সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারদ জয়ন্তী: সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা ও মানব কল্যাণের বার্তা দেয়

                                          



সাধন কুমার পাল:: স্বামী বিবেকানন্দ বলছিলেন আপাত দৃষ্টিতে অলৌকিকতা ও অবিশ্বাস্য ঘটনা বলির মোড়কে আবৃত্ত থাকলেও পুরাণের চরিত্র গুলি সত্য , ন্যায়, নীতি,দানব থেকে দেবতা হয়ে উঠার মতো শ্রেষ্ঠত্বের সাধনা ও মূল্যবোধের মতো আদর্শের মনিমুক্তো খচিত।শাশ্বত সনাতন এই সমস্ত আদর্শ যুগে যুগে মানব সভ্যতাকে পথ প্রদর্শন করে এসেছে। দেবর্ষি নারদ বাস্তবে ছিলেন কি ছিলেন না, এই চরিত্রের সাথে বর্ণিত অলৌকিক ঘটনাবলি সত্য কি মিথ্যা, তা প্রতিপন্ন করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের প্রথম সংবাদদাতা হিসেবে দেবর্ষি নারদের জীবন দর্শন এক কলোত্তীর্ন আদর্শ।শুধু আধুনিক সংবাদ জগৎ নয় দেবর্ষি নারদের জীবনাদর্শ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছেও এক অনুকরণ ,অনুসরণ যোগ্য আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। দেবর্ষি নারদের চরিত্রের সাথে জড়িয়ে থাকা কলোত্তীর্ন এই আদর্শের উপর আলোকপাত করাই এই লেখার উদ্দেশ্য। 
               মনে হতে পারে হঠাৎ করে 'বিদুষক', 'কলহ প্রিয়' হিসেবে চিন্হিত দেবর্ষি নারদের মতো একটি পৌরানিক চরিত্রকে তুলে ধরার প্রয়াস কেন? কিছু সিনেমা সিরিয়ালে নারদ চরিত্রকে বিকৃত করে হাস্যরসের উপাদান হিসেবে তুলে ধরে জন মানসে দেবর্ষি সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরী করা হয়েছে।ভারতের যে সমস্ত মান বিন্দু আছে সে গুলিকে কলঙ্কিত করার কাজ মেকলে সাহেবের হাত ধরে সেই ইংরেজ আমল থেকেই শুরু হয়ে ছিল।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেকলে সাহেবের ভাব শিষ্যরা সেই কাজটি পরম যত্নের সাথে ধারাবাহিক ভাবে করে গেছেন। এদের হাত ধরেই সেই পৌরানিক যুগের ভগবান রামচন্দ্র,শ্রীকৃষ্ণ থেকে শুরু করে আধুনিক কালের রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দদের মতো মনীষী দেরও চরিত্র হনন করার প্রয়াস হয়েছে।দেবর্ষী নারদ সেই তালিকায় একটি সংযোজন মাত্র।পৌরানিক তথ্য বলছে নারদের মতো আদর্শ চরিত্র কমই দেখা যায়।স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ আছে অর্জুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে প্রশ্ন করে ছিলেন, আপনি কেন প্রতিদিন নারদের নাম জপ করেণ। উত্তরে শ্রী কৃষ্ণ বলেছিলেন এই ত্রিলোকে দেবর্ষি নারদের থেকে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই।নিজের জন্য নয় নারদ সর্বদাই ত্রিলোকের মঙ্গলের কাজই কাজ করেণ।সে জন্যই তিনি প্রতিদিন নারদের নাম জপ করেণ।
            
      ইতিহাস বলছে ভারতীয় পরম্পরা কে সামনে রেখে 
 ১৮২৬ সালের ৩০ মে নারদ জয়ন্তীর দিন বিশ্ব বহ্মান্ডের প্রথম সাংবাদিক দেবর্ষি নারদকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে কলকাতায় ভারতের প্রথম হিন্দি সাপ্তাহিক 'উদন্ত মার্তন্ড' আত্ম প্রকাশ করে।            
          দেবর্ষি নারদের সময় আজকের দিনের মতো প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক বা সোস্যাল মিডিয়া ছিল না।সে সময় সংবাদ আদান প্রদান হতো মৌখিক ভাবে। এক সাথে অনেক মানুষের কাছে সংবাদ পৌছানোর জন্য মেলা,তীর্থস্থান,হাট বাজার,ধর্মীয় জমায়েত গুলি কাজে লাগানো হতো।একজন আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে দেবর্ষি নারদের দেব,মানব ও দানব এই তিন লোকেই অবাধ বিচরণ ও সমান বিশ্বাস যোগ্যতা ছিল।যুদ্ধের মতো সঙ্কটময় মূহূর্তেও দেবর্ষি নারদ অবাধে যাতায়ত করতেন এবং নিরপেক্ষ ভাবে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করতেন।নারদের দেওয়া তথ্য কোন পক্ষই হালকা ভাবে নিতেন না। 
        
          সাংবাদিকতা কাজের জন্য যে সমস্ত গুণের বিকাশ হওয়া আবশ্যক দেবর্ষি নারদের চরিত্রে সেই সমস্ত গুণ পূর্নরুপে বিকশিত হয়েছিল। ব্রহ্মজ্ঞানী এই ঋষির জীবন দর্শনের মূল কথা ছিল 'লোক কল্যান'।পুরান অনুসারে তিনি ছিলেন ৬৪ টি বিদ্যায় পারদর্শি এক চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। কোন ধারনা ও পরিস্থিতিকে কে তিনি যথাযথ ভাবে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন করতে পারতেন । এই বিশ্লেষনের মাধ্যমেই উঠে আসতো ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে তার অনুমান। এক মাত্র দেবর্ষি নারদ কেই 'দেবতাদের মন' বলা হতো।কারণ কিছুক্ষন কথা বলেই তিনি শুধু দানব ও মানব নয় দেবতাদেরও পড়ে ফেলতে পারতেন। 

         জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নৈপুন্য অর্জনের জন্য দেবর্ষি নারদ যে ভাবে প্রয়াসি হয়েছেন মানব সমাজের কাছে চিরকালই তা প্রেরণার উৎস হিসেবে গন্য হতে পারে। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নিজের অসম্পুর্নতা নজরে আসতেই তিনি কঠোর তপস্যার মাধ্যমে নিজেকে উচ্চমানের সংঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।তপস্যা করে ভগবান বিষ্ণুর কাছে বর লাভ করেণ। নারদ সংহিতা নামক সংগীত শাস্ত্র প্রণয়ন করেণ।বীণা নামক বাদ্য যন্ত্রটি দেবর্ষি নারদেরই সৃষ্টি।


          তিনি নারদ ভক্তি সুত্র নামক গ্রন্থের রচয়িতা।নারদ ভক্তি সুত্রে আত্মা পরমাত্মা সম্পর্কিত ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট তিনি উচ্চ মানের দার্শনিক ছিলেন।অন্যান্য ঋষিদের মতো দেবর্ষি নারদের কোন আশ্রম ছিল না।লোক কল্যানের জন্য তিনি সর্বদাই বার্তাবাহক হিসেবে ভ্রমণ করতেন। দেবর্ষি নারদের প্রত্যেকটি বার্তা, বাক্য ও উপস্থাপিত বিষয় সমুহ বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে নিজের হিতের জন্য নয় তিনি যা করেছেন সবই লোক হিতের জন্য। 


             শুধু মাত্র আত্মতত্ত্ব নয় নারদ ভক্তিসূত্রের ব্যাপক ব্যাবহারিক তাৎপর্য়ও আছে।যেমন, ভক্তি সূত্রের ৪৩ নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে 
                     दुःसंगः सर्वथैव त्याज्यः 
পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন অবাঞ্চনীয় কে পরিত্যাগ করতে হবে। যা কিছু অবাঞ্চনীয় তার প্রচার প্রসার প্রতিপালন হওয়া বাঞ্চনীয় নয়।অর্থাৎ নেতিবাচক সাংবাদিকতা এই সমাজের জন্য বিষতুল্য।

             যখন মানুষ কুকুরকে কামড়ালে সংবাদ হিসাবে বিবেচনা আনা পশ্চিমী ভাবনায় নেতিবাচকতাকে সাংবাদিকতার ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা হতো সে সময় গান্ধীজী নেতাজীর মতো আমাদের দেশের অনেক পণ্ডিত এবং দেশবরেণ্যরা নেতিবাচক সাংবাদিকতাকে প্রত্যাখ্যান করে ছিলেন । এখানে সাংবাদিকের ভূমিকাও প্রহরীর মতোই উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু নারদ এই শ্লোকে বলেছেন যে মন্দ যে কোনো অবস্থাতেই ত্যাগ করতে হবে। এটি প্রসার বা প্রচার করা উচিত নয়। 

       সূত্র 46-এ 
                    कस्तरति कस्तरति मायाम् ? 
        यः सडांस्त्यजाति यो महानुभावं सेवते, निर्ममो भवति ।। 

         নারদ বললেন, মন্দ ঢেউ আকারে আসে, কিন্তু শীঘ্রই তা সমুদ্রের রূপ নেয়। আজ এই অপরাধের গল্প নিউজ চ্যানেলগুলোতে ঢেউ আকারে আসতে দেখা যাচ্ছে। 
   
       ভারতীয় মিডিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম বলেছিলেন— 'Why is the media here so negative ? Why are we in India so embarrassed to recognize our own strengths, our achieve- ments? We are such a great nation. We have so many amazing success stories but we refuse to acknowledge them. Why ? There are millions of such achievements but our media is only obsessed in the bad news and failures and disasters.' দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি ইজরায়েলি মিডিয়ার উদাহরণ টেনে এনেছিলেন। একবার ইজরায়েল সফরের সময় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হামাসের প্রবল আক্রমণে বোমাবাজি, গোলাবাজি হয়। ফলস্বরূপ হতাহত ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরেরদিন তেলআভিবে বসে সংবাদপত্র চোখ রেখে তিনি অবাক হয়ে যায়। দেখলেন ইজরায়েলি সংবাদপত্রগুলির প্রথম পাতায় এত বড় ঘটনা স্থান পেলো না। প্রথম পাতায় সচিত্র প্রতিবেদন হিসেবে স্থান পেলো এক ইহুদি ভদ্রলোক কীভাবে পাঁচ বছরের পরিশ্রমে মরুভূমিতে কসল কলিয়েছেন সেই খবর। হামাসের আক্রমণের খবর অন্যান্য খবরের সঙ্গে ভিতরের পাতায় স্থান পেলো। শক্তিশালী দেশ গড়তে মিডিয়া কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ড. কালামের বর্ণনা থেকে তা স্পষ্ট। 

           গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম সংবাদদাতা দেবার্ষি নারদ রচিত নারদ ভক্তিসূত্রের বিভিন্ন শ্লোকে যে সমস্ত বিধিনিষেধ ও দায়িত্ববোধের উল্লেখ রয়েছে আধুনিক মিডিয়া সম্পর্কে ড. কালাম উত্থাপিত প্রশ্নগুলি তারই প্রতিরুপ ।

        নারদ ভক্তির সূত্র 63তে সংবাদ মাধ্যমের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে- 
                 स्त्रीधननास्तिकवैरिचरित्रं न श्रवणीयम् ।। 

       এই নির্দেশিকা গুলি হল 1-নারী ও পুরুষের দেহ ও আসক্তির বর্ণনা করা যাবে না । 2-সম্পদ, ধনী ও অর্থ উপার্জনের বর্ণনা করা যাবে না । 3-নাস্তিকের বর্ণনা করা যাবে না 4-শত্রুর আলোচনা করা যাবে না।। আজ মনে হচ্ছে এই চারটি বিষয় ছাড়া মিডিয়ার জন্য আর কোনো বিষয়ই নেই।

       সূত্র 72এ ঐক্যের বার্তা দেওয়া হয়েছে , যেখানে নারদ সমাজে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয়গুলিকে নিষিদ্ধ করেছেন। 
         
            नास्ति तेषु जातिविद्यारूपकुलधनक्रियादिभेदः ।। 
     
      অর্থাৎ জাতপাত, জ্ঞান, রূপ, বংশ, সম্পদ, কাজ ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করা চলবে না। সাংবাদিকতা কিসের জন্য এবং কাকে নিয়ে হওয়া উচিত এটি আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । যার সমাধান পাওয়া যায় এই সূত্রে। রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র শিল্পী এবং অপরাধীদের মহিমান্বিত করার সময়, সাংবাদিকতা বাস্তব সমস্যা থেকে বিচ্যুত করে সমাজ কে বিপথে চালিত করে । এই কারণেই জেসিকা লালের হত্যাকাণ্ড শুধু সাংবাদিকতারই 'ব্রেকিং নিউজ' হয়ে ওঠে না, এর সম্পাদকীয় প্রবন্ধ এমনকি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়, একজন সাধারণ কৃষকের আত্মহত্যা সংবাদের মাত্র এক-দুটি কলামেই থেমে যায়।আত্মহত্যাকে রাজনীতিকরণ করা হলে সেই খবর আবার প্রথম পাতায় ফিরে আসে। ২৬/১১ মুম্বই হামলার পর সংবাদ মাধ্যম দীর্ঘ সময় ধরে ঘাতক কাশাভের দিনলিপি সহ প্রতিমুহুর্তের খবর প্রকাশ করে গেছে। ফলে এদেশের আবালবৃদ্ধ বনিতার মনে ঐ ঘাতকের নাম সহ ছবি গেথে গেছে। ঐ ঘটনায় আত্মবলিদানকারী এনএসজি এর স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণনকে কেউ মনে রাখে নি ।কারণ মিডিয়া ঘাতক কে যত কভারেজ দিয়েছে তার শতভাগের এক ভাগও দেওয়া হয় নি আত্মবলিদানকারী শহিদকে ।অর্থাৎ নারদীয় মূল্যবোধ থেকে ভারতীয় মিডিয়া এখন শত যোজন দুরে অবস্থান করছে। 

          আজকের সাংবাদিকতা এবং মিডিয়াতেও প্রতিদিনই টক-শো ও বিতর্কের আয়োজনের প্রতিযোগীতা চলছে। এই সমস্ত শো তে অনবরত অর্থহীন ও অন্তহীন কু-তর্ক দেখা যায়।এই ধরণের বিতর্ককে অর্থহীন বলে বর্ণনা করে, নারদ 75, 76 এবং 77 সূত্রে পরামর্শ দিয়েছেন যে বিতর্কে সময় নষ্ট করা উচিত নয়, কারণ বিতর্কের মাধ্যমে মতামত পরিবর্তন হয় না। এই সূত্রে বলা হয়েছিল- 
 
                बाहुल्यावकाशादनियतत्वाच्च ।।
 भक्तिशास्त्राणि मननीयानि, तदुदृबोधककर्माण्यपि च करणीयानि ।।
 सुखदुःखेच्छालाभादित्यक्ते काले प्रतीक्ष्यमाणे क्षणार्द्धमपि व्यर्थ न नेयम्। 

       সূত্র 78-এ, নারদ ব্যক্তিত্বের মধ্যে বিদ্যমান কিছু গুণের বর্ণনা করেছেন। সাংবাদিকদের মধ্যেও এসমস্ত গুণাবলীর সমাবেশ হওয়া জরুরি বলে মনে হয়। 
       अहिंसा सत्य शौच दयास्तिक्यादिचारिश्याणि परिपालनीयानि ।। 

     এই গুণগুলি হল অহিংসা, সত্য, পবিত্রতা, সংবেদনশীলতা এবং বিশ্বাস। সূত্র 71 অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।এতে নারদ ব্যাখ্যা করেছেন যে এই সব ঘটলে কী হবে (অর্থাৎ নারদের উপদেশ সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করা হলে )। নারদের মতে, এই অবস্থায় থাকবে শুধু আনন্দ, পূর্বপুরুষেরা আনন্দিত হবেন , দেবতারা আনন্দে নৃত্য করবেন এবং পৃথিবী যেন স্বর্গ হয়ে ওঠবে। এটা আমরা সবাই জানি আজকের মিডিয়ার এই দিকে কোন দৃষ্টি নেই। 

      সাংবাদিকতার মধ্য দিয়েই গণমাধ্যমে সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কিন্তু সৃষ্টির জন্য কী ধরনের প্রবণতা থাকা উচিত? আজ সাহিত্য, শিল্প, চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিজ্ঞাপন বা সাংবাদিকতার যাবতীয় সৃষ্টি অর্থ উপার্জনের প্রবণতা নিয়েই করা হয়। যার মধ্যে অসত্য, প্রতারণা, কপটতা, ভান ও কৃত্রিমতা প্রধান। নারদের ভক্তি সূত্র 60এ সৃজনশীল প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সৃজনশীলতার প্রক্রিয়াটি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে- 
              शांतिरूपात्परमानंदरूपाच्च ॥ 
      
        সত মানে অনুভব , চিৎ মানে চেতনা আর আনন্দ মানে অনুভূতি। সাংবাদিকতার প্রক্রিয়াটাও এরকম। তিনি তথ্য সারসংক্ষেপ. করবেন এবং সেগুলি অনুভবের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে অন্যদের কাছে প্রকাশ করবেন। তবে তার ফলাফল হতে পারে দুঃখ, বেদনা, হিংসা, শত্রুতা, বিদ্বেষ এবং অসত্য কে তুলে ধরা অথবা সুখ, শান্তি, ভালবাসা, সহনশীলতা এবং বন্ধুত্বের বিস্তার ঘটানো।এর মধ্যে কোন বিকল্পটি বেছে নেবে সেই সিদ্ধান্ত সমাজকেই নিতে হবে । 
        এখানে সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নারদের ভক্তি সূত্রের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলি গভীরভাবে অধ্যয়ন করা এবং একটি বিকল্প সাংবাদিকতার দর্শন সমগ্র মানবতার কাছে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। কারণ বর্তমান মিডিয়া একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়কের ভুমিকা পালন করছে না। 

     বাল্মীকি দস্যুবৃত্তি করে পরিবার চালাতেন। একদিন দেবর্ষি নারদকে অর্থ লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে আক্রমন করলে দেবর্ষি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তাঁর পরিবার তাঁর পাপের ভাগী হতে চায় কি-না! নারদের মন্ত্রণায় তিনি তাঁর পরিবারের প্রত্যেককে এ প্রশ্ন করলে সকলেই জানায় যে তাঁর পাপের ভাগী তাঁরা হতে চায় না।ঐ দস্যু জীবনের সত্যতা উপলব্ধি করে নারদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চায়। নারদ তাঁকে রাম নাম জপ করতে শেখান। ঐ দস্যু বহু বছর সাধনা করে ব্রহ্মা’র নিকট বরলাভ করে কবিত্ব শক্তি প্রাপ্ত হন। তপস্যারত অবস্থায় তাঁর দেহ বল্মীকের স্তুপে ঢেকে গিয়েছিল বলে তাঁর নামকরণ হয় বাল্মীকি।দেবর্ষি নারদের জন্যই রামায়ন রচিত হয়েছিল।ঋষি বাল্মীকি ১৬টি গুন সম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষের খোঁজে ছিলেন। দেবর্ষি নারদ ৫৭টি গুণ সম্পন্ন পুরুষোত্তম রামের খোঁজ দেন। সুবক্তা ও অসাধারণ বিশ্লেষক দেবর্ষি নারদের মুখে শ্রীরাম চন্দ্রের কাহিনী শুনে ঋষি বাল্মীকির মনে রামায়ণ রচনার ভাবনা আসে।
       তিনি ধ্রব কে তপস্যা ও ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখিয়েছেন। প্রহ্লাদকে আধ্যাত্বিক উপদেশ দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশের পথ প্রশস্থ করে ছিলেন। কৃষ্ণ পৌত্র অনিরুদ্ধ বাণরাজপুরে অবরুদ্ধ হলে তিনি দ্বারকায় ঐ সংবাদ প্রদান করে দৈত্যবিনাশে সহায়তা করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় অনেক অসুরের জীবনাশ হয়। পাণ্ডবরা ইন্দ্রপ্রস্থে রাজধানী স্থাপন করলে দেবর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হয়ে দ্রৌপদির জন্য পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে যাতে বিরোধ না হয়, তার নিয়ম নির্ধারণ করতে উপদেশ দেন। ফলত লোক কল্যানের জন্য সকল স্থানেই দেবর্ষি নারদকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও স্বেচ্ছায় উপস্থিতি দেখা যায়। 

         আদি সাংবাদিক নারদ সাংবাদিক হিসেবে যে আদর্শ তুলে ধরেছেন সেগুলি নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষনার প্রয়োজন আছে। মানব সভ্যতার সামনে বড় বড় বিপদ দেবর্ষি নারদের প্রচেষ্ঠায় কেটে গেছে। অর্জুন একবার দিব্যাস্ত্র ( হয়তো আজকের দিনের পরমানু অস্ত্রের সমতুল)পরীক্ষা করতে চাইলে দেবর্ষি নারদ তাকে নিরস্ত করে বলেন দিব্যাস্ত্রের ব্যাবহার শুধুমাত্র চরম পরিস্থতিতে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্যই করা প্রয়োজন। শুধু মাত্র সংবাদ আদান প্রদান নয় দিক ভ্রান্ত মানুষ ও সমাজকে সঠিক দিশা দেওয়াও যে এক জন সাংবাদিকের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে আদি সাংবাদিক দেবর্ষি নারদ সে আদর্শও প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।##

##আপনার মূল্যবান মতামত ও মন্তব্য এই ব্লগকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে##

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতের প্রথম "Gen Z Movement"

          লিখেছেন :: সাধন কুমার পাল Gen Z বা  Generation Z  হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে (কিছু গবেষক ১৯৯৫–২০১০ বা ২০০০–২০১৫ পর্যন্তও ধরে নেন)। অর্থাৎ, এই প্রজন্মের মানুষদের বর্তমান বয়স আনুমানিক ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ২. নামকরণের কারণ: • Baby Boomers  (১৯৪৬–১৯৬৪) • Generation X  (১৯৬৫–১৯৮০) • Millennials  বা  Gen Y  (১৯৮১–১৯৯৬) • তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলা হয় Gen Z। "Z" অক্ষরটি এসেছে ধারাবাহিকতার কারণে। ৩. প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: • Gen Z হল প্রথম প্রজন্ম যারা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। • এদের বলা হয় Digital Natives (ডিজিটাল-প্রাকৃতিক)। • Facebook, Instagram, YouTube, TikTok, Snapchat, WhatsApp – এসব প্ল্যাটফর্ম এদের জীবনের অংশ। ৪. শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্য: • তথ্য জানার জন্য বইয়ের বদলে বেশি ব্যবহার করে গুগল ও ইউটিউব। • মনোযোগের সময়কাল তুলনামূলকভাবে ছোট (short attention span), তবে একসাথে অনেক তথ...

তিনবিঘা থেকে শিলিগুড়ি করিডর: সীমান্তে নতুন আগুন, নিরাপত্তায় শৈথিল্য

                                                                    সাধন কুমার পাল     বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর চিকেন'স নেক অঞ্চলটি  নতুন করে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়  রাজ্যগুলিকে(সেভেন সিস্টারস) "স্থলবেষ্টিত" বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে  "সমুদ্র পথে  প্রবেশের নিরিখে অভিভাবক" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।  ভারতের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিলিগুড়ি করিডরের কাছে লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের বিমান ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লালমুনিরহাট বিমান ঘাঁটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে শুরু হতে পারে, যেখানে একটি পাকিস্তানি কোম্পানি উপ-ঠিকাদার হিসেবে থাকবে। ভারত-ভ...

শিক্ষকদের কান্নায় কি ডুববে মমতার সিংহাসন?"

                                                   সাধন কুমার পাল     ত্রিপুরায় তখন রক্তমাখা লাল রাজত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী’ নামে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাম সরকারের আমলে ১০,৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিছু প্রার্থী। আগরতলা হাই কোর্ট চাঞ্চল্যকর রায় দেয়—পুরো প্যানেল অবৈধ, বাতিল করতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন সরকার, কিন্তু ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও হাই কোর্টের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। এই রায়ের ঢেউ রাজনীতির ময়দানেও পড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হাতছাড়া হয় মানিক সরকারের। ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্...