সাধন কুমার পাল
    ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিনেমাটির নির্মাতারা। সেই মামলাতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি তামিলনাড়ু সরকারের বক্তব্যও জানতে চেয়েছে আদালত। সারা দেশে সিনেমাটি চললেও বাংলার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি পিএস নরসীমার বেঞ্চ। সিনেমাটির প্রয়োজক সংস্থার হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী হরিশ সালভে। তিনি আদালতে জানান, আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে সিনেমাটির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার কথা জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি তিনি জানান, তার আগেই সিনেমাটি ৩ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চললেও, কোনও সমস্যা হয়নি। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর প্রধান বিচারপতি বলেন, “সিনেমাটি সারা দেশে মুক্তি পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় আলাদা নয়।” তার পরই তাঁর প্রশ্ন, “কেন পশ্চিমবঙ্গ সিনেমাটি নিষিদ্ধ করবে?” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “যদি মানুষ মনে করেন সিনেমাটি দেখবেন না, তবে তাঁরা দেখবেন না।” 
      
ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতাকে জেহাদীদের বার্তা দিতে হয় আমি আছি তোমাদের সাথেই। যেমন, খোদ কলকাতার বুকে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের সময় পিসি ভাইপোর পায়ের তলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছবি, কোথাও আবার রবীন্দ্রনাথ ওনাদের পায়ের তলাতেও স্থান পাননি। অর্থাৎ বাংলাদের জেহাদী সংগঠন গুলি বরীন্দ্রনাথ কে যে ভাবে ছোট
করে দেখাতে চায় সেই ধারার অনুকরণ করছেন মমতার ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা। ‘দ্য কেরালা স্টোরির মতো সিনেমা মানুষ দেখুক এটা আইএস আইএস বা পিএফআইয়ের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন চাইবেনা এটাই স্বাভাবিক । আইন শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে ওদের পছন্দকে গুরুত্ব দিতেই যে মমতা এই সিনেমা নিষিদ্ধ করেন নি এমন জোড়ালো যুক্তি নেই ।
        ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজ্য সরকার আদালতে থাপ্পর খাবে এটা সবার মুখে মুখে ফিরছিল। স্বাভাবিক ভাবেই এই ধরণের থাপ্পর খাওয়ার ঘটনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা আন্দাজ করবেনা  এটা হয় না। প্রশ্ন হল সমস্ত কিছু জেনে শুনেই আইন শৃঙ্খলার অজুহাতে  মমতা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করলেন কেন? 
একটু বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি মমতা ব্যানার্জীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
        ছবিটি মূলত বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ইসলামিক সংগঠন ইরাক সিরিয়ার আইএসআইএস-র ভারত বিরোধী, মানবতা বিরোধী অপরাধের  একটি দিক উন্মোচিত করেছে।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা পদে পদে হিন্দুদের দোষ দেখতে পেলেও জেহাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত একটি বাক্য উচ্চারণ করেছেন এমন নজীর নেই । ফলে এটা বলা যেতে পারে মমতার ভোটব্যঙ্ক রাজনীতিতে  ইসলাম ও  ইসলামিক  সন্ত্রাসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এজন্যই সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরকার কোন  ব্যবস্থা নিলে,  আদালতের ভয়ে কিংবা সাংবিধানিক প্রটোকলের চাপে হয়তো প্রত্যক্ষ বিরোধিতা  করতে পারেন  না কিন্তু  তিনি যে এই সিদ্ধান্তের সাথে  নেই সেটা  হাবে ভাবে বুঝিয়ে দেন ।  এক সময় পাঞ্জাবে অকালি ধারার রাজনীতিকে টেক্কা দিতে গিয়ে ইন্দিরা গান্ধী   খালিস্থানী নেতা ভিন্দ্রেনওয়ালার সাথে বোঝপড়া করে চলতেন।যদিও শেষে নিজের প্রাণ দিয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে ঐ আগুন নিয়ে খেলার মূল্য চোকাতে হয়েছে। মমতাও যে ইন্দিরা গান্ধীর মতোই বিজেপিকে মোকাবিলা করতে গিয়ে ইসলামিক জেহাদি শক্তির সাথে বোঝাপড়া করে চলছেন এটা এখন দিবালোকের মতোই স্পষ্ট । বাংলাদেশের মিডিয়াতে চোখ রাখলে বুঝা যাবে মমতার এই সর্বনাশা খেলা নিয়ে উদ্বিগ্ন ঐ দেশের সুশীল সমাজও।[ পড়তে ক্লিক করুন: জামায়েতের সন্ত্রাসে অর্থ দিয়েছে তৃণমূল] কারণ মমতা এপারে জেহাদীদের খুশি রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে  বাংলাদের জেহাদীদেরও নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে তুলেছেন। [[পড়তে ক্লিক করুন: আবারো কি মদত জঙ্গিবান্ধব রাজনীতিতে]]
যে
ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতাকে জেহাদীদের বার্তা দিতে হয় আমি আছি তোমাদের সাথেই। যেমন, খোদ কলকাতার বুকে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের সময় পিসি ভাইপোর পায়ের তলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছবি, কোথাও আবার রবীন্দ্রনাথ ওনাদের পায়ের তলাতেও স্থান পাননি। অর্থাৎ বাংলাদের জেহাদী সংগঠন গুলি বরীন্দ্রনাথ কে যে ভাবে ছোট
করে দেখাতে চায় সেই ধারার অনুকরণ করছেন মমতার ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা। ‘দ্য কেরালা স্টোরির মতো সিনেমা মানুষ দেখুক এটা আইএস আইএস বা পিএফআইয়ের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন চাইবেনা এটাই স্বাভাবিক । আইন শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে ওদের পছন্দকে গুরুত্ব দিতেই যে মমতা এই সিনেমা নিষিদ্ধ করেন নি এমন জোড়ালো যুক্তি নেই ।
      কেন্দ্র সরকার পিএফআই কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও এরাজ্যে  আনুষ্ঠানিক ভাবে পিএফআই নিষিদ্ধ হয় নি। কারণ গত  28 সেপ্টেম্বর  2022 কেন্দ্র সরকার পিএফআই কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করার পর ২৯ সেপ্টেম্বর  মুর্শিদাবাদে মমতা প্রশাসনের নাকের ডগায় সামরিক পোশাক পরে ' নারায়ে তাকবীর' আল্লাহু আকবর' স্লোগান তুলে বড়সর  রুটমার্চ করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে। [[পড়তে ক্লিক করুন::পিএফআই কে কেন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলো]]
মৌলবাদীদের ইচ্ছে অনুসারে তসলিমা নাসরিন কে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া । জয়শ্রীরাম শুনলে তেড়ে যাওয়া , গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া । সি এ এ-র বিরুদ্ধে যারা  ট্রেন বাস রেল স্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছিল তাদের  একজনওকেও  গ্রেপ্তার না করা  বা  কোন রকম  শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না  নেওয়া । প্রসঙ্গ ছাড়াই যখন তখন  সিএএ, এনআরসির বিরুদ্ধে বিষোদগার করা। যেমন এবার রেড রোডে ইদের নমাজের জমায়েতে সেই জল্লাদ সুরাওয়ার্দির মতোই  মুখ্যমন্ত্রী মমতা সরাসরি এনআরসির ভয় দেখিয়ে , সমস্ত মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ  হওয়ার ডাক দিয়েছেন । 
      প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে হাওড়ার কাজিপাড়ায়, হুগলী , ডালখোলায় আয়োজিত রাম নবমীর শোভায়াত্রায় জেহাদীরা আক্রমন করলেও আক্রমন কারীদের  কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এর সম্পুর্ণ দায় হিন্দুদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। একুশের নির্বাচনের পর নির্বাচনোত্তর হিংসার নামে হিন্দুদের বাড়িঘর লুপাট করা অগ্নিসংযোগ করা ,খুন করা , রাজ্যের কোথাও না কোথাও প্রতিমাসে  হিন্দু বিরোধী দাঙ্গা সংগঠিত হতে দেওয়া  ,  বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগান 'জয় বাংলা ' কে, বাংলাদেশের শ্লোগান 'খেলা হবে' কে পশ্চিমঙ্গের মূলস্রোতের শ্লোগান হিসেবে চালু করা, জেহাদী শক্তি গুলির চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদীকে কোমরে দড়ি বেধে ঘোরানোর কথা বলা , ইমাম ভাতা চালু করা, সিদ্দিকুল্লার মতো সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী নেতাকে মন্ত্রীসভায় স্থান দেওয়া, সিমির প্রতিষ্ঠাতা কলম পত্রিকার সম্পাদক  আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গে একাধিক মৌলবাদী সংগঠনের যোগাযোগ নিয়ে রিপোর্ট থাকা সত্বেও তাকে রাজ্যসভায় পাঠানো ,এগুলির কোনটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। উদ্দেশ্য একটাই মৌলবাদী জেহাদী শক্তিকে খুশি করে ওদের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে ভোটে জেতানো। [[পড়তে ক্লিক করুণ:: তৃণমূল নেতা হাসান ইমরান কতটা বিপজ্জনক]]
       মমতা  যা করছেন অর্থাৎ জেহাদীদের সন্ত্রাসবাদীদের সাহায়্যে ভোটে জেতার অপপ্রয়াস  আসলে কংগ্রেসী রাজনীতির পুরানো ধারা। যেমন, এক সময় পাঞ্জাবে খালিস্থানপন্থীদের , উত্তরপূর্বে  আলফা  এনএসসিএনের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সহানুভুতি আদায়করে রাজনৈতিক দল গুলির মধ্যে  ভোটে জেতার হুড়ুহুড়ি পড়ে যেত।  এর  ফলস্বরুপ দেশ জুরে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসবাদী হানা হতো। এসব করতে গিয়ে কাশ্মীর, উত্তরপূর্ব ভারত ,পাঞ্জাব সন্ত্রাসবাদের আতুর ঘরে পরিণত হয়ে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছিল। 
সম্প্রতি ইদ উপলক্ষ্যে একটি সাত পাতার পত্রিকা প্রকাশ করেছে আল কায়দার প্রচারকারী সংবাদমাধ্যম হিসেবে পরিচিত 'আস-সাহার। এই পত্রিকাতেই বলা হয়েছে যে 'আমরা এখনও শোষণকারীদের হাতে বন্দি রয়েছি। টেক্সাস, তিহার থেকে আদিয়ালা - আমরা সমস্ত মুসলমান ভাই-বোনদের শিকলমুক্ত করব।' 
এই প্রতিবেদনেই দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত দেড়শও বেশি ফৌজদারী মামলা থাকা উত্তরপ্রদেশের গ্যাংস্টার আতিক- আশরাফকে শহিদ তকমাও দেওয়া হয়েছে। এই জেহাদী গ্যাংস্টারদের মৃত্যুতে ভারতবর্ষের আর কোথাও মোমবাতি মিছিল না হলেও গত ১৭ই এপ্রিল ২০২৩ পশ্চিমবঙ্গের ইসলামপুরের রামগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় ক্যান্ডেল মার্চ হয়েছে। এই ক্যান্ডেল মার্চের আয়োজক মন্ডলীতে আল কায়েদা বা অন্য কোন জিহাদী সংগঠন ছিল কি না রাজ্য প্রশাসনের তরফে সে  প্রশ্নের উত্তর খোঁজার  কোন প্রয়াস হয়েছে কিনা তা কিন্তু এখনো অজানা।
২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই ধারায় ছেদ পড়লোেও মমতা কিন্তু সেই  সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সহানুভুতি আদায়ের মতো কংগ্রেসী রাজনীতির পুরানো  ধারাতেই রাজনীতি করছেন।এই সর্বনাশা খেলা খেলে মমতা পশ্চিমবঙ্গকে সেই আটের দশককের পাঞ্জাব বা অসম নাগাল্যান্ড বা  কাশ্মীরের  সমপর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন বলা যেতে পারে। ##





মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন