🎙️ বাংলার জনসংখ্যা সংকট : আমরা কোথায় যাচ্ছি?

 

লিখেছেন ::সাধন কুমার পাল




🎙️ বাংলার জনসংখ্যা সংকট : আমরা কোথায় যাচ্ছি?

🟠সঙ্ঘ প্রধান  মোহন ভাগবতের সতর্কবার্তা

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন—ভারতের প্রতিটি পরিবারে অন্তত তিনটি সন্তান থাকা উচিত। প্রথমে শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, কথাটার ভেতরে গভীর সংকেত আছে।

🟠 শহুরে বাঙালির বিপজ্জনক প্রবণতা

আজকের শহুরে সমাজে দেরিতে বিয়ে হচ্ছে, সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা কমছে। পশ্চিমবঙ্গে মোট প্রজনন হার এখন মাত্র ১.৬, কলকাতায় তো আরও কম—১.২। প্রয়োজনীয় হার ২.১-এর অনেক নিচে। মানে আমরা দ্রুত বার্ধক্যগামী সমাজে ঢুকে যাচ্ছি।

🟠 প্রজন্ম সংকটের আসন্ন চিত্র

এই প্রবণতার ফলে সমাজে বয়স্ক বাড়বে, তরুণ কমবে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমশক্তির অভাব হবে, অথচ স্বাস্থ্যসেবা ও বৃদ্ধ পরিচর্যার খরচ বাড়বে বহুগুণে। সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতাও ভেঙে পড়বে।

🟠 বিজ্ঞানীদের ভয় : “জিনগত ক্ষয়”

সন্তানহীন সমাজে শুধু জনসংখ্যা কমে না, ঘটে জিনগত ক্ষয়। মানে নতুন প্রজন্ম না থাকায় রক্তরেখা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সংস্কৃতি ও সৃজনশীল উত্তরাধিকার হারিয়ে যায়। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো—যারা শিক্ষিত ও চিন্তাশীল, তারাই সন্তান নিচ্ছেন না। ফলে সমাজ হারাচ্ছে তার বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি।

🟠 বিশ্বজুড়ে অদৃশ্য সংকট

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি—সব দেশেই জন্মহার কমে গিয়ে সমাজ টালমাটাল হয়েছে। জন্মহার একবার নেমে গেলে তা ফেরানো প্রায় অসম্ভব। সরকারি নীতি যতই আসুক, সমাজের মানসিকতা না বদলালে সমাধান নেই।

🟠 ভারতের ভেতরেই সতর্কবার্তা : কেরল

কেরল দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্য। তবুও জন্মহার ১.৮-এর বেশি নয়। “জননী জন্ম রক্ষা যোজনা” দিয়েও সরকার জন্মহার বাড়াতে পারেনি। শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা সন্তান নিচ্ছেন না। এর মানে—অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা উচ্চশিক্ষা একা সমাধান নয়, বরং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিবর্তন অপরিহার্য।

🟠 বাংলার ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ

পশ্চিমবঙ্গ যদি কেরলের পথ অনুসরণ করে, তবে তার ফলাফল আরও মারাত্মক হবে। কারণ বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিগত পরিচয় আগে থেকেই সংকটে। প্রজনন কমলে ভাষা, সাহিত্য, উৎসব, বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার—সবই হারানোর পথে যাবে।

🟠 জনসংখ্যার ধর্মীয় বৈষম্য

এখানে আরেকটি বাস্তবতা উপেক্ষা করা যায় না। সরকারি জরিপ ও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিত হিন্দু সমাজে জন্মহার দ্রুত কমছে, অথচ মুসলিম সমাজে জন্মহার তুলনামূলকভাবে বেশি রয়ে গেছে।

• পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যার গড় প্রজনন হার এখনও প্রতিস্থাপন হার ২.১-এর কাছাকাছি।

(প্রতিস্থাপন হার বলতে কি বোঝায় ।জানতে ক্লিক করুন)

• কিন্তু শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত হিন্দু পরিবারগুলো ক্রমশ এক সন্তান বা সন্তানহীনতার দিকে ঝুঁকছে।

এই বৈষম্য দীর্ঘমেয়াদে কেবল জনসংখ্যার ভারসাম্য নয়, সাংস্কৃতিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলবে। একদিকে হিন্দু পরিবার বার্ধক্যগামী হচ্ছে, অন্যদিকে মুসলিম পরিবারে নতুন প্রজন্ম জন্ম নিচ্ছে। এর মানে সমাজে বয়সভিত্তিক ও ধর্মভিত্তিক এক অসমতা তৈরি হচ্ছে।

মোহন ভাগবতের বক্তব্যকে তাই এই দিক থেকেও পড়া দরকার। তাঁর মূল উদ্বেগ হলো—যদি হিন্দুরা সন্তান না নেয়, অথচ অন্য সম্প্রদায় জনসংখ্যা ধরে রাখে বা বাড়ায়, তবে ভারসাম্য নষ্ট হবে, এবং ভবিষ্যতে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার বড় প্রভাব পড়তে পারে।

🟠 কেন মানুষ সন্তান নিচ্ছেন না?

✔️ সন্তান পালনের বিশাল খরচ
✔️ কেরিয়ার ও স্বাধীনতা হারানোর ভয়
✔️ ভোগবাদী মানসিকতা—সন্তানকে সম্পদ নয়, ব্যয় হিসেবে দেখা

🟠 সন্তান মানে শুধু দায়িত্ব নয়, উত্তরাধিকার

আমরা ভুলে যাচ্ছি—সন্তান শুধু ব্যক্তিগত আনন্দের বিষয় নয়। সন্তান মানে সমাজের ধারাবাহিকতা, সভ্যতার টিকে থাকা, আর ভবিষ্যতের ভরসা।

🟠 সমাধানের পথ

🔹 পরিবারকেন্দ্রিক মূল্যবোধে ফিরে যাওয়া
🔹 কর্মজীবী নারীর জন্য মাতৃত্বকালীন সুবিধা ও শিশুপালনের সহায়তা বাড়ানো
🔹 সবচেয়ে জরুরি, সমাজে চেতনা ফিরিয়ে আনা—সন্তান নেওয়া মানে একটি সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখা

🟠 সতর্কবার্তা না শুনলে কী হবে?

এখনই পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ হবে বৃদ্ধাশ্রম, নিঃসঙ্গতা আর প্রজন্মহীনতার সমাজ। আর যদি দায়িত্ব নেই, তবে বাঙালি সমাজ আবারও তার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি নিয়ে গর্বের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।##