কথায় কথায় বাংলা ছাড় ,দেশটা কি তোর বাপ দাদার
                        সাধন কুমার পাল 
গত ৫ আগস্ট, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার অনুপস্থিতিতে, বাংলাদেশী সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয়, এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়।শুরু হয় বাংলাদেশী হিন্দুদের উপর আক্রমণ ।দুর্ভাগ্যবশত এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের হামেশাই ঘটে। তো এবারের হিন্দু বিরোধী বর্বরতার পালকে জুড়েছে নতুন বিষয়। হিন্দুরা নিজের যোগ্যতায় যেখানটাই কাজ করুক না কেন শিক্ষক অধ্যাপক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাদের সবাইকে জামাতের ছাত্র সংগঠন জোর করে পদত্যাগ পত্র লিখিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিচ্ছে। এই লেখা শেষ করা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য সহ ইতিমধ্যেই ৩০জনেরও বেশি উচ্চপদে কর্মরত হিন্দুকে জোর করে পদত্যাগ পত্র লিখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে বোধহয় এই প্রথম হিন্দুরা তাদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নেমেছে। হিন্দুদের সিংহ বিক্রম দেখে অনেকে অবাক হচ্ছে, আবার জিহাদীরা কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছে।হিন্দুরা স্লোগান দিচ্ছে 'কথায় কথায় বাংলা ছাড় ,দেশটা কি তোর বাপ দাদার?' 'আমার মাটি আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ'। বাংলাদেশের হিন্দুদের এই ধারাবাহিক আন্দোলন দেখে মনে হচ্ছে যে আর আবেদন নিবেদন নয় এবার অধিকার আদায়ের জন্য চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে পাঠানো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে যে নবযুগের সূচনা হয়েছে, তারই পতাকা বহনের কাণ্ডারি হিসেবে আপনাকে স্বাগত জানাই, অভিনন্দিত করি। ....... জনতার এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জন কে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রাপ্ত সাংগঠনিক বিবরণ এবং গণ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে অন্তত ৫২টি জেলায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক মহিলা নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান চাই।
খোলা চিঠিতে বলা হয়, এই পরিস্থিতি আমরা রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্র নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের বর্তমান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জানানোর চেষ্টা করেছি। তারাও তাদের বক্তব্য-ভাষণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি গত তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আর্তনাদ প্রলম্বিত হচ্ছে।
সবশেষে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সূচনালগ্নেই আপনার কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে আমাদের উদ্বেগ ও বেদনার জায়গাটি তুলে ধরছি এই প্রত্যাশায় যে, আপনি এবং আপনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, যাতে ছাত্র-জনতার বিজয় কলুষিত না হয়। ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই রক্তক্ষরণের অবসান ঘটে।'
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মতে, 5 আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় 52টি জেলায় 205টি হামলার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে।
৫আগষ্ট বাংলাদেশের মেহেরপুরের ইসকন মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিগ্রহ ভাঙচুর করা হয়েছে আগুন জ্বালানো হয়েছে। নোয়াখালী সিরাজগঞ্জ ময়মনসিংহ,যশোর, খুলনা, ফেনি গুরুচক্র মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশজুরে কম করে কুড়িটি মন্দিরে আক্রমণ করা হয়েছে ।
বাংলাদেশের হিন্দু পীঠস্থানগুলি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। রমনা কালী মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। এটি প্রায় এক হাজার বছরেরও পুরাতন বলে বিশ্বাস করা হয় কিন্তু ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল ।১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রমনা কালী মন্দির কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে এবং এক ঘন্টার মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করে। মন্দির চত্বরে আশ্রয় নেওয়া বেশ কিছু মুসলমানকেও হত্যা করা হয়।গুড়িয়ে দেওয়া হয় রমনা কালী মন্দির।
চন্দ্রধাম হল হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান। ভক্তদের বিশ্বাস এখানে মাতা সতীর ডান হাত পড়েছিল। এক হাজার কুড়ি ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই মন্দির হিন্দুদের (Anti Hindu Violence) পবিত্র আস্থাস্থল বলে পরিচিত। বহু পুণার্থী এখানে আসেন তাঁদের মনস্কামনা পূরণের জন্য।২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকেই মন্দিরের (Anti Hindu Violence) চত্বরে নামাজের আয়োজন করে মৌলবাদীরা এবং মন্দিরের পাশেই একটি মসজিদ বানানোর পরিকল্পনা শুরু করে।২০২৪ এর জানুয়ারীতে দুষ্কৃতীদের হামলায় চন্দ্রনাথ ধামের ১০ জন ভক্ত আহত হয়েছেন ।২০২২ সালের পর থেকেই চন্দ্রনাথ মন্দিরের আশপাশের এই দোকানগুলিতে গরুর মাংস রান্না করার অভিযোগ ওঠে এবং কিছু উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সদস্যরা পাহাড়ি এই মন্দিরে ঘনঘন যাতায়াত শুরু করে। বর্তমানে উগ্রপন্থী মুসলমানরা মন্দির চত্বরে 'আল্লাহু আকবর' এবং 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' ধ্বনি তুলছে এবং মন্দিরকে ঘিরে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছে।
বাংলাদেশের আরও যে মন্দিরগুলি আছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল মোঘল আমলে নির্মিত উলিপুরের ধামশ্রেণী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির এবং রাজশাহীর পুঁথিয়া মন্দির চত্বর। এছাড়াও আছে চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী মন্দির ।এছাড়াও সেখানের নারায়ণগঞ্জের বারোদীতে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী এবং বরিশালসহ নানা জায়গায় আছে শ্রীশ্রীহরি গুরুচাঁদ মতুয়া মন্দির।এই মন্দির গুলির নিরাপত্তা ও পবিত্রতাও প্রশ্নের মুখে।
বাংলাদেশে হিন্দুদের শ্রদ্ধাস্থল লক্ষ্য করে ধারাবাহিক আক্রমণের ইতিহাস।
বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর চলমান আক্রমণ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশে হিন্দুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির সাথে বিগত ২২ বছরের হামলার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে দেওয়া হল৷
2001: ভোলা হিংসা
ডিসেম্বর 2019: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সংসদীয় আলোচনা চলাকালীন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিন্দুদের চলমান নিপীড়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে ভোলার হিংসার ঘটনা তুলে ধরেন। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই 2001 সালে ভোলায় ধারাবাহিক নৃশংস হামলার কথা উল্লেখ করেন। নির্বাচনে জয়ের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা বাগেরহাট, বরিশাল, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চিতগাঁও, ফণী, গাজীপুর, যশোর, খুলনা, মুন্সীগঞ্জ, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের ওপর যৌথ হামলা চালায়। 2001 সালের অক্টোবরে, ভোলার লালমোহন অঞ্চল চরম হিংসার সাক্ষী হয়। হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়; কেটে ফেলা হয় বাগান, নষ্ট করা হয় ফসল। মুসলিম জনতা ২০০ জনেরও বেশি হিন্দু মহিলাকে আক্রমণ করে এবং ধর্ষণ করে।৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছর বয়সী মহিলা পর্যন্ত বাদ যায়নি আক্রমনের হাত থেকে। পরবর্তী জুডিশিয়াল কমিশনের তদন্তে জানা যায় যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ২৫ হাজারেরও বেশি নেতা ও স্থানীয় দলীয় কর্মী এসব হামলায় জড়িত ছিলেন। এই হিংসার ফলে অসংখ্য মৃত্যু ও আহত হয় এবং অনেক হিন্দুকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
18 নভেম্বর, 2003: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায়, একটি হিন্দু পরিবারের 11 সদস্যকে নির্মমভাবে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল । তেজেন্দ্র লাল শীলের নেতৃত্বে নিহতরা সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় বসবাস করত। হামলার আগে, আততায়ীরা শীলকে তার সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোর করার চেষ্টা করেছিল। তিনি রাজি না হলে হামলাকারীরা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মোক্তার আহমদের নির্দেশে মাহবুব রশিদ বাড়ির দরজা-জানালা সিল করে পরিবারকে আটকে রাখে। রুবেল, আরেক হামলাকারী, তারপর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে ছয় শিশুসহ ১১ জন মারা যায়।
2012: হাটহাজারী এবং ফতেহপুরে হিন্দুদের দোকান ও বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর হামলা।
2012 সালের ফেব্রুয়ারী এবং নভেম্বর এর মধ্যে এবং 2013 সালের শুরুর দিকে , হাটহাজারী, বাশখালী, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, কক্সবাজারের রামু, সাথনা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়।
9-10 ফেব্রুয়ারী, 2012 তারিখে হাটহাজারীতে হিংসা শুরু হয়, যেখানে জামায়াত-ই-ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্যরা স্থানীয় মুসলমানদের হিন্দু সম্পত্তিতে হামলা চালাতে উস্কানি দিয়েছিল। এই পরিকল্পিত সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণের ফলে আটটি মন্দির, বারোটি দোকান এবং অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হয়।
এই ঘটনার পর প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবুও হিন্দু নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার অধরা রয়ে গেছে, যারা হামলার পরও এখনো ভুগছে।
হাটহাজারীতে 2012 সালের হিংসা: বাংলাদেশের একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াত-ই-ইসলামীর পরিকল্পিত হামলার সূচনা করে। হাটহাজারীর ঘটনার পর, ২০১২ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে সাতক্ষীরার ফতেহপুর ও চাকদহে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই হামলার সময়, তাদের হিন্দু প্রতিবেশীদের সমর্থনকারী মুসলমানদের কয়েকটি হিন্দু বাড়িসহ বেশ কিছু হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়। অন্তত 12টি বাড়ি ছাই হয়ে গেছে, এবং দুটি গ্রাম দুই দিনের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভাংচুর করা হয়েছে।
31 মার্চ, 2012: দৈনিক দৃষ্টিপাত, জামাতপন্থী একটি স্থানীয় সংবাদপত্র মিথ্যা দাবি করে যে একটি স্কুলের নাটকে নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। কাগজটি ব্যাপকভাবে অনুলিপি বিতরণ করেছে, হিন্দু সম্পত্তি আক্রমণ ও লুট করতে ইসলামপন্থীদের প্ররোচিত করেছে। হিংসার তীব্রতা সত্ত্বেও, পুলিশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি উপেক্ষা করে, যার ফলে প্রায় 10 টি হিন্দু পরিবারের বাড়ি লুট ও পুড়িয়ে দেয়।
প্রাথমিকভাবে, মূলধারার বাংলাদেশী মিডিয়া ঘটনাগুলিকে অনেকটাই উপেক্ষা করেছিল। যাইহোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের হিন্দু ছাত্ররা নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পরে, মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করে।
4 আগস্ট, 2012: বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর স্থানীয় উগ্রবাদীদের দ্বারা একটি যৌথ হামলা চালানো হয়। এই পূর্বপরিকল্পিত হামলার ফলে ৫০টি হিন্দু পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়।
সেপ্টেম্বর 29, 2012: ইসলামিক চরমপন্থীরা বাংলাদেশের কক্সবাজারের রামুতে একটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকাকে লক্ষ্য করে। বৌদ্ধ যুবক উত্তম কুমার বড়ুয়ার একটি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, যেটিতে নাকি কুরানের অবমাননা দেখানো হয়েছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে ওই এলাকার বৌদ্ধ বিহার ও হিন্দু মন্দিরে হামলা চালায়।
সহিংসতা শীঘ্রই কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বৌদ্ধ ও হিন্দুদের স্থান ধ্বংস করা হয়।
 
2013: যুদ্ধাপরাধের রায়ের পর বাংলাদেশে হিন্দু-বিরোধী হিংসা
28 ফেব্রুয়ারি, 2013: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল 1971 সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। প্রতিশোধ হিসেবে, জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন, ইসলামী ছাত্র শিবির, সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ শুরু করে।
পরবর্তী সহিংসতার ফলে পুলিশ কর্মী সহ 100 জনেরও বেশি মৃত্যু ঘটে এবং ব্যাপক লুটপাট, সম্পত্তির ক্ষতি এবং হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পুড়িয়ে দেয়। সংখ্যালঘু নেতাদের রিপোর্ট অনুমান করে যে 2013 সালের হিন্দু বিরোধী সহিংসতার সময় 20টিরও বেশি জেলা জুড়ে 50টিরও বেশি হিন্দু মন্দির এবং 1,500টি হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল।
2014: 2014 সালে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর বয়কট আহ্বানকে অস্বীকার করে হিন্দুরা দশম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাংলাদেশে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়। নির্বাচনের পর, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়, বিভিন্ন জেলা জুড়ে তাদের লক্ষ্য করে। পরবর্তীকালে, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, লালমনিরহাট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও যশোর সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে হিন্দুদের বাড়িঘর লুট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই হিংসা শত শত বাঙালি হিন্দুকে গৃহহীন করে এবং এর ফলে অসংখ্য হিন্দু মন্দির ধ্বংস হয়। অস্থিরতার এই সময়টিতে ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, হিন্দু ধর্মীয় স্থান এবং বাড়িগুলি আক্রমণ দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
2016 নাসিরনগর এবং 2017 রংপুর হিংসা: বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণ অক্টোবর 2016: বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা, একটি কথিত ফেসবুক পোস্টের জন্য একটি মুসলিম জনতা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করে। একজন হিন্দু জেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামের অবমাননা করেছে এমন অভিযোগের কারণে অশান্তি শুরু হয়, যার ফলে 300 টিরও বেশি হিন্দু বাড়ি লুট হয় এবং কমপক্ষে 19টি মন্দির অপবিত্র হয়। হিংসায় আনুমানিক 100 জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্দির ভক্তও রয়েছে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসা নভেম্বর 2017 পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যখন রংপুর সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামে একই ধরনের ঘটনা ঘটে। 10 নভেম্বর, 2017-এ, একটি মুসলিম জনতা 30 টি হিন্দু বাড়ি লক্ষ্য করে, লুটপাট, ভাঙচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। টিটু রায়, মূলত ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বসবাসকারী, ফেসবুকে নবী মুহাম্মদকে নিয়ে অবমাননাকর কন্টেন্ট পোস্ট করেছেন বলে গুজবের কারণে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়, প্রতিবাদকারীরা টিটুর বাড়িও পুড়িয়ে দেয়। পরে একটি তদন্তে জানা যায় যে আপত্তিজনক পোস্টগুলি টিটু রায়ের নয়, একই নামে একটি ভিন্ন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়েছিল।
2019: বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সহিংসতা
অক্টোবর 23, 2019:বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামে একজন স্থানীয় হিন্দু যুবক ফেসবুকে ইসলাম সম্পর্কে একটি নিন্দামূলক মন্তব্য পোস্ট করেছেন এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়, , গুরুতর এক ভয়ঙ্কর হিংসাত্মক পরিবেশ সৃষ্টি হয় । এর ফলে পুলিশ ও স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যারা বৈদ্যের শাস্তি দাবি করে। হিংসার ফলে চারজন নিহত হয় এবং দশজন পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়। অশান্তির সময় হিন্দু সম্পত্তিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, 12টি বাড়ি এবং একটি মন্দির ভাংচুর করা হয়েছিল, একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল এবং একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী তদন্তে জানা যায় যে নিন্দামূলক পোস্টটি আসলে দুই মুসলমানের দ্বারা করা হয়েছিল, বৈদ্য নয়।
2020: বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের উপর হামলা বৃদ্ধি পায়।
2020 মে মাসে বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বর্বরতা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সময় মাত্র এক মাসে অন্তত 30টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন, বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সহিংসতার ফলে চারটি খুন, 12টি লুটপাটের ঘটনা, 435 একর হিন্দু জমির অবৈধ দখল এবং 43টি হিন্দু পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, 10টি পরিবারকে নির্বাসনে বাধ্য করা হয়েছে। ব্লাসফেমির মিথ্যা অভিযোগের ফলে একজন হিন্দু ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীতে তার বাড়িতে লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
11 সেপ্টেম্বর, 2020: বাংলাদেশের গাজীপুর শহরের কালী মন্দির অপবিত্র হয়েছিল যখন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভাংচুর করেছিল। হামলাকারীরা ভোররাতে মন্দিরে প্রবেশ করে এবং চারটি মূর্তিকে অপবিত্র করে তাদের মাথা মাটিতে ফেলে দেয়। মন্দিরের সভাপতি নরেশ রায় সন্দেহ করেন যে মন্দিরের জমি অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী প্রভাবশালী স্থানীয়দের দ্বারা এই হামলার পরিকল্পনা করা হতে পারে। এই ঘটনাটি ব্যাপকভাবে নিন্দা করে এবং এই অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা চলমান উত্তেজনা ও হুমকির কথা তুলে ধরে।
গত ৫ আগস্ট, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার অনুপস্থিতিতে, বাংলাদেশী সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয়, এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়।শুরু হয় বাংলাদেশী হিন্দুদের উপর আক্রমণ ।দুর্ভাগ্যবশত এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের হামেশাই ঘটে। তো এবারের হিন্দু বিরোধী বর্বরতার পালকে জুড়েছে নতুন বিষয়। হিন্দুরা নিজের যোগ্যতায় যেখানটাই কাজ করুক না কেন শিক্ষক অধ্যাপক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাদের সবাইকে জামাতের ছাত্র সংগঠন জোর করে পদত্যাগ পত্র লিখিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিচ্ছে। এই লেখা শেষ করা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য সহ ইতিমধ্যেই ৩০জনেরও বেশি উচ্চপদে কর্মরত হিন্দুকে জোর করে পদত্যাগ পত্র লিখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে বোধহয় এই প্রথম হিন্দুরা তাদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নেমেছে। হিন্দুদের সিংহ বিক্রম দেখে অনেকে অবাক হচ্ছে, আবার জিহাদীরা কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছে।হিন্দুরা স্লোগান দিচ্ছে 'কথায় কথায় বাংলা ছাড় ,দেশটা কি তোর বাপ দাদার?' 'আমার মাটি আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ'। বাংলাদেশের হিন্দুদের এই ধারাবাহিক আন্দোলন দেখে মনে হচ্ছে যে আর আবেদন নিবেদন নয় এবার অধিকার আদায়ের জন্য চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে পাঠানো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে যে নবযুগের সূচনা হয়েছে, তারই পতাকা বহনের কাণ্ডারি হিসেবে আপনাকে স্বাগত জানাই, অভিনন্দিত করি। ....... জনতার এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জন কে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রাপ্ত সাংগঠনিক বিবরণ এবং গণ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে অন্তত ৫২টি জেলায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক মহিলা নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান চাই।
খোলা চিঠিতে বলা হয়, এই পরিস্থিতি আমরা রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্র নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের বর্তমান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জানানোর চেষ্টা করেছি। তারাও তাদের বক্তব্য-ভাষণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি গত তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আর্তনাদ প্রলম্বিত হচ্ছে।
সবশেষে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সূচনালগ্নেই আপনার কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে আমাদের উদ্বেগ ও বেদনার জায়গাটি তুলে ধরছি এই প্রত্যাশায় যে, আপনি এবং আপনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, যাতে ছাত্র-জনতার বিজয় কলুষিত না হয়। ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই রক্তক্ষরণের অবসান ঘটে।'
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মতে, 5 আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় 52টি জেলায় 205টি হামলার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে।
৫আগষ্ট বাংলাদেশের মেহেরপুরের ইসকন মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিগ্রহ ভাঙচুর করা হয়েছে আগুন জ্বালানো হয়েছে। নোয়াখালী সিরাজগঞ্জ ময়মনসিংহ,যশোর, খুলনা, ফেনি গুরুচক্র মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশজুরে কম করে কুড়িটি মন্দিরে আক্রমণ করা হয়েছে ।
বাংলাদেশের হিন্দু পীঠস্থানগুলি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। রমনা কালী মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। এটি প্রায় এক হাজার বছরেরও পুরাতন বলে বিশ্বাস করা হয় কিন্তু ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল ।১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রমনা কালী মন্দির কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে এবং এক ঘন্টার মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করে। মন্দির চত্বরে আশ্রয় নেওয়া বেশ কিছু মুসলমানকেও হত্যা করা হয়।গুড়িয়ে দেওয়া হয় রমনা কালী মন্দির।
চন্দ্রধাম হল হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান। ভক্তদের বিশ্বাস এখানে মাতা সতীর ডান হাত পড়েছিল। এক হাজার কুড়ি ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই মন্দির হিন্দুদের (Anti Hindu Violence) পবিত্র আস্থাস্থল বলে পরিচিত। বহু পুণার্থী এখানে আসেন তাঁদের মনস্কামনা পূরণের জন্য।২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকেই মন্দিরের (Anti Hindu Violence) চত্বরে নামাজের আয়োজন করে মৌলবাদীরা এবং মন্দিরের পাশেই একটি মসজিদ বানানোর পরিকল্পনা শুরু করে।২০২৪ এর জানুয়ারীতে দুষ্কৃতীদের হামলায় চন্দ্রনাথ ধামের ১০ জন ভক্ত আহত হয়েছেন ।২০২২ সালের পর থেকেই চন্দ্রনাথ মন্দিরের আশপাশের এই দোকানগুলিতে গরুর মাংস রান্না করার অভিযোগ ওঠে এবং কিছু উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সদস্যরা পাহাড়ি এই মন্দিরে ঘনঘন যাতায়াত শুরু করে। বর্তমানে উগ্রপন্থী মুসলমানরা মন্দির চত্বরে 'আল্লাহু আকবর' এবং 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' ধ্বনি তুলছে এবং মন্দিরকে ঘিরে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছে।
বাংলাদেশের আরও যে মন্দিরগুলি আছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল মোঘল আমলে নির্মিত উলিপুরের ধামশ্রেণী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির এবং রাজশাহীর পুঁথিয়া মন্দির চত্বর। এছাড়াও আছে চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী মন্দির ।এছাড়াও সেখানের নারায়ণগঞ্জের বারোদীতে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী এবং বরিশালসহ নানা জায়গায় আছে শ্রীশ্রীহরি গুরুচাঁদ মতুয়া মন্দির।এই মন্দির গুলির নিরাপত্তা ও পবিত্রতাও প্রশ্নের মুখে।
বাংলাদেশে হিন্দুদের শ্রদ্ধাস্থল লক্ষ্য করে ধারাবাহিক আক্রমণের ইতিহাস।
বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর চলমান আক্রমণ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশে হিন্দুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির সাথে বিগত ২২ বছরের হামলার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে দেওয়া হল৷
2001: ভোলা হিংসা
ডিসেম্বর 2019: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সংসদীয় আলোচনা চলাকালীন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিন্দুদের চলমান নিপীড়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে ভোলার হিংসার ঘটনা তুলে ধরেন। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই 2001 সালে ভোলায় ধারাবাহিক নৃশংস হামলার কথা উল্লেখ করেন। নির্বাচনে জয়ের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা বাগেরহাট, বরিশাল, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চিতগাঁও, ফণী, গাজীপুর, যশোর, খুলনা, মুন্সীগঞ্জ, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের ওপর যৌথ হামলা চালায়। 2001 সালের অক্টোবরে, ভোলার লালমোহন অঞ্চল চরম হিংসার সাক্ষী হয়। হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়; কেটে ফেলা হয় বাগান, নষ্ট করা হয় ফসল। মুসলিম জনতা ২০০ জনেরও বেশি হিন্দু মহিলাকে আক্রমণ করে এবং ধর্ষণ করে।৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছর বয়সী মহিলা পর্যন্ত বাদ যায়নি আক্রমনের হাত থেকে। পরবর্তী জুডিশিয়াল কমিশনের তদন্তে জানা যায় যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ২৫ হাজারেরও বেশি নেতা ও স্থানীয় দলীয় কর্মী এসব হামলায় জড়িত ছিলেন। এই হিংসার ফলে অসংখ্য মৃত্যু ও আহত হয় এবং অনেক হিন্দুকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
18 নভেম্বর, 2003: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায়, একটি হিন্দু পরিবারের 11 সদস্যকে নির্মমভাবে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল । তেজেন্দ্র লাল শীলের নেতৃত্বে নিহতরা সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় বসবাস করত। হামলার আগে, আততায়ীরা শীলকে তার সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোর করার চেষ্টা করেছিল। তিনি রাজি না হলে হামলাকারীরা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মোক্তার আহমদের নির্দেশে মাহবুব রশিদ বাড়ির দরজা-জানালা সিল করে পরিবারকে আটকে রাখে। রুবেল, আরেক হামলাকারী, তারপর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে ছয় শিশুসহ ১১ জন মারা যায়।
2012: হাটহাজারী এবং ফতেহপুরে হিন্দুদের দোকান ও বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর হামলা।
2012 সালের ফেব্রুয়ারী এবং নভেম্বর এর মধ্যে এবং 2013 সালের শুরুর দিকে , হাটহাজারী, বাশখালী, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, কক্সবাজারের রামু, সাথনা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়।
9-10 ফেব্রুয়ারী, 2012 তারিখে হাটহাজারীতে হিংসা শুরু হয়, যেখানে জামায়াত-ই-ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্যরা স্থানীয় মুসলমানদের হিন্দু সম্পত্তিতে হামলা চালাতে উস্কানি দিয়েছিল। এই পরিকল্পিত সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণের ফলে আটটি মন্দির, বারোটি দোকান এবং অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হয়।
এই ঘটনার পর প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবুও হিন্দু নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার অধরা রয়ে গেছে, যারা হামলার পরও এখনো ভুগছে।
হাটহাজারীতে 2012 সালের হিংসা: বাংলাদেশের একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াত-ই-ইসলামীর পরিকল্পিত হামলার সূচনা করে। হাটহাজারীর ঘটনার পর, ২০১২ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে সাতক্ষীরার ফতেহপুর ও চাকদহে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই হামলার সময়, তাদের হিন্দু প্রতিবেশীদের সমর্থনকারী মুসলমানদের কয়েকটি হিন্দু বাড়িসহ বেশ কিছু হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়। অন্তত 12টি বাড়ি ছাই হয়ে গেছে, এবং দুটি গ্রাম দুই দিনের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভাংচুর করা হয়েছে।
31 মার্চ, 2012: দৈনিক দৃষ্টিপাত, জামাতপন্থী একটি স্থানীয় সংবাদপত্র মিথ্যা দাবি করে যে একটি স্কুলের নাটকে নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। কাগজটি ব্যাপকভাবে অনুলিপি বিতরণ করেছে, হিন্দু সম্পত্তি আক্রমণ ও লুট করতে ইসলামপন্থীদের প্ররোচিত করেছে। হিংসার তীব্রতা সত্ত্বেও, পুলিশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি উপেক্ষা করে, যার ফলে প্রায় 10 টি হিন্দু পরিবারের বাড়ি লুট ও পুড়িয়ে দেয়।
প্রাথমিকভাবে, মূলধারার বাংলাদেশী মিডিয়া ঘটনাগুলিকে অনেকটাই উপেক্ষা করেছিল। যাইহোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের হিন্দু ছাত্ররা নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পরে, মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করে।
4 আগস্ট, 2012: বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর স্থানীয় উগ্রবাদীদের দ্বারা একটি যৌথ হামলা চালানো হয়। এই পূর্বপরিকল্পিত হামলার ফলে ৫০টি হিন্দু পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়।
সেপ্টেম্বর 29, 2012: ইসলামিক চরমপন্থীরা বাংলাদেশের কক্সবাজারের রামুতে একটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকাকে লক্ষ্য করে। বৌদ্ধ যুবক উত্তম কুমার বড়ুয়ার একটি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, যেটিতে নাকি কুরানের অবমাননা দেখানো হয়েছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে ওই এলাকার বৌদ্ধ বিহার ও হিন্দু মন্দিরে হামলা চালায়।
সহিংসতা শীঘ্রই কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বৌদ্ধ ও হিন্দুদের স্থান ধ্বংস করা হয়।
2013: যুদ্ধাপরাধের রায়ের পর বাংলাদেশে হিন্দু-বিরোধী হিংসা
28 ফেব্রুয়ারি, 2013: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল 1971 সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। প্রতিশোধ হিসেবে, জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন, ইসলামী ছাত্র শিবির, সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ শুরু করে।
পরবর্তী সহিংসতার ফলে পুলিশ কর্মী সহ 100 জনেরও বেশি মৃত্যু ঘটে এবং ব্যাপক লুটপাট, সম্পত্তির ক্ষতি এবং হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পুড়িয়ে দেয়। সংখ্যালঘু নেতাদের রিপোর্ট অনুমান করে যে 2013 সালের হিন্দু বিরোধী সহিংসতার সময় 20টিরও বেশি জেলা জুড়ে 50টিরও বেশি হিন্দু মন্দির এবং 1,500টি হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল।
2014: 2014 সালে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর বয়কট আহ্বানকে অস্বীকার করে হিন্দুরা দশম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাংলাদেশে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়। নির্বাচনের পর, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়, বিভিন্ন জেলা জুড়ে তাদের লক্ষ্য করে। পরবর্তীকালে, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, লালমনিরহাট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও যশোর সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে হিন্দুদের বাড়িঘর লুট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই হিংসা শত শত বাঙালি হিন্দুকে গৃহহীন করে এবং এর ফলে অসংখ্য হিন্দু মন্দির ধ্বংস হয়। অস্থিরতার এই সময়টিতে ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, হিন্দু ধর্মীয় স্থান এবং বাড়িগুলি আক্রমণ দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
2016 নাসিরনগর এবং 2017 রংপুর হিংসা: বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণ অক্টোবর 2016: বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা, একটি কথিত ফেসবুক পোস্টের জন্য একটি মুসলিম জনতা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করে। একজন হিন্দু জেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামের অবমাননা করেছে এমন অভিযোগের কারণে অশান্তি শুরু হয়, যার ফলে 300 টিরও বেশি হিন্দু বাড়ি লুট হয় এবং কমপক্ষে 19টি মন্দির অপবিত্র হয়। হিংসায় আনুমানিক 100 জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্দির ভক্তও রয়েছে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসা নভেম্বর 2017 পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যখন রংপুর সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামে একই ধরনের ঘটনা ঘটে। 10 নভেম্বর, 2017-এ, একটি মুসলিম জনতা 30 টি হিন্দু বাড়ি লক্ষ্য করে, লুটপাট, ভাঙচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। টিটু রায়, মূলত ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বসবাসকারী, ফেসবুকে নবী মুহাম্মদকে নিয়ে অবমাননাকর কন্টেন্ট পোস্ট করেছেন বলে গুজবের কারণে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়, প্রতিবাদকারীরা টিটুর বাড়িও পুড়িয়ে দেয়। পরে একটি তদন্তে জানা যায় যে আপত্তিজনক পোস্টগুলি টিটু রায়ের নয়, একই নামে একটি ভিন্ন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়েছিল।
2019: বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সহিংসতা
অক্টোবর 23, 2019:বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামে একজন স্থানীয় হিন্দু যুবক ফেসবুকে ইসলাম সম্পর্কে একটি নিন্দামূলক মন্তব্য পোস্ট করেছেন এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়, , গুরুতর এক ভয়ঙ্কর হিংসাত্মক পরিবেশ সৃষ্টি হয় । এর ফলে পুলিশ ও স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যারা বৈদ্যের শাস্তি দাবি করে। হিংসার ফলে চারজন নিহত হয় এবং দশজন পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়। অশান্তির সময় হিন্দু সম্পত্তিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, 12টি বাড়ি এবং একটি মন্দির ভাংচুর করা হয়েছিল, একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল এবং একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী তদন্তে জানা যায় যে নিন্দামূলক পোস্টটি আসলে দুই মুসলমানের দ্বারা করা হয়েছিল, বৈদ্য নয়।
2020: বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের উপর হামলা বৃদ্ধি পায়।
2020 মে মাসে বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বর্বরতা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সময় মাত্র এক মাসে অন্তত 30টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন, বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সহিংসতার ফলে চারটি খুন, 12টি লুটপাটের ঘটনা, 435 একর হিন্দু জমির অবৈধ দখল এবং 43টি হিন্দু পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, 10টি পরিবারকে নির্বাসনে বাধ্য করা হয়েছে। ব্লাসফেমির মিথ্যা অভিযোগের ফলে একজন হিন্দু ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীতে তার বাড়িতে লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
11 সেপ্টেম্বর, 2020: বাংলাদেশের গাজীপুর শহরের কালী মন্দির অপবিত্র হয়েছিল যখন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভাংচুর করেছিল। হামলাকারীরা ভোররাতে মন্দিরে প্রবেশ করে এবং চারটি মূর্তিকে অপবিত্র করে তাদের মাথা মাটিতে ফেলে দেয়। মন্দিরের সভাপতি নরেশ রায় সন্দেহ করেন যে মন্দিরের জমি অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী প্রভাবশালী স্থানীয়দের দ্বারা এই হামলার পরিকল্পনা করা হতে পারে। এই ঘটনাটি ব্যাপকভাবে নিন্দা করে এবং এই অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা চলমান উত্তেজনা ও হুমকির কথা তুলে ধরে।
18 মার্চ, 2021: ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার উত্তরগাঁও গ্রামে দুর্বৃত্তরা স্থানীয় একটি মন্দিরে  মা কালীর মূর্তি আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্থ করে। হামলাকারীরা মন্দির ভাংচুর করে এবং কালীমূর্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হিন্দু মন্দিরগুলোকে টার্গেট করেছে জেহাদীরা। হেফাজতে ইসলামীর সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একটি ট্রেনে হামলা চালায়, ১০ জন আহত হয় এবং ট্রেনের ইঞ্জিন রুম ও বগি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এপ্রিল 2021: সাতক্ষীরা জেলার ফুটালা গ্রামে, একাধিক হিন্দু বাড়ি এবং একটি স্থানীয় মন্দিরে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা বাড়িঘর লুট করে, তিনটি মন্দিরের মূর্তি অপবিত্র করে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত দশ জন  সদস্যকে আহত করে। 
অক্টোবর 2021: দুর্গা পূজা উৎসবের সময় হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বাংলাদেশে সহিংসতার একটি ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লায় একটি মঞ্চস্থ ঘটনার মধ্য দিয়ে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, যেখানে একটি কুরআন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি দুর্গা মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছিল, যা হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিল। এই মিথ্যা অভিযোগ দেশব্যাপী ধ্বংসের সূচনা করে, যার ফলে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী সহ 30টি জেলা জুড়ে 315টিরও বেশি মন্দির এবং 1,500টি বাড়ি ভাঙচুর হয়। সংগঠিত হামলার ফলে কমপক্ষে 10 জন হিন্দু নিহত হয় এবং অনেক নারী ধর্ষিত হয়। নোয়াখালীতে ইসকন মন্দিরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এক ভক্ত নিহত হয়েছে। এই হিংসার মধ্যে রয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং রংপুরে ২০টিরও বেশি মন্দিরের অপবিত্র করা। এই হামলাগুলি বাংলাদেশে হিন্দুদের চলমান বিপদের চিত্র তুলে ধরেছে, বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসবের সময়।
2022 সালে, বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসা অব্যাহত রয়েছে:
17 মার্চ, 2022: ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটে একটি ইসকন মন্দিরে 62 বছর বয়সী হাজী শফিউল্লাহর নির্দেশে 150-200 জন লোক আক্রমণ করেছিল। হামলাকারীরা মূর্তি অপবিত্র করে, মন্দির ভাংচুর করে এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে, ভক্ত সুমন্ত্র চন্দ্র শ্রাবণ, নিহার হালদার এবং রাজীব ভদ্রকে আহত করে।
28 এপ্রিল, 2022: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সিলেটে একটি ইফতার পার্টিতে হিন্দু সদস্যদের গরুর মাংস পরিবেশন করলে বিতর্ক শুরু হয়। হিন্দু আমন্ত্রিতদের গরুর মাংস পরিবেশন করা হয়েছিল।
15 জুলাই, 2022: নড়াইলের সাহাপাড়া, লোহাগড়ায় মুসলিম জনতা একটি মন্দির, মুদি দোকান এবং একাধিক বাড়ি ভাংচুর করে। মুসলিম অনুভূতির প্রতি আপত্তিকর বলে একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য এই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্তের পরিবারের মুদির দোকানে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা।
25 জুলাই, 2022: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে অনুরাধা সেন নামে এক হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। সন্দেহভাজন বারী মেহেদী এর আগে তার পরিবারকে হুমকি দিয়েছিল।
29 জুলাই, 2022: দিনাজপুরের ভেড়বেদী ইউনিয়নের হিন্দু মহিলা অপো রানী রায়কে গণধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। একটি ধানের ক্ষেতে তার বিচ্ছিন্ন দেহ আবিষ্কৃত হয়, এবং একটি 10 বছর বয়সী মেয়ে কাছাকাছি অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। হামলাকারীদের শনাক্তকরণ এড়াতে নিহতকে হত্যা করা হয়েছে।
8 আগস্ট, 2022: কাইনমারী মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের অভিযোগে তিন মাদ্রাসা ছাত্রকে আটক করে মোংলা পুলিশ। মন্দিরের মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধের পর এই হামলা হয়, যার ফলে মা কালী এবং ভগবান গণেশ মূর্তি ধ্বংস হয়।
সেপ্টেম্বর 2022: দুর্গাপূজার আগে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ভাঙচুরকারীরা প্রতিমা ভাঙচুর করে। মন্দিরে সিসিটিভির অভাব ছিল, যা ঘটনার তদন্তকে জটিল করে তুলেছে।
7 অক্টোবর, 2022: ঝিনাইদহের দাউটিয়া গ্রামে একটি কালী মন্দির ধ্বংস করা হয়। মন্দির থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কালী মূর্তিটি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। দুর্গাপূজা উৎসবের পরপরই এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনাগুলি বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটি উদ্বেগজনক প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে, যা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে।
15 জানুয়ারী, 2023: বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার উত্তর কান্দি গ্রামে, একটি যুবক কর্তৃক ব্লাসফেমির অভিযোগে মুসলিম মৌলবাদী জনতা একটি হিন্দু বাড়িতে ভাংচুর করে। অভিযুক্ত, অনেক বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন, বাংলাদেশে উপস্থিত ছিলেন না, তবে তার পরিবার তাদের সম্পত্তি ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে, এই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
জানুয়ারী 26, 2023: নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার নারাইচ গ্রামে 9-10 জনের একটি দল সরস্বতী পূজায় হামলা চালায়। ছবি না তুলতে বলায় সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর করে তারা। হামলাকারীরা হাতনাইয়া গ্রামের স্থানীয় কিশোর হিসেবে চিহ্নিত, পূজা অনুষ্ঠান ব্যাহত করে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
ফেব্রুয়ারী 5, 2023: উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশে রাতারাতি অন্তত 14টি হিন্দু মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। সিন্দুরপিন্ডি, কলেজপাড়া এবং সাহবাজপুর নাথপাড়ার মন্দিরগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মূর্তিগুলি ভেঙে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে, এই হামলার পিছনে সত্য উদঘাটনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। 13 অক্টোবর, 2023: বাংলাদেশের কুমিল্লায়, দুর্গাপূজা সম্পর্কে এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে হিন্দুদের একটি প্রতিবাদ মিছিলে হামলা হয়। বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের দ্বারা আয়োজিত বিক্ষোভটি নজরুল এভিনিউতে সহিংসতার সম্মুখীন হয়, যার ফলে আদিত্য দাস, সুনীল দাস এবং তন্ময় দাস সহ অংশগ্রহণকারীরা গুরুতর আহত হয়।
6 নভেম্বর, 2023: শৈলকুপা উপজেলার বিজুলিয়া গ্রামে একটি হিন্দু মন্দির অপবিত্র করা হয়। ঘটনাটি 2022 সালের অক্টোবর থেকে অনুরূপ একটি ঘটনা অনুসরণ করে, যেখানে একটি কালী মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল। স্থানীয় হিন্দুরা আসন্ন নির্বাচনের মধ্যে শান্তির আশা প্রকাশ করেছেন, আরও ঘটনার আশঙ্কা করছেন।
15 ডিসেম্বর, 2023: বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় তিনটি হিন্দু মন্দিরের দশটি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলির মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় হরি মন্দির, শ্রী শ্রী বিষ্ণু পাগল মন্দির এবং শ্রী শ্রী দামোদর আখড়া।
এখানে বিগত ২২ বছরের ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার মধ্যে কয়েকটি মাত্র তুলে ধরা হলো । কিন্তু হিন্দু মন্দির ভাঙ্গার এই পরম্পরা বিগত ১০০ বছর ধরে চলছে ধারাবাহিকভাবে। শুধু বাংলাদেশ কেন ভারতবর্ষের যেখানটায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু সেখানেও একই রকম ভাবে চলে হিন্দুদের শ্রদ্ধার স্থল নিয়ে সীমাহীন বর্বরতা। বাংলাদেশে এটা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হিন্দুদের জন্য একটা পৃথক হোম ল্যান্ড তৈরি করা। যেখানে প্রশাসন থাকবে হিন্দুদের হাতে , হিন্দুদের ভাগ্য হিন্দুরাই নির্ধারণ করবে। মুসলিম প্রধান দেশে এই সেকুলারিজম সোনার পাথরবাটির মত একটি অসম্ভব ব্যাপার।#
অক্টোবর 2021: দুর্গা পূজা উৎসবের সময় হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বাংলাদেশে সহিংসতার একটি ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লায় একটি মঞ্চস্থ ঘটনার মধ্য দিয়ে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, যেখানে একটি কুরআন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি দুর্গা মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছিল, যা হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিল। এই মিথ্যা অভিযোগ দেশব্যাপী ধ্বংসের সূচনা করে, যার ফলে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী সহ 30টি জেলা জুড়ে 315টিরও বেশি মন্দির এবং 1,500টি বাড়ি ভাঙচুর হয়। সংগঠিত হামলার ফলে কমপক্ষে 10 জন হিন্দু নিহত হয় এবং অনেক নারী ধর্ষিত হয়। নোয়াখালীতে ইসকন মন্দিরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এক ভক্ত নিহত হয়েছে। এই হিংসার মধ্যে রয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং রংপুরে ২০টিরও বেশি মন্দিরের অপবিত্র করা। এই হামলাগুলি বাংলাদেশে হিন্দুদের চলমান বিপদের চিত্র তুলে ধরেছে, বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসবের সময়।
2022 সালে, বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসা অব্যাহত রয়েছে:
17 মার্চ, 2022: ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটে একটি ইসকন মন্দিরে 62 বছর বয়সী হাজী শফিউল্লাহর নির্দেশে 150-200 জন লোক আক্রমণ করেছিল। হামলাকারীরা মূর্তি অপবিত্র করে, মন্দির ভাংচুর করে এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে, ভক্ত সুমন্ত্র চন্দ্র শ্রাবণ, নিহার হালদার এবং রাজীব ভদ্রকে আহত করে।
28 এপ্রিল, 2022: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সিলেটে একটি ইফতার পার্টিতে হিন্দু সদস্যদের গরুর মাংস পরিবেশন করলে বিতর্ক শুরু হয়। হিন্দু আমন্ত্রিতদের গরুর মাংস পরিবেশন করা হয়েছিল।
15 জুলাই, 2022: নড়াইলের সাহাপাড়া, লোহাগড়ায় মুসলিম জনতা একটি মন্দির, মুদি দোকান এবং একাধিক বাড়ি ভাংচুর করে। মুসলিম অনুভূতির প্রতি আপত্তিকর বলে একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য এই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্তের পরিবারের মুদির দোকানে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা।
25 জুলাই, 2022: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে অনুরাধা সেন নামে এক হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। সন্দেহভাজন বারী মেহেদী এর আগে তার পরিবারকে হুমকি দিয়েছিল।
29 জুলাই, 2022: দিনাজপুরের ভেড়বেদী ইউনিয়নের হিন্দু মহিলা অপো রানী রায়কে গণধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। একটি ধানের ক্ষেতে তার বিচ্ছিন্ন দেহ আবিষ্কৃত হয়, এবং একটি 10 বছর বয়সী মেয়ে কাছাকাছি অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। হামলাকারীদের শনাক্তকরণ এড়াতে নিহতকে হত্যা করা হয়েছে।
8 আগস্ট, 2022: কাইনমারী মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের অভিযোগে তিন মাদ্রাসা ছাত্রকে আটক করে মোংলা পুলিশ। মন্দিরের মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধের পর এই হামলা হয়, যার ফলে মা কালী এবং ভগবান গণেশ মূর্তি ধ্বংস হয়।
সেপ্টেম্বর 2022: দুর্গাপূজার আগে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ভাঙচুরকারীরা প্রতিমা ভাঙচুর করে। মন্দিরে সিসিটিভির অভাব ছিল, যা ঘটনার তদন্তকে জটিল করে তুলেছে।
7 অক্টোবর, 2022: ঝিনাইদহের দাউটিয়া গ্রামে একটি কালী মন্দির ধ্বংস করা হয়। মন্দির থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কালী মূর্তিটি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। দুর্গাপূজা উৎসবের পরপরই এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনাগুলি বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটি উদ্বেগজনক প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে, যা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে।
15 জানুয়ারী, 2023: বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার উত্তর কান্দি গ্রামে, একটি যুবক কর্তৃক ব্লাসফেমির অভিযোগে মুসলিম মৌলবাদী জনতা একটি হিন্দু বাড়িতে ভাংচুর করে। অভিযুক্ত, অনেক বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন, বাংলাদেশে উপস্থিত ছিলেন না, তবে তার পরিবার তাদের সম্পত্তি ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে, এই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
জানুয়ারী 26, 2023: নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার নারাইচ গ্রামে 9-10 জনের একটি দল সরস্বতী পূজায় হামলা চালায়। ছবি না তুলতে বলায় সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর করে তারা। হামলাকারীরা হাতনাইয়া গ্রামের স্থানীয় কিশোর হিসেবে চিহ্নিত, পূজা অনুষ্ঠান ব্যাহত করে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
ফেব্রুয়ারী 5, 2023: উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশে রাতারাতি অন্তত 14টি হিন্দু মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। সিন্দুরপিন্ডি, কলেজপাড়া এবং সাহবাজপুর নাথপাড়ার মন্দিরগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মূর্তিগুলি ভেঙে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে, এই হামলার পিছনে সত্য উদঘাটনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। 13 অক্টোবর, 2023: বাংলাদেশের কুমিল্লায়, দুর্গাপূজা সম্পর্কে এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে হিন্দুদের একটি প্রতিবাদ মিছিলে হামলা হয়। বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের দ্বারা আয়োজিত বিক্ষোভটি নজরুল এভিনিউতে সহিংসতার সম্মুখীন হয়, যার ফলে আদিত্য দাস, সুনীল দাস এবং তন্ময় দাস সহ অংশগ্রহণকারীরা গুরুতর আহত হয়।
6 নভেম্বর, 2023: শৈলকুপা উপজেলার বিজুলিয়া গ্রামে একটি হিন্দু মন্দির অপবিত্র করা হয়। ঘটনাটি 2022 সালের অক্টোবর থেকে অনুরূপ একটি ঘটনা অনুসরণ করে, যেখানে একটি কালী মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল। স্থানীয় হিন্দুরা আসন্ন নির্বাচনের মধ্যে শান্তির আশা প্রকাশ করেছেন, আরও ঘটনার আশঙ্কা করছেন।
15 ডিসেম্বর, 2023: বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় তিনটি হিন্দু মন্দিরের দশটি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলির মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় হরি মন্দির, শ্রী শ্রী বিষ্ণু পাগল মন্দির এবং শ্রী শ্রী দামোদর আখড়া।
এখানে বিগত ২২ বছরের ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার মধ্যে কয়েকটি মাত্র তুলে ধরা হলো । কিন্তু হিন্দু মন্দির ভাঙ্গার এই পরম্পরা বিগত ১০০ বছর ধরে চলছে ধারাবাহিকভাবে। শুধু বাংলাদেশ কেন ভারতবর্ষের যেখানটায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু সেখানেও একই রকম ভাবে চলে হিন্দুদের শ্রদ্ধার স্থল নিয়ে সীমাহীন বর্বরতা। বাংলাদেশে এটা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হিন্দুদের জন্য একটা পৃথক হোম ল্যান্ড তৈরি করা। যেখানে প্রশাসন থাকবে হিন্দুদের হাতে , হিন্দুদের ভাগ্য হিন্দুরাই নির্ধারণ করবে। মুসলিম প্রধান দেশে এই সেকুলারিজম সোনার পাথরবাটির মত একটি অসম্ভব ব্যাপার।#





কয়েক বছর পরে এই একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা..!!
উত্তরমুছুন