সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলন কি মমতার সেফটি ভাল্ব

                               


   

সাধন কুমার পাল ::: জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন কি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জমে ওঠা ক্ষোভ হালকা করতে সেফটি ভাল্ব হিসাবে কাজ করছে? হ্যাঁ এমন কথা কিন্তু চিকিৎসক মহলের  মধ্য থেকেই উঠছে। অনেকেই প্রকাশ্যে আসছেন না । কিন্তু অনেকেই  নিজের  ঘনিষ্ঠ মহলে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সংখ্যায় কম হলেও  চিকিৎসকরা কিন্তু  ক্রমশই প্রকাশ্যে এই আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। যেমন উত্তরবঙ্গের দুইজন চিকিৎসক ডা: বিশ্ব প্রতিম রুদ্র ( ক্লিক করুন ডাঃ বিশ্বপ্রতীম রুদ্রের পোস্ট)ও বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক ডা: সন্দীপ সরকার তাদের ফেসবুক পেজে (ক্লিক করুন ডাঃ সরকারের পোষ্ট)এই আন্দোলন সম্পর্কে যে সমস্ত প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তা থেকে এটা স্পষ্ট যে  অভয়ার বিচারের দাবি ও  স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর বেশ কিছু বিষয় নিয়ে  শুরু হলেও পরবর্তীকালে অত্যন্ত সূচতুরভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে বহাল তবিয়তে টিকিয়ে রেখে  বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই  এই আন্দোলন ব্যবহৃত হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধরনা চলাকালীন জুনিয়ার ডাক্তারদের মঞ্চ থেকে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল 'পুলিশ তুমি দুষ্ট লোক তোমার মাথায় উকুন হোক', 'সাদা চুল আর কালো কোট কপিল সিবাল দুষ্ট লোক'। এই স্লোগান  শুনে তখন অনেকেই বলছিলেন আরে এগুলো তো সেই যাদবপুরের গাঁজাখোর ভাংখোরদের স্লোগান, সেগুলো জুনিয়ার ডাক্তারদের ধরনায় কেন? অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে এগারো দিনের  ধারনায় জুনিয়র ডাক্তারদের ফান্ডে  কয়েক কোটি টাকা জমা হয়েছে। খাবার যে কত এসেছিল তার তো হিসেব নেই। এইসব অভিযোগ ডাক্তারদের মধ্য থেকেই শোনা যাচ্ছে। যার অর্থ এই ধরনাকে ঘিরে  আরেকটা নতুন দুর্নীতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সন্দীপ ঘোষের ছায়া সঙ্গী জুনিয়র ডাক্তাররা যারা হোস্টেলে যৌনতার আসর বসানো, নেশার আসর বসানো, ভেজাল ঔষধের কারবার ,নকল সাপ্লাই করে পাশ করানো থেকে শুরু করে সমস্ত রকম দুর্নীতি ও অভয়ার মৃত্যুর মতো চরম দুঃখজনক  ঘটনার জন্য কোন না কোনরকম  ভাবে দায়ী , তাদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরত বিপ্লবী জুনিয়ার ডাক্তাররা কেন সোচ্চার হলেন না সেই প্রশ্নও কিন্তু ডাক্তারবাবুদের মধ্য থেকেই উঠছে।

গত ২৭শে অগাস্ট পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ব্যানারে সফল নবান্ন অভিযানের পর পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবি যে সময়ে জোরালো হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তেই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন আরজিকর হাসপাতালের বাউন্ডারি ওয়াল থেকে বেরিয়ে রাজপথে আত্মপ্রকাশ করল। ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হলো প্রতীকি মেরুদন্ড নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের  কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন। সে সময় পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল পদত্যাগ না করলেও জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযান তুলে নেওয়া হল। দাবি পূরণ না হতেই কেন লালবাজারের সামনে থেকে ধরনা তোলা হল এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমরা পাইনি। 

 পুলিশ কমিশনার কোন  সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নন যে পুলিশ মন্ত্রীর সবুজ সংকেত ছাড়া আর জি করের  মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন।পুলিশের বিরুদ্ধে অভয়ার  ধর্ষণ খুনের  তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠলেও রহস্য জনক ভাবে  ডাক্তারবাবুদের আন্দোলনে  কিন্তু পুলিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি বাক্যও শোনা গেল না ।  তাছাড়া লালবাজার অভিযানের সময় পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল সবিনয়ে ডাক্তারবাবুদের যা  বলেছিলেন তার সারমর্ম এটাই যে ব্যক্তিগতভাবে উনার পদত্যাগে কোনো আপত্তি নেই, তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই  তিনি পদত্যাগ করবেন।   এর থেকে স্পষ্ট পুলিশ কমিশনার একজন আজ্ঞাবাহক মাত্র। আজ্ঞাকারী পুলিশ মন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।  

শুধু পুলিশ কমিশনার নন টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মন্ডলকে কেন বিভিন্ন নার্সিংহোম ভর্তি নিলো না সেই নিয়েও স্বয়ং রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এর থেকে স্পষ্ট অভিজিৎ মন্ডলের প্রতিটি ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সাথে পুলিশ মন্ত্রী স্বয়ং সরাসরি যুক্ত আছেন।ডাক্তার বাবুদের লালবাজার অভিযান সমাপ্ত হলো কিন্তু সমস্ত অভিযোগের তীর যার দিকে সেই পুলিশমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি বাক্যও উচ্চারিত হলো না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমরা এখনো পাইনি। 

স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধরনা দেওয়ার কারণ হিসাবে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছিলেন যে স্বাস্থ্য ভবন সাফাই করার উদ্দেশ্যেই তাদের এই আন্দোলন। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মেধাবী ডাক্তারবাবুদের কাছে আমার প্রশ্ন স্বাস্থ্য ভবন কি নির্বাচন কমিশন বা সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের মতো স্বশাসিত সংস্থা? ওখানে বসে থাকা আমলারা অপসারিত হলেই স্বাস্থ্য ভবন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে? স্বাস্থ্য ভবনের মাথায় যিনি বসে আছেন সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া যেখানে একটি ধূলিকণাও নড়ে না, সেখানে উনার অজ্ঞাতে এত নোংরা জমলো কি করে ? এই প্রশ্ন কি আপনারা কখনো করেছেন? অন্তত মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা সেরকম দেখিনি। মেধাবী ডাক্তার বাবুরা আমাদের এই বিষয়টি একটু বুঝিয়ে দেবেন যে   যার নেতৃত্বে এত নোংরা ছড়িয়েছে তাকে বহাল তবিয়তে রেখে দিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের মতো দু চারটি ডালপালা ছেটে কিভাবে স্বাস্থ্য ভবন পরিষ্কার হবে? আমাদের মতো আমজনতার বারেবারে মনে হয়েছে যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সময়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এত অনাচার ঢুকলো তার পদত্যাগ কেন আপনারা দাবি করছেন না? 

   অভীক দে, বিরুপাক্ষ বিশ্বাস, সন্দীপ ঘোষদের মাথায় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হাত না থাকলে ডাক্তারবেশি  এই দুর্বৃত্তরা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটিকে নরকে পরিণত করতে পারতো না। আদালতের সৌজন্যে সিবিআই তদন্ত শুরু না হলে আপনাদের ঐ সুরেলা স্লোগানের দৌলতে   ঐ দুর্বৃত্তরা সাসপেন্ড হতো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাছাড়া ডাক্তারবেশি এরকম দুর্বৃত্তে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভরে গেছে। আমরা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা করাতে গেলে তা হাড়ে হাড়ে  টের পাই।  

আমার এক সহকর্মী শিক্ষক একদিন স্কুলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। শিলিগুড়ির এক স্বনামধন্য নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলো। তিন দিন সেই নার্সিংহোমে ভর্তি থাকার পর তাকে বলে দেওয়া হলো তার বুকে পেসমেকার বসাতে হবে। আতঙ্কিত বিধ্বস্ত সেই মাস্টারমশাই প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটলেন ব্যাঙ্গালোরে। ডক্টর দেবী শেঠির হাসপাতালে বলে দেওয়া হলো উনার হার্টের কোন সমস্যাই নেই একেবারেই ঠিকঠাক আছেন। এটা শুধু একজন সহকর্মী শিক্ষকের গল্প নয় এরকম প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যাবে চিকিৎসার নামে মানুষ মারার ব্যবসা চলছে এই পশ্চিমবঙ্গে। 

   আমার পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজনের কিছু সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত পাঁচ জন ডাক্তার দেখিয়েছি। প্রত্যেকেই কম করে ১৪ থেকে ১৫ টি ওষুধ লিখেছেন শেষে বিরক্ত হয়ে দক্ষিণ ভারতে এক হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর একই সমস্যার জন্য একটি ঔষধও লিখলেন না। বলা হলো যে ওষুধ খেয়ে এই রোগ ভালো হবে না, লাইফ স্টাইল মোডিফিকেশন করতে হবে। এরকম প্রচুর ঘটনা আছে যেখান থেকে প্রমাণ করা যাবে  ঔষধ কোম্পানি , প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি  ,ডাক্তারবাবুদের নিয়ে   সৃষ্ট অসাধু  চক্র  আমজনতাকে নিংড়ে নিয়ে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে।

অভয়ার হত্যার ঘটনার পরের দিন ১০ই অগাস্ট স্ব্যাস্থ্য ভবনের  অনুমোদন পেয়ে আরজিকরের সেসময়ের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ সেই কুখ্যাত সেমিনার হলের পাশে  কিছু ভাঙচুরের ও  নির্মাণ কাজের  আদেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে যে প্রমাণ লোপাট এর উদ্দেশ্যেই ঘটনাস্থলে এরকম ভাঙচুর করা হচ্ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই ভাঙচুরের ঘটনাকে সমর্থন করে বক্তব্য রেখে বলেছেন যে ডাক্তারদের থাকার জন্যই নাকি এরকম ভাঙা এবং নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এই ভাঙচুর যদি তথ্য প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে তাহলে স্পষ্টভাবেই বলা যায় এর পিছনেও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হাত  রয়েছে। মেধাবী ডাক্তারবাবুদের কাছে প্রশ্ন এত কিছুর পরেও কেন আপনারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করলেন না?

 আপনারা থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন? আমরা সাধারণ মানুষ তো  চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিদিনই অভীক দে ,বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ,সন্দীপ  ঘোষদের মতো ডাক্তার রূপী দুর্বৃত্তদের  থ্রেটের মধ্যেই বসবাস করছি। আপনাদের বিপ্লবী আন্দোলন থেকে  ডাক্তারবেশী এই  দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে একটি কথাও শোনা গেল না কেন?এই প্রশ্ন আমার একার নয় এই প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি মানুষের। এজন্য বিপ্লব করতে হয় করুন কিন্তু এই রাজ্যকে আরো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবেন না। যদি সম্ভব হয় চেয়ার থেকে টেনে নামান ঐ অন্ধকার কায়েম করা হীরক রানীকে। তাতে আপনারাও বাঁচবেন, আমজনতাও বাঁচবে।  

জুনিয়র ডাক্তারের আন্দোলনে যেভাবে সরাসরি শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে তাতে এই আন্দোলনের  অরাজনৈতিক তকমা নিয়ে প্রশ্ন অনেক আগেই উঠে গিয়েছে।  বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল ধরনা মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে ঘিরে ধরে যে ভাবে গোব্যাক শ্লোগান দিয়ে  ডাক্তাররা কি  বার্তা দিতে চাইলেন ?  এর আগে জাস্টিস অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে ঘিরে ধরে ওরা একই রকম ভাবে স্লোগান দিয়েছে। এক্ষেত্রে গো ব্যাক স্লোগান দিয়ে  বিপ্লবীয়ানা না দেখিয়ে  আন্দোলনে হস্তক্ষেপ না করার আবেদন জানানো যেতো এবং সেটাই বরং ডাক্তার বাবুদের পেশাগত গাম্ভীর্য ও ওজনের সাথে মানানসই হতো। শুধু তাই নয় এই আন্দোলনের মূল মুখ যারা তাদেরকে সরাসরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেও আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে। অথচ মমতা ব্যানার্জি যেদিন সে আন্দোলনে গেলেন সেদিন তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, যে উনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ওখানটায় যাননি। উনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যদি না গিয়েই থাকেন তাহলে অবশ্যই ওনার রাজনৈতিক পরিচয় ছিল। জুনিয়র ডাক্তাররা যদি এতই রাজনীতি নিরপেক্ষ হবেন তাহলে সেদিন মমতা ব্যানার্জিকেও গো ব্যাক স্লোগান দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু উনারা তা করেন নি।

    বিজেপিকে সরাসরি আক্রমণ করতে গিয়ে জুনিয়ার ডাক্তারদের যে দুচারজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বারে বারে বলতে শোনা গেছে, যারা হাথরাস, উন্নাওয়ের ধর্ষকদের গলায় ফুলের মালা পরিয়েছে, তাদের জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলনের লাভ নিতে দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ আক্রমণের তীর সরাসরি বিজেপির দিকে।ওরা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কামদুনি হাঁসখালি, ঘোকসাডাঙ্গা , সিতাই , বানতলা ,ধানতলা এই প্রসঙ্গ গুলো কিন্তু একবারও তোলেন নি। বিভিন্ন সময়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি তুলে আলোচনায় বসা নিয়ে যেসব নাটক তৈরি হয়েছে তাতে কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ আরো বেড়েছে। 

আরেকটা প্রশ্ন সবিনয় করতে চাই, জুনিয়ার ডাক্তাররা এই আন্দোলনকে পশ্চিমবঙ্গের আমজনতার আন্দোলন হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন  কেন? এই আন্দোলনে যে  দাবিদাবার  কথা শোনা যাচ্ছে তার সাথে  আমাদের আমজনতার সমস্যাগুলোর কি সত্যিই কোন সম্পর্ক আছে? 

পাঁচ দফা হোক আর আটদফা, কোথাও অভয়ার বিচারের ব্যাপারে একটা কথা নেই ।প্রতিটি দাবী নিজেদের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে । অথচ মানুষকে ভুল বোঝানোর জন্য কিছু নটনটি নিয়ে এসে তাঁদের দিয়ে বলালেন 'We want justice' । এর থেকে বড় লোকঠকানো আর কি হতে পারে? কেন তাঁদের দাবীতে জাস্টিসের ব্যাপারে একটা কথাও নেই?

তারপরে পর্বতের মূসিক প্রসব। একটা দাবীও মমতা ব্যানার্জী না মানার পরেও কেন তারা আন্দোলন বন্ধ করে দিলেন? শেষ দিন তো মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে বসেনও নি?  কিঞ্জল নন্দ, সুদীপ্তা চক্রবর্তী এবং স্বস্তিকাদের পুজোর সিনেমার প্রচারমঞ্চ হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে এই মঞ্চ । জুনিয়ার ডাক্তারবাবুদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে অনেকেই বলছেন যে এ আন্দোলনের মাধ্যমে অরবিন্দ  কেজরিওয়ালের  এর মতো কিছু রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভী চরিত্রের আবির্ভাব হবে নাতো? আন্দোলন নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখে সেরকম সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই আমরা কিন্তু সেরকম ও মনে করতে পারছি না।

আপনাদের আন্দোলনে সেই যাদবপুরের নেশাখোর উশৃংখল ছেলে মেয়েদেরও দেখা গেছে। যারা বিভিন্ন অতি বামপন্থী সংগঠনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। কোথায় আপনারা তাদের দেখে তো গো ব্যাক স্লোগান তুললেন না । শুধু বিজেপি নেতাদের দেখলেই কি আপনাদের এই স্লোগান মুখ থেকে বেরিয়ে আসে? এই প্রশ্নগুলো কিন্তু আমাদের সত্যিই ভাবাচ্ছে। আপনারাও একবার ভেবে দেখবেন। অরাজনৈতিক আন্দোলনের নামে কোন রাজনৈতিক উচ্ছাকাঙ্খা পোষণ করলে  একদিন কিন্তু সেই সত্য সামনে আসবেই।সেদিন কিন্তু  অভীক দে , বিরূপাক্ষ বিশ্বাসদের মতোই একই সারিতে  আপনাদেরও দাঁড়াতে হবে।# 

এই ব্লগে আপনার মূল্যবান মন্তব্য লিখে ব্লগারকে উৎসাহিত করবেন সেই সাথে ব্লকটিকে সমৃদ্ধ করবেন এই আশা রাখছি।



মন্তব্যসমূহ

  1. এই জু‌নিয়ার ডাক্তাররা আস‌লে সেকুমাকু প‌রিচা‌লিত।এরা ধান্দাবাজ।রা‌জ্যে কজন ডাক্তার আ‌ছেন যা‌দের রোগী-বান্ধব বলা যা‌বে?সাধারণ মানুষ এ‌দের বিশ্বাস ক‌রেনা,করার কোন যু‌ক্তিগ্রহ্য কারণও নেই।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...