয়েছিল তারা এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে চায়। সেই সময় সাতটি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল রাজ্য। সেই মতো লক্ষ্য মাত্রা পুনর্বিবেচনা করে কেন্দ্র সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১৭ টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট অনুমোদিত হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জন পর্যন্ত মাত্র ছ'টি পকসো ফাস্ট ট্র্যাক কোড কার্যকর করা হয়েছে এ রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে এখনো ৪৮ হাজার ৬০০টি ধর্ষণ এবং পকসো মামলার বিচার ঝুলে  রয়েছে। তা সত্ত্বেও অনুমোদন দেওয়া বাকি ১১ টি কোর্ট মমতা সরকার চালু করতে পারেনি। কেন্দ্র সরকারের তরফে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও মহিলা (১৮১)এবং শিশুদের(১০৯৮) সাহায্যের জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে পারেনি। চালু করা হয়নি, ইমার্জেন্সি রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেম'ও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিঠিতে আরও বলা হয়েছে নারী নির্যাতন রোখার জন্য দেশে যথেষ্ট করা আইন রয়েছে কিন্তু তা কার্য করার বিষয়টি রয়েছে রাজ্যের হাতে।মমতা সরকারের এই উদাসীনতার জন্য পশ্চিমবঙ্গ আজ ধর্ষণ রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গলাবাজিতে মমতা ব্যানার্জির সাথে পেড়ে ওঠার মতন কেউ আছে কি পশ্চিমবঙ্গে। যে কিনা আরও বেশি চিৎকার করে উনার কাছে এই প্রশ্নগুলোর জবাব চাইবে?##
আপনার মূল্যবান মন্তব্য এই লেখা কে অবশ্যই সমৃদ্ধ করবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...