হিটলারের লেবেনশ্রাম থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ: ভারতের সামনে এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা
সাধন কুমার পাল
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজু অভিযোগ করেছেন—বিলিয়নিয়ার জর্জ সোরোস ( বাংলাদেশের মতো ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।রিজিজু এমনও বলেছেন যে “ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য এক ট্রিলিয়ন ডলার আলাদা রাখা হয়েছে।”
(সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইকনমিক টাইমস)
গত ২৩ আগস্ট শনিবার বিকেল বেলা শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের হল ঘরে উত্তরবঙ্গের স্তম্ভ লেখকদের নিয়ে একটি আলোচনা সভায় একজন স্তম্ভ লেখক এর বক্তব্য শুনে কিরণ রিজিজুর সেই অভিযোগের কথা মনে পড়ে গেল। এই আলোচনা সভায় একজন স্তম্ভ লেখক অনুপ্রবেশের সমস্যা নিয়ে বলতে গিয়ে যা বললেন সেই বক্তব্যের নির্যাস হল বাংলাদেশের আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষ উচ্চ আয়ের জন্য কিংবা নিজের জীবন নির্বাহের জন্য ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে যদি ভারতবর্ষে প্রবেশ করে তাহলে অন্যায়টা কোথায়। অনুপ্রবেশের কথা বলে এই মানুষগুলিকে নিয়ে হইচই করাটা অমানবিক। এই ধরনের স্তম্ভ লেখকদের লেখা পড়লে বা বক্তব্য শুনলে মনে হবে এরা যেন মানবিকতার মূর্ত প্রতীক। বামপন্থী লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সত্য আড়াল করার জন্য মানবিকতার মুখোশ ধারণের পেছনে যে বিশেষ কারণ থাকে এটা বহুবার প্রমাণ হয়ে গেছে।। ভাবছিলাম এই মানবিকতার মুখোশ ধারন কি বিলিয়নিয়ার জর্জ সোরোসের অর্থের প্রভাবে?
ভারতবর্ষে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভোট ব্যাংক বানিয়ে ক্ষমতা দখল বামপন্থীদের, মমতা ব্যানার্জির মত ক্ষমতা লোভীদের পুরনো রণকৌশল। অনুপ্রবেশ তত্ত্বের উপর যতই মানবিকতার প্রলেপ লাগানো হোক না কেন এর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার লোভী হায়নাদের এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র।অনুপ্রবেশকারীরা শহুরে শ্রমজীবী ও গ্রামীণ কৃষিশ্রমিক হিসেবে বামেদের ভোটব্যাঙ্ক বানানোর প্রক্রিয়া বাম আমলে শুরু হয়েছিল।
বহু সীমান্তবর্তী এলাকায় এভাবেই কংগ্রেস বা পরবর্তী সময়ে বিজেপিকে প্রতিরোধ করেছে বামেরা। আর এখন বিজেপিকে প্রতিরোধ করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস ও একই অস্ত্র প্রয়োগ করছে।
Ki
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘকালীন বাম শাসন (১৯৭৭–২০১১) চলাকালীন মানবিকতার মোড়কে অনুপ্রবেশ নিয়ে এই নরম মনোভাবের পেছনে ছিল রাজনৈতিক স্বার্থ।ভোট ব্যাংকের এই বিপজ্জনক রাজনীতিকে ঢেকে রাখার জন্যই পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা মূলত অনুপ্রবেশকে মানবিক ও সামাজিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরার মরিয়া প্রয়াস নিরন্তর চালিয়ে গেছে।
সেই বাম আমল হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। এখন মমতা ব্যানার্জি যেভাবে বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন বাম আমলে ঠিক একই কাজ বামপন্থীরা করে গেছেন। সে সময় বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অনুপ্রবেশের বিপক্ষে গলা ফাটাতেন। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচুর ভিডিও আছে। সেগুলো দেখে যে কেউ এই সিদ্ধান্তের সততা যাচাই করতে পারেন।
অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন
“জীবনের জন্য জায়গা চাই”—এই দাবি মানবিক দিক থেকে যৌক্তিক। কিন্তু যখন সেই জায়গা অর্জনের জন্য অন্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তখন তা মানবিকতার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে (নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি) বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবেশ করে বসতি গড়ে তোলে।তাঁদেরকে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড প্রভৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করা হয়েছিল
এই নরম মনোভাবের ফলে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন আজ রাজনৈতিক মেরুকরণের মূল কারণ হয়ে উঠেছে।
• এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি ও জনসংখ্যার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন এসেছে।
• অনুপ্রবেশকারীরা সস্তা শ্রমিক হিসেবে কৃষি, নির্মাণ, জুটমিল, রিকশা চালানো, গৃহকর্ম ইত্যাদিতে যুক্ত হয়েছেন।
এর ফলে স্থানীয় কর্মসংস্থান ও অবকাঠামোর ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
সবচেয়ে বিপদজনক দিক হলো বামপন্থী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতা দখলের এই কৌশল অনুপ্রবেশের মাধ্যমে জন চরিত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে জিহাদী ইসলামিক শক্তিগুলোর ভারতকে ইসলামিক দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের মতো হিন্দুদের উপর অত্যাচার ,ধর্মীয় স্থানের উপর আঘাত এগুলো নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয় মুসলিমবহুল এলাকায় হিন্দুরা নিজের ভোটাধিকার পর্যন্ত প্রয়োগ করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গে এরকম এলাকা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।
ইতিহাস বলছে ক্ষমতা দখলের এই কৌশল অবলম্ব করে হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে ছিলেন।
বিশ্ব ইতিহাসে “লেবেনশ্রাম” বা Lebensraum তত্ত্ব হিটলারের অন্যতম বিতর্কিত রাজনৈতিক দর্শন। জার্মান শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়—“জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান।” হিটলার বিশ্বাস করতেন, জার্মান জাতির উন্নতির জন্য তাদের আরও বিস্তৃত ভৌগোলিক অঞ্চল দরকার। তাই প্রতিবেশী দেশ দখল করে সেখানে জার্মান জনগণকে বসানো হবে, যাতে তারা খাদ্য, সম্পদ ও উন্নয়নের সুযোগ পায়।
কিন্তু এই ধারণা কার্যকর হওয়ার পথে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়। লাখো মানুষকে তাদের জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়, জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হতে হয়, এবং মানবতার ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো এক ভয়ঙ্কর অধ্যায় রচিত হয়।
মানবিক বিপর্যয় : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চিত্র
• ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ দিয়ে যুদ্ধের সূচনা।
• ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল জার্মানির দখলে যায়।
• প্রায় ৫ কোটি থেকে ৭ কোটি মানুষ নিহত হয় যুদ্ধের ফলে।
• ৬০ লাখ ইহুদি গণহত্যার শিকার হন হিটলারের জাতিগত নীতির অংশ হিসেবে।
• লাখো স্লাভিক জনগণ, প্রতিবন্ধী, জিপসি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদেরও হত্যা বা বন্দিশিবিরে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়।
এখানেই মূল মানবিক প্রশ্ন দাঁড়ায়—একটি জাতির জীবনধারণের অধিকার অন্য জাতির বেঁচে থাকার অধিকারকে মুছে ফেলতে পারে কি?
তত্ত্ব ও অনুপ্রবেশ সমস্যা : সাদেক খানের লেখনী থেকে ভারতের বাস্তবতা
‘লেবেনশ্রাম’ (Lebensraum) শব্দটির অর্থ “জীবনধারণের জন্য অতিরিক্ত ভূমি”। জার্মান নাৎসি শাসক অ্যাডলফ হিটলার এই তত্ত্বকে ব্যবহার করেছিলেন জার্মান জাতিকে ইউরোপের অন্যান্য ভূখণ্ডে বিস্তার করার যুক্তি হিসেবে। পরবর্তীকালে এই তত্ত্বকে ঘিরে পৃথিবী ইতিহাসে বহু সংঘাত, যুদ্ধ ও গণবিপর্যয় ঘটেছে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট কলামনিস্ট সাদেক খান তাঁর লেখায় একাধিকবার উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও অভ্যন্তরীণ সংকটকে কেন্দ্র করে এই লেবেনশ্রাম তত্ত্বের প্রভাব ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রতি ছড়িয়ে পড়ছে। তাঁর মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে সরাসরি না বলা হলেও, অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সীমান্ত পেরিয়েৌ আন্দোলন” কিংবা “গ্রেটার বাংলাদেশ তত্ত্ব”-এর মূল ভিত।
সাদেক খানের দৃষ্টিভঙ্গি
সাদেক খান স্পষ্টভাবে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের কৃষিজমি ও কর্মসংস্থান সংকট সামলাতে না পেরে অতিরিক্ত জনগোষ্ঠী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে ঠেলে দেওয়াটা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক মনে করছে বাংলাদেশি নেতৃত্ব। এভাবে একদিকে দেশের ভেতরে চাপ কমছে, অন্যদিকে সীমান্তবর্তী ভারতের জনসংখ্যাগত চিত্র বদলাচ্ছে।
ভারতের বাস্তব চিত্র
ভারতে আজ যে অনুপ্রবেশ সমস্যা সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার শিকড় এই লেবেনশ্রাম ভাবনায়। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ভয়াবহ হারে বেড়ে চলেছে। এর ফলে –
• স্থানীয় অধিবাসীদের ভূমি ও কর্মসংস্থানে চাপ পড়ছে।
• জনসংখ্যার ভারসাম্য পরিবর্তন হচ্ছে।
• সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত বাড়ছে।
জার্মানিতে শরণার্থী সংকট ও তার ফলাফল
জার্মানি ও ইউরোপের বহু দেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিরিয়া, ইরাক ও অন্যান্য ইসলামি দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। ২০১৫ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ঘোষণা করেছিলেন – “Wir schaffen das” (আমরা এটা সামলাতে পারব)। সেই সময় এক বছরের মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করে।
তবে কয়েক বছরের মধ্যে এই মানবিক উদ্যোগের নানা নেতিবাচক দিক সামনে আসতে শুরু করেছে—
১. জনসংখ্যাগত ও সাংস্কৃতিক সমস্যা
• শরণার্থীদের বড় অংশ জার্মান সমাজে মিশে যেতে চাইছে না।
• ভিন্নধর্মী সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও সামাজিক নিয়মের কারণে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে।
• অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে থাকতে চাইছে, যা স্থানীয়দের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বাড়াচ্ছে।
২. আইনশৃঙ্খলার অবনতি
• শরণার্থীদের একটি অংশের বিরুদ্ধে চুরি, হামলা ও যৌন হেনস্থার মতো অপরাধের অভিযোগ উঠেছে।
• ২০১৬ সালে বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে এক শরণার্থী সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
• চরমপন্থী ভাবধারার প্রভাব তরুণ শরণার্থীদের মধ্যে বাড়ছে।
৩. অর্থনৈতিক চাপ
• শরণার্থীদের আশ্রয়, ভাতা ও প্রশিক্ষণের জন্য জার্মান সরকারকে প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে।
• যদিও কিছু শরণার্থী চাকরিতে যুক্ত হয়েছে, তবুও তাদের বেকারত্বের হার স্থানীয়দের তুলনায় অনেক বেশি।
৪. রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
• শরণার্থী সমস্যাকে কেন্দ্র করে জার্মানিতে ডানপন্থী রাজনৈতিক দল AfD (Alternative für Deutschland) শক্তিশালী হয়েছে।
• সাধারণ মানুষ মনে করছে, এভাবে চলতে থাকলে জার্মানির সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে।
যাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, তাদের একটি অংশ এখন—
• আলাদা অধিকার দাবি করছে,
• জার্মান আইনের পরিবর্তে নিজেদের দেশের শরিয়তি নিয়ম মানতে চাইছে,
• পূর্ণাঙ্গভাবে একীভূত হতে অস্বীকার করছে।
ফলে জার্মানির সার্বভৌমত্ব, সংস্কৃতির ভারসাম্য ও নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে।
এখনকার পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ যদি অবাধে চলতে থাকে, তবে একই ধরনের সমস্যা তৈরি হবে—
• জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদলে যাবে,
• অতিরিক্ত অধিকার দাবি উঠবে,
• আইনশৃঙ্খলার জটিলতা বাড়বে,
• রাজনৈতিক দলগুলো ভোটব্যাংকের জন্য তাদের ব্যবহার করবে।
তাই মানবিকতার দোহাই দেওয়া জরুরি হলেও, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সর্বাগ্রে রক্ষা করতে হবে।##
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজু অভিযোগ করেছেন—বিলিয়নিয়ার জর্জ সোরোস ( বাংলাদেশের মতো ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।রিজিজু এমনও বলেছেন যে “ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য এক ট্রিলিয়ন ডলার আলাদা রাখা হয়েছে।”
(সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইকনমিক টাইমস)
গত ২৩ আগস্ট শনিবার বিকেল বেলা শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের হল ঘরে উত্তরবঙ্গের স্তম্ভ লেখকদের নিয়ে একটি আলোচনা সভায় একজন স্তম্ভ লেখক এর বক্তব্য শুনে কিরণ রিজিজুর সেই অভিযোগের কথা মনে পড়ে গেল। এই আলোচনা সভায় একজন স্তম্ভ লেখক অনুপ্রবেশের সমস্যা নিয়ে বলতে গিয়ে যা বললেন সেই বক্তব্যের নির্যাস হল বাংলাদেশের আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষ উচ্চ আয়ের জন্য কিংবা নিজের জীবন নির্বাহের জন্য ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে যদি ভারতবর্ষে প্রবেশ করে তাহলে অন্যায়টা কোথায়। অনুপ্রবেশের কথা বলে এই মানুষগুলিকে নিয়ে হইচই করাটা অমানবিক। এই ধরনের স্তম্ভ লেখকদের লেখা পড়লে বা বক্তব্য শুনলে মনে হবে এরা যেন মানবিকতার মূর্ত প্রতীক। বামপন্থী লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সত্য আড়াল করার জন্য মানবিকতার মুখোশ ধারণের পেছনে যে বিশেষ কারণ থাকে এটা বহুবার প্রমাণ হয়ে গেছে।। ভাবছিলাম এই মানবিকতার মুখোশ ধারন কি বিলিয়নিয়ার জর্জ সোরোসের অর্থের প্রভাবে?
ভারতবর্ষে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভোট ব্যাংক বানিয়ে ক্ষমতা দখল বামপন্থীদের, মমতা ব্যানার্জির মত ক্ষমতা লোভীদের পুরনো রণকৌশল। অনুপ্রবেশ তত্ত্বের উপর যতই মানবিকতার প্রলেপ লাগানো হোক না কেন এর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার লোভী হায়নাদের এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র।অনুপ্রবেশকারীরা শহুরে শ্রমজীবী ও গ্রামীণ কৃষিশ্রমিক হিসেবে বামেদের ভোটব্যাঙ্ক বানানোর প্রক্রিয়া বাম আমলে শুরু হয়েছিল।
বহু সীমান্তবর্তী এলাকায় এভাবেই কংগ্রেস বা পরবর্তী সময়ে বিজেপিকে প্রতিরোধ করেছে বামেরা। আর এখন বিজেপিকে প্রতিরোধ করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস ও একই অস্ত্র প্রয়োগ করছে।
Ki
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘকালীন বাম শাসন (১৯৭৭–২০১১) চলাকালীন মানবিকতার মোড়কে অনুপ্রবেশ নিয়ে এই নরম মনোভাবের পেছনে ছিল রাজনৈতিক স্বার্থ।ভোট ব্যাংকের এই বিপজ্জনক রাজনীতিকে ঢেকে রাখার জন্যই পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা মূলত অনুপ্রবেশকে মানবিক ও সামাজিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরার মরিয়া প্রয়াস নিরন্তর চালিয়ে গেছে।
সেই বাম আমল হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। এখন মমতা ব্যানার্জি যেভাবে বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন বাম আমলে ঠিক একই কাজ বামপন্থীরা করে গেছেন। সে সময় বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অনুপ্রবেশের বিপক্ষে গলা ফাটাতেন। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচুর ভিডিও আছে। সেগুলো দেখে যে কেউ এই সিদ্ধান্তের সততা যাচাই করতে পারেন।
অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন
“জীবনের জন্য জায়গা চাই”—এই দাবি মানবিক দিক থেকে যৌক্তিক। কিন্তু যখন সেই জায়গা অর্জনের জন্য অন্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তখন তা মানবিকতার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে (নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি) বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবেশ করে বসতি গড়ে তোলে।তাঁদেরকে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড প্রভৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করা হয়েছিল
এই নরম মনোভাবের ফলে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন আজ রাজনৈতিক মেরুকরণের মূল কারণ হয়ে উঠেছে।
• এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি ও জনসংখ্যার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন এসেছে।
• অনুপ্রবেশকারীরা সস্তা শ্রমিক হিসেবে কৃষি, নির্মাণ, জুটমিল, রিকশা চালানো, গৃহকর্ম ইত্যাদিতে যুক্ত হয়েছেন।
এর ফলে স্থানীয় কর্মসংস্থান ও অবকাঠামোর ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
সবচেয়ে বিপদজনক দিক হলো বামপন্থী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতা দখলের এই কৌশল অনুপ্রবেশের মাধ্যমে জন চরিত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে জিহাদী ইসলামিক শক্তিগুলোর ভারতকে ইসলামিক দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের মতো হিন্দুদের উপর অত্যাচার ,ধর্মীয় স্থানের উপর আঘাত এগুলো নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয় মুসলিমবহুল এলাকায় হিন্দুরা নিজের ভোটাধিকার পর্যন্ত প্রয়োগ করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গে এরকম এলাকা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।
ইতিহাস বলছে ক্ষমতা দখলের এই কৌশল অবলম্ব করে হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে ছিলেন।
বিশ্ব ইতিহাসে “লেবেনশ্রাম” বা Lebensraum তত্ত্ব হিটলারের অন্যতম বিতর্কিত রাজনৈতিক দর্শন। জার্মান শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়—“জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান।” হিটলার বিশ্বাস করতেন, জার্মান জাতির উন্নতির জন্য তাদের আরও বিস্তৃত ভৌগোলিক অঞ্চল দরকার। তাই প্রতিবেশী দেশ দখল করে সেখানে জার্মান জনগণকে বসানো হবে, যাতে তারা খাদ্য, সম্পদ ও উন্নয়নের সুযোগ পায়।
কিন্তু এই ধারণা কার্যকর হওয়ার পথে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়। লাখো মানুষকে তাদের জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়, জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হতে হয়, এবং মানবতার ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো এক ভয়ঙ্কর অধ্যায় রচিত হয়।
মানবিক বিপর্যয় : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চিত্র
• ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ দিয়ে যুদ্ধের সূচনা।
• ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল জার্মানির দখলে যায়।
• প্রায় ৫ কোটি থেকে ৭ কোটি মানুষ নিহত হয় যুদ্ধের ফলে।
• ৬০ লাখ ইহুদি গণহত্যার শিকার হন হিটলারের জাতিগত নীতির অংশ হিসেবে।
• লাখো স্লাভিক জনগণ, প্রতিবন্ধী, জিপসি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদেরও হত্যা বা বন্দিশিবিরে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়।
এখানেই মূল মানবিক প্রশ্ন দাঁড়ায়—একটি জাতির জীবনধারণের অধিকার অন্য জাতির বেঁচে থাকার অধিকারকে মুছে ফেলতে পারে কি?
তত্ত্ব ও অনুপ্রবেশ সমস্যা : সাদেক খানের লেখনী থেকে ভারতের বাস্তবতা
‘লেবেনশ্রাম’ (Lebensraum) শব্দটির অর্থ “জীবনধারণের জন্য অতিরিক্ত ভূমি”। জার্মান নাৎসি শাসক অ্যাডলফ হিটলার এই তত্ত্বকে ব্যবহার করেছিলেন জার্মান জাতিকে ইউরোপের অন্যান্য ভূখণ্ডে বিস্তার করার যুক্তি হিসেবে। পরবর্তীকালে এই তত্ত্বকে ঘিরে পৃথিবী ইতিহাসে বহু সংঘাত, যুদ্ধ ও গণবিপর্যয় ঘটেছে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট কলামনিস্ট সাদেক খান তাঁর লেখায় একাধিকবার উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও অভ্যন্তরীণ সংকটকে কেন্দ্র করে এই লেবেনশ্রাম তত্ত্বের প্রভাব ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রতি ছড়িয়ে পড়ছে। তাঁর মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে সরাসরি না বলা হলেও, অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সীমান্ত পেরিয়েৌ আন্দোলন” কিংবা “গ্রেটার বাংলাদেশ তত্ত্ব”-এর মূল ভিত।
সাদেক খানের দৃষ্টিভঙ্গি
সাদেক খান স্পষ্টভাবে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের কৃষিজমি ও কর্মসংস্থান সংকট সামলাতে না পেরে অতিরিক্ত জনগোষ্ঠী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে ঠেলে দেওয়াটা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক মনে করছে বাংলাদেশি নেতৃত্ব। এভাবে একদিকে দেশের ভেতরে চাপ কমছে, অন্যদিকে সীমান্তবর্তী ভারতের জনসংখ্যাগত চিত্র বদলাচ্ছে।
ভারতের বাস্তব চিত্র
ভারতে আজ যে অনুপ্রবেশ সমস্যা সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার শিকড় এই লেবেনশ্রাম ভাবনায়। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ভয়াবহ হারে বেড়ে চলেছে। এর ফলে –
• স্থানীয় অধিবাসীদের ভূমি ও কর্মসংস্থানে চাপ পড়ছে।
• জনসংখ্যার ভারসাম্য পরিবর্তন হচ্ছে।
• সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত বাড়ছে।
জার্মানিতে শরণার্থী সংকট ও তার ফলাফল
জার্মানি ও ইউরোপের বহু দেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিরিয়া, ইরাক ও অন্যান্য ইসলামি দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। ২০১৫ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ঘোষণা করেছিলেন – “Wir schaffen das” (আমরা এটা সামলাতে পারব)। সেই সময় এক বছরের মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করে।
তবে কয়েক বছরের মধ্যে এই মানবিক উদ্যোগের নানা নেতিবাচক দিক সামনে আসতে শুরু করেছে—
১. জনসংখ্যাগত ও সাংস্কৃতিক সমস্যা
• শরণার্থীদের বড় অংশ জার্মান সমাজে মিশে যেতে চাইছে না।
• ভিন্নধর্মী সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও সামাজিক নিয়মের কারণে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে।
• অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে থাকতে চাইছে, যা স্থানীয়দের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বাড়াচ্ছে।
২. আইনশৃঙ্খলার অবনতি
• শরণার্থীদের একটি অংশের বিরুদ্ধে চুরি, হামলা ও যৌন হেনস্থার মতো অপরাধের অভিযোগ উঠেছে।
• ২০১৬ সালে বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে এক শরণার্থী সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
• চরমপন্থী ভাবধারার প্রভাব তরুণ শরণার্থীদের মধ্যে বাড়ছে।
৩. অর্থনৈতিক চাপ
• শরণার্থীদের আশ্রয়, ভাতা ও প্রশিক্ষণের জন্য জার্মান সরকারকে প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে।
• যদিও কিছু শরণার্থী চাকরিতে যুক্ত হয়েছে, তবুও তাদের বেকারত্বের হার স্থানীয়দের তুলনায় অনেক বেশি।
৪. রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
• শরণার্থী সমস্যাকে কেন্দ্র করে জার্মানিতে ডানপন্থী রাজনৈতিক দল AfD (Alternative für Deutschland) শক্তিশালী হয়েছে।
• সাধারণ মানুষ মনে করছে, এভাবে চলতে থাকলে জার্মানির সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে।
যাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, তাদের একটি অংশ এখন—
• আলাদা অধিকার দাবি করছে,
• জার্মান আইনের পরিবর্তে নিজেদের দেশের শরিয়তি নিয়ম মানতে চাইছে,
• পূর্ণাঙ্গভাবে একীভূত হতে অস্বীকার করছে।
ফলে জার্মানির সার্বভৌমত্ব, সংস্কৃতির ভারসাম্য ও নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে।
এখনকার পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ যদি অবাধে চলতে থাকে, তবে একই ধরনের সমস্যা তৈরি হবে—
• জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদলে যাবে,
• অতিরিক্ত অধিকার দাবি উঠবে,
• আইনশৃঙ্খলার জটিলতা বাড়বে,
• রাজনৈতিক দলগুলো ভোটব্যাংকের জন্য তাদের ব্যবহার করবে।
তাই মানবিকতার দোহাই দেওয়া জরুরি হলেও, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সর্বাগ্রে রক্ষা করতে হবে।##





মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন